আবারো সহিংস হয়ে উঠেছে গাজা উপত্যকা৷ বুধবার রাতে সেখানে উপর্যুপরি বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল৷ এতে এক শিশুসহ তিনজন নিহত হয়েছেন৷
বিজ্ঞাপন
ফিলিস্তিনি হামাস বাহিনীর রকেট বোমা হামলার জবাবে ইসরায়েল এই হামলা চালায়৷ প্রায় দেড়শ' রকেটের বেশিরভাগই খোলা জায়গায় পড়ে৷ তবে অন্তত দু'টি আঘাত হেনেছে গাজা থেকে মাইলখানেক দূরের ইসরায়েলি শহর স্ডেরটে৷ এতে বাসিন্দাদের আশ্রয়কেন্দ্রে যাবার জন্য পুরো শহরে রাতভর অ্যালার্ম বাজতে থাকে৷
ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জানায়, এ সব রকেট হামলায় অন্তত চারজন আহত হন৷ এর মধ্যে একজন থাই নারীও আছেন৷
এদিকে হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইসরায়েলের পালটা হামলায় নিহতদের মধ্যে এনাস খামাশ নামের এক ২৩ বছর বয়সি নারী ও তাঁর ১৮ মাসের এর শিশুসন্তান রয়েছেন৷ ঐ নারীর স্বামী আহত হন৷ কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে যে, খামাশ গর্ভবতী ছিলেন৷
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আরো জানায়, বিমান হামলায় এক হামাস সদস্যও নিহত হন৷ এছাড়া আহত হন আরো ১২ জন৷
দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধবিরতির জন্য জাতিসংঘ ও মিশরের অব্যাহত প্রচেষ্টার মাঝেই গত জুলাই থেকে এ নিয়ে তৃতীয়বার সহিংস হয়ে উঠেছে গাজা-ইসরাইল সীমান্ত৷
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বলছে, তারা ১৪০টি হামাস ঘাঁটি লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে৷ এ সব ঘাঁটির মধ্যে হামাসের ব্যারাক ও অস্ত্র তৈরির কারখানাও রয়েছে৷
গাজা উপত্যকায় কেন সংঘাত?
এই সংঘাত কয়েক শতাব্দী প্রাচীন৷ কিন্তু এ বছর কিছু ঘটনা ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যকার সংঘাতকে আরো উস্কে দিয়েছে, যার ফলে গাজা উপত্যকায় উত্তাপ বিরাজ করছে৷
ছবি: Reuters/A. Cohen
ঝরলো প্রাণ আরো তিন ফিলিস্তিনির
গাজা সীমান্তে ইসরায়েলি সেনাদের গুলিতে আরো তিন জন ফিলিস্তিন নিহত হয়েছেন৷ ২০১৮ সালের ৩০ এপ্রিল এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত এটিই সংঘাতের সর্বশেষ ঘটনা৷ গত মার্চ থেকেই ইসরায়েলি সেনারা ফিলিস্তিনিদের ওপর বার বার গুলি চালিয়েছে, যার কঠোর সমালোচনা করে আসছে জাতিসংঘ৷
ছবি: Imago/Zuma/A. Amra
ফেব্রুয়ারি ২০১৮: সীমান্তে বোমা
গত ১৭ ফেব্রুয়ারি সীমান্তে বোমা বিস্ফোরণে চার ইসরায়েলি সেনা আহত হন৷ইসরায়েল ফিলিস্তিনের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন হামাসকে এর জন্য দায়ী করে গাজায় হামাসকে লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালায়৷
ছবি: Reuters/I. Abu Mustafa
জাতিসংঘের ত্রাণকার্য
জাতিসংঘ গাজা উপত্যকার অর্ধেকেরও বেশি মানুষের জন্য ত্রাণ সরবরাহ করে৷ গত ২৫ ফেব্রুয়ারি তারা সতর্ক করে যে, গাজায় দুর্ভিক্ষ হানা দিতে পারে৷ যুক্তরাষ্ট্র ফিলিস্তিনে জাতিসংঘের ত্রাণ সংস্থায় তাদের প্রদেয় সংস্থান বন্ধ করে দেয়, যেন সমস্যা সমাধানে ফিলিস্তিনিরা ইসরায়েলের সঙ্গে আলোচনা করে৷ পরে ত্রাণ সংস্থাটি বলে, জুলাই পর্যন্ত রসদ আছে তাদের কাছে৷
ছবি: picture-alliance/Zuma/S. Jarar'Ah
ফিলিস্তিনি প্রধানমন্ত্রীর সফর
পশ্চিমতীর ভিত্তিক ফাতাহ গ্রুপের ফিলিস্তিনি প্রধানমন্ত্রী রামি হামদাল্লাহ’র নেতৃত্বে একটি দল গত ১৩ মার্চ গাজা সফর করেন৷ গাজায় জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হওয়ার জন্য হামাসকে দুষছে ফিলিস্তিনি সরকার৷ জবাবে হামাস বলেছে, এ ধরনের মন্তব্য গাজা ও পশ্চিমতীরের মধ্যে একতার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে৷
ছবি: Reuters/I. Abu Mustafa
ইসরায়েলে আবারো বিমান হামলা
১৮ মার্চ গাজা-ইসরায়েল সীমান্তে বোমা বিস্ফোরণে কেউ আহত না হলেও ইসরায়েল এই সুযোগে আরেক দফা বোমা হামলা চালায় গাজায়৷ হামাসের সুড়ঙ্গগুলোকে ধ্বংস করাই এই হামলার মূল লক্ষ্য ছিল৷ বোমা হামলার কারণে বাস্তুচ্যুত অনেক ফিলিস্তিনি ঘটনার পরের কয়েকদিন ধরে ক্ষতিগ্রস্ত সীমানা দিয়ে ইসরায়েলে চলে যান৷
ছবি: Reuters/I. A. Mustafa
সীমান্তে বিক্ষোভের ঘোষণা
গাজা উপত্যকায় একটি শান্তিপূর্ণ মিছিলের ঘোষণা দেন ফিলিস্তিনিরা৷ তাঁরা পালিয়ে যাওয়া ফিলিস্তিনিদের নিজ ভূমিতে ফিরে আসার অধিকার দেয়ার দাবি জানান৷ ইসরায়েল সেই দাবি মেনে নেয়নি৷
ইসরায়েল দাবি মেনে না নেয়ায় গত ৩০ মার্চ ল্যান্ড ডে’কে সামনে রেখে সীমান্তের দিকে প্রায় ত্রিশ হাজার ফিলিস্তিনি এগোতে থাকেন৷ কেউ কেউ সীমান্ত বেড়ার দিকে এগিয়ে যান৷ ইসরায়েলের সীমান্তরক্ষীরা তাঁদের ওপর গুলিবর্ষণ করলে ১৬ জন নিহত হন৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Hams
আবারো সীমান্তে প্রতিবাদ
৬ এপ্রিল পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে এক সাংবাদিক নিহত হন৷ সেদিন মোট নয় ফিলিস্তিনি গুলিবিদ্ধ হন৷
ছবি: Reuters/I. A. Mustafa
আমরা আঘাত করবো: নেতানিয়াহু
গত ৯ এপ্রিল ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু বলেন, ‘‘আমাদের পরিষ্কার কথা, কেউ আমাদের আক্রমণ করবে মনে হলে, আমরা তা মেনে নেবো না৷ আমরা তাদের আঘাত করবো৷’’
ছবি: Getty Images/AFP/G. Tibbon
তৃতীয়বারের মতো প্রতিবাদ
১৩ এপ্রিল তৃতীয়বারের মতো প্রতিবাদে সীমান্তে জড়ো হন ফিলিস্তিনিরা৷ ৩০ মার্চ থেকে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত মোট ৪৫ জন ফিলিস্তিনি মারা গেছেন৷
ছবি: Reuters/M. Salem
ইসরায়েলি সেনাদের গুলি
ফিলিস্তিনিদের ইট পাটকেলের জবাব টিয়ার গ্যাস, রাবার বুলেট ছাড়াও গুলিবর্ষণ করে দিয়েছে ইসরায়েলি সেনারা৷ এ নিয়ে জাতিসংঘ ব্যাপক সমালোচনা করলেও তা কানে তোলেনি তারা৷ নিরাপত্তা পরিষদে বিষয়টি তোলা হলেও কাজ হয়নি৷
ছবি: Reuters/I.A. Mustafa
11 ছবি1 | 11
তাদের দাবি, বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ১৫০টি রকেট হামলা চালায় হামাস৷ এর মধ্যে ২৫টি ইসরায়েলের এয়ার ডিফেন্স প্রতিহত করতে পারে৷
ওদিকে ইসরায়েলের বিমান হামলার সময় রাতভর গাজা উপত্যকায় ধোঁয়া ও আগুনের ফুলকি দেখা যায়৷
জাতিসংঘের মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাত বিষয়ক দূত নিকোলাই ম্লাদেনভ এক বিবৃতিতে এই হামলা-পালটা হামলায় গভীর শঙ্কা প্রকাশ করেন৷ তিনি উভয়পক্ষকে নিবৃত্ত থাকার আহ্বান জানান৷
মঙ্গলবারের একটি ঘটনাই এবারের উত্তেজনার কারণ৷ সেই ঘটনায় ফিলিস্তিনি সীমানার ভেতর হামাসের সামরিক শাখার দুই সদস্যকে গুলি করে হত্যা করে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী৷
ইসরায়েলের দাবি ছিল, তারা ইসরায়েলি সেনাসদস্যদের দিকে গুলি ছুঁড়ছিল৷ আর হামাসের দাবি ছিল, সেখানে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে প্রশিক্ষণ চলছিল৷
ইসরায়েলের মিডিয়া অবশ্য পরে জানিয়েছে যে, দেশটির সেনাবাহিনী পরে তাদের ভুল বুঝতে পেরেছে যে, হামাস সদস্যরা তাদের দিকে গুলি করছিল না৷ এই ভুলের জন্য মাশুল গুনতে হবে বলে হুঁশিয়ার করে হামাস৷ পরে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী দাবি করে, তাদের বেসামরিক প্রকৌশলিদের ওপর হামলা করা হয়েছে৷ এর বদলা নিতে তারা হামাসের একটি পোস্টে ট্যাঙ্ক থেকে গুলি চালায়৷ এর জবাবেই হামাস রকেট হামলা ও ইসরায়েল বিমান হামলা করে৷