যুদ্ধের হুমকি, নিষেধাজ্ঞা, আন্তর্জাতিক চাপের তোয়াক্কা না করে উত্তর কোরিয়া আবার জাপানের উপর দিয়ে ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করলো৷ সেটি গুয়াম দ্বীপে মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে আঘাত হানতে সক্ষম৷
বিজ্ঞাপন
জাপানের উত্তরে হোক্কাইডো দ্বীপের উপর দিয়ে আবার উড়ে গেল উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র৷ সেখান থেকে প্রায় ২,০০০ কিলোমিটার পূর্বে প্রশান্ত মহাসাগরের উপর আছড়ে পড়েছে সেটি৷ স্থানীয় সময় সকাল সাতটা নাগাদ সাইরেনের শব্দে মানুষ সতর্ক হয়ে পড়ে৷ মোবাইল ফোনের মাধ্যমেও তাদের নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে পরামর্শ দেওয়া হয়৷ তবে পর পর এমন দু'টি ঘটনা সত্ত্বেও জাপানের উত্তরে সাধারণ মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় তেমন কোনো প্রভাব পড়েনি৷
দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উত্তর কোরিয়ার এই ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা সম্পর্কে কিছু তথ্য প্রকাশ করেছে৷ তাদের সূত্র অনুযায়ী, ১৯ মিনিট ধরে সেটি আকাশে ছিল৷ ৭৭০ কিলোমিটার সর্বোচ্চ উচ্চতা ছোঁয়ার পর সেটি মোট ৩,৭০০ কিলোমিটার দূরে প্রশান্ত মহাসাগরে আঘাত হানে৷ অর্থাৎ গুয়াম দ্বীপে মার্কিন সামরিক ঘাঁটি এই ক্ষেপণাস্ত্রের আওতায় ছিল৷ এই সাফল্য সত্ত্বেও উত্তর কোরিয়া নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুর উপর নিখুঁত আঘাত হানার ক্ষমতা আয়ত্ত করেছে কিনা, তা নিয়ে অনেক মহলে সন্দেহ রয়ে গেছে৷
জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে বলেছেন, গোটা বিশ্বকে একযোগে উত্তর কোরিয়ার উদ্দেশ্যে স্পষ্ট বার্তা পাঠাতে হবে৷ সে দেশ তার আচরণের মাধ্যমে বিশ্বে শান্তি বিঘ্নিত করছে৷ উল্লেখ্য, এর আগে উত্তর কোরিয়া জাপানকে ‘ডুবিয়ে দেবার' হুমকি দিয়েছিল৷
দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জে-ইন বলেছেন, এই মুহূর্তে উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সংলাপ একেবারেই অসম্ভব৷ তিনি উত্তর কোরিয়ার হুমকি মোকাবিলা করতে নিজের প্রশাসনে নির্দেশ দিয়েছেন৷ উল্লেখ্য, সরাসরি সমরাস্ত্রের আঘাত ছাড়াও দক্ষিণ কোরিয়া ইলেকট্রো-ম্যাগনেটিক পাল্স অথবা জৈব রাসায়নিক অস্ত্র দিয়ে হামলার আশঙ্কা করছে৷
গুয়াম দ্বীপ সম্পর্কে অজানা কিছু তথ্য
উত্তর কোরিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দ্বন্দ্বের কারণে একটি জায়গা বেশ পরিচিতি পেয়েছে৷ সেটি হলো প্রশান্ত মহাসাগরীয় ছোট্ট দ্বীপ গুয়াম৷ এটি কিন্তু কেবল মার্কিন সেনা ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত নয়, জায়গাটিতে দেখার মতো আছে অনেক কিছু৷
ছবি: picture-alliance/robertharding/M. Runkel
খাঁটি সুখের জীবন
এখানে সামরিক ঘাঁটির কোনো চিহ্ন নেই৷ যদিও গুয়ামের এক তৃতীয়াংশ এলাকা যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক কাজে ব্যবহার হয়, বাকিটার সৌন্দর্য অপার: নীল পানি, প্রবাল প্রাচীর, প্রকৃতি প্রেমীদের জন্য হাঁটার সুন্দর পথ৷ তাই সেনাঘাঁটি বাদে এই দ্বীপের আয়ের অন্যতম বড় মাধ্যম যে পর্যটন তা আর বলে দিতে হয় না৷
ছবি: picture-alliance/robertharding/M. Runkel
বছরের প্রতিটি দিনেই সাঁতার কাটা
অনলাইনে নিজেদের এলাকার বিজ্ঞাপন হিসেবে তারা এটা প্রচার করে যে গুয়ামে সারা বছরই সাঁতার কাটা যায়৷ বছরজুড়ে তাপমাত্রা ২৬ থেকে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠা-নামা করে৷ দ্বীপটিতে মাত্র দু’টি ঋতু৷ গ্রীষ্ম এবং বর্ষা৷ জুন থেকে নভেম্বর বর্ষাকাল এবং বাকি সময়টা গ্রীষ্ম৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/T. Vejpongsa
বাড়ছে পর্যটন ব্যবসা
দ্বীপটির সৈকতগুলো সব সময় লোকে লোকারণ্য৷ প্রতি বছর গুয়ামে অবসর কাটাতে আসেন ১০ লাখেরও বেশি পর্যটক৷ প্রবাল প্রাচীরের কারণে ডুবুরিদের কাছে এখানকার সমুদ্র অত্যন্ত জনপ্রিয়৷ আশির দশক থেকে এখানকার পর্যটন ব্যবসা ফুলে ফেঁপে উঠেছে৷ মূলত দক্ষিণ কোরিয়া এবং জাপান এখানে বিনিয়োগ করে থাকে৷ এই দু’টি দেশ থেকে গুয়ামে আসতে বিমানে মাত্র কয়েক ঘণ্টা সময় লাগে৷
ছবি: Reuters/E. De Castro
স্থানীয় বিনোদন ব্যবস্থা
বিমানবন্দর থাকায় পূর্ব এশিয়ার মানুষের কাছে ছুটি কাটানোর অন্যতম স্থান হয়ে উঠেছে গুয়াম৷ গুয়ামে পৌঁছাতে লাগে মাত্র কয়েক ঘণ্টা৷ হাওয়াই যাওয়ার চেয়ে যা অনেক কম সময়৷ গুয়ামে জাপান থেকে সবচেয়ে বেশি পর্যটক যায়, মোট পর্যটকের তিন চতুর্থাংশ৷ বাকিদের বেশিরভাগ দক্ষিণ কোরিয়া, চীন অথবা তাইওয়ান থেকে যায়৷
ছবি: picture-alliance/robertharding/M. Runkel
ট্যাক্স ছাড়া কেনাকাটা
যারা কেনাকাটা করতে ভালোবাসেন তাদের জন্য গুয়াম হলো স্বর্গ: এখানে কোনো ট্যাক্স লাগে না৷ এছাড়া গুয়াম জাদুঘরে গিয়ে জানতে পারবেন এই দ্বীপের ইতিহাস (ছবিতে দেখা যাচ্ছে)৷ গুয়ামের ১৩০টি স্থান যুক্তরাষ্ট্রের ‘ন্যাশনাল রেজিস্টার অফ হিস্টোরিক প্লেসেস’-এর অন্তর্গত৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/T. Vejpongsa
দীর্ঘ ইতিহাস
গুয়াম দ্বীপটি ৪ হাজার বছরের পুরোনো৷ অর্থাৎ ৪ হাজার বছর আগে এখানে প্রথম বসতি স্থাপিত হয়েছিল৷ এর ইতিহাসের অন্যতম কালো অধ্যায় হলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ৷ ১৯৪১ সালে পার্ল হারবারে হামলার পর জাপানি সেনারা গুয়াম দখল করেছিল৷ সেই সময়কার অনেক স্মৃতিস্তম্ভ এখনও সেখানে রয়েছে৷ ছবিতে আসান মেমোরিয়াল পার্কে টর্পেডো দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Reuters/E. de Castro
আদিবাসীদের সংস্কৃতি
গুয়ামের অধিবাসীদের মধ্যে বেশিরভাগই চামোরো জাতিগোষ্ঠীর৷ ৪,০০০ বছর আগে এই জাতিগোষ্ঠী সেখানে বসতি স্থাপন করেছিল৷ বর্তমান অধিবাসীরা তাদের উত্তরসূরি৷ এই মূর্তিটি একজন চামোরো দল নেতার, যা গুয়ামবাসীদের পূর্বপুরুষের স্মৃতিচিহ্ন বহন করছে৷ দ্বীপটিতে ঐতিহ্যবাহী চামোরো সংস্কৃতিকে বিজ্ঞাপন হিসেবে ব্যবহার করা হয়৷ তবে বর্তমান গুয়ামের অধিবাসীরা জন্মসূত্রে মার্কিন নাগরিক৷