ইটালি এবং মাল্টার পর স্পেনও অভিবাসীদের উদ্ধারকারী জাহাজ ‘লাইফলাইন'-কে তীরে ভিড়তে দিচ্ছে না৷ ফলে ভূমধ্যসাগরে আটকে আছে জাহাজটি৷ অন্যদিকে, আবহাওয়া ক্রমশ খারাপ হচ্ছে৷ ফলে ভোগান্তি বাড়ছে অভিবাসীদের৷
বিজ্ঞাপন
স্পেনের অর্থনৈতিক উন্নয়ন বিষয়কমন্ত্রী হোসে লুইস আবালোস সোমবার বলেছেন যে, ২৩০ জন অভিবাসী বহনকারী একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার জাহাজটি তীরে ভিড়তে দেবে না তাঁর দেশ৷ কেননা, ‘‘স্পেন গোটা ইউরোপের জন্য সমুদ্র উদ্ধার সংস্থায় পরিনত হতে পারে না৷''
ইটালি এবং মাল্টা জার্মান উন্নয়নসংস্থার উদ্ধার জাহাজটি ভীড়তে না দেয়ার পর এই মন্তব্য করেন স্পেনের উন্নয়নমন্ত্রী৷ ইতোমধ্যে অবশ্য একাধিক জার্মান আইনপ্রণেতা জাহাজটি পরিদর্শন করেছেন৷ তাঁদের ভাষ্য হচ্ছে, জাহাজে অবস্থানরতরা মানবেতর জীবন যাপন করছেন৷ এবং আবহাওয়া খারাপ হলে সেখানে মানবিক জরুরি পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে৷
- স্পেন অবশ্য প্রথমে আকুরিয়াস নামের আরেকটি শরণার্থীবাহী জাহাজ মাল্টা ও ইটালি ভিড়তে না দেয়ায় ভিড়তে দিয়েছিল৷ কিন্তু এবার তারাও আরশরণার্থীবাহী জাহাজ ভিড়তে দিতে চায় না
- ১০৮ জন অভিবাসীবাহী ডেনিশ কার্গো শিপ আলেক্সান্ডার মার্স্ক শনিবার থেকে সিসিলিতে অবস্থানের পর তীরে ভেড়ার অনুমতি পেয়েছে৷ ভূমধ্যসাগরে ডুবে মরা থেকে অভিবাসীদের উদ্ধারকারী বেসরকারী উন্নয়নসংস্থাগুলোর জাহাজ ভিড়তে না দেয়ার মাধ্যমে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো কার্যত এক জটিল সমস্যার বহিপ্রকাশ ঘটাচ্ছে৷ সংঘাত বা দারিদ্র্যতার কবল থেকে মুক্তি পেতে সমুদ্র পাড়ি দিয়ে ইউরোপে প্রবেশে আগ্রহী এসব মানুষকেআশ্রয় দেয়ার ক্ষেত্রে ইউরোপের দেশগুলো যে ক্রমশ আগ্রহ হারাচ্ছে, তা পরিষ্কার হয়ে উঠেছে৷
এক্ষেত্রে ডাবলিন রেগ্যুলেশন নামের এক আইনকেও দূষছেন বিশেষজ্ঞরা৷ এই বিধি অনুযায়ী, একজন শরণার্থী প্রথমে ইউরোপের যে দেশে পা রাখবেন, সেই দেশেই তিনি আশ্রয়ের আবেদন করবেন৷ ফলে ভৌগোলিক কারণে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইটালিসহ ভূমধ্যসাগরীয় দেশগুলোকে শরণার্থীর চাপ বেশি সহ্য করতে হয়েছে৷ এমন পরিস্থিতির পরিবর্তনে অবশ্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন চেষ্টা চালাচ্ছে৷
গ্রিসে শরণার্থীদের ভিড়, আশ্রয়স্থল ‘জাহাজবাড়ি’
প্রতিদিন গ্রিসের কস দ্বীপে আসছে সাতশ’ থেকে আটশ’ অভিবাসনপ্রত্যাশী৷ তাঁদের জন্য অভিনব এক আশ্রয়স্থল বানিয়ে দিয়েছে গ্রিক সরকার৷ সাগরে ভেসে আসা মানুষগুলোর আশ্রয় দেয়া হচ্ছে সাগরে ভাসমান জাহাজে!
ছবি: picture-alliance/AA/E. Atalay
আশ্রয়
অভিবাসনপ্রত্যাশীদের জরুরি অবস্থার আশ্রয়স্থল এই ‘এলেফথেরিয়োস ভেনিজেলোস’ নামের জাহাজ৷ আড়াই হাজার মানুষের জায়গা আছে এই জাহাজে৷ অভিবাসনপ্রত্যাশীরা এই জাহাজে আশ্রয় নেয়ার আগে নিজের নাম রেজিস্ট্রি করিয়ে নেন৷ জাহাজেই আছে সে ব্যবস্থা৷ রেজিস্ট্রেশন হলে অভিবাসনপ্রত্যাশীরা গ্রিসের ভেতরে ঘুরাফেরাও করতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Odysseus
সূচনা
‘এলেফথেরিয়োস ভেনিজেলোস’-এ অভিবাসনপ্রত্যাশীদের প্রথম দলটি ঢুকেছে ১৬ই আগস্ট৷ কয়েকদিন এ জাহাজেই থাকবেন তাঁরা৷ রেজিস্ট্রেশন হয়ে গেলে যখন তাঁরা দরকারি কাগজপত্র পেয়ে যাবেন, তখন তাঁদের এথেন্সের কাছে অন্য কোনো জাহাজে তুলে দেয়া হবে৷ শুরু হবে তাঁদের ‘দ্বিতীয় জাহাজঘর’-এ বসবাস৷
ছবি: Reuters/A. Konstantinidis
শুধু সিরীয়রা....
রাতেও জাহাজের সামনে লম্বা লাইন৷ তবে বলা হচ্ছে, ‘‘আগে শুধু সিরীয়রা ঢুকবেন, অন্যরা নয়৷’’ যুদ্ধের কারণে সিরিয়া থেকে যাঁরা পালিয়ে এসেছে, তাঁদের অগ্রাধিকার দিয়ে বাকিদের দাঁড় করিয়ে রাখা হচ্ছে৷ বিশৃঙ্খলা এড়ানোর জন্যই নেয়া হয়েছে এই ব্যবস্থা৷ কয়েকদিন আগে অন্য দেশ থেকে আসা লোকদের সঙ্গে সিরীয়দের প্রায় মারামারি বেঁধে যাওয়ার উপক্রম হলে কর্তৃপক্ষে সিদ্ধান্ত নেয়, সবার আগে সিরীয়রা, তারপর বাকিরা ঢুকবে জাহাজে৷
ছবি: Reuters/A. Konstantinidis
সবার লক্ষ্য ইউরোপ
এখানে আগতদের মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি মানুষ এসেছে সিরিয়া থেকে৷ এশিয়ার তিন মুসলিম প্রধান দেশ আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও ইরান আর আফ্রকিার মালি, ইরিত্রিয়া এবং সোমালিয়া থেকেও এসেছেন অনেকে৷ এমনকি ল্যাটিন অ্যামেরিকার মানুষও এসেছে গ্রিসের দ্বীপ কস-এ৷ তুরস্কের ভিসা পাওয়া যায় বেশ সহজে৷ একবার তা পেয়ে গেলেই শুরু হয় গ্রিস হয়ে ইউরোপের বেশি উন্নত দেশগুলোতে প্রবেশের চেষ্টা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Odysseus
‘স্বপ্ন’ মাত্র চার কিলোমিটার দূরে
সিরিয়া এবং আশেপাশের দেশগুলো থেকে মানুষ কোনোরকমে একবার তুরস্কে ঢুকে পড়লেই ইউরোপের ‘স্বপ্নের জগত’ প্রায় হাতের মুঠোয় চলে আসে৷ তুরস্কের রাজধানী ইস্তানবুল থেকে মাত্র চার কিলোমিটার দূরে গ্রিসের কস দ্বীপ৷ ইস্তানবুলে এসে বেশির ভাগ মানুষ শুধু নৌকাটা বদলান, নৌকা বদলেই শুরু করেন কস-এর দিকে যাত্রা৷
ছবি: Getty Images/AFP/B. Kilic
আনন্দাশ্রু
ইরানের এই ভদ্রলোক আনন্দে কাঁদছেন৷ অবশেষে স্ত্রী, সন্তান নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভূখণ্ডে পৌঁছানোর আনন্দ! কিন্তু তিনি জানেন না, এখনো সুন্দর ভবিষ্যতের নিশ্চয়তা পেতে কতকাল কত কাঠখড় পোড়াতে হবে তাঁকে৷
ছবি: Reuters/Y. Behrakis
আশ্রয়হীন
প্রতিদিন ৬০০ থেকে ৮০০ মানুষ আসে কস দ্বীপে৷ ৩০ হাজার মানুষের এই দ্বীপে এখন ৭ হাজার শরণার্থীর বাস৷ অনেকেরই ভাগ্যে আশ্রয় শিবির জোটেনি৷ রাস্তার ধারে খোলা আকাশের নীচেই কোনো রকমে দিনাতিপাত করছেন তাঁরা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Odysseus
সিরিয়া থেকে আসছে অনেক পরিবার
এতদিন সিরিয়া থেকে তরুণরাই বেশি আসতেন৷ ছোট বাচ্চা কোলে নিয়ে নারীরা এসেছেন, তরুণী বা অন্তঃসত্ত্বাও এসেছেন অনেক৷ কিন্তু আজকাল সিরিয়া থেকে পুরো পরিবারই চলে আসছে৷ নতুন দেশের অজানা পরিবেশে মুসলিম নারীদের জন্য গোপনীয়তা রক্ষা করা অবশ্য একটু বেশি কঠিন৷
ছবি: Getty Images/AFP/L. Gouliamaki
দীর্ঘ প্রতীক্ষা
কস দ্বীপে অভিবাসন প্রত্যাশীদের রেজিস্ট্রেশন করানোটা বাধ্যতামূলক৷ কিন্তু এই নিয়মে দরকারি কাগজপত্র পাওয়াটা অনেক সময় কঠিন হয়ে পড়ে৷ কর্তৃপক্ষের কাছে মজুদ সরঞ্জাম হঠাৎ শেষ হয়ে যায়৷ তখন তিন-চার সপ্তাহও অপেক্ষা করতে হয় শরণার্থীদের৷