দীপাবলি আসতেই দূষণের মাত্রা চড়তে শুরু করেছে রাজধানী দিল্লিতে। দূষণ সূচক ঊর্ধ্বমুখী।
বিজ্ঞাপন
রোববার রাতে, অর্থাৎ, দীপাবলির আগের রাতে দিল্লির বায়ু দূষণের গড় মাত্রা ছিল ২৫১ একিউআই। আর সর্বোচ্চ মাত্রা ছিল ৩২৭। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের নর্থ ক্যাম্পাস অঞ্চলে দূষণ ছিল সর্বাধিক। স্বাভাবিকের চেয়ে যা বহু গুণ বেশি। শনি এবং রোববার দিল্লির যে ছবি সামনে এসেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, সমস্ত রাস্তা ধোঁয়ার চাদরে ঢাকা।
বায়ুদূষণের মাত্রা মাপা হয় এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্সের(একিউআই) সূচকে। এই সূচক অনুযায়ী, ৫০ একিউআই শ্বাস নেওয়ার উপযুক্ত। ৫০ থেকে ১০০ হলো মোটামুটি। এর উপরে যে কোনো বাতাসই বিষবায়ু। ৩০০ থেকে ৪০০ একিউইউ অত্যন্ত বিপজ্জনক। ২০০ থেকে ৩০০ বিপজ্জনক। দিল্লির গড় বায়ু এখন বিপজ্জনক মাত্রায়। কোনো কোনো জায়গায় অতি বিপজ্জনক।
কেন এমন হয়
দিল্লির ভৌগোলিক অবস্থান বায়ু দূষণের অন্যতম কারণ। হঠাৎ আবহাওয়া বদলে যায় বছরের এই সময়ে। পরিবেশ অতিরিক্ত শুকনো হয়ে যায়। যার জেরে আচমকাই বাতাসে ধুলোর কণা ভেসে ওঠে। তার সঙ্গে গাড়ির ধোঁয়া, পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের কারখানার দূষণ এবং ফসলের খেত জ্বালানোর কারণে দূষণের মাত্রা আরো বেড়ে যায়। সেই সঙ্গে যোগ হয় বাজি পোড়ানো।
দিল্লিতে সবরকম বাজি ফাটানোই নিষিদ্ধ ছিল। কিন্তু দীপাবলির রাতে এমন দৃশ্য দেখা গেছে দিল্লির বহু এলাকায়। সন্ধে ৭টা থেকে লাজপতনগর, পশ্চিম দিল্লি, বুরারি, পশ্চিম বিহারে বিপুল বাজি ফেটেছে। পুলিশের চোখের সামনেই রাস্তায় নেমে মানুষ বাজি ফাটিয়েছেন।
ছবি: Altaf Qadri/AP Photo/picture alliance
দূষণের চাদর
বৃহস্পতিবার রাত থেকেই দূষণের মাত্রা বাড়তে থাকে দিল্লিতে। শুক্রবার সকালে ধোঁয়াশার হালকা চাদরে ঢেকে গেছে দিল্লি। চোখ জ্বালা করছে। বৃহস্পতিবার রাতে দিল্লির দূষণ অতি ভয়ংকর বা সিভিয়ারে পৌঁছে গিয়েছিল। শুক্রবার সকালে তা হ্যাজারডাস সূচকে আছে। দিল্লির আশপাশের শহরগুলির পরিস্থিতিও ভয়াবহ। নয়ডা, ফরিদাবাদ, গাজিয়াবাদে বিপুল বাজি ফেটেছে।
ছবি: Imtiyaz Khan/AA/picture-alliance
সুপ্রিম কোর্টের রায়
পরিবেশবিদদের একাংশের বক্তব্য, সুপ্রিম কোর্টের সাম্প্রতিক রায়ের পরেই এত বাজি ফাটানোর সুযোগ পেলেন নাগরিকরা। সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছিল, গ্রিন ক্র্যাকার ফাটানো যাবে। তারপরেই সাধারণ মানুষ বাজি কিনতে শুরু করেন। যার মধ্যে বহু নিষিদ্ধ বাজিও ছিল। গ্রিন ক্র্যাকারের লেবেল লাগিয়ে নিষিদ্ধ বাজি বিক্রি করেছেন বিক্রেতারা।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
কলকাতার পরিস্থিতি
অন্যবারের মতো না হলেও কলকাতাতেও ষথেষ্ট পরিমাণ বাজি ফেটেছে বৃহস্পতিবার। গভীর রাত পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকা থেকে বাজি ফাটানোর অভিযোগ পেয়েছে পুলিশ।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
বাজির দূষণ
বিভিন্ন পাড়ায় এভাবেই রাস্তায় নেমে বাজি ফাটিয়ে দূষণ ছড়িয়েছেন নাগরিকরা।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
সবুজ বাজি
অনেকেই দাবি করেছেন, তারা দোকান থেকে সবুজ বাজি কিনে এনেছেন। কিন্তু পরিবেশবিদদের বক্তব্য, সবুজ বাজির লাইসেন্স পশ্চিমবঙ্গে অন্তত কারো কাছে নেই। ফলে সবুজ বাজি বিক্রি করাও সম্ভব নয়। যে বাজি ফেটেছে, সবই নিষিদ্ধ।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
এবং চকোলেট বোমা
অন্তত এক দশক আগে পশ্চিমবঙ্গে এই ধরনের চকোলেট বোমা ফাটানো নিষিদ্ধ হয়েছে। এই বোমের শব্দমাত্রা ৬৫ ডেসিবলের উপরে। কিন্তু যত্রতত্র ফেটেছে চকোলেট বোমা।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
ছোটদের হাতে বোমা
কিশোরদের হাতে দেখা গেছে চকোলেট বোমা। রাস্তায় নেমে প্রকাশ্যে তারা এই বোমা ফাটিয়েছে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
তুবড়ির দূষণ
দেখতে সুন্দর লাগলেও এই ধরনের তুবড়ি বাজিতে বিপুল দূষণ হয়। এর ভিতরে গন্ধক থাকে। বারুদের সঙ্গে পুড়ে যা দূষণ তৈরি করে। কলকাতা এবং দিল্লির রাস্তায় এমন তুবড়ি ফাটানো হয়েছে দীপাবলির রাতে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
ফানুস ঐতিহ্য
কলকাতার বিভিন্ন অঞ্চলে কালীপুজোর দিন ফানুস ওড়ানোর ঐতিহ্য আছে। ফানুস বাজি নিষিদ্ধ হলেও ঐতিহ্যবাহী ফানুস ওড়ানো হয়েছে বেশ কিছু জায়গায়।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
ফানুস উৎসব
উত্তর কলকাতার কোনো কোনো এলাকায় ফানুস উৎসব হয়। বৃহস্পতিবার বিকেলে তেমনই এক উৎসবের প্রস্তুতি।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
11 ছবি1 | 11
দিল্লির পার্শ্ববর্তী হরিয়ানা, পশ্চিম উত্তরপ্রদেশ এবং পাঞ্জাবে এই সময় ফসলের খেতে আগুন দেওয়া হয়। পুরনো ফসলের গোড়া পুড়িয়ে সার তৈরি করে নতুন ফসল বোনা হয়। এর ফলে বিপুল পরিমাণ দূষণ হয়। সরকারি সূত্র অবশ্য জানাচ্ছে, এবছর খেত জ্বালানোর ঘটনা অনেক কমেছে। সব মিলিয়ে পাঁচশটি এমন ঘটনার রেকর্ড মিলেছে। তা সত্ত্বেও দূষণ রোধ করা যাচ্ছে না।
দীপাবলির আনন্দ
দিল্লিতে বাজি পোড়ানো বন্ধ। বাজি ফাটালে ছয় মাস পর্যন্ত জেলের নির্দেশ দিয়েছে সরকার। কিন্তু তা সত্ত্বেও, দীপাবলির আগের দিন, যাকে ছোটা দীপাবলি বলা হয়-- বাজি ফেটেছে। আগের চেয়ে কম হলেও বাজি পোড়ানো সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি। আর এই বাজির থেকে দিল্লির দূষণ মাত্রাছাড়া জায়গায় পৌঁছে যায়।
বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, দূষণ যথেষ্ট হলেও অন্যবারের চেয়ে এবারের মাত্রা তুলনায় কম। দীপাবলি কাটলে বোঝা যাবে দূষণের মাত্রা দ্রুত আরো কমবে কি না।