ব্রাসেলসভিত্তিক ইসলামিক স্টেট জঙ্গি যারা প্যারিস হামলার জন্য দায়ী তারা আবারও ফ্রান্সে হামলার পরিকল্পনা করেছিল বলে জানিয়েছেন বেলজিয়ামের ফেডারেল প্রসিকিউটর৷
বিজ্ঞাপন
কিন্তু প্যারিস হামলার তদন্তকাজে গতি দেখে তারা ফ্রান্সের পরিবর্তে ব্রাসেলসে হামলা করে বলে রবিবার এক বিবৃতিতে জানান তিনি৷ ‘‘তদন্তে পাওয়া অনেক উপাদান থেকে এটা প্রমাণিত যে, ইসলামিক স্টেট জঙ্গিরা ফ্রান্সে হামলার পরিকল্পনা করেছিল৷ কিন্তু প্যারিস হামলার তদন্তে কাজে আশ্চর্য হয়ে তারা তাড়াহুড়ো করে ব্রাসেলসে হামলার সিদ্ধান্ত নেয়৷''
বেলজিয়ামের প্রসিকিউটরের এমন বিবৃতির প্রতিক্রিয়ায় ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী মানুয়েল ভালস বলেন, ‘‘এই বিবৃতি এটাই প্রমাণ করে যে, পুরো ইউরোপ বিশেষ করে ফ্রান্স বিশাল হুমকির মুখে রয়েছে৷'' ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ব্যার্না কাজন্যোভ বলেছেন, অনির্দিষ্টকালের জন্য ফ্রান্সে উচ্চ সতর্কতা ব্যবস্থা জারি থাকবে৷
এদিকে, ব্রাসেলস বিমানবন্দরে হামলার সঙ্গে জড়িত তিনজনের যে ছবি প্রকাশিত হয়েছে তার মধ্যে হ্যাট পরা ব্যক্তির বিরুদ্ধে ‘সন্ত্রাসের সহায়তায় হত্যা'-র অভিযোগে মামলা করা হয়েছে বলে জানান প্রসিকিউটর৷
হ্যাট পরা ব্যক্তির নাম মোহামেদ আবরিনি৷ মরক্কান বংশোদ্ভূত ৩১ বছর বয়সি এই বেলজিয়ান বিষয়টি স্বীকার করেছেন বলে জানিয়েছেন বেলজিয়ামের প্রসিকিউটর৷
জঙ্গি হামলার সঙ্গে জড়িত সন্দেহভাজন অনেকের মতো আবরিনিও বড় হয়েছে ব্রাসেলসের মোলেনবেক এলাকায়৷ সমালোচকরা বলছেন, জঙ্গিরা ঐ এলাকার অনেক মুসলিম তরুণের মনে জঙ্গিবাদের বীজ বপন করতে সক্ষম হয়েছে এবং সেটি ঠেকাতে সরকার যথেষ্ট পদক্ষেপ নেয়নি৷ সিরিয়ায় ইসলামিক স্টেট-এর হয়ে যুদ্ধে অংশ নেয়া বিদেশি নাগরিকদের অনেকেই বেলজিয়ামের৷ দেশটির জনসংখ্যার অনুপাতে বেলজিয়াম থেকেই সবচেয়ে বেশি নাগরিক সিরিয়ায় গেছে বলে জানা যায়৷
বিশ্ব কি ধ্বংসের পথে?
চলতি বছরের শুরুতেই সন্ত্রাসী হামলার ব্যাপকতা দেখে এই প্রশ্ন জাগতেই পারে৷ গত বছরের নভেম্বরে প্যারিসে হামলায় নিহত হন ১৩০ জন৷ সেই ঘটনার পর একের পর এক হামলায় তটস্থ বিশ্ব৷
ছবি: Reuters/U. Bektas
ইস্তানবুলে বোমা হামলা: জানুয়ারি ১২
ইস্তানবুলের এক জনপ্রিয় চত্বরে আত্মঘাতী বোমা হামলায় প্রাণ হারান ১৩ ব্যক্তি, আহত বেশ কয়েকজন৷ নিহতদের মধ্যে কয়েকজন বিদেশি ছিলেন৷ আত্মঘাতী হামলাকারী ছিল তথাকথিত ‘ইসলামিক স্টেট’ বা আইএস অনুসারী সিরীয় নাগরিক নাবিল ফাদিলা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/P. Kneffel
জাকার্তায় হামলা: জানুয়ারি ১৪
ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তায় সিরিজ বোমা হামলায় প্রাণ হারান কমপক্ষে আট ব্যক্তি, আহত ২৪৷ ‘ইসলামিক স্টেট’ সেই হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছে৷
ছবি: Getty images/AFP/Str
ওয়াগাডুগুর হোটেলে হামলা: জানুয়ারি ১৫
আল-কায়দা সমর্থিত জঙ্গিরা বুর্কিনা ফাসোর রাজধানী ওয়াগাডুগুতে একটি হোটেল হামলা চালায়৷ এতে ১৮টি দেশের কমপক্ষে ২৩ ব্যক্তি নিহত হন৷ ফরাসি এবং সেদেশের নিরাপত্তা বাহিনীর যৌথ অপারশনে হোটেলটি জঙ্গিমুক্ত হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/W. Elsen
আঙ্কারায় হামলা: ফেব্রুয়ারি ১৭
তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারায় বাসের বহরে হামলার দায় স্বীকার করেছে ‘কুর্দিশ ফ্রিডম ফ্যালকনস’ বা টিএকে৷ হামলায় ২৯ ব্যক্তি নিহত এবং কমপক্ষে ৬০ ব্যক্তি আহন হন যাদের মধ্যে সাধারণ মানুষ ছাড়াও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা রয়েছেন৷
ছবি: Reuters/Ihlas News Agency
মোগাদিশুতে হোটেলে হামলা: ফেব্রুয়ারি ২৬
সোমালিয়ার রাজধানী মোগাদিশুর একটি হোটেলের মধ্যে নিজের গাড়িতে বিস্ফোরণ ঘটায় এক আত্মঘাতী বোমারু৷ এতে ১৫ ব্যক্তি নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হন৷ আল-শাবাব জঙ্গি গোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পৃক্তরা এই হামলা চালিয়েছে বলে জানা গেছে৷
ছবি: Reuters/F. Omar
আইভরি কোস্টে হোটেলে গুলিবর্ষণ: মার্চ ১৩
আল-কায়দার উত্তর আফ্রিকা শাখার সদস্যরা আইভরি কোস্টের গ্রান্ড ব্যাসামে একটি হোটেলে গুলিবর্ষণ করে৷ এতে ১৮ ব্যক্তি নিহত এবং ৩৩ জন আহত হন৷
ছবি: Reuters/L. Gnago
আঙ্কারায় বোমা হামলা: মার্চ ১৩
তুরস্কে একের পর এক বোমা হামলা ঘটছে৷ সেদেশের রাজধানীর কেন্দ্রে বিস্ফোরকভর্তি একটি গাড়ির বিস্ফোরণ ঘটে ১৩ মার্চ৷ এতে প্রাণ হারান ৩৭ ব্যক্তি, আহত ১২৭৷ এই হত্যাকাণ্ডেরও দায় স্বীকার করেছে টিএকে৷
ছবি: Reuters/U. Bektas
ব্রাসেলসে হামলা: মার্চ ২২
ব্রাসেলসে একাধিক সন্ত্রাসী হামলায় নিহত কমপক্ষে ৩৪ ব্যক্তি, আহত ১৭০৷ সেদিন সকাল আটটার দিকে ব্রাসেলস বিমানবন্দরে দু’টি বিস্ফোরণ ঘটে৷ আর তার একঘণ্টা পর মোলেনবেক মেট্রো স্টেশনে আরেকটি বিস্ফোরণ ঘটে৷ জঙ্গি গোষ্ঠী ‘ইসলামিক স্টেট’ এ সব হামলার দায় স্বীকার করেছে৷