অস্ট্রিয়ায় পাওয়া গেছে ৭০ জনের গলিত দেহ৷ লিবিয়ায় ডুবে যাওয়া নৌকায় কমপক্ষে ২০০ জনের মৃত্যুর আশঙ্কা৷ ২৭০ জন অভিবাসনপ্রত্যাশীর মৃত্যুই শেষ নয়, মৃতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে৷
বিজ্ঞাপন
ব্রাসেলসে অনুষ্ঠিত এক সভায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)-ও অবশেষে স্বীকার করেছে যে, অভিবাসন প্রত্যাশীদের নিয়ে যে সংকট চলছে তা মোকাবিলায় এখনো পর্যন্ত তারা ব্যর্থ৷ পাশাপাশি অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপানোর কৌশল থেকে বেরিয়ে এসে সংকট নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপের কথাও উঠেছে৷ নতুন কিছু পরিকল্পনা প্রণয়নের অঙ্গীকারও করেছেন ইইউ নেতারা৷ তবে সপ্তাহ শেষ হওয়ার আগেই এসেছে ভাগ্যান্বেষণে ইউরোপে এসে আরো কিছু মানুষের করুণ মৃত্যু বরণ করার খবর৷ এবার অস্ট্রিয়ায়৷ হাঙ্গেরির সীমান্তের কাছের একটি ছোট্ট শহরের রাস্তায় ফেলে যাওয়া ট্রাক থেকে রক্ত গড়িয়ে পড়ছিল, বাতাস ভারি হচ্ছিল দুর্গন্ধে৷ বৃহস্পতিবার হিমায়নের সুবিধা সম্পন্ন ট্রাকটি খুলে ৭০টি গলিত লাশ উদ্ধার করা হয়৷ অস্ট্রিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় ঘটনাটি সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছে শুক্রবার৷
A doctor helps refugees in Sicily
12:07
ট্রাকটি হাঙ্গেরি থেকে অস্ট্রেলিয়ার রাজধানী ভিয়েনার দিকে যাচ্ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে৷ কবে থেকে সেটা হাইওয়ের পাশে পড়ে ছিল এ সম্পর্কে গোয়েন্দারা এখনো নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারেননি৷ বু্রগেনলান্ড প্রদেশের এক পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ফরেনসিক বিভাগের কর্মীরা বৃহস্পতিবার সারা রাত প্লাস্টিকের ব্যাগে করে পচে গলে যাওয়া লাশগুলো সরিয়ে নেয়ার কাজ করেছেন৷
জার্মানির চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল ৭০ জন অভিবাসনপ্রত্যাশীর এমন করুণ মৃত্যুর খবর জেনে বলেছেন, ‘‘আমাদের জন্য এটা আরেকটা সতর্কবার্তা৷ অভিবাসনপ্রত্যাশীদের নিয়ে চলমান সঙ্কট যে দ্রুত সুরাহা করা দরকার – এটা সবাইকে বুঝতে হবে৷'' বৃহস্পতিবার বলকান নেতাদের সঙ্গে এক বৈঠক উপলক্ষ্যে অস্ট্রিয়া সফরের সময় তিনি এ কথা বলেন৷
গ্রিসে শরণার্থীদের ভিড়, আশ্রয়স্থল ‘জাহাজবাড়ি’
প্রতিদিন গ্রিসের কস দ্বীপে আসছে সাতশ’ থেকে আটশ’ অভিবাসনপ্রত্যাশী৷ তাঁদের জন্য অভিনব এক আশ্রয়স্থল বানিয়ে দিয়েছে গ্রিক সরকার৷ সাগরে ভেসে আসা মানুষগুলোর আশ্রয় দেয়া হচ্ছে সাগরে ভাসমান জাহাজে!
ছবি: picture-alliance/AA/E. Atalay
আশ্রয়
অভিবাসনপ্রত্যাশীদের জরুরি অবস্থার আশ্রয়স্থল এই ‘এলেফথেরিয়োস ভেনিজেলোস’ নামের জাহাজ৷ আড়াই হাজার মানুষের জায়গা আছে এই জাহাজে৷ অভিবাসনপ্রত্যাশীরা এই জাহাজে আশ্রয় নেয়ার আগে নিজের নাম রেজিস্ট্রি করিয়ে নেন৷ জাহাজেই আছে সে ব্যবস্থা৷ রেজিস্ট্রেশন হলে অভিবাসনপ্রত্যাশীরা গ্রিসের ভেতরে ঘুরাফেরাও করতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Odysseus
সূচনা
‘এলেফথেরিয়োস ভেনিজেলোস’-এ অভিবাসনপ্রত্যাশীদের প্রথম দলটি ঢুকেছে ১৬ই আগস্ট৷ কয়েকদিন এ জাহাজেই থাকবেন তাঁরা৷ রেজিস্ট্রেশন হয়ে গেলে যখন তাঁরা দরকারি কাগজপত্র পেয়ে যাবেন, তখন তাঁদের এথেন্সের কাছে অন্য কোনো জাহাজে তুলে দেয়া হবে৷ শুরু হবে তাঁদের ‘দ্বিতীয় জাহাজঘর’-এ বসবাস৷
ছবি: Reuters/A. Konstantinidis
শুধু সিরীয়রা....
রাতেও জাহাজের সামনে লম্বা লাইন৷ তবে বলা হচ্ছে, ‘‘আগে শুধু সিরীয়রা ঢুকবেন, অন্যরা নয়৷’’ যুদ্ধের কারণে সিরিয়া থেকে যাঁরা পালিয়ে এসেছে, তাঁদের অগ্রাধিকার দিয়ে বাকিদের দাঁড় করিয়ে রাখা হচ্ছে৷ বিশৃঙ্খলা এড়ানোর জন্যই নেয়া হয়েছে এই ব্যবস্থা৷ কয়েকদিন আগে অন্য দেশ থেকে আসা লোকদের সঙ্গে সিরীয়দের প্রায় মারামারি বেঁধে যাওয়ার উপক্রম হলে কর্তৃপক্ষে সিদ্ধান্ত নেয়, সবার আগে সিরীয়রা, তারপর বাকিরা ঢুকবে জাহাজে৷
ছবি: Reuters/A. Konstantinidis
সবার লক্ষ্য ইউরোপ
এখানে আগতদের মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি মানুষ এসেছে সিরিয়া থেকে৷ এশিয়ার তিন মুসলিম প্রধান দেশ আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও ইরান আর আফ্রকিার মালি, ইরিত্রিয়া এবং সোমালিয়া থেকেও এসেছেন অনেকে৷ এমনকি ল্যাটিন অ্যামেরিকার মানুষও এসেছে গ্রিসের দ্বীপ কস-এ৷ তুরস্কের ভিসা পাওয়া যায় বেশ সহজে৷ একবার তা পেয়ে গেলেই শুরু হয় গ্রিস হয়ে ইউরোপের বেশি উন্নত দেশগুলোতে প্রবেশের চেষ্টা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Odysseus
‘স্বপ্ন’ মাত্র চার কিলোমিটার দূরে
সিরিয়া এবং আশেপাশের দেশগুলো থেকে মানুষ কোনোরকমে একবার তুরস্কে ঢুকে পড়লেই ইউরোপের ‘স্বপ্নের জগত’ প্রায় হাতের মুঠোয় চলে আসে৷ তুরস্কের রাজধানী ইস্তানবুল থেকে মাত্র চার কিলোমিটার দূরে গ্রিসের কস দ্বীপ৷ ইস্তানবুলে এসে বেশির ভাগ মানুষ শুধু নৌকাটা বদলান, নৌকা বদলেই শুরু করেন কস-এর দিকে যাত্রা৷
ছবি: Getty Images/AFP/B. Kilic
আনন্দাশ্রু
ইরানের এই ভদ্রলোক আনন্দে কাঁদছেন৷ অবশেষে স্ত্রী, সন্তান নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভূখণ্ডে পৌঁছানোর আনন্দ! কিন্তু তিনি জানেন না, এখনো সুন্দর ভবিষ্যতের নিশ্চয়তা পেতে কতকাল কত কাঠখড় পোড়াতে হবে তাঁকে৷
ছবি: Reuters/Y. Behrakis
আশ্রয়হীন
প্রতিদিন ৬০০ থেকে ৮০০ মানুষ আসে কস দ্বীপে৷ ৩০ হাজার মানুষের এই দ্বীপে এখন ৭ হাজার শরণার্থীর বাস৷ অনেকেরই ভাগ্যে আশ্রয় শিবির জোটেনি৷ রাস্তার ধারে খোলা আকাশের নীচেই কোনো রকমে দিনাতিপাত করছেন তাঁরা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Odysseus
সিরিয়া থেকে আসছে অনেক পরিবার
এতদিন সিরিয়া থেকে তরুণরাই বেশি আসতেন৷ ছোট বাচ্চা কোলে নিয়ে নারীরা এসেছেন, তরুণী বা অন্তঃসত্ত্বাও এসেছেন অনেক৷ কিন্তু আজকাল সিরিয়া থেকে পুরো পরিবারই চলে আসছে৷ নতুন দেশের অজানা পরিবেশে মুসলিম নারীদের জন্য গোপনীয়তা রক্ষা করা অবশ্য একটু বেশি কঠিন৷
ছবি: Getty Images/AFP/L. Gouliamaki
দীর্ঘ প্রতীক্ষা
কস দ্বীপে অভিবাসন প্রত্যাশীদের রেজিস্ট্রেশন করানোটা বাধ্যতামূলক৷ কিন্তু এই নিয়মে দরকারি কাগজপত্র পাওয়াটা অনেক সময় কঠিন হয়ে পড়ে৷ কর্তৃপক্ষের কাছে মজুদ সরঞ্জাম হঠাৎ শেষ হয়ে যায়৷ তখন তিন-চার সপ্তাহও অপেক্ষা করতে হয় শরণার্থীদের৷
ছবি: picture-alliance/AA/E. Atalay
9 ছবি1 | 9
আরেক খবরে জানা যায়, লিবিয়া উপকূলে দুটি নৌকা ডুবে যাওয়ায় দু' শ-রও বেশি অভিবাসনপ্রত্যাশীর মৃত্যুর আশঙ্কা করা হচ্ছে৷ ডুবে যাওয়া নৌকা দুটিতে আফ্রিকার কয়েকটি দেশের নাগরিকই বেশি ছিল, আর ছিল পাকিস্তান, সিরিয়া, মরক্কো এবং বাংলাদেশের নাগরিক৷ সব মিলিয়ে প্রায় সাড়ে চারশ মানুষ নিয়ে ইউরোপে প্রবেশের চেষ্টা করতে গিয়ে লিবিয়ার জুয়ারা শহরের কাছেই নৌকা দুটি ডুবে যায়৷
ভূমধ্যসাগরে ডুবে যাওয়া নৌকা দুটি থেকে এ পর্যন্ত ২০১ জনকে উদ্ধার করা সম্ভব হলেও অনেকেই এখনো আটকা পড়ে আছেন৷ উদ্ধারকৃতদের মধ্যে ১৪৭ জনকে অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে লিবীয় পুলিশ৷