১ আগস্ট আবহাওয়া অধিদপ্তরের এক পূর্বাভাসে ভারী বৃষ্টির কারণে দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল, দক্ষিণ-পূর্বের পার্বত্য জেলাগুলোতে ক্ষণস্থায়ী বন্যার আশঙ্কার কথা জানায়।
বিজ্ঞাপন
আবহাওয়া পূর্বাভাসে বৃষ্টির পরিমাণ, সময় ও স্থান উল্লেখ করতে পারেনি আবহাওয়া অধিদপ্তর। তবে যতটুকুই সতর্কবার্তা দিয়েছিলো, সেটি গুরুত্ব দেয়নি স্থানীয় প্রশাসন। খবর, দৈনিক সমকাল৷
সতর্কবার্তায় ভূমিধ্বসের কথা বলা হলেও বিপর্যয় এড়াতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট সংস্থার থেকে পর্যাপ্ত আগাম ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এ পর্যন্ত অন্তত ১৫ জনের প্রাণহানি সহ বন্যা ও জলাবদ্ধতায় পার্বত্য চট্টগ্রামেরপাঁচ জেলায় ভেঙে গেছে অনেক আঞ্চলিক সড়ক, মহাসড়ক ও কালভার্ট। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ফসলি জমির।
আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা আবহাওয়া অধিদপ্তরের সক্ষমতা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন। আবহাওয়া পূর্বাভাসের তথ্য উপাত্ত ও প্রেডিকশন মডেল সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারলে আরও সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেয়া যেতো বলে মনে করছেন তারা।
একই বিপর্যয়, ব্যবস্থাপনায় নেই কোন পরিবর্তন
সময়ের সাথে আবহাওয়া অধিদপ্তর পূর্বাভাস দেয়ার পদ্ধতির আধুনিকায়ন করতে সক্ষম হয়নি। তথ্যপ্রযুক্তির এই সময়েও তাদের ওয়েবসাইট নিয়মিত হালনাগাদ করা হয় না। দিতে পারছে না বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কবার্তা। আগে থেকে সতর্কবার্তা না পাওয়ায় কারণে মানুষ প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতে পারেনি। এছাড়া তাদের দেয়া সতর্কবার্তাতেও রয়েছে অনেক ত্রুটি যে কারণে মানুষের আস্থা থাকছে না পূর্বাভাসে।
জলে বন্দি চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম, কক্সবাজারের মানুষ
এক সপ্তাহের টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে বিপর্যস্ত চট্টগ্রাম, রাঙ্গামাটি, বান্দরবানের মানুষ৷ জোয়ারের জল ঢুকে পড়ায় আরো নাজুক পরিস্থিতি কক্সবাজারে৷
ছবি: Kamol Das
জোয়ার, বৃষ্টির জলে একাকার
বৃষ্টি, জোয়ারের পানি আর পাহাড়ি ঢলে একাকার যেন কক্সবাজার৷ পানিবন্দি হয়েছেন প্রায় তিন লাখ মানুষ৷
ছবি: Mohibulla Mohib
ডুবে গেছে ঘর-বাড়ি
পরিস্থিতি কতটা নাজুক হয়েছে পেকুয়া উপজেলার এই ছবি থেকে তা কিছুটা অনুমাণ করা যায়৷ জেলা প্রশাসকের তথ্য অনুযায়ী, কক্সবাজার জেলার আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে এ পর্যন্ত মোট ৩৩ হাজার মানুষ ঠাঁই নিয়েছেন৷
ছবি: Mohibulla Mohib
ভাংছে সৈকত
জোয়ারের পানিতে সমুদ্রে বিলীন হয়ে গেছে কক্সবাজারের মেরিন ড্রাইভের মুন্ডার ডেইল এলাকার দুইশ ফুট, লাবনী সৈকত, সুগন্ধা সৈকত, মহেশখালী ও কুতুন্দিয়ার বিভিন্ন পয়েন্টেও ভাঙন দেখা দিয়েছে৷ পানি উন্নয়ন বোর্ড জিও টিউব বসিয়ে এলাকা রক্ষার চেষ্টা করছে৷
ছবি: Mohibulla Mohib
ঝুঁকিপূর্ণ রাঙ্গামাটি
টানা বর্ষণে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন রাঙ্গামাটির বিভিন্ন উপজেলার মানুষ৷ ধস নামছে পাহাড়ে৷ ঝুঁকিপূর্ণ স্থান থেকে ১২০০ পরিবারকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ৷
ছবি: Omor Faruk Sumon
বাহন নৌকা
টানা বর্ষণে রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ির পৌর এলাকাসহ বেশ কয়েকটি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে৷ নৌকা হয়ে উঠেছে সেখানকার মানুষের যাতায়াতের একমাত্র বাহন৷
ছবি: Omor Faruk Sumon
হাঁটু জলে স্কুল
জেলার অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এখন দুর্গতদের অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র৷ তবে বন্যা দমাতে পারেনি বাঘাইছড়ি পৌর এলাকার হাজীপাড়ার এই শিক্ষার্থীদের৷ হাঁটু পানি ডিঙ্গিয়ে স্কুলের পথে তারা৷
ছবি: Omor Faruk Sumon
বিচ্ছিন্ন বান্দরবান
স্মরণকালের অন্যতম ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়েছে পার্বত্য জেলা বান্দরবান৷ তলিয়ে গেছে মূল শহর৷ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে বিভিন্ন উপজেলার সঙ্গে যোগাযোগ৷ নেই বিদ্যুৎ৷ সংযোগ পাওয়া যাচ্ছে না মোবাইল নেটওয়ার্কেরও৷ ছবিটি চট্টগ্রামের সাতকানিয়া সড়কের৷
ছবি: Kamol Das
নেই বিদ্যুৎ
দ্য ডেইলি স্টারের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামের সাতকানিয়া ও লোহাগড়ায় ৩ দিন ধরে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন৷ পটিয়ায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ সোমবার বিকাল থেকে৷ সব মিলিয়ে তিন উপজেলার দুই লাখ পল্লী বিদ্যুতের গ্রাহক বিদ্যুতের বাইরে রয়েছেন৷
ছবি: Kamol Das
শহরে জলাবদ্ধতা
চট্টগ্রাম শহরে জলাবদ্ধতার সমস্য বেশ পুরাতন৷ টানা বর্ষণে এবারও শহরের বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে৷
ছবি: Kamol Das
জীবিকার তাগিদে
জলাবদ্ধতার কারণে শহরে তৈরি হয়েছে যানজট৷ তার মধ্যেই হাঁটুজলে ঘুরে যাত্রীদের কাছে পণ্য বিক্রির চেষ্টা করছেন বিক্রেতারা৷
ছবি: Kamol Das
ঘরের ভেতরেও পানি
পানি ক্রমশ বেড়েই চলছে৷ হাঁটু সমান পানি অনেকের ঘরে৷ পানিতে ডুবে গেছে রান্নাঘর৷ উপোস কাটাতে হচ্ছে অনেককে৷
ছবি: Kamol Das
তিন উপজেলার তিন লাখ
ডেইলি স্টারের তথ্য অনুযায়ী, আকস্মিক এই বন্যায় দক্ষিণ চট্টগ্রামের তিন উপজেলায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন তিন লাখের বেশি মানুষ৷ তলিয়ে গেছে চন্দনাইশ, সাতকানিয়া ও লোহাগড়া উপজেলার শত শত হেক্টর জমির বীজতলা৷
ছবি: Kamol Das
12 ছবি1 | 12
সমন্বয়হীনতা ও প্রস্তুতির ঘাটতি
অল্প সময়ের বৃষ্টিতেই ডুবে যাচ্ছে বড় শহরগুলো। তবে এই জলাবদ্ধতা নিরসনে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে পূর্বাভাস স্থানীয় প্রশাসনে পাঠানো হলেও তারা তা গুরুত্ব সহকারে নেন না। উন্নত দেশগুলোতে নাগরিকরা আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেখে নগরজীবনে চলাচল করলেও বাংলাদেশে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোই এই পূর্বাভাসকে অবহেলা করে।
দক্ষ জনবল সংকট
নির্ভুল পূর্বাভাস পেতে ২০১৬ সাল থেকে আবহাওয়া অধিদপ্তর তাদের ২২৫টি স্টেশন আধুনিকায়ন করেছে। তবে প্রশিক্ষিত প্রকৌশলী ও আবহাওয়াবিদের অভাবে কাঙ্ক্ষিত মানে এর সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। প্রতিষ্ঠানটিতে এক হাজার ৩৩৮ পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন ৭০০ জন। ঢাকা ও রংপুরে ২০৮ কোটি ৫৭ লাখ টাকা ব্যায়ে স্থাপিত আধুনিক রাডার সিস্টেমও পর্যাপ্ত জনবলের অভাবে অকার্যকর হয়ে পড়েছে।
তবে স্থানীয় প্রশাসনকেও জনসচেতনা বাড়াতে সক্রিয়ভাবে কাজ করা প্রয়োজন বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট ব্যাক্তিবর্গ।