অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সাথে সাথে তাপমাত্রা এবং সাগরে পানির উচ্চতা বাড়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা৷ ২০০৯ সালে জাতিসংঘের সে সময়কার প্রধান জলবায়ু কর্মকর্তা ইভো ডি বুয়ার বলেছিলেন, বিশ্ব বর্তমানে যে অবস্থার মধ্যে রয়েছে তা ভয়াবহ৷ ডেনমার্কের কোপেনহাগেনে অনুষ্ঠিত সে বছরের সম্মেলনেও কোনো চুক্তিতে পৌঁছাতে পারেননি বিশ্ব নেতারা৷
তবে সেবার ঠিক হয়েছিল, ২০১৫ সালের মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তন রোধে একটি চুক্তি সই করা হবে, যার বাস্তবায়ন শুরু হবে ২০২০ সাল থেকে৷ এর মাধ্যমে বন্যা, দাবদাহ, খরা এবং সাগরের পানির উচ্চতা কমানো সম্ভব হবে৷ আগামী ১১ থেকে ২২ নভেম্বর এবারের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে৷ এতে অংশ নেবেন ২০০টি দেশের প্রতিনিধিরা৷
অবশ্য যুক্তরাষ্ট্র কিছুটা হলেও এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নিয়েছে৷ গত বছর যুক্তরাষ্ট্রে কার্বন নির্গমনের হার ১৮ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম ছিল৷ তবে সমস্যা সমাধানে বারবার প্রতিশ্রুতি দিলেও অনেক উন্নত দেশ অর্থনৈতিক মন্দার কারণ দেখিয়ে চুক্তি থেকে পিছিয়ে যাচ্ছে৷ এছাড়া সেই মন্দা কাটাতে কারখানাগুলোর কাজ বাড়ছে৷ ফলে কার্বন নিঃসরণ আরো বেড়ে যাচ্ছে৷ বৈদ্যুতিক চুল্লি এবং গাড়ির সংখ্যা বাড়াও একটা কারণ৷
ভূতত্ত্ববিদদের ধারণা, বিশ্বে এখনো যে পরিমাণ তেল ও গ্যাস আছে তার প্রায় এক চতুর্থাংশ রয়েছে আর্কটিকের বরফের নীচে৷ তাই জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বরফ গলে যাওয়ায় খুশি আর্কটিকের দেশগুলো৷
ছবি: Gazpromজলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সারা বিশ্বে তাপমাত্রা যে হারে বাড়ছে, আর্কটিক বা সুমেরু অঞ্চলে সেই মাত্রাটা প্রায় দ্বিগুণ৷ এভাবে বরফ গলার কারণে আর্কটিকে যাওয়ার পথ সহজ ও সংক্ষিপ্ত হচ্ছে৷ ফলে সেখানে থাকা সম্পদ আহরণের কাজে সুবিধা হবে৷ তাই খুশি এ খাত সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী গোষ্ঠী৷
ছবি: imagoব্যবসায়ীদের পাশাপাশি পাঁচটি আর্কটিক দেশ – ক্যানাডা, ডেনমার্ক, নরওয়ে, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র – বিভিন্নভাবে সেখানে তাদের প্রভাব বাড়ানোর চেষ্টা করছে৷ উল্লেখ্য, আর্কটিকের কতটুকু অংশ কার নিয়ন্ত্রণে সেটা নিয়ে এখনো দেশগুলোর মধ্যে বিরোধ রয়েছে৷
ছবি: Gazpromভূতত্ত্ববিদদের ধারণা, বিশ্বে এখনো যে পরিমাণ তেল ও গ্যাস আছে তার প্রায় এক চতুর্থাংশ রয়েছে আর্কটিকের বরফের নীচে৷
ছবি: Crew of -Peter I-সীমানা নিয়ে বিরোধ থাকার কারণে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আর্থিক লাভের বিষয়টি সামনে আসায় ডেনমার্ক, ক্যানাডা, রাশিয়া আর যুক্তরাষ্ট্র সেখানে তাদের সামরিক উপস্থিতি বাড়াচ্ছে৷ ছবিতে মার্কিন একটি সাবমেরিনকে বরফের নীচ থেকে বের হতে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpaআর্কটিকে তেলের ড্রিলিং এর বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রিনপিসের৷ কারণ ড্রিলিং করতে গিয়ে যদি কোনো দুর্ঘটনা ঘটে তাহলে উত্তর মেরুর পরিবেশের উপর তার বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে সংগঠনটি উদ্বেগ প্রকাশ করেছে৷ কেননা দুর্গম ঐ পরিবেশে উদ্ধার তৎপরতা চালানোও বেশ কঠিন হবে৷
ছবি: picture-alliance/dpaছবিতে বিমান থেকে বরফ সরাতে দেখা যাচ্ছে৷ আর্কটিক সার্কেলে ওড়াওড়ি করা বিমানের জন্য এটা একটা নিয়মিত ব্যাপার৷ তবে গবেষণায় দেখা গেছে, আর্কটিকের উপর বিমান চলাচলের কারণে সেখানকার পরিবেশে কার্বনের পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে৷ এই কালো কার্বনের পার্টিকেল সূর্যের আলো শোষণ করে বিশ্ব উষ্ণতা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে৷
ছবি: DW/I.Quaileআর্কটিকের গুরুত্ব বেড়ে যাওয়া সেখান থেকে লাভবান হতে চায় চীনও৷ তাইতো ‘স্নো ড্রাগন’ নামের এই জাহাজটি ২০১২ সালে আর্কটিকের মধ্য দিয়ে যাত্রা করে ইউরোপে পৌঁছেছে৷ এ বছর মে মাসে চীনকে আর্কটিক কাউন্সিলের অবজারভার স্ট্যাটাস দেয়া হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa২০০৮ সালে আর্কটিকের নরওয়ের অংশে এই গবেষণা কেন্দ্রটি চালু করে ভারত৷ এর বাইরে জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়াও আর্কটিক নিয়ে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছে৷
ছবি: DW/I. Quaile ভারতে দরিদ্র জনগোষ্ঠী কম দামে উচ্চ দূষণ সৃষ্টিকারী কয়লা ব্যবহার করছে৷ ফলে সেদেশে বায়ুদূষণ বাড়ছে৷
‘অ্যালায়েন্স অফ স্মল আইল্যান্ড স্টেটস'গুলোর প্রধান মার্লেন মোসেস জানালেন, যা করা দরকার তা দ্রুত এবং জরুরি ভিত্তিতে করতে হবে৷ এই গ্রুপের সদস্য দেশগুলোর আশংকা সাগরের পানির উচ্চতা বাড়লে দ্বীপ রাষ্ট্রগুলো ডুবে যাবে৷ বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে যেসব গরিব রাষ্ট্র ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে, তাদের ক্ষতিপূরণ দেয়ারও আহ্বান জানান তিনি৷
এর আগে ১৯৯৭ সালে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন রোধে কিয়োটো প্রটোকলের ব্যাপারে জলবায়ু সম্মেলনে বিশ্বনেতারা একমত হলেও পরে সেটা কার্যকর হয়নি৷ কেননা যুক্তরাষ্ট্র সেটাতে অংশ নেয়নি৷
এখন দেখার বিষয়, এবারের সম্মেলনে বিভিন্ন দেশের আলোচকরা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় কি ধরনের চুক্তিতে পৌঁছান৷ আগামী বছরগুলোতে কি ধরনের পদক্ষেপ নিলে তাঁরা লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবেন, সম্মেলনে সেটাও ঠিক করতে হবে তাঁদের৷
এপিবি/জেডএইচ (এপি/রয়টার্স)