ইসরায়েলের রাজনৈতিক অচলাবস্থা কাটাতে তৃতীয় নির্বাচনেও সম্ভবত স্পষ্ট ফলাফল দেখা যাচ্ছে না৷ তা সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু জয়ের দাবি করছেন৷ দুর্নীতির মামলার ঠিক আগে তিনি কিছুটা বিপাকে পড়েছেন৷
বিজ্ঞাপন
মাত্র এগারো মাসের মধ্যে তিন-তিনটি সাধারণ নির্বাচন! স্পষ্ট ফলাফলের অভাবে ইসরায়েলের ভোটারদের এমন দশায় পড়তে হয়েছে৷ প্রতিবারই কোনোক্রমে ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে রাখতে পেরেছেন প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু৷ সোমবারের নির্বাচনের ফলাফল এখনো প্রকাশিত না হলেও এবারও তিনি জয়ের দাবি করছেন৷ একাধিক বুথ ফেরত সমীক্ষা অনুযায়ী তাঁর জোট অবশ্য প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি৷ নেতানিয়াহুর প্রধান প্রতিপক্ষ মধ্যপন্থি ‘নীল ও সাদা' দলের বেনি গানৎস-ও যথেষ্ট আসনে জিতলে পারেননি বলে সমীক্ষায় দাবি করা হয়েছে৷ তিনি অবশ্য এখনো পরাজয় মানতে প্রস্তুত নন৷ ফলে এবারও স্থায়ী সরকার গঠনের পথে সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে৷
দুর্নীতির অভিযোগে জেরবার নেতানিয়াহু কীভাবে বার বার যথেষ্ট সংখ্যক ভোটারের মন জয় করতে পারছেন, তা নিয়ে জল্পনাকল্পনার শেষ নেই৷ এবারের নির্বাচনের আগে লিকুদ দলের ৭০ বছর বয়সি এই নেতা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য শান্তি পরিকল্পনার একটি অংশ কার্যকর করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন৷ অধিকৃত পশ্চিম তীর ও জর্ডান উপত্যকার ইহুদি বসতিগুলিকে আনুষ্ঠানিকভাবে ইসরায়েলের অন্তর্গত করার অঙ্গীকার করেছেন তিনি৷ মোট কথা, ইসরায়েলের নিরাপত্তার প্রশ্নে নেতানিয়াহু নিজেকে সবচেয়ে যোগ্য নেতা হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন৷
সরকারি ফলাফল ঘোষণার পরও সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলে নেতানিয়াহু অন্যান্য ছোট দলের সমর্থনের ভিত্তিতে সরকার গঠন করার চেষ্টা চালাবেন, এমনটাই ধরে নেওয়া হচ্ছে৷ কোনোক্রমে সরকার গঠনে সফল হলেও দুর্নীতির দায়ে তাঁর পক্ষে ক্ষমতায় টিকে থাকা কঠিন হতে পারে৷ আগামী ১৯শে মার্চ তাঁর বিরুদ্ধে প্রথম মামলা শুরু হচ্ছে৷ নেতানিয়াহু অবশ্য যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন৷ বিরোধীদের আশঙ্কা, নতুন করে সরকার গঠন করতে পারলে নেতানিয়াহু আইন প্রণয়ন করে কোনো ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রীর বিচার অসম্ভব করে তুলতে পারেন৷
এমন পরিস্থিতিতে ইসরায়েলি রাজনীতির মেরুকরণ আরও তীব্র হয়ে উঠতে পারে৷ বিশেষ করে রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে ইসরায়েলি আরবরা আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠায় নেতানিয়াহু-বিরোধী শিবিরের মনে কিছুটা আশা জন্মেছে৷ অন্যদিকে চরম দক্ষিণপন্থি শক্তি নেতানিয়াহুকে ঘিরে আরও সংঘবদ্ধ হতে পারে৷
মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার যত চেষ্টা
ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য বিভিন্ন সময়ে চেষ্টা চালিয়েছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়৷ কিন্তু এসেছে কি শান্তি?
জাতিসংঘ রেজ্যুলেশন ১৯৬৭
১৯৬৭ সালে ছয়দিনের আরব-ইসরাইল যুদ্ধের পর ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা দখল করে ইসরায়েল৷ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সে বছরের ২২ নভেম্বর জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে ‘রেজ্যুলেশন ২৪২’ নামে একটি প্রস্তাব পাস হয়৷ প্রস্তাবে দখলকৃত ফিলিস্তিনি এলাকা থেকে ইসরায়েলি সৈন্য সরিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়৷
ছবি: Getty Images/Keystone
ক্যাম্প ডেভিড চুক্তি ১৯৭৮
মিশর ও সিরিয়ার নেতৃত্বে আরব রাষ্ট্রগুলো ১৯৭৩ সালে আবারো ইসরায়েলের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয়৷ এ যুদ্ধের ফলে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির বিষয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে উঠে বিশ্ব নেতারা৷ তাদের চেষ্টায় ১৯৭৮ সালে ১২ দিন আলোচনার পর যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে মার্কিন প্রেসিডেন্টের অবকাশ যাপন কেন্দ্র ক্যাম্প ডেভিডে এ চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়৷ এ চুক্তিকে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির ভিত হিসিবে বিবেচনা করা হয়েছিল৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/B. Daugherty
মাদ্রিদ কনফারেন্স ১৯৯১
ইসরাইল-ফিলিস্তিন বিষয়ে ১৯৯১ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার নেতৃত্বে স্পেনের মাদ্রিদে এ কনফারেন্সটি অনুষ্ঠিত হয়৷ এতে আরো অংশ নেয় ইসরায়েল, জর্ডান, লেবানান, সিরিয়া ও ফিলিস্তিন৷ এ কনফারেন্সের তাৎক্ষণিক কোন ফলাফল আসেনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Hollander
অসলো অ্যাকর্ড ১৯৯৩
১৯৯৩ সালে নরওয়ের অসলোতে প্রথমবারের মতো মুখোমুখি আলোচনায় বসে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন৷ আলোচনার পরবর্তী ধাপে এ দু’দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে যা অসলো চুক্তি নামে পরিচিত৷ চুক্তিতে বলা হয় যে, পশ্চিম তীর থেকে সকল সৈন্য প্রত্যাহার করবে ইসরায়েল৷ পাঁচ বছরের জন্য ফিলিস্তিনকে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের অনুমতিও দেয় এ চুক্তি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Sachs
আরব পিস ইনিশিয়েটিভ ২০০২
২০০২ সালে আরব লিগের নেতারা লেবাননের বৈরুতে অনুষ্ঠিত এক আলোচনায় মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি পরিকল্পনার একটি প্রস্তাব পাস করেন৷ প্রস্তাবনায় ইসরায়েলকে ১৯৬৭ সালের যুদ্ধ চলাকালীন দখলকৃত সব জায়গা ত্যাগ করতে বলা হয়, যেন পশ্চিম তীরে একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গড়ে তোলা যায়৷ বিনিময়ে ইসরায়েলকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার কথা জানানো হয়৷
ছবি: Getty Images/C. Kealy
রোডম্যাপ ২০০৩
ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া জাতিসংঘের সহযোগিতায় মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির রোডম্যাপ নামে পরিকল্পনার প্রস্তাব দেয়৷ ২০০৫ সালের মধ্যে ফিলিস্তিন ও ইসরায়েল দুইটি আলাদা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয় এই রোডম্যাপে৷
ছবি: Getty Iamges/AFP/J. Aruri
সংঘর্ষ, অস্ত্র বিরতির চেষ্টা
২০১২ সালের শেষ দিকে গাজায় দুইপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা বাড়তে থাকে৷ এ সময় ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে একটি অস্ত্র বিরতি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়৷ ২০১৪ সালে ইসরায়েলি এক তরুণ নিহতের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ফিলিস্তিনে সামরিক অভিযান চালালে পরিস্থিতি আবারো খারাপ হতে থাকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
প্যারিস সম্মেলন ২০১৭
২০১৭ সালে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন বিষয়ে আলোচনা করতে ৭০টি দেশের প্রতিনিধিরা প্যারিসে একত্রিত হয়৷ তবে ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের কোনো প্রতিনিধিই এ আলোচনায় অংশ নেয়নি৷
ছবি: Reuters/T. Samson
ট্রাম্পের শান্তি আলোচনা
প্রেসিডেন্ট থাকাকালে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন বিষয়ে শান্তি পরিকল্পনা ঘোষণা করেন ডনাল্ড ট্রাম্প৷ এতে বলা হয় পশ্চিম তীরে বসতি স্থাপন বন্ধ রাখবে ইসরায়েল, তবে ইতোমধ্যে অধিকৃত সকল স্থাপনায় তাদের নিয়ন্ত্রণ থাকবে৷ এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে ফিলিস্তিন৷