উত্তর কোরিয়া ফের দুটি ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালিয়েছে বলে দাবি করেছে দক্ষিণ কোরিয়া। মঙ্গলবার সকালে এ পরীক্ষার মধ্য দিয়ে গত দুই সপ্তাহে চতুর্থবারের মতো ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালিয়েছে দেশটি৷
বিজ্ঞাপন
২৫ জুলাই নিক্ষেপ করা ক্ষেপণাস্ত্র দুটির সঙ্গে মঙ্গলবার ছোঁড়া স্বল্পমাত্রার ক্ষেপণাস্ত্র দুটির মিল রয়েছে বলে দাবি করেছে দক্ষিণ কোরিয়ার সেনাবাহিনী৷
সোমবার শুরু হওয়া যুক্তরাষ্ট্র-দক্ষিণ কোরিয়ার যৌথ সামরিক মহড়া নিয়ে শুরু থেকে আপত্তি জানিয়ে আসছিল উত্তর কোরিয়া। তাঁরা বলছে, এই মহড়ার মধ্য দিয়ে শান্তি প্রক্রিয়াকে ব্যহত করা হচ্ছে৷ এটাকে রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব হিসেবেও অভিহিত করেছে দেশটি৷ তবে উত্তর কোরিয়ার ধারাবাহিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষায় পারমাণবিক-নিরস্ত্রীকরণ প্রক্রিয়াটি জটিল হচ্ছে বলে মনে করেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকেরা৷
গত ৩০ জুন শান্তি প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিতে বৈঠকে বসতে রাজি হয়েছিলেন উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প৷ যদিও কার্যকর সংলাপ এখনও শুরু হয়নি৷ তবে কিমকে দেয়া প্রতিশ্রুতির কোনোটি লংঘিত হয়নি বলে, উত্তর কোরিয়ার ধারাবাহিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা বন্ধের চেষ্টা করেছিলেন ডনাল্ড ট্রাম্প৷ গত সপ্তাহে উত্তর কোরিয়ার মিসাইল পরীক্ষার পর হোয়াইট হাউজে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, ‘‘আমার কোনো সমস্যা নেই৷'' তিনি আরো বলেন, ‘‘আমরা দেখি কি হচ্ছে৷ তবে স্বল্পপাল্লার মিসাইল স্ট্যান্ডার্ড৷''
উত্তর কোরিয়াকে কাবু করতে জাতিসংঘের কিছু ‘অস্ত্র’
পারমাণবিক অস্ত্র নিষেধাজ্ঞার কোনো তোয়াক্কাই করছে না উত্তর কোরিয়া৷ দেশটির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান রয়েছে তাই জাতিসংঘেরও৷ দেখা যাক, কত রকমের নিষেধাজ্ঞার বেড়াজালে আটকা পড়েছে উত্তর কোরিয়া৷
ছবি: Reuters/S. Sagolj
কয়লা এবং লোহার ওপর নিষেধাজ্ঞা
২০১৭ সালের আগস্ট মাসে উত্তর কোরিয়ার ওপর সব ধরনের কয়লা, লোহা এবং লোহার আকরিক আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে জাতিসংঘ৷ওপরের ছবিতে উত্তর কোরিয়ার সীমান্ত সংলগ্ন ড্যানডং শহরের লিয়াওনিং গ্রিনল্যান্ড এনার্জি কয়লাখনি৷ খনিটি অবশ্য চীনের৷
ছবি: Reuters/B. Goh
মুদ্রায় নিষেধাজ্ঞা
বিদেশে কোনো ব্যাংক খুলতে পারে না উত্তর কোরিয়া৷ এমনকি জাতিসংঘের কোনো সদস্য দেশ যাতে পিয়ংইয়ংয়ের জন্য লাভজনক কোনো আর্থিক লেনদেন বা চুক্তিতে না যায়, নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে সে বিষয়টিও নিশ্চিত করার চেষ্টা করেছে জাতিসংঘ৷ জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞায় বলা হয়েছে, কোনো দেশের নাগরিক যদি উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে এমন কোনো ব্যবসায়িক যোগাযোগ স্থাপন করে, তাহলে সংশ্লিষ্ট দেশটিকে অবশ্যই ওই নাগরিককে বহিষ্কার করতে হবে৷
ছবি: Mark Ralston/AFP/Getty Images
জাহাজ চলাচল
ছবির এই জাহাজটি উত্তর কোরিয়ার৷ ২০১৬ সালের মার্চে ফিলিপাইন্সে এটিকে থামানো হয়৷ উত্তর কোরিয়ার কোনো জাহাজে পণ্য পরিবহনও নিষিদ্ধ করেছে জাতিসংঘ৷ এমনকি পিয়ংইয়ংযে নিজেদের জাহাজে অন্য দেশের পতাকা লাগিয়ে কাজ চালাবে, সেই পথও বন্ধ৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/J. Dumaguing
আকাশেও নিষেধাজ্ঞা
উত্তর কোরিয়ার জাতীয় এয়ারলাইন্স ‘এয়ার কোরিও’ অবশ্য পুরোপুরি নিষিদ্ধ নয়৷ এখনো তাদের বিমান রাশিয়া আর চীনে যাওয়া-আসা করে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Yonhap
জ্বালানিতেও...
২০১৭ সালের ডিসেম্বরে জাতিসংঘের আরোপ করা নিষেধাজ্ঞার পর থেকে জ্বালানি আমদানিতেও কঠোর বিধিনিষেধের আওতায় উত্তর কোরিয়া৷ ফলে জনজীবনেও এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে৷ নিষেধাজ্ঞার কারণে বছরে মাত্র ৪০ লক্ষ ব্যারেল অপরিশোধিত তেল আমদানি করতে পারে উত্তর কোরিয়া৷ তাই সে দেশের নাগরিকদের প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম ডিজেল এবং কেরোসিন পেয়েই খুশি থাকতে হয়৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Ralston
বিদেশে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এবং স্থাবর সম্পত্তি
উত্তর কোরিয়ার কূটনীতিকদের ওপরও কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে জাতিসংঘ৷ জার্মানিসহ এখনো হাতে গোনা যে কয়েকটি দেশে উত্তর কোরিয়ার দূতাবাস আছে, সেখানে উত্তর কোরীয় কূটনীতিকরা চাইলেও একটার বেশি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন না৷ দেশের বাইরে দূতাবাস ছাড়া আর কোনো কাজে ঘর ভাড়াও করতে পারে না উত্তর কোরিয়া৷
ছবি: picture alliance/dpa/S.Schaubitzer
সামরিক প্রশিক্ষণ
কোনো দেশ উত্তর কোরিয়ার সামরিক বাহিনী, পুলিশ, বা আধা সামরিক বাহিনীকে প্রশিক্ষণ দিতে পারে না৷ এ বিষয়েও রয়েছে জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা৷
ছবি: Reuters/S. Sagolj
কিম জং উনের মূর্তি
উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের আবক্ষ মূর্তি দেখতে বা পছন্দের কোনো জায়গায় রাখতে চান? তা জাতিসংঘের একেবারেই কাম্য নয়৷ তাই উত্তর কোরিয়ার ওপর যে কোনো ধরনের মূর্তি বিক্রিতেও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে জাতিসংঘ৷
ছবি: picture alliance/dpa/robertharding
8 ছবি1 | 8
মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগ থেকে জানানো হয়েছে, তাঁরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন এবং দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে জাপানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষাকে নিজেদের জন্য হুমকি মনে করছেন না বলে আবারো মন্তব্য করেছেন৷
এদিকে, এক বিবৃতিতে উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা কেসিএনএ জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নিরস্ত্রীকরণ আলাপ চালিয়ে যেতে প্রস্তুত আছে দেশটি৷ কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক পদক্ষেপ অব্যাহত থাকলে আলোচনা থেকে বেরিয়ে আসার হুমকি দিয়েছে উত্তর কোরিয়া৷
জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে উত্তর কোরিয়ার ধারাবাহিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার নিন্দা জানিয়েছে জার্মানি, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য৷ এসব ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নিরস্ত্রীকরণ আলোচনা এগিয়ে নিতে পিয়ংইয়ংকে অনুরোধ জানিয়েছে দেশগুলো৷