বাংলাদেশে অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাইয়ের কারণে আরো একটি লঞ্চ দুই শাতাধিক যাত্রী নিয়ে পদ্মায় ডুবে গেছে সোমবার৷ উদ্ধারকাজ অবশ্য শুরু হয়েছে ইতিমধ্যেই৷ দুপুর পর্যন্ত ১৫টি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে বলে খবর৷
ছবি: picture-alliance/AP
বিজ্ঞাপন
সোমবার বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে মুন্সিগঞ্জের মাওয়া-কাওড়াকান্দি নৌ-পথে মাওয়া ঘাটে পদ্মা দেড় শতাধিক যাত্রী নিয়ে পিনাক-৬ নামের লঞ্চটি ডুবে যায়৷ লঞ্চটি শরীয়তপুরের কাওড়াকান্দি থেকে মাওয়া লঞ্চঘাটে যাচ্ছিল৷
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কতৃপক্ষ বিআইডাব্লিউটিএ ডয়চে ভেলেকে জানায়, ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী থাকায় প্রচণ্ড স্রোতের কবলে পড়ে লঞ্চটি ডুবে গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে৷
প্রচণ্ড স্রোতের কবলে পড়ে লঞ্চটি ডুবে গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছেছবি: picture-alliance/dpa
লঞ্চটি মাওয়া আসার পথে মাঝনদীতে ডুবে যায়৷ বিআইডাব্লিউটিএ এবং বিআইডাব্লিউটিসি-র টাগ-বোটের সাহায্যে উদ্ধারকাজ চলছে৷ উদ্ধারকারী জাহাজ রুস্তম ঘটনাস্থলে রওয়ানা দিয়েছে৷ এছাড়া উদ্ধার অভিযানে অংশ নিতে ব়্যাবের হেলিকপ্টার ও ডুবুরি পাঠানো হয়েছে বলে ব়্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল জিয়াউল আহসান জানিয়েছেন৷
মাওয়া পুলিশ ফাঁড়ির কর্মকর্তা খালিদ হোসেন জানান, দুপুর পর্যন্ত ঘটনাস্থল থেকে ১৪ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে৷ তবে তাঁদের পরিচয় জানা যায়নি৷ এছাড়া আরো ১১০ জন যাত্রীকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানা গেছে৷
বাংলাদেশে ঈদের আগে ও পরে এ নিয়ে চারটি বড় ধরণের লঞ্চ দুর্ঘটনা ঘটল৷ গত ১৫ই মে মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ার দৌলতপুরের কাছে মেঘনা নদীতে ঝড়ের কবলে পড়ে এমভি মিরাজ-৪ নামে একটি লঞ্চ ডুবে যায়৷ ঐ ঘটনায় নদী থেকে মোট ৫৮ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়৷ এছাড়াও গত ৩০শে জুলাই সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলায় যমুনা নদীতে নৌকাডুবে আট জনের মৃত্যু হয়৷ তার ঠিক দু'দিন আগেই কুষ্টিয়ার পদ্মা নদীতে নৌ-ভ্রমণে গিয়ে দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান ১১ জন৷
নাড়ির টানে বাড়ি ফেরা
ঈদ মানেই আনন্দ আর এই আনন্দ পরিবারের সাথে ভাগাভাগি করে নিতেই বাড়ি ফেরেন মানুষ৷ সেজন্য অনেকেই সারারাত অপেক্ষা করেন ট্রেনের টিকেটের জন্য কিংবা লঞ্চে ওঠেন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে৷ সেরকমই কিছু ছবি পাবেন এখানে৷
ছবি: DW/M. Mamun
টিকিটের জন্য অপেক্ষা
ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে ট্রেনের আগাম টিকেট সংগ্রহের জন্য মানুষের ভিড়৷ আগের দিন রাত থেকে এসব মানুষ দাঁড়িয়েছিলেন টিকেটের জন্য৷ তবে যাত্রীর তুলনায় বাংলাদেশ রেলওয়ের আসন সংখ্যা কম হওয়ায় দিনভর অপেক্ষা শেষে অনেককেই ফিরতে হয় খালি হাতে৷
ছবি: DW/M. Mamun
ঘরমুখো মানুষ
ঢাকার বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশনে ট্রেনের অপেক্ষায় হাজারো ঘরমুখো মানুষ৷ ঈদের সময়ে যাত্রীর চাপের কারণে ট্রেনের সময়সূচি ঠিক রাখতে পারছে না রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ৷ তবে এ চিত্র আগের বছরের তুলনায় এ বছর অনেক ভালো৷
ছবি: DW/M. Mamun
আনন্দ ভাগাভাগি
জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ট্রেনের ছাদে উঠছে হাজারো ঘরমুখো মানুষ৷ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতেই এতো কষ্ট করে বাড়ি ফেরা৷
ছবি: DW/M. Mamun
নাড়ির টান
ঈদের ছুটিতে ট্রেনের ছাদে চড়ে বাড়ি ফিরছে মানুষ৷ জীবনের ঝুঁকি আছে জেনেও ছাদে চেপে বসেছেন এসব মানুষ৷ ছাদে যাত্রী পরিবহণ নিষিদ্ধ হলেও প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করতে ব্যাকুল মানুষের কাছে সকল নিষেধাজ্ঞাই উপেক্ষিত৷
ছবি: DW/M. Mamun
মানুষের ভিড়
সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে ঘরমুখো মানুষের ভিড়৷ বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোতে যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম নৌপথ৷ অন্যান্য পথের মতো নদীপথেও তাই ঈদ উপলক্ষ্যে মানুষের ভিড় বেশি৷
ছবি: DW/M. Mamun
অন্যরকম আনন্দ
লঞ্চের ডেকে গাদাগাদি করে বসে বাড়ি ফিরছেন মানুষ৷ ঈদের সময় লঞ্চগুলোর ডেকে ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহণ করা হয়৷
ছবি: DW/M. Mamun
নারী ও শিশু
ঢাকার সদরঘাটে নৌকা থেকে লঞ্চে উঠছেন যাত্রীরা৷ এভাবে উঠতে গিয়ে প্রায়ই দুর্ঘটনার শিকার হন যাত্রীরা৷ এরপরেও নারী ও শিশুদের নিয়ে এভাবেই লঞ্চে উঠতে দেখা যায় যাত্রীদের৷
ছবি: DW/M. Mamun
খোলা ছাদে
লঞ্চের ডেকে জায়গা না পেয়ে খোলা ছাদে উঠে পড়েছেন হাজারো মানুষ৷ অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাইয়ের ফলে প্রতিবছরই ঈদ মৌসুমে দুর্ঘটনায় পড়ে অনেক নৌযান, প্রাণ হারান অনেকেই৷ তারপরেও থেমে থাকে না অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই৷
ছবি: DW/M. Mamun
ঝুঁকির মধ্যেও আনন্দ
পরিবারের সঙ্গে ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলছেন এসব মানুষ৷ ভুলে গেছেন সরকারের নিষেধাজ্ঞা, নিজ জীবনের নিরাপত্তা৷ ঈদের আগের দিন ঢাকা থেকে দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় ছেড়ে যাওয়া লঞ্চগুলোর চিত্র ছিল একই৷ এ যেন ঝুঁকির মধ্যে আনন্দ যাত্রা!
ছবি: DW/M. Mamun
এই যানজটের শেষ কোথায়?
নৌ ও রেলপথের মতোই সড়ক পথেও যাত্রীর চাপ বেশি৷ অনেকেই তাই বাড়ি ফিরছেন বাসের ছাদে চড়ে৷ তবে এতো কষ্টের পরও কখন বাড়ি ফিরতে পারবেন যাত্রীরা এর কোনো নিশ্চয়তা নেই৷ বাংলাদেশের সড়কপথে ঈদের আগে যাত্রীদের জন্য সবচেয়ে বড় আতঙ্ক হয়ে দাঁড়ায় যানজট৷
ছবি: DW/M. Mamun
মূল লক্ষ্য একসাথে ঈদ করা
ঈদের ছুটিতে বাড়ি ফিরতে ট্রাকে চড়ছেন নিম্ন আয়ের মানুষ৷ এসব মানুষের বেশিরভাগই দিনমজুর৷ তবে টিকেট না পাওয়ায় অনেক মধ্যবিত্তকেও দেখা যায় ট্রাকে উঠতে৷ এভাবেই ট্রাকে চড়ে ৪০০-৫০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে পরিবারের সঙ্গে মিলিত হবেন তাঁরা৷
ছবি: DW/M. Mamun
11 ছবি1 | 11
২০০০ সাল থেকে চলতি বছরের মে মাস পর্যন্ত ১৩ বছরে দেশে লঞ্চ দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ৷ এর মধ্যে শুধু এমভি নাসরীন-১ দুর্ঘটনায় ৩৬ শিশুসহ আট শতাধিক প্রাণ হারায়৷ ২০০৩ সালের ৮ই জুলাই রাতে চাঁদপুরে মেঘনার মোহনায় ঘূর্ণিতে পড়ে দুর্ঘটনাকবলিত হয়েছিল ধারণক্ষমতার প্রায় তিনগুণ যাত্রী নিয়ে চলা ওই লঞ্চ৷ এক হাজার যাত্রীর ধারণক্ষমতা থাকলেও লঞ্চটিতে যাত্রী ছিল তিন হাজার৷
বাংলাদেশ সোসাইটি অফ মাস্টার মেরিনার্স-এর নৌ দুর্ঘটনা নিয়ে তদন্তে দেখা যায় যে, শতকরা ৩৪ ভাগ লঞ্চ দুর্ঘটনার কারণ অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই৷ কারণ হিসেবে এটি শীর্ষে রয়েছে৷ সোসাইটি অফ মাস্টার মেরিনার্সের সভাপতি ক্যাপ্টেন এম আনামের মতে লঞ্চ দুর্ঘটনার ১০টি কারণ তাঁরা চিহ্নিত করেছেন৷ অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই ছাড়াও নির্মাণ ত্রুটি, চালকের গাফিলতি এবং বিরূপ আবহাওয়া লঞ্চ দুর্ঘটনার প্রধান কারণ৷