জার্মানিতে আসার পর ময়লা ফেলতে গিয়ে দেখি নানা রকম ময়লা ফেলার কন্টেইনার৷ শুরুতে বুঝিনি, কোনটায় কী ফেলবো৷ পরে এক ফ্ল্যাটমেট বুঝিয়েছিলেন পুরো ব্যাপারটা৷ পুরো সিস্টেমটা দেখে মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম৷
বিজ্ঞাপন
চর্চাটা আসলেই ঘরেই শুরু করতে হয়৷ রান্নাবান্নার সময় তৈরি হওয়া যত আবর্জনা তা এক ব্যাগে রাখা, আর কাগজপত্র অন্য ব্যাগে রাখা৷ এরপর রং অনুযায়ী, ময়লা ফেলার নির্দিষ্ট কন্টেইনারে সেগুলো ফেলতে হয়৷ রঙের বিষয়টিও জটিল নয়, কালো রঙের কন্টেইনারে ফলতে হবে রান্নাবান্নার সময় উৎপাদিত জৈব আবর্জনা, কাগজপত্রের জন্য নীল কন্টেইনা আর প্লাস্টিক দ্রব্যের জন্য হলুদ কন্টেইনার৷ এই তিন ধরনের কন্টেইনার প্রায় সববাড়ির সামনেই দেখা যায়৷ পাশাপাশি রয়েছে কাঁচের বোতল ফেলার নির্দিষ্ট কিছু কন্টেইনার৷ বাদামি, সবুজ আর সাদা বা স্বচ্ছ বোতলগুলো রং দেখে ফেলতে হয় সেসব কন্টেইনারে৷ তবে ব্যাটারি, অ্যাসিড বা রঙের মতো দ্রব্য ফেলা যায় না এ সব কন্টেইনারে৷ সেগুলোর জন্য আলাদা পাত্র৷
ময়লা দিয়ে ব্যবসা করেন তাঁরা
বর্জ্য, বিশেষ করে প্লাস্টিক বর্জ্যকে কাজে লাগিয়ে অনেকেই ব্যবসা করছেন৷ এতে একদিকে যেমন পরিবেশের ভাল হচ্ছে, তেমনি কিছু মানুষের কর্মসংস্থানও হচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/C. Frentzen
বিলিকিস আদেবিয়ি-আবিওলা
যুক্তরাষ্ট্রে এমবিএ করার পর আইবিএম-এ সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে পাঁচ বছর কাজ করার পর নিজ দেশ নাইজেরিয়ায় গিয়ে বর্জ্য নিয়ে ব্যবসা করছেন৷ দেশটির সবচেয়ে বেশি জনসংখ্যা অধ্যুষিত শহর লাগসের ময়লা নিয়ে ব্যবসা করছেন৷ কোম্পানির নাম ‘উইসাইকেলার্স’৷ তাদেরকে আবর্জনা দেয়ার মাধ্যমে স্থানীয়রা ‘উপহার’ পেয়ে থাকেন৷ আর আবিওলার কোম্পানি ঐ আবর্জনা থেকে বিভিন্ন পণ্য তৈরি করে৷ আরও জানতে উপরে (+) চিহ্নে ক্লিক করুন৷
ছবি: WeCyclers
থাটো গাটহানিয়া ও রেয়া এনগোয়ানে
দক্ষিণ আফ্রিকার এই দুই তরুণী প্লাস্টিক বর্জ্য থেকে স্কুল ব্যাগ তৈরি করেন৷ দরিদ্র শিক্ষার্থীদের এগুলো দেয়া হয়৷ এ সব ব্যাগে সোলার প্যানেল বসানো আছে৷ ফলে শিক্ষার্থীরা হেঁটে স্কুলে যাওয়া-আসার ফলে প্যানেলগুলো যে চার্জ পায় তা দিয়ে রাতের বেলায় আলো জ্বলে৷ ফলে মোমবাতি না জ্বালিয়ে শিশুরা পড়তে পারে৷ ছবিতে একেবারে ডানে রেয়া আর বাম থেকে তিন নম্বরে থাটোকে দেখা যাচ্ছে৷ আরও জানতে উপরে (+) চিহ্নে ক্লিক করুন৷
ছবি: repurposeschoolbags.com/Screenshot
অ্যান্ড্রু মুপুয়া
মাত্র ১৬ বছর বয়সে স্কুলে পড়ার সময় বাবা-মা দু’জনই যখন চাকরি হারিয়ে ফেলেন তখন অ্যান্ড্রু কাগজের ব্যাগ তৈরির ব্যবসা শুরু করেন৷ পুঁজি জোগাড় করতে ৭০ কেজি প্লাস্টিক বোতল বিক্রি ও শিক্ষকের কাছ থেকে টাকা ধার নেন তিনি৷ ব্যাগ তৈরি শিখতে ইন্টারনেট আর ভিডিওর সাহায্য নেন তিনি৷ বর্তমানে ২৪ বছর বয়সি অ্যান্ড্রুর অধীনে ২০ জন কাজ করছেন৷ আরও জানতে উপরে (+) চিহ্নে ক্লিক করুন৷
ছবি: DW
লরনা রুট্ট
ব্যাংকের চাকরি ছেড়ে কেনিয়ার নাইরোবিতে প্লাস্টিক রিসাইক্লিং ফ্যাক্টরি গড়ে তোলেন তিনি৷ এসব প্লাস্টিক দিয়ে তাঁর কোম্পানি বেড়া তৈরি করে৷ ঘরবাড়ি সহ সংরক্ষিত এলাকায় বেষ্টনী দিতে তাঁর বেড়া ব্যবহৃত হয়৷ কাঠের বদলে এ সব বেড়া খুব দ্রুতই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে৷ আরও জানতে উপরে (+) চিহ্নে ক্লিক করুন৷
ছবি: L. Rutto
বেথেলহেম টিলাহুন আলেমু
আফ্রিকার ফুটওয়্যার ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে ইথিওপিয়ার ‘সোলরেবেলস’ বিশ্বে অনেক জনপ্রিয়৷ আলেমু’-র উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত কোম্পানিটি গাড়ির পুরনো টায়ার, ফেলে দেয়া জামাকাপড় ব্যবহার করে জুতা তৈরি করে৷ আরও জানতে উপরে (+) চিহ্নে ক্লিক করুন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/C. Frentzen
বাংলাদেশে রিসাইক্লিং ব্যবসা
প্লাস্টিক বোতল রিসাইকেল করে এমন অনেক কারখানা গড়ে উঠেছে ঢাকায়৷ তাদের হয়ে পরিত্যক্ত বোতল সংগ্রহ করছেন অনেকে৷ এতে তাদের দারিদ্র্যতা দূর হচ্ছে৷ বোতলগুলো মেশিন দিয়ে টুকরো করে প্লাস্টিক পণ্য বানায় এমন কোম্পানির কাছে বিক্রি করা হয়৷ কিছু অংশ বিদেশে, বিশেষ করে চীনেও রপ্তানি হয়ে থাকে৷ আরও জানতে উপরে (+) চিহ্নে ক্লিক করুন৷
ছবি: Getty Images/AFP/M.Uz Zaman
ওয়েস্ট কনসার্ন
বেশ কয়েক বছর ধরে ঢাকার বর্জ্য থেকে কমপোস্ট সার তৈরি করছে ওয়েস্ট কনসার্ন নামের একটি কোম্পানি৷ তাদের ওয়েবসাইটে গিয়ে দেখা যায়, ২০১৬ সালের ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত কোম্পানিটি এক লক্ষ মেট্রিক টনের বেশি বর্জ্য রিসাইকেল করেছে৷ বিস্তারিত জানতে উপরে ‘+’ চিহ্নে ক্লিক করুন৷
ছবি: wasteconcern.org
7 ছবি1 | 7
এখানেই শেষ নয়, ধরুন আপনার বাসার আসবাবপত্র পুরনো হয়ে গেছে, যেগুলো ফেলে দিতে হবে বা পুরনো টিভি ফ্রিজ ফেলে দেবেন৷ সেগুলো কি ময়লার কন্টেইনারের পাশে রেখে আসলেই চলবে? মোটেই না, এধরনের বড় জিনসপত্র ফেলার জন্য রয়েছে নির্দিষ্ট কিছু দিন৷ এ সব দিনে বাড়ির সামনে সেগুলো ফেলে দিলে নগর কর্তৃপক্ষ কিংবা যাদের সেসব প্রয়োজন তা নিয়ে যাবে৷
ফেলার মতো আর কিছু কি বাকি আছে? হ্যাঁ, পুরনো জামাকাপড় ফেলবো কোথায়? সেই ব্যবস্থাও রয়েছে৷ তবে বাড়ির সামনে নয়৷ বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে বা পার্কিং লটে এক ধরনের কন্টেইনার থাকে যেগুলোতে পুরনো জামাকাপড়, জুতো ফেলা যায়৷ সেগুলো আবার দান হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং ব্যবহার উপযোগী পোশাক গরিব-দুঃখীদের দান করা হয়৷ আর প্লাস্টিকের বোতল ফেরত দিলে কিছু পয়সা পাওয়া যায়৷ তাই সেই বোতল সবাই নির্দিষ্ট মেশিনে বা দোকানে জমা দেন পয়সা ফেরত পেতে৷
এভাবে পরিকল্পিতভাবে ময়লা, আবর্জনা ফেলার উদ্দেশ্য হচ্ছে সেগুলোর ব্যবস্থাপনা নিখুঁত করা এবং অবশ্যই যতটা সম্ভব রিসাইকেল করা৷ জার্মানিতে বসবাসরতদের সহায়তায় জার্মান সরকার এক্ষেত্রে বেশ সফলতা পেয়েছে৷ দেশটিতে ৮৭ শতাংশ আবর্জনাই রিসাইকেল করা হয়৷
বাংলাদেশ থেকে এসেছি বলে অনেককিছুতেই দেশটির সঙ্গে জার্মানির তুলনা মনের অজান্তেই করে ফেলি৷ ইউরোপের দেশটির ময়লা আবর্জনা ব্যবস্থাপনা যতটা যুগপোযোগী বাংলাদেশের ক্ষেত্রে সেটা ততটাই পিছিয়ে৷ ঢাকা শহরে কোনোরকমে নাক চেপে ময়লার পাহাড়ের পাশ কেটে হাঁটার অভিজ্ঞতা অনেকবার হয়েছে৷ এখনো দেখি, ময়লা ফেলার নির্দিষ্ট বক্সের আশেপাশেই ময়লা, আবর্জনা পড়ে থাকে বেশি৷ বর্তমান যুগে এমনটা একেবারেই প্রত্যাশিত নয়৷ বরং জনগণ সচেতন হলে আর সরকার কার্যকর উদ্যোগ নিলে জার্মানির মতো বাংলাদেশেও ময়লা, আবর্জনা সঠিকভাবে সংগ্রহ করে রিসাইকেল করা সম্বব৷
আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷