একদিকে একের পর এক নির্বাচনি সাফল্য, অন্যদিকে অস্থির মনোভাব৷ আগাম নির্বাচনে জয়ের পর আলেক্সিস সিপ্রাস যো কোন পথে এগোবেন, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে জল্পনা-কল্পনা৷
বিজ্ঞাপন
আবার সবাইকে চমকে দিয়ে গ্রিসের নির্বাচনে জয়ী হলেন আলেক্সিস সিপ্রাস৷ অথচ কয়েকদিন আগে পর্যন্ত তিনি জনমত সমীক্ষায় পিছিয়ে ছিলেন৷ দেশে চরম সংকট সত্ত্বেও এত কম সময়ের মধ্যে এত বার জনগণের সমর্থন আদায় করা মোটেই সহজ নয়৷ তাঁর মতে, দেশের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল৷
এবারের নির্বাচনের ফলাফলের বিভিন্ন দিক উঠে এসেছে টুইটার ব্যবহারকারীদের মন্তব্যে৷ যেমন অনেকে মনে করিয়ে দিয়েছেন, যে যথেষ্ট সংখ্যক মানুষ তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেননি৷ তাই কাগজে-কলমে জয় সত্ত্বেও সিপ্রাস-এর প্রতি গ্রিসের মানুষের সমর্থন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন অনেকে৷
গ্রিসে একের পর এক গোলযোগ ঘটিয়েও আগাম নির্বাচন ডেকে সিপ্রাস যেভাবে জয়লাভ করলেন, তা সত্যি অসাধারণ বলে মনে করেন হল্গার চেপিৎস৷
জনমত সমীক্ষার ফলাফলেরই গ্রিসের নির্বাচনে সবচেয়ে বড় পরাজয় ঘটেছে বলে মনে করেন ইয়েন্স বাস্টিয়ান৷
ভোটের আরও বিশ্লেষণ করলে দেখা যাচ্ছে ইউরো-পন্থি দলগুলিরই জয় হয়েছে৷ আলেক্স আন্ড্রেউ মনে করেন, যারা গণভোটের ফলাফল নিজের পক্ষে টানতে চেয়েছে, ভোটাররা তাদের শাস্তি দিয়েছেন৷ গ্রিকরা আনুগত্যের অভাব পছন্দ করেন না৷
নির্বাচনে জয়লাভ করে সিপ্রাস এবার কী করবেন? নারা নজ মনে করেন, তিনি আবার বেলআউট চুক্তি গ্রহণের প্রশ্নে গণভোট আয়োজন করবেন৷ তারপর আবার পদত্যাগ করবেন৷
তবে মাক্সিম সবাইহি-র বিশ্বাস, যে সরকার ইউরোপের সঙ্গে বেলআউট কর্মসূচির শর্ত নিয়ে আলোচনা করেছেন, তারাই আবার পুনর্নির্বাচিত হয়ে সেই কর্মসূচির বাস্তবায়ন করবে৷ এটা সত্যি ইতিবাচক ঘটনা৷
গ্রিসের প্রতি ইইউ-র ‘ছোট’ দেশগুলোও নারাজ
পূর্ব ইউরোপের অনেক দেশই আজ ঋণ মকুব করে গ্রিসকে সাহায্য করতে নারাজ৷ ব্যয় সংকোচ ও কড়া সংস্কারের সুফল ভোগ করে এ সব দেশ আজ প্রতিযোগিতার বাজারে নিজেদের সাফল্য অর্জন করেছে৷ গ্রিসও সংস্কার চালাক – এটাই তাদের প্রত্যাশা৷
ছবি: picture alliance/dpa/Y. Behrakis
সাফল্যের গর্বে লিথুয়েনিয়া
লিথুয়েনিয়ার প্রেসিডেন্ট ডালিয়া গ্রিবাউসকাইটে ইউরো এলাকার জরুরি শীর্ষ সম্মেলনে গ্রিক প্রধানমন্ত্রী আলেক্সিস সিপ্রাস সম্পর্কে কড়া মন্তব্য করেন৷ তাঁর মতে, গ্রিস শুধু কথার খেলাপ করে চলে৷ আজ কিছু করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে পরে সেটা আগামীকাল ঠেলে দেয়৷ উল্লেখ্য, প্রায় ২৫ বছর আগে সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ ছিল লিথুয়েনিয়া৷ কঠিন সংস্কার ও অনেক ত্যাগের পর সে দেশ আজ নিজস্ব সাফল্যে গর্বিত৷
ছবি: DW
ইউরোপের সিলিকন ভ্যালি এস্টোনিয়া
সোভিয়েত আমলের বিশাল আমলাতন্ত্র ঝেড়ে ফেলে এস্টোনিয়া আজ তথ্য প্রযুক্তির ক্ষেত্রে চমকপ্রদ সাফল্য দেখাচ্ছে৷ অথচ সরকারের কড়া সংস্কার কর্মসূচি সত্ত্বেও সে দেশের মানুষ চরম আত্মত্যাগ স্বীকার করে আজকের অবস্থায় পৌঁছেছেন৷ সে দেশের প্রেসিডেন্ট টোমাস হেন্ডরিক ইলভেস বলেন, ইউরো এলাকার বাকি ১৮টি দেশে গ্রিসকে বাঁচাতে কর বাড়ানোর প্রশ্নে গণভোটের আয়োজন করলে মানুষ কী রায় দেবে, একবার ভেবে দেখেছেন?
ছবি: Lingvist
বাণিজ্যে লাটভিয়ার সাফল্য
লিথুয়েনিয়ার মতো লাটভিয়াও অতীতের বোঝা ঝেড়ে ফেলে নিজস্ব কৌশলগত অবস্থানের ফায়দা তুলেছে৷ রাশিয়া ও স্ক্যান্ডিনেভিয়ার মধ্যে বাণিজ্যের মূল কেন্দ্র হয়ে উঠেছে দেশটি৷ ২০০৪ সালে লিথুয়েনিয়ায় ইউরো চালু হয়৷ ফলে অঞ্চলের অন্যান্য অনেক দেশের মতো সে দেশের প্রেসিডেন্ট ভাল্ডিস ডমব্রফস্কিস মনে করেন, গ্রিসেও সংস্কার ছাড়া কোনো সমাধানসূত্র সম্ভব নয়৷ এই সত্য মেনে না নিলে ‘গ্রেক্সিট’ অনিবার্য৷
ছবি: Reuters
স্লোভাকিয়ার গাড়ি শিল্প
শুধু সংস্কার ও ব্যয় সংকোচের মাধ্যমে নয় – শিক্ষিত ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মীদের মূলধন করে স্লোভাকিয়া গাড়ি নির্মাতাদের কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে৷ জার্মানির ফলক্সভাগেন বা দক্ষিণ কোরিয়ার কিয়া কোম্পানি সে দেশে উৎপাদন করতে এগিয়ে এসেছে৷ অপেক্ষাকৃত কম মজুরি স্লোভাকিয়ার জন্য বাড়তি সুবিধা বয়ে এনেছে৷ বিদেশি বিনিয়োগ অর্থনৈতিক উন্নতি আরও তরান্বিত করেছে৷
ছবি: DW/E. Schuhmann
সাবেক ইয়ুগোস্লাভিয়ায় দক্ষতার প্রতীক স্লোভেনিয়া
ইয়ুগোস্লাভিয়া ভেঙে টুকরো-টুকরো হয়ে গেছে৷ স্লোভেনিয়া কিন্তু তার অতীতের সুনাম ও সংস্কার কর্মসূচির ভিত্তিতে অতি কম সময়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ইউরো এলাকার সদস্য হয়ে উঠতে পেরেছে৷ সংকটের মুখে ব্যাংকিং ব্যবস্থার কড়া সংস্কার করতে পেরেছে দেশটি৷ বেসরকারিকরণের ক্ষেত্রেও উল্লেখযোগ্য সাফল্য এসেছে৷ ফলে আজ সে দেশের সমৃদ্ধির ভিত্তি বেশ মজবুত৷
ছবি: Reuters
‘আমাদের সমৃদ্ধির অভ্যাস নেই’
পোল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান মারেক বেলকা একবার পূর্ব ইউরোপের মানুষের সহ্যশক্তি সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘‘আমাদের এখনো সমৃদ্ধির অভ্যাস হয়নি৷’’ তাঁর মতে, এই অঞ্চলের মানুষের অভিজ্ঞতা হলো, সংকট সামনে এলে সংস্কারের মাধ্যমে তা অতিক্রম করা যায়৷ আজকের কষ্ট আগামীকাল সুফল বয়ে আনে৷
ছবি: AP
গ্রিক ট্র্যাজিডি
গ্রিস একেবারেই সংস্কারে নারাজ – এই অভিযোগ পুরোপুরি সত্য নয়৷ আন্তর্জাতিক দাতাদের চাপে সে দেশ এখনো পর্যন্ত যে সংস্কার চালিয়েছে, তার ফলে সাধারণ মানুষেরই বেশি ক্ষতি হয়েছে৷ কিন্তু বিশাল আমলাতন্ত্র, কর আদায়ে গাফিলতি, প্রতিরক্ষা খাতে বিপুল ব্যয়ের মতো কাঠামোগত সংস্কারের ক্ষেত্রে সদিচ্ছার প্রমাণ দেখা যাচ্ছে না৷ অতীতের ঋণভার ছাড়াও রাষ্ট্রের আয় ও ব্যয়ের মধ্যে বিশাল ফারাক গ্রিসের ভবিষ্যৎ বিপন্ন করে তুলছে৷