ইউরোপের দেশগুলো থেকে আবার ফেরানো হচ্ছে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের৷ ইউরোস্ট্যাট-এর তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের মে থেকে আগস্ট পর্যন্ত ইইউ-এর ২৭ সদস্য দেশ থেকে প্রায় এক লাখ অভিবাসনপ্রত্যাশীকে দেশে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
সোমবার প্রকাশ করা ইউরোস্ট্যাট-এর পরিসংখ্যান আরো জানাচ্ছে, ওই চার মাসে ইইউভুক্ত দেশগুলো থেকে প্রত্যাবর্তনের নির্দেশ জারির হারও আগের তুলনায় বেড়েছে৷
মে থেকে আগস্ট মাসের মধ্যে ইউরোপের বাইরে থেকে আসা মোট ৯৬ হাজার ৫৫০ জনকে দেশে ফেরার নির্দেশ দেয়া হয়েছে৷ এর মধ্যে ২৩ হাজার ১১০জনকে ইতিমধ্যে নিজের দেশ, অথবা ইউরোপের অন্য একটি দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে৷.২০২১ সালে ওই চার মাসে এর চেয়ে শতকরা ১৫ ভাগ কম মানুষকে প্রত্যাবর্তনের নির্দেশ দেয়া হয়েছিল৷ ফেরত পাঠানো মানুষের তখনচলতি বছরের তুলনায় ১১ ভাগ কম ছিল৷
কোন দেশ থেকে কতজন
চলতি বছরের মে থেকে আগস্ট পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি অভিবাসনপ্রত্যাশীকে নিজ নিজ দেশে ফেরার নির্দেশ দিয়েছে ফ্রান্স৷ মোট ৩৩ হাজার ৪৫০ জনকে এ নির্দেশ দিয়েছে তারা৷ ফ্রান্সের পরে রয়েছে যথাক্রমে গ্রিস (৮ হাজার ৭৫০ জন), জার্মানি (৮ হাজার ২৭৫ জন) এবং ইটালি (৬ হাজার ২০ জন)৷ এ সময়ে ফ্রান্স থেকে দেশে ফিরতে বাধ্য হয়েছেন ৩ হাজার ৫৯০ জন অভিবাসনপ্রত্যাশী৷ জার্মানি থেকেও ওই চার মাসে ২ হাজার ৭৬৫ এবং গ্রিস থেকে ১ হাজার ৭৭০ জনকে ফিরে যেতে হয়েছে৷
কোন দেশে বেশি ফিরছে
ইউরোস্ট্যাটের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের মে থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত ইউরোপ থেকে সবচেয়ে বেশি ফেরানো হয়েছে আলবেনীয়দের৷ তাদের পর রয়েছে যথাক্রমে জর্জিয়া, রাশিয়া এবং তুরস্কের নাগরিকেরা৷
বৃদ্ধির আসল কারণ
বিশ্লেষকরা মনে করেন, মূলত করোনা মহামারি পরিস্থিতির উন্নতির কারণেই অভিবাসনপ্রত্যাশীদের দেশে ফেরানোর উদ্যোগ বাড়ছে৷ ২০২০ সাল, অর্থাৎ করোনা মহামারি শুরুর বছরের মে থেকে আগস্টের মধ্যে মাত্র ৭৬০ জনকে দেশে ফিরিয়েছিল জার্মানি৷ তবে তার আগের বছর একই সময়কালে ফেরানো হয়েছিল ৯ হাজার ৯২০ জনকে৷
২০১৮ সালের গ্যালারিটি দেখুন :
জার্মানি থেকে আফগানিস্তানে বিতাড়ন
২০১৬ সালের মাঝমাঝি সময়ে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন বাতিল হওয়া ৩৪ আফগান শরণার্থীকে তাদের দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছিল৷ সেটা শুরু৷ এরপর মাঝখানে কিছুদিন বিরতি দিয়ে আবারো বিমানে করে ফেরত পাঠানো হচ্ছে তাঁদের৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Balk
বিমানে করে ফেরত পাঠানো
গত ১২ সেপ্টেম্বর ১৫ জন শরণার্থীকে ডুসেলডর্ফ বিমানবন্দর থেকে আফগানিস্তানের উদ্দেশ্যে যাত্রা করা বিমানে তুলে দেয়া হয়৷ প্রত্যেকের রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন বাতিল হয়ে গেছে৷ গত মে মাসে কাবুলে জার্মান দূতাবাসের সামনে প্রাণঘাতি গাড়ি বোমা বিস্ফোরণের পর আফগান শরণার্থীদের ফেরত পাঠানো কিছু সময়ের জন্য বন্ধ ছিল৷ এখন আবার শুরু হয়েছে৷ জার্মানির সবুজ দল এবং বামদল এর সমালোচনা করেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Roessler
একটা সুযোগের আশায় লড়াই
গত মার্চে কটবুসের একদল শিক্ষার্থী গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়৷ তিন আফগান সহপাঠীকে যাতে ফেরত পাঠানো না হয়, সেজন্য প্রচারণা চালিয়েছিল তারা৷ এজন্য তারা বিক্ষোভ করে, স্বাক্ষর সংগ্রহ করে৷ এমনকি আশ্রয়ের আবেদন বাতিল হওয়া সেই তিন আফগান শিক্ষার্থীর পক্ষে লড়তে একজন আইনজীবী নিয়োগের অর্থও সংগ্রহ করা হয়৷ যে তিন শিক্ষার্থীর জন্য এত আয়োজন, তাদের একজনকে দেখা যাচ্ছে ওপরের ছবিতে৷
ছবি: DW/S.Petersmann
‘কাবুল নিরাপদ নয়’
‘প্রাণঘাতি বিপদের দিকে যাত্রা’, গত ফেব্রুয়ারি মাসে মিউনিখ বিমানবন্দরে প্রতিবাদস্বরুপ দেখানো এক পোস্টারে একথা লেখা ছিল৷ যেসব বিমানবন্দর থেকে আশ্রয়প্রার্থীদের ফেরত পাঠানো হয়, সেসব বিমানবন্দরে মাঝেমাঝেই হাজির হন এমন প্রতিবাদকারীরা৷ গত ডিসেম্বর থেকে মে মাস অবধি অনেক আফগান শরণার্থীকে ফেরত পাঠানো হয়েছে৷ চলতি বছর এখন অবধি আফগানিস্তানে ফেরত পাঠানো হয়েছে ২৬১ জনকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Balk
ভ্যুর্ৎসবুর্গ থেকে কাবুল
মধ্য ত্রিরিশে পা দেয়া বাদাম হায়দারিকে সাত বছর জার্মানিতে কাটানোর পর গত জানুয়ারিতে দেশে ফেরত যেতে বাধ্য করা হয়৷ তিনি অতীতে ইউএসএইডে কাজ করেছেন এবং তালেবানের কাছ থেকে বাঁচতে জার্মানিতে এসেছিলেন৷ তালেবানের ভয় এখনো তাড়া করছে হায়দারিকে৷ তিনি আশা করছেন, শীঘ্রই হয়ত আবারো জার্মানিতে ফিরতে পারবেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/C.F. Röhrs
নিগৃহীত সংখ্যালঘু
গত জানুয়ারি মাসে আফগান হিন্দু সমীর নারাংকে কাবুলে ফেরত পাঠানো হয়৷ ফেরত পাঠানোর আগ অবধি তিনি জার্মানির হামবুর্গে পরিবরাসহ ছিলেন৷ জার্মান পাবলিক রেডিওকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘‘আফগানিস্তান নিরাপদ নয়৷’’ যেসব সংখ্যালঘু রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন বাতিল হওয়ায় আফগানিস্তানে ফেরত যাচ্ছেন, তারা মুসলিমপ্রধান দেশটিতে সংখ্যালঘু হওয়ায় নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/H. Wiedl
অনিচ্ছা সত্ত্বেও ফিরে যাওয়া
পকেটে মাত্র বিশ ইউরো নিয়ে জার্মানি থেকে আফগানিস্তানে ফেরত যান রাজনৈতিক আশ্রয় পেতে ব্যর্থরা৷ তাঁরা চাইলে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংগঠন আইওএম’এর সহায়তা নিতে পারেন৷ তাছাড়া সে দেশে জার্মান অর্থায়নে তাদের মানসিক চিকিৎসারও ব্যবস্থা রয়েছে৷