কুঁড়িগ্রামে একজন ধর্মান্তরিত খ্রিষ্টান মুক্তিযোদ্ধাকে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা৷ নাম হোসেন আলী৷ ধারণা করা হচ্ছে দুর্বৃত্তরা উগ্রবাদী গ্রুপের সদস্য৷ অতীতের মতো তিনজন মোটরসাইকেলে এসে তাঁকে কুপিয়ে হত্যা করে পালিয়ে যায়৷
ছবি: bilderbox
বিজ্ঞাপন
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল সাতটার দিকে মুক্তিযোদ্ধা হোসেন আলী তাঁর বাসার পাশের রাস্তায় হাঁটছিলেন৷ এ সময় একটা মোটরসাইকেলে তিন দুর্বৃত্ত এসে তাঁকে পেছন থেকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাথারি কুপিয়ে হত্যা করে৷ আর হত্যার পর দুর্বৃত্তরা ককটেল ফাটিয়ে পালিয়ে যায়৷
নিহত হোসেন আলী (৬৮) ১৭ বছর আগে স্বপরিবারে ধর্মান্তরিত হয়ে খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করেন৷ কুঁড়িগ্রামের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মাসুদুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, ‘‘বিষয়টির তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হচ্ছে৷ আপাতত তদন্তের স্বার্থে এখনই পুরো বিষয়টি বলা যাচ্ছে না৷ তবে উগ্রবাদীদের হাতে আগের হত্যাকাণ্ডগুলোর সঙ্গে এই হত্যাকাণ্ডের ধরণ মিলে যায়৷''
বাংলাদেশে জঙ্গি হামলার শিকার যারা
চলতি বছর ইসলামপন্থিরা একের পর এক হামলা চালিয়ে বাংলাদেশকে কাঁপিয়ে দিয়েছে৷ এতে প্রাণ হারিয়েছেন বেশ কয়েকজন৷ চলুন জানা যাক ২০১৫ সালের কবে, কারা হামলার শিকার হয়েছেন...৷
ছবি: Getty Images/AFP/Uz Zaman
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ব্লগার খুন
একুশে বইমেলা থেকে ফেরার পথে ২৭ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে খুন হন ব্লগার এবং লেখক অভিজিৎ রায়৷ কমপক্ষে দুই দুর্বৃত্ত তাঁকে কুপিয়ে হত্যা করে৷ এসময় তাঁর স্ত্রী বন্যা আহমেদও গুরুতর আহত হন৷ বাংলাদেশি মার্কিন এই দুই নাগরিককে হত্যার দায় স্বীকার করেছে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি গোষ্ঠী ‘আনসারুল্লাহ বাংলা টিম’৷ পুলিশ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে একাধিক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Uz Zaman
বাড়ির সামনে খুন
ব্লগার ওয়াশিকুর রহমান বাবুকে হত্যা করা হয় ঢাকায়, গত ৩০ মার্চ৷ তিন দুর্বৃত্ত মাংস কাটার চাপাতি দিতে তাঁকে কোপায়৷ সেসেময় কয়েকজন হিজরে সন্দেহভাজন দুই খুনিকে ধরে ফেলে, তৃতীয়জন পালিয়ে যায়৷ আটকরা জানায়, তারা মাদ্রাসার ছাত্র ছিল এবং বাবুকে হত্যার নির্দেশ পেয়েছিল৷ কে বা কারা এই হত্যার নির্দেশ দিয়েছে জানা যায়নি৷ বাবু ফেসবুকে ধর্মীয় উগ্রপন্থিদের বিরুদ্ধে লিখতেন৷
ছবি: Munir Uz Zaman/AFP/Getty Images
সিলেটে আক্রান্ত মুক্তমনা ব্লগার
শুধু ঢাকায় নয়, ঢাকার বাইরে ব্লগার হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে৷ গত ১২ মে সিলেটে নিজের বাসার কাছে খুন হন নাস্তিক অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট এবং ব্লগার অনন্ত বিজয় দাস৷ ভারত উপমহাদেশের আল-কায়েদা, যাদের সঙ্গে ‘আনসারুল্লাহ বাংলা টিম’-এর সম্পর্ক আছে ধারণা করা হয়, এই হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছে৷ দাস ডয়চে ভেলের দ্য বব্স জয়ী মুক্তমনা ব্লগের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন৷
ছবি: picture-alliance/EPA/Str
বাড়ির মধ্যে জবাই
ব্লগার নিলয় চট্টোপাধ্যায়কে, যিনি নিলয় নীল নামেই বেশি পরিচিত ছিলেন, হত্যা করা হয় ঢাকায় তাঁর বাড়ির মধ্যে৷ একদল যুবক বাড়ি ভাড়ার আগ্রহ প্রকাশ করে ৮ আগস্ট তাঁর বাড়িতে প্রবেশ করে এবং তাঁকে কুপিয়ে হত্যা করে৷ নিজের উপর হামলা হতে পারে, এমন আশঙ্কায় পুলিশের সহায়তা চেয়েছিলেন নিলয়৷ কিন্তু পুলিশ তাঁকে সহায়তা করেনি৷ ‘আনসারুল্লাহ বাংলা টিম’ এই হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছে, তবে তার সত্যতা যাচাই করা যায়নি৷
ছবি: Getty Images/AFP/Uz Zaman
জগিংয়ের সময় গুলিতে খুন বিদেশি
গত ২৮ সেপ্টেম্বর রাতে জগিং করার সময় ঢাকার কূটনৈতিক এলাকায় খুন হন ইটালীয় এনজিও কর্মী সিজার তাবেলা৷ তাঁকে পেছন থেকে পরপর তিনবার গুলি করে দুর্বৃত্তরা৷ জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট বা আইএস এই হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছে বলে দাবি করেছে জিহাদিদের অনলাইন কর্মকাণ্ডের দিকে নজর রাখা একটি সংস্থা৷ তবে বাংলাদেশে সরকার এই দাবি অস্বীকার করে বলেছে ‘এক বড় ভাইয়ের’ তাঁকে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/ A.M. Ahad)
রংপুরে নিহত এক জাপানি
গত ৩ অক্টোবর রংপুরে খুন হন জাপানি নাগরিক হোশি কুনিও৷ মুখোশধারী খুনিরা তাঁকে গুলি করার পর মোটরসাইকেলে করে পালিয়ে যায়৷ ইসলামিক স্টেট এই হত্যাকাণ্ডেরও দায় স্বীকার করেছে, তবে সরকার তা অস্বীকার করেছে৷ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বাস করেন না যে তাঁর দেশে আন্তর্জাতিক জঙ্গি গোষ্ঠীটির উপস্থিতি রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
হোসনি দালানে বিস্ফোরণ, নিহত ১
গত ২৪ অক্টোবর ঢাকার ঐতিহ্যবাহী হোসনি দালানে শিয়া মুসলমানদের আশুরার প্রস্তুতির সময় বিস্ফোরণে এক কিশোর নিহত এবং শতাধিক ব্যক্তি আহত হন৷ বাংলাদেশে এর আগে কখনো শিয়াদের উপর এরকম হামলায় হয়নি৷ এই হামলারও দায় স্বীকার করেছে ইসলামিক স্টেট, তবে সরকার সে দাবি নাকোচ করে দিয়ে হামলাকারীরা সম্ভবত নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি গোষ্ঠী জেএমবি-র সদস্য৷ সন্দেহভাজনদের একজন ইতোমধ্যে ক্রসফায়ারে মারা গেছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Zaman
ঢাকায় প্রকাশক খুন
গত ৩১ অক্টোবর ঢাকায় দু’টি স্থানে কাছাকাছি সময়ে দুর্বৃত্তরা হামলা চালায়৷ এতে খুন হন এক ‘সেক্যুলার’ প্রকাশক এবং গুরুতর আহত হন আরেক প্রকাশক ও দুই ব্লগার৷ নিহত প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপনের সঙ্গে ঢাকায় খুন হওয়া ব্লগার অভিজিৎ রায়ের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল৷ জঙ্গি গোষ্ঠী ‘আনসার-আল-ইসলাম’ হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Uz Zaman
প্রার্থনারত শিয়াদের গুলি, নিহত ১
গত ২৭ নভেম্বর বাংলাদেশের বগুড়ায় অবস্থিত একটি শিয়া মসজিদের ভেতরে ঢুকে প্রার্থনারতদের উপর গুলি চালায় কমপক্ষে পাঁচ দুর্বৃত্ত৷ এতে মসজিদের মুয়াজ্জিন নিহত হন এবং অপর তিন ব্যক্তি আহত হন৷ তথকথিত ইসলামিক স্টেট-এর সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ততা দাবি করা স্থানীয় একটি গোষ্ঠী হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
9 ছবি1 | 9
হামলা-হত্যার মোটরসাইকেল স্টাইল
গত ছ'মাসে বিদেশি নাগরিক হত্যাসহ, ধর্মযাজক, পুরোহিত এবং পুলিশ হত্যার ঘটনা বিশ্লেষণ করলে একটি বিষয় স্পষ্ট হয় যে, প্রতিটি ঘটনাতেই দুর্বৃত্তরা মোটরসাইকেলে গিয়ে হামলা চালায়৷ আর প্রতিটি ক্ষেত্রেই মোটরসাইকেলের আরোহী ছিল কম-বেশি তিনজন৷ তাদের হামলার ধরণও এক৷ অর্থাৎ তারা কুপিয়ে বা জবাই করে হত্যা করে৷ মঙ্গলবার কুঁড়িগ্রামে হোসেন আলীকেও ঐ একইভাবে হত্যা করা হয়৷
এর আগে গত ২১শে ফেব্রুয়ারি সকালে পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে সন্তগৌরীয় মঠের অধ্যক্ষ যজ্ঞেশ্বর রায়কে (৫০) গলা কেটে হত্যা করা হয়৷ হামলাকারী ছিল তিনজন এবং তারাও এসেছিল মোটরসাইকেলে৷
গত ২৮শে সেপ্টেম্বর গুলশানের ৯০ নম্বর সড়কে দুর্বৃত্তরা গুলি করে ইটালির নাগরিক তাবেলা সিজারকে হত্যা করে৷ এখানেও হত্যাকারীরা আসে মোটরসাইকেলে চড়ে৷
ধর্মবিশ্বাস, ধর্মান্তর এবং ধর্মের স্বাধীনতা
ডেভিড স্ট্যাং খ্রিষ্টান থেকে মুসলমান হয়েছেন৷ তবে তিনি সালাফিস্টদের উগ্রতা এড়িয়ে চলেন৷ জার্মানিতে অনেকেই মনে করেন, মানবাধিকারগুলোর মধ্যে ধর্মের স্বাধীনতাটাও খুব গুরুত্বপূর্ণ৷এসব নিয়েই আজকের ছবিঘর৷
ছবি: picture-alliance/dpa
কৌতূহল
ডেভিড স্ট্যাংয়ের কৈশোর থেকেই ধর্মের প্রতি বেশ অনুরাগ৷ নিয়মিত গির্জায় যেতেন, বাইবেল পড়তেন৷ তখন সবকিছু বুঝতে পারতেন না৷ অনেক প্রশ্ন জাগতো৷ কিন্তু উত্তর জানা হতো না৷ এখনো মনে আছে, দম্পতিদের নিয়ে একটা প্রশ্ন জেগেছিল, কিন্তু গির্জার পাদ্রী সে প্রশ্নের উত্তর তাঁকে বলেননি৷
ছবি: DW/K. Dahmann
হতাশা এবং মুসলমান হওয়া
একসময় ক্যাথলিক চার্চ, অর্থাৎ ক্যাথলিক খ্রিষ্টানদের গির্জা সম্পর্কে কেমন যেন হতাশ হয়ে পড়লেন ডেভিড স্ট্যাং৷ অন্য ধর্ম সম্পর্কে জানার চেষ্টা শুরু করলেন৷ এক মুসলিম আইনজীবীর সঙ্গে পরিচয় হলো৷ তিনি বললেন, ‘‘ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করো৷’’ তাঁর কথা মেনে একসময় সত্যিই মুসলমান হয়েছেন এবং সেই সুবাদে সবকিছুর নতুন মানেও খুঁজে পেয়েছেন স্ট্যাং৷
ছবি: DW/K. Dahmann
ধর্ম চর্চার দীর্ঘ প্রক্রিয়া
ডেভিড স্ট্যাং মনে করেন, ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার মানে হলো, নতুন করে অনেক কিছু শেখা৷ তিনি জানতেন, ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করলে মদ্যপান করা এবং শূকরের মাংস খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে৷ রাখতে হবে দাড়ি৷ যিনি তাঁকে মুসলমান হতে বলেছিলেন, তিনি এ-ও বলেছিলেন যে, মুসলিম হওয়ার অনুভূতিটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, তাই প্রক্রিয়াটাও অত্যন্ত দীর্ঘ৷
ছবি: DW/K. Dahmann
বিশ্বাসে আপোশ
কাজের সূত্রে ডেভিড স্ট্যাংকে প্রতিদিন হানোফার-বন যাওয়া-আসা করতে হতো৷ দিনে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া সব সময় হয়ে উঠতো না৷ তাই সকাল আর সন্ধ্যার নামাজের সময়টা বাড়িয়ে নিয়েছিলেন৷ তিনি মনে করেন, জীবনের সঙ্গে বিশ্বাসের মেলবন্ধন ঘটানোটাই আসল৷
ছবি: DW/K. Dahmann
উগ্রতা পরিহার
২০১২ সালে উগ্র সালাফিস্টদের সহিংসতা দেখেছেন ডেভিড৷ তারা যেভাবে সন্ত্রাসবাদের পক্ষে যুক্ত দেখায়, তা মানতে পারেননি তিনি৷ সন্ত্রাসবাদীদের মতো ভয় দেখাতে তারা গলার কাছে বোমাও ঠেকায়৷ সালাফিস্ট সম্পর্কে তাঁর একটাই কথা, ‘‘আমি এমন কিছুর সঙ্গে থাকতে চাইনা৷’’
ছবি: picture-alliance/dpa
ক্যাথলিক চার্চ ছাড়লেন উটে
উটে লাস-এর জন্ম ক্যাথলিক পরিবারে৷ ধর্মতত্ব নিয়ে পড়াশোনা করতে আগ্রহী ছিলেন৷ কিন্তু ধর্মতত্ত্ব নিয়ে পড়াশোনা করতে গেলে কিছু সমস্যাও যে হবে তা তিনি বুঝতেন৷ উটে বুঝতেন, ‘‘ক্যাথলিক থাকলে ধর্মতাত্ত্বিক হয়েও তেমন কিছু করতে পারবো না৷’’ এ সব ভেবে চার্চে যাওয়া বন্ধ করে দিলেন উটে৷
ছবি: DW/K. Dahmann
অন্তর্দ্বন্দ্ব...
উটের স্বামী প্রটেস্ট্যান্ট হলেন৷ ফলে এবার প্রটেস্ট্যান্টদের গির্জায় যাওয়ার সুযোগ পেলেন উটে৷ তাঁর ছেলেটা সমবয়সিদের সঙ্গে খেলতো৷ ওরও চার্চে যাওয়ার ইচ্ছা৷ কয়্যারে যোগ দিতে চায় সে৷ এ সব বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পাঁচ বছর সময় নিয়েছিলেন উটে৷ নারী যাজক আনেগ্রেট কোহেন (বাঁ দিকে) এবং নিনা গুটমান (মাঝে) উটের এ সব অন্তর্দ্বন্দ্ব সমাধানে সহায়তা করেছিলেন৷
ছবি: DW/K. Dahmann
সহনশীলতা
ব্যাপারটিকে উটের বন্ধুরাও খুব ভালোভাবেই নিয়েছিলেন৷ বন্ধুদের কাছ থেকে সবুজ সংকেত পেয়ে দীক্ষা নিয়ে চার্চে যাওয়া শুরু করলেন উটে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
গির্জায় ভিড় কমছে
কয়েক বছর ধরে জার্মানিতে লোকজনের গির্জায় যাওয়ার প্রবণতা কমছে৷ গির্জার সদস্য বাড়াতে নেয়া হচ্ছে বিশেষ উদ্যোগ৷ বন শহরের ক্যাথলিক তথ্যকেন্দ্র ফিডেস-এ ধর্মের বিষয়ে সবাইকে আগ্রহী করে তোলার কাজটি করেন যাজক টোমাস ব্যার্নার্ড (ডানে)৷
ছবি: DW/K. Dahmann
কারণ কেলেঙ্কারি?
গির্জায় আর আগের মতো বেশি মানুষ আসছে না কেন? অনেকে মনে করেন, সাম্প্রতিক কালে পাদ্রিদের যৌন কেলেঙ্কারিতে জড়ানোর খবর এক্ষেত্রে বেশ প্রভাব বিস্তার করেছে৷ যাজক টোমাস ব্যার্নার্ডও এ সম্পর্কে কিছুটা একমত৷ তিনি মনে করেন, এসব খবর বেশি প্রচার করে মিডিয়া বেশ ক্ষতি করেছে৷
ছবি: DW/K. Dahmann
ধর্মের স্বাধীনতা
ধর্মান্তরিত হয়েছেন, এমন অনেকেই মিউনিখ শহরের একটা প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছিলেন৷ প্রদর্শনীতে মানবাধিকারের সঙ্গে সঙ্গে ধর্মের স্বাধীনতার কথাও প্রচার করা হয়৷
ছবি: Jüdisches Museum München 2013
11 ছবি1 | 11
৩রা অক্টোবর রংপুরে জাপানি নাগরিক হোশি কুনিও হত্যাকাণ্ডও ঘটানো হয় একই স্টাইলে৷ এখানে ঘাতকরা মোটরসাইকেলে এসে হত্যার পর আবার মোটরবাইক যোগেই পালিয়ে যায়৷
এর আগে ৫ই অক্টোবর ঈশ্বরদীতে ফেইথ বাইবেল চার্চের যাজক লুক সরকারকে গলা কেটে হত্যার চেষ্টা করে দুর্বত্তরা৷ তিন যুবক মোটরসাইকেল যোগে ঈশ্বরদী বিমানবন্দর সড়কে ভাড়া বাসায় ঢুকে ধর্মগ্রন্থ পাঠ শোনার কথা বলে তাঁর ওপর হামলা চালায়৷
১৮ই নভম্বের র্দুবৃত্তরা দিনাজপুরে খ্রিষ্টান ধর্মযাজক পিয়ারো পারোলারি পচিমোকে হত্যার চেষ্টা করে৷ তিনজন মোটরসাইকেল আরোহী এ হামলা চালায় বলে জানা গেছে৷ হামলাকারীদের একজনের মাথায় হেলমেট ও অন্য দু'জনের মুখ চাদর দিয়ে ঢাকা ছিল৷
জঙ্গিবাদ নিয়ে নূর খান
This browser does not support the audio element.
তারও আগে ৪ঠা নভেম্বর আশুলিয়ায় পুলিশ চেকপোস্টে তল্লাশির সময় পুলিশের ওপর হামলা এবং হত্যার ঘটনাও ঘটিয়েছে তিন মোটরসাইকেল আরোহী৷ সে সময় এক পুলিশ সদস্যকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছিল৷
পুলিশ ও গোয়েন্দারা যা মনে করেন
পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম জানান, ‘‘আমরা এ পর্যন্ত তদন্তে দেখেছি যে, এই হত্যাকাণ্ডগুলোর সঙ্গে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জেএমবি-র সদস্যরা জড়িত৷ সম্প্রতি তারা কয়েকজন ধর্মীয় পীর এবং আইনজীবীকে হত্যারও পরিকল্পনা করেছিল৷ ঐ আইনজীবী রাষ্ট্রধর্ম নিয়ে উচ্চ আদালতে একটি রিট করেছিলেন৷ সোমবার রাতে এ ধরণের হত্যা পরিকল্পনার সঙ্গে জড়িত চারজন জেএমবি সদস্যকে আটক করা হয়েছে৷'' এই আটক চারজন হলেন, আব্দুর রাজ্জাক উমায়ের, ফয়সাল আহম্মেদ, আহমেদ ফজলে আকবর ও আবু নাঈম মোহাম্মদ জাকারিয়া৷
বিশ্লেষকরা যা বলছেন...
এ নিয়ে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের পরিচালক ও জঙ্গি বিষয়ক গবেষক নূর খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘হামলার ধরণ এবং টার্গেট দেখে এটা নিশ্চিতভাবেই বোঝা যায় যে যারাই এই কাজ করুক না কেন, তাদের উদ্দেশ্য এক৷ তারা একই ধরণের উগ্রবাদী গ্রুপের সদস্য৷ তারা বিদেশি, সংখ্যালঘু এবং ভিন্ন ধর্মীয় চিন্তার মানুষ ও স্থাপনাকে টার্গেট করছে৷''
সাতটি ‘নাস্তিক’ দেশের কথা
বিশ্বে ধার্মিক বেশি, নাকি ‘নাস্তিক’? সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বে বিশ্বাস করেন না এমন মানুষ কোন কোন দেশে সবচেয়ে বেশি? সবচেয়ে বেশি ‘নাস্তিক’ বাস করেন কোন সাতটি দেশে?
ছবি: picture-alliance/ David Wimsett/UPPA/Photoshot
চীনে শতকরা ৯০ ভাগই ‘নাস্তিক’
৬৫টি দেশে জরিপ চালিয়েছিল ‘গ্যালাপ ইন্টারন্যাশনাল’৷ জরিপ থেকে বেরিয়ে আসা তথ্যে দেখা যাচ্ছে, বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ চীনই বিশ্বের সবচেয়ে বেশি নাস্তিকেরও দেশ৷ সে দেশের শতকরা ৯০ ভাগ মানুষই প্রত্যক্ষ ভা পরোক্ষভাবে সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব অস্বীকার করেন৷ চীনের শতকরা ৬১ ভাগ মানুষ সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব সরাসরি অস্বীকার করেন, বাকি ২৯ ভাগ নিজেদের ধর্মে বিশ্বাসী নন বলে দাবি করেছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সুইডেনে ৭৬ শতাংশ
স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশ সুইডেনে সরকারি হিসেব অনুযায়ী মাত্র শতকরা ৮ ভাগ মানুষ উপাসনালয়ে গিয়ে ধর্ম চর্চা করেন৷ তবে গ্যালাপ-এর জরিপ অনুযায়ী, মোট জনসংখ্যার শতকরা ৭৬ ভাগ সৃষ্টিকর্তা আছেন বলে মনে করেন না৷
ছবি: Leif R Jansson/AFP/Getty Images
চেক প্রজাতন্ত্রে সামান্য কম
‘নাস্তিক’ চেক প্রজাতন্ত্রেও খুব বেশি কম নয়৷ মোট জনসংখ্যার মাত্র ৩০ ভাগ মানুষ নিজেদের সরাসরিই ‘নাস্তিক’ বলেন৷ তবে বেশিরভাগ মানুষই নিজেদের ধর্মবিশ্বাস আছে কিনা, তা জানাতেই রাজি নন৷ মাত্র ১২ শতাংশ মানুষ জানিয়েছেন, তাঁরা গির্জায় গিয়ে প্রার্থনা করেন৷ গ্যালাপ-এর জরিপ জানাচ্ছে, সাবেক সমাজতান্ত্রিক দেশটিতে এক হিসেবে শতকরা ৭৫ ভাগ মানুষই নাস্তিক, কেননা তাঁরা ধর্ম বা সৃষ্টিকর্তার গুরুত্ব স্বীকার করেন না৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Xamax
ব্রিটেনে ৬৬ শতাংশ
জরিপে অংশ নেয়া ব্রিটেনের শতকরা ৫৩ জন মানুষ বলেছেন যে, তাঁদের কোনো ধর্মবিশ্বাস নেই৷ আর ১৩ ভাগ সরাসরিই বলেছেন, ‘আমি নাস্তিক’৷
ছবি: Reuters
হংকং ও জাপানে শতকরা ৬২ ভাগ
বিশ্বের ৬৫টি দেশের ৬৪ হাজার মানুষের মাঝে এই জরিপ চালিয়েছে গ্যালাপ৷ হংকংয়ের মানুষদের সম্পর্কেও একটা ধারণা পাওয়া গেছে এই জরিপ থেকে৷ দেখা গেছে, হংকংয়ের শতকরা ৪৩ ভাগ মানুষ প্রত্যক্ষভাবে নাস্তিক৷ বাকি ৫৭ ভাগের মধ্যে ১৯ ভাগকেও আস্তিক অন্তত মনে হয়নি৷ জাপানে প্রত্যক্ষ নাস্তিক শতকরা ৩১ ভাগ হলেও সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বের গুরুত্ব নিয়ে ভাবেন না এমন মানুষও আছে অনেক৷
ছবি: Getty Images/AFP/P. Lopez
জার্মানিতে ৫৯ ভাগ
জার্মানির ৫৯ ভাগ মানুষকেই নাস্তিক হিসেবে দেখিয়েছে গ্যালাপ৷ ইউরোপের অন্যান্য দেশ, যেমন স্পেন, অস্ট্রিয়া এবং ফ্রান্সের নাগরিকদেরও বড় একটা অংশই নাস্তিক৷ বিশ্বের যেসব দেশে অনেক ‘আস্তিক’, সেসব দেশ থেকে অনেক মানুষই এসব ‘নাস্তিক’ দেশে এসে উন্নত জীবনের সন্ধান পেয়েছেন, পাচ্ছেন৷ ইউরোপের বেশ কিছু দেশেই এখনো নাস্তিকরাই সংখ্যাগুরু৷ তবে সংখ্যালঘু আস্তিকদের ধর্ম চর্চায় তাতে কোনো সমস্যা হয় না৷
ছবি: picture-alliance/dpa/K.-J. Hildenbrand
6 ছবি1 | 6
তিনি বলেন, ‘‘এই গোষ্ঠীটি ধর্মান্ধ এবং মৌলবাদী, তারা ধর্মনিরপেক্ষতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে৷ তারা হয়ত আরও বড় ধরণের হামলার পরিকল্পনা করছে৷''
নূর খান বলেন, ‘‘এর সঙ্গে বিশ্বে যে জঙ্গিবাদের উত্থান দেখা যাচ্ছে, তার সম্পর্ক আছে৷ তাই সরকারের উচিত হবে অন্ধকারে সুঁই না খুঁজে জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে এই অপতৎপরতা ও হামলাকে প্রতিহত করা৷''
আপনার কী মনে হয় বন্ধু? সরকার কি পারবে এহেন অপতৎপরতা ও হামলাকে প্রতিহত করতে? লিখুন নীচের ঘরে৷