1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আবার আলোচনায় উপাচার্যদের দুর্নীতি  

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১৪ মে ২০২১

দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের বিরুদ্ধে প্রায়ই দুর্নীতি, নিয়োগ বাণিজ্যসহ নানা ধরনের অভিযোগ ওঠে। কিছু কিছু অভিযোগের তদন্তও হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ব্যবস্থা নেয়া হয় না৷

Bangladesch | Universität in Dhaka
ছবি: Mortuza Rashed/DW

দেশে এখন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ৪৬টি। তার মধ্যে গত দুই বছরে ১০টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত হচ্ছে। পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির বিরুদ্ধে তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। আর পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির বিরুদ্ধে এখনো তদন্ত চলছে। ইউজিসির সচিব ফেরদৌস জামান তুহিন বলেন, ‘‘আমরা তদন্ত করে সরকারের কাছে ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করতে পারি । কিন্তু নিজেরা কোনো ব্যবস্থা নিতে পারি না। আইনের সীমবাদ্ধতা আছে৷’’

আইনের সীমবাদ্ধতা আছে: তুহিন

This browser does not support the audio element.

সর্বশেষ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহান তার মেয়াদের শেষ কর্মদিবসে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পদে ১৪১ জনকে একযোগে নিয়োগ দিয়ে আলোচিত হয়েছেন। এই ঘটনা তদন্ত করছে ইউজিসি। অভিযোগ রয়েছে বিপুল অর্থের বিনিময়ে এবং সরকার দলীয় লোকজনকে এই নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচর্যের বিরুদ্ধে এর আগেও নিজের মেয়ে ও জামাতাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন পরিবর্তন করে শিক্ষক নিয়োগ দেয়ার অভিযোগের তদন্ত হয়েছে। তদন্তে অভিযোগের প্রমাণ পেয়েছে ইউজিসি। তার বিরুদ্ধে আরো ২৩টি অভিযোগেরও প্রমাণ পাওয়া যায়। কিন্তু তারপরও  উপাচার্য পদে তাকে বহাল রাখা হয়।

এর আগে আলোচনায় আসেন রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি)-র উপাচার্য ড. নজমুল আহসান কলিমুল্লাহ। তার বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় উন্নয়নমূলক  কাজে অনিয়মের একটি অভিযোগের তদন্ত করে অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছে ইউজিসির তদন্ত কমিটি। আরো কিছু অভিযোগের তদন্ত হচ্ছে। কিন্তু তিনি আছেন বহাল তবিয়তে। উল্টো তদন্তের জন্য তিনি শিক্ষামন্ত্রীর ‘ উসকানিকে' দায়ী করেছেন।

(বেরোবি)-র উপচার্য কোনো অনুমোদন ছাড়াই ৯৭ কোটি ৫০ লাখ টাকার উন্নয়নমূলক কাজের খরচ বাড়িয়ে করেছেন ২১৩ কোটি টাকা। তার বিরুদ্ধে নিয়োগ বাণিজ্যসহ আরো ৪৫ ধরনের অভিযোগের তদন্ত হচ্ছে।

অনেকেই বিবেকবোধ জলাঞ্জলি দিয়েছেন: আরেফিন

This browser does not support the audio element.

এছাড়া পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এম রোস্তম আলীর বিরুদ্ধে নিয়োগে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ, ইউনানি ও আয়ুর্বেদিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির দুইটি অভিযোগের একটির তদন্ত শেষ হয়েছে এবং আরেকটির তদন্ত চলছে। নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক অহিদুজ্জামানের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচর্যের বিরুদ্ধেও তদন্ত শেষ হয়েছে।

শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। এছাড়া অভিযোগ আছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ আরো কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বিরুদ্ধে।

এই অভিযোগগুলোর ধরন জানতে চাইলে ফেরদৌস জামান তুহিন বলেন, ‘‘দুই ধরনের অভিযোগে এইসব তদন্ত হচ্ছে। নিয়োগ নিয়ে অনিয়ম এবং আর্থিক দুর্নীতি। এই দুই ধরনের অভিযোগের বাইরে অন্য কোনো ধরনের অভিযোগ তেমন নেই।’’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ‘‘এই উপাচার্যরা পুরো শিক্ষক সমাজকে লজ্জার মধ্যে ফেলে দিয়েছে।  আমি নিজেও শিক্ষক হিসেবে লজ্জিত।’’

ঢাকা  বিশ্ববিদ্যালয়সহ চারটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৭৩ সালের অধ্যাদেশ অনুযায়ী স্বায়ত্তশাসন ভোগ করছে। বাকি তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় হলো, চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ‘‘বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিরা তাদের বিবেকের কাছে জবাবদিহি করবেন। কিন্তু তাদের অনেকেই বিবেকবোধ জলাঞ্জলি দিয়েছেন।’’

তাদের শতভাগই রাজনৈতিকভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত: ইফতেখার

This browser does not support the audio element.

তিনি মনে করেন, এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি নিয়োগ প্রক্রিয়া খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। আর অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন। সেটা নেয়া হচ্ছে না বলেই এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে।

ওই চারটি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া বাকি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সরাসরি ব্যবস্থা নিতে পারে বলে জানান ফেরদৌস জামান তুহিন। তিনি বলেন, ইউজিসি অভিযোগ না পেলে কোনো বিষয়ে অনুসন্ধানও করতে পারে না।

তবে ভিসি নিয়োগের ক্ষেত্রে দলীয় আনুগত্য প্রাধান্য পাওয়ায় ভিসিরা নিজেদের দলের লোক মনে করেন। আর শিক্ষা মন্ত্রণালয় চাইলেও রাজনৈতিক চাপের কারণে ব্যবস্থা নিতে পারে না।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)-র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘‘যাদের বিরুদ্ধে এই অভিযোগগুলো উঠছে তাদের শতভাগই রাজনৈতিকভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত। ফলে তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয় না, বা ব্যবস্থা নেয়া যায় না। তার বিচারহীনতা উপভোগ করেন। ফলে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা দুর্নীতি ও অনিয়মে জড়িয়ে পড়ছেন।’’

সরকারের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক প্রভাব যে এর পিছনে বড় কাজ করে তার বড় প্রমাণ হলো, গত ৫ মে অবসর-উত্তর ছুটিতে থাকা পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ আবদুল মান্নানকে জামালপুরের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষও একজন সাবেক অতিরিক্ত সচিব।

ফেরদৌস জামান তুহিন বলেন, ‘‘সরকার তাদের কোন আইনে নিয়োগ দিয়েছেন জানি  না। এটা নিয়ে কথা বলতে চাই না৷’’

ড. ইফতেখারুজজ্জামান মনে করেন, ‘‘এই দুর্নীতি এবং অনিয়ম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদটিকে অসম্মানিত করছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল কাজ শিক্ষা ও গবেষণা কমে যাচ্ছে।’’

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ