কাতারের রাজধানী দোহায় তিন সপ্তাহের বিরতির পর আবারো শুরু হচ্ছে আফগানিস্তানের ‘শান্তি আলোচনা'৷ প্রায় দুই দশক পর অ্যামেরিকা অবশেষে দেশটি থেকে তাদের সেনা প্রত্যাহার করছে৷
বিজ্ঞাপন
মঙ্গলবার দোহায় পৌঁছেছেন আফগান সরকারের প্রতিনিধি দল৷ সেখানে দুই দশকের আফগান যুদ্ধের অবসানের আলোচনা শুরু হবার কথা রয়েছে৷ আফগান সরকার ও তালেবানেরপ্রতিনিধিরা এ আলোচনায় যোগ দিচ্ছেন৷
এর আগে প্রায় তিন মাসের আলোচনার পর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সৈন্য সরিয়ে নেবার বিষয়ে তালেবানের চুক্তি হয়৷
এবারের আলোচনায় নতুন আফগান সরকারেরের কাঠামো কী হবে, তা নিয়ে দুইপক্ষের মধ্যে দরকষাকষি হবে৷ আলোচনার কেন্দ্রে থাকবে ক্ষমতা ভাগাভাগি ও যুদ্ধবিরতি৷ মার্কিন সমর্থিত বর্তমান সরকারকে এখনো মেনে নেয়নি তালেবান৷
তালেবান: যাদের কারণে চাপের মুখে পাকিস্তান
ট্রাম্পের টুইটের পর হোয়াইট হাউস স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে যে, পাকিস্তানকে সামরিক সহায়তা বন্ধ করার অন্যতম কারণ, পাকিস্তান তালেবান জঙ্গিদের সাহায্য করছে৷ কিন্তু কেন? পাকিস্তানের রাজনীতির সঙ্গে তালেবানের সম্পর্কই বা কী?
ছবি: Majid Saeedi
গোড়ার কথা
১৯৭৮ থেকে ’৯২ সালের মধ্যবর্তী সময়ে আফগানিস্তানে ব্যাপক অভিযান চালিয়েছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন৷ পাশতুন জনজাতির যোদ্ধারা সে সময় রাশিযার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল৷ পরবর্তীকালে তারাই তালেবান হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে৷ রাশিয়াকে ঠেকাতে সেই সময় পাকিস্তান এবং অ্যামেরিকা তালেবানকে সাহায্য করে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/AP/A. Khan
গৃহযুদ্ধ এবং তালেবান
১৯৯২ থেকে ’৯৬ সালের মধ্যবর্তী সময়ে আফগানিস্তানে গৃহযুদ্ধ সংঘটিত হয়৷ সেই সময় তালেবান ত্রমতার কাছাকাছি পৌঁছে যায়৷ অভিযোগ, তালেবানদের সেই উত্থানেও পাকিস্তান সাহায্য করেছিল৷ বস্তুত, বিস্তীর্ণ আফগানিস্তান জুড়ে তালেবান যে সরকার গঠন করেছিল, কেবল পাকিস্তান, সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত তাদের স্বীকৃতি দিয়েছিল৷ বিশ্বের অন্য কোনও দেশ তালেবান সরকারকে সমর্থন দেয়নি৷
ছবি: Majid Saeedi
৯/১১ এবং মার্কিন সৈন্য
নিউ ইয়র্কের টুইন টাওয়ারে আল কায়দা হামলা চালানোর পর অ্যামেরিকা আল কায়দা এবং তালেবানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে৷ আফগানিস্তানে পৌঁছায় মার্কিন সৈন্য৷ আফগানিস্তানের হামিদ কারজাই সরকারকে সমর্থন জানায় অ্যামেরিকা এবং ন্যাটো বাহিনী৷ বিশ্বের অন্যান্য দেশের সৈন্যরাও ন্যাটোর ছত্রছায়ায় তালেবানবিরোধী লড়াইয়ে শামিল হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
পাকিস্তানের লাভ
বিশেষজ্ঞদের মতে, পাকিস্তানের প্রথম এবং প্রধান শত্রু আফগান তালেবান নয়, ভারত৷ এ কারণে ভারতের বিরুদ্ধে ‘প্রক্সি’ যুদ্ধ চালানোর জন্য তালেবান জঙ্গিদের পাকিস্তানের প্রয়োজন৷ ভারত বহুবার অভিযোগ করেছে যে, সীমান্তে আটক করা জঙ্গিদের সঙ্গে তালিবান যোগ আছে৷ তালিবান পাকিস্তানেই প্রশিক্ষণ নেয় বলেও অভিযোগ করে আসছে ভারত৷
ছবি: Getty Images/AFP/N. Shirzad
অন্য কূটনীতি
কোনো কোনো বিশেষজ্ঞের মতে, মার্কিন সৈন্য আফগানিস্তান ছাড়লে আফগানিস্তানের মৌলবাদী সংগঠনগুলির সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হলে পাকিস্তানকে পশ্চিমের সীমান্ত নিয়ে ভুগতে হতে পারে৷ তাই তালেবান প্রশ্নে ‘কৌশলগত’ অবস্থান নিতে হয় পাকিস্তানকে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Naveed
পাকিস্তানেও তালেবান হামলা
গত এক দশকে পাকিস্তানের রাজনৈতিক স্থিতাবস্থা নষ্ট করতে একের পর এক আক্রমণ চালিয়েছে জঙ্গিরা৷ পাঁচ তারা হোটেল থেকে ভলিবল স্টেডিয়াম, বাজার থেকে সামরিক ঘাঁটি সর্বত্রই হামলা হয়েছে৷ বারবারই আঙুল উঠেছে তালেবানের দিকে৷ অভিযোগ, এতৎসত্ত্বেও পাকিস্তান তালিবানের প্রতি নরম থেকেছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Ali
মার্কিন হুমকি
ভারতসহ বেশ কিছু দেশ বার বার পাকিস্তানের বিরুদ্ধে দ্বিচারিতার অভিযোগ তুলেছে৷ এতদিনে অ্যামেরিকা সে অভিযোগে শিলমোহর দিল৷ ডোনাল্ড ট্রাম্পের টুইটের পর হোয়াইট হাউস জানিয়ে দিলো যে, পাকিস্তানকে তারা আর কোনও সামরিক সহায়তা দেবে না, কারণ, সন্ত্রাস প্রশ্নে পাকিস্তানের ভূমিকা স্পষ্ট নয়৷
ছবি: Reuters/K. Lamarque
7 ছবি1 | 7
নাইন-ইলেভেনের হামলার পর, অর্থাৎ ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের পর তালেবানের বিরুদ্ধে আফগানিস্তানে যুদ্ধ শুরু করেন মার্কিন সেনারা৷ প্রায় ২০ বছর পর তাদের সেখান থেকে ধীরে ধীরে নিজেদের সরিয়ে নেয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে৷
‘‘তবে নতুন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন কী চান তার ওপরও অনেক কিছু নির্ভর করছে,'' প্রতিবেদককে বলেন ডয়চে ভেলের পশতু বিভাগের সাংবাদিক খালিদ হাকিমী৷ ‘‘মনে করা হচ্ছে তিনি চান না, মার্কিন সেনারা সেখান থেকে পুরোপুরি চলে আসুক৷''
২০ জানুয়ারি যখন বাইডেন দায়িত্ব গ্রহণ করবেন, তখন আফগানিস্তানে মাত্র আড়াই হাজার মার্কিন সেনা থাকবে৷ ‘‘তাই এবারের আলোচনা গুরুত্বপূর্ণ,'' যোগ করেন খালিদ৷ তিনি বলেন, ‘‘সামনের সময়টাতে দেখতে হবে আলোচনা কোনদিকে গড়ায়৷''
তিনি জানান, আলোচনা মঙ্গলবার শুরু হবার কথা থাকলেও মূলত বুধবার সকাল থেকেই মূল আলোচনা শুরু হবে৷