মনে হয় অস্ট্রেলিয়াকে হয়ত আর রোখা যাবে না৷ ৪৪ বছর আগে প্রথম বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে সেই যে হেরেছিল, ফাইনালে আর কখনোই কিন্তু হারেনি ওরা৷ বিশ্বকাপে ওরা এত ধারাবাহিক যে সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডের মুখোমুখি হওয়ার আগেই ওদের ফাইনালে দেখাও শুরু হয়ে গেছে৷ বড় আসরের পরিসংখ্যান বারবার উঁকি দিচ্ছে, ভোলা যাচ্ছে না গ্রুপ পর্বে আরন ফিঞ্চদের কাছে মর্গানদের নাস্তানাবুদ হওয়ার টাটকা স্মৃতিটাও৷ অথচ এবার অস্ট্রেলিয়াও কিন্তু হেরেছে৷ একবার নয়, দুবার৷ একবার ভারতের কাছে, আর গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে আরেকবার সাউথ আফ্রিকার কাছে৷ সুতরাং অস্ট্রেলিয়া তো হারতেই পারে! কোহলিদের মতো ফিঞ্চ, স্মিথ, ওয়ার্নার, স্টার্কদেরও বিদায়ঘণ্টা বেজে যেতে পারে সেমিফাইনালেই!
তবু মন বলছে ১৯৮৭, ১৯৯৯, ২০০৩, ২০০৭ এবং ২০১৫-র পর ২০১৯-ও হবে৷ এ যে অস্ট্রেলিয়া! ভাংবে, তবু মচকাবে না, আগের হার মাথায় নিয়ে মাঠে ওরা নামবে না৷ সুতরাং, দুটো ম্যাচ ওরা জিততেই পারে৷
অস্ট্র্রেলিয়াকে আগেই ফাইনালে দেখতে শুরু করার কারণ শুধু অস্ট্রেলিয়া নয়৷ ইংল্যান্ডও৷ ইংল্যান্ড তো ফুটবল, ক্রিকেট দু' জায়গাতেই এক৷ ভালো খেলে, সমর্থকেরা অহঙ্কার করে, কিন্তু ট্রফি ছুঁতে পারে না৷ ফুটবলে তো তবু একবার সেই সৌভাগ্য হয়েছে৷ ক্রিকেটে তা-ও নয়৷ তিনবারের ফাইনালিস্ট, তিনবারই রানার্সআপ৷ তবে মর্গানবাহিনি এবার ঠিকই আশায় বুক বাঁধছে৷
ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় আয়োজন শুরু হতে যাচ্ছে চলতি মে মাসের শেষে৷ ক্রিকেট বিশ্বকাপের দ্বাদশ মহারণে অংশ নিচ্ছে ১০টি দেশ৷ এবারের অংশগ্রহণকারী দলগুলোর অতীত পারফর্মেন্স জেনে নিন ছবিঘরে৷
ছবি: Getty Images/AFP/S. Kodikaraআগের ১১টি আসরে পাঁচবার চ্যাম্পিয়ন এবং দুইবার রানার্স আপ হয়েছে অস্ট্রেলিয়া৷ ১৯৯৯ সাল থেকে ২০০৭ পর্যন্ত টানা তিনবার জয়ের রেকর্ডও তাদের৷ এবারও ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Khaled২০১৫ সালের বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো ফাইনালে উঠলেও চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি নিউজিল্যান্ড৷ প্রতিবেশী অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরে বর্তমানে রানার্স আপ ব্ল্যাক ক্যাপসরা৷ ছয় আসরে সেমি ফাইনাল এবং এক আসরে কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বিদায় নিয়েছে দেশটি৷
ছবি: Getty Images/K. Schwoerer১৯৯৯ সালে থেকে বিশ্বকাপ ক্রিকেট খেলছে বাংলাদেশ৷ ২০০৭ সালে সুপার এইটে পৌঁছার পর ২০১৫ সালে কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত খেলেছে টাইগাররা৷
ছবি: Getty Images/D. Mansonতিনবার ফাইনাল খেলে দুই বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ভারত৷ ১৯৮৩ সালের পর দীর্ঘ বিরতি দিয়ে ২০১১ বিশ্বকাপ নিজেদের করে নেয় দেশটি৷ এর মধ্যে ১৯৮৭, ১৯৯৬ ও ২০১৫ সালে সেমি ফাইনাল খেলেছে তারা৷ এবার আইসিসি ব়্যাংকিংয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে থেকে বিশ্বকাপে খেলছে ভারত৷
ছবি: Getty Images/R. Cianfloneদুইবার ফাইনালে খেলে একবার বিশ্বকাপ জেতে পাকিস্তান৷ ১৯৯২ সালে বিশ্বকাপ ঘরে তুললেও ১৯৯৯ সালে রানার্স আপ হয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে দেশটিকে৷ ১১ আসরের মধ্যে চারটিতে সেমি ফাইনাল এবং দুইবার কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বিদায় নিতে হয়েছে তাদের৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Khaledতিনবার ফাইনাল খেললেও কোনোবার শিরোপা ছোঁয়া হয়নি ইংল্যান্ডের৷ প্রতিবারই রানার্স আপ থাকতে হয়েছে ক্রিকেটের ‘আঁতুড়ঘর’ দেশটিকে৷ বিগত তিন বছরের অসাধারণ খেলার ধারাবাহিকতায় আইসিসির এক নম্বর র্যাংকিংয়ে আছে দলটি৷
ছবি: Getty Images/AFP/R. Brooksবিশ শতকের বহু বড় বড় ক্রিকেট তারকার জন্ম দিলেও ১১ আসরের মধ্যে কোনোবার ফাইনালে উঠতে পারেনি দক্ষিণ আফ্রিকা৷ প্রায় প্রত্যেকবার ফেবারিট হয়ে বিশ্বকাপে এলেও চার বারই সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নিতে হয় তাদের৷ ২০০৩ সালে ঘরের মাঠের বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্যায় এবং ২০১১ সালে কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বিদায় নেয় প্রোটিয়ারা৷
ছবি: Getty Images/Gallo Images/A. Vlotmanতিনবার ফাইনাল খেলে একবার শিরোপা ঘরে তুলতে পেরেছে শ্রীলঙ্কা৷ ১৯৯৬ সালে জিতলেও ২০০৭ ও ২০১১ সালে রানার্সআপ হয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে তাদের৷
ছবি: Getty Images/Gallo Images/A. Vlotmanভারতের মতো তিনবার ফাইনাল খেলে দুইবার ট্রফি ঘরে তুলতে পেরেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ৷ ক্যারিবিয়ানরা দুই শিরোপা জিতেছে ১৯৭৫ ও ১৯৭৯ সালে বিশ্বকাপের প্রথম দুই আসরেই৷ এর পরেরবার ১৯৮৩ সালে রানার্সআপ হওয়ার পর আর ফাইনাল খেলতে পারেনি দেশটি৷
ছবি: Getty Images/AFP/R. Brooks২০১৫ সালে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ খেলে যুদ্ধ-বিধ্বস্ত আফগানিস্তান৷ এবারও মোহাম্মদ নবীর মতো অলরাউন্ডার ও রশিদ খানের মতো স্পিনার নিয়ে ক্রিকেটের মহাযজ্ঞে অংশ নিচ্ছে দেশটি৷
ছবি: Getty Images/AFP/S. Kodikara একবার আয়োজক হওয়ার সুবাদে ফুটবল বিশ্বকাপ জিতেছিলেন ববি মুর, গর্ডন ব্যাঙ্কস, জিওফ হার্স্টরা৷ ক্রিকেটে এমন মওকা অবশ্য ইংল্যান্ড আগেও পেয়েছে৷ ফাইনালেও উঠেছে৷ ব্যস, ওই পর্যন্তই৷
কিন্তু এবার কি ইতিহাসটা নতুন করে লেখা হতে পারে না? অবশ্যই পারে৷ বিশ্বকাপের আগে তো লম্বা একটা সময় দুর্দান্ত খেলেছে ইংল্যান্ড৷ দুটো ম্যাচ সেই ছন্দ পেলেই...৷
ক্রিকেটের দুই ‘বড় ভাই'-কে নিয়ে একটু বেশি বলা হয়ে গেল৷ ক্ষতি নেই তাতে৷ নিউজিল্যান্ডকে নিয়ে কথা একটু কম হলেও চলবে৷ কথা তো অনেক হয়েছে৷ দীর্ঘদিন বলা হয়েছে, ‘‘ওরা বড়জোর সেমিফাইনালের দল৷ সেমিফাইনালে ওরা হারবেই৷''
২০১৫ সালে সেই দুর্নাম ঘুচেছে৷ টানা দ্বিতীয় ফাইনালে তারাও পারে শেষ হাসি হাসতে৷ অনুপ্রেরণা পেতে পারে অস্ট্রেলিয়ার কাছেই৷ ৪৪ বছর আগে অস্ট্রেলিয়াও হেরেছিল ফাইনালে৷ তারপর? প্রথমবারের ব্যর্থতা মুছে দিয়ে ব্ল্যাক ক্যাপরা টুপি খোলা অভিবাদন তো এবার পেতেই পারে!