জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল বলেছেন আগামী বছরের নির্বাচনে তিনি আবারও চ্যান্সেলর পদে লড়বেন৷ রবিবার তাঁর দলের নেতাদের এই সিদ্ধান্ত জানান তিনি৷
বিজ্ঞাপন
১১ বছর ধরে চ্যান্সেলরের দায়িত্ব পালন করে আসা ম্যার্কেল যে এমন একটি ঘোষণা দিতে পারেন তা অনেকদিন ধরেই আশা করা হচ্ছিল৷ সম্প্রতি মার্কিন নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয়ের পর বিশ্ব নেতাদের অনেকেই চেয়েছেন, ম্যার্কেল আবার চ্যান্সেলর হন৷
নিজের দল খ্রিষ্টীয় গণতন্ত্রী ইউনিয়ন (সিডিইউ)-এর নেতাদের কাছে নিজের আগ্রহের কথা প্রকাশের পর সাংবাদিকদের ম্যার্কেল বলেন, ‘‘ইউরোপ ছাড়াও আন্তর্জাতিকভাবে আমরা এখন আমাদের মূল্যবোধ ও স্বার্থ রক্ষায় কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি৷''
তবে তিনি বলেন, আগের যে কোনো নির্বাচনের চেয়ে এই নির্বাচন কঠিন হবে, কারণ, বর্তমানে ‘‘আমাদের সমাজ বেশ দ্বিধাবিভক্ত,'' বলেন ম্যার্কেল৷ পপুলিজমের উত্থান এবং ব্রেক্সিট ও ট্রাম্পের জয়ে যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে সেই অবস্থায় ‘‘দেশের জন্য কাজ করা আমার দায়িত্ব'' এমন কথাও বলেছেন তিনি৷
বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর নারীর ব্যক্তিগত জীবন
তিনি সুপার মার্কেটে বাজার করেন, নাপিতের দোকানে অন্যদের পাশে বসে অপেক্ষা করেন, এমনকি সরকারি ভবন নয়, নিজের বাড়িতে থাকাই তাঁর পছন্দ৷ তিনি আর কেউ নন, বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর নারী জার্মান চ্যান্সেলার আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷
ছবি: Reuters/H. Hanschke
ম্যার্কেলের নাপিত উডো ভালৎস
২০১৫ সালে ফোর্বস ম্যাগাজিনের বিবেচনায় বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর নারী আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷ উডো ভালৎস (ছবিতে মাঝখানে) গত দশ বছর ধরে ম্যার্কেলের চুল কাটেন৷ তাঁর কথায়, ‘‘চ্যান্সেলার হওয়ার আগেও তিনি যেমন সেলুনে অন্যদের সাথে বসতেন, এখনও তাই করেন৷ তাঁকে কোনো বিশেষ ছাড় দেওয়া হয় না৷ অর্থাৎ তিনিও অন্যদের মতো ৬৫ ইউরো দেন৷ একদম আগের মতো আছেন তিনি৷’’
ছবি: picture-alliance/schroewig
নিজেদের বাড়িতেই থাকেন
বার্লিনের ‘মিউজিয়াম আইল্যান্ড’-এর একটি জাদুঘরের কাছে নিজস্ব, কিন্তু পুরানো একটা ফ্ল্যাটে থাকেন আঙ্গেলা ম্যার্কেল ও তাঁর স্বামী ইওয়াখিম সাউয়ার৷ শুধু নিরাপত্তার জন্য দু’জন পুলিশ বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে থাকে৷ এছাড়া কিন্তু সব কিছু আগের মতো আছে৷ এই যেমন, ছুটি পেলে আজও কাছের উকারমার্ক নামের ছোট্ট শহরে চলে যান দু’জনে৷ সেখানেই তিনি বড় হয়েছেন!
ছবি: picture-alliance/dpa
নিজেই বাজার করেন
চ্যান্সেলার ম্যার্কেল সাধারণ সুপার মার্কেটেই বাজার করতে যান, বিশেষ করে যেগুলো একটু বেশি সময় খোলা থাকে৷ বাজার করা সম্পর্কে আঙ্গেলা ম্যার্কেল একবার এক দোকানিকে বলেছিলেন, ‘‘আমার এই অল্প অবসর সময়ে বাজার করার মতো সব কাজই করার চেষ্টা করি, যেমনটা আগে করতাম৷ অবশ্য যখন নিজে পারি না, তখন বাজারের লিস্ট তৈরি করে স্বামীর হাতে তুলে দেই৷’’
ছবি: picture-alliance/Markus C. Hurek
তিনিই ‘চ্যান্সেলার’
দোকানের একজন নারী কর্মী জানান, ‘‘চ্যান্সেলার ম্যার্কেল অন্যান্য ক্রেতার মতোই কিছু খুঁজে না পেলে কোথায় কী রাখা আছে, তা সাধারণ গৃহিনীদের মতোই জানতে চান৷ তাঁর নিরাপত্তার জন্য দেহরক্ষী সাথে না থাকলে কেউ হয়ত বুঝবেই না যে তিনিই আমাদের ‘অ্যাঞ্জি’৷’’ কর্মীটি আরো জানান, ‘‘শত ব্যস্ততার মধ্যেও কিন্তু চ্যান্সেলারের মুখে হাসিটুকু লেগে থাকে, যা ভীষণ ভালো লাগে৷’’
ছবি: Getty Images/AFP/J. Eisele
চ্যান্সেলারের পছন্দ ফ্রেঞ্চ চিজ
জার্মান চ্যান্সেলার আঙ্গেলা ম্যার্কেলের ভীষণ পছন্দ ফ্রেঞ্চ চিজ বা পনির, যা তিনি নিজেই কিনতে ভালোবাসেন৷ আর সে’কথাই গর্ব করে জানান ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের একজন কর্মী৷
হাতে দামি ব্যাগ নেওয়ার চেয়ে ভালো খাওয়া-দাওয়া ম্যার্কেলের কাছে বেশি গুরত্বপূর্ণ৷ যখন তিনি রান্না করার সময় পান না, তখন স্বামী ইওয়াখিম সাউয়ারকে নিয়ে বার্লিনের ‘কাসামবালিস’ নামের একটি রেস্তোরাঁয় খেতে যান৷ দামি খাবারের চেয়ে অবশ্য ‘গ্রিক মিটবল’-এর মতো সাধারণ খাবারই বেশি পছন্দ বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর এই নারীর৷
ছবি: picture alliance/Markus C. Hurek
বিলাসিতা পছন্দ নয়
অন্যান্য রাজনীতিকদের মতো বিলাসিতা আঙ্গেলা ম্যার্কেলের তেমন পছন্দ নয়৷ বরং সাধারণ জীবনযাপনই তাঁর বেশি ভালো লাগে৷ তাই তিনি যতটা সম্ভব সেভাবেই চলার চেষ্টা করেন স্বামীকে নিয়ে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/C. Fusco
চাই মুক্ত হাওয়া আর হাঁটা-চলা
আঙ্গেলা ম্যার্কেল সময় সুযোগ পেলে স্বামীকে সাথে নিয়ে হাঁটতে বের হন৷ শারীরিক এবং মানসিকভাবে ‘ফিট’ থাকতে মুক্ত বাতাসে হাঁটা-চলা যে ভীষণ জরুরি – সেটা তিনি যেন সকলে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন৷ এই না হলে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর নারী!
ছবি: picture-alliance/AP Photo/AP Photo/C. De Luca
8 ছবি1 | 8
ম্যার্কেলের প্রতি বিশ্বের অনেক নেতার প্রত্যাশা এবং অনেক বিশ্লেষক যে তাঁকে ‘মুক্ত বিশ্বের পরবর্তী নেতা' বলছেন সে ব্যাপারেও মন্তব্য করেছেন জার্মান চ্যান্সেলর৷ তিনি বলেন, এসব মন্তব্যে তিনি সম্মানিত বোধ করলেও এগুলো (মন্তব্যসমূহ) সামঞ্জস্যহীন, এমনকি অযৌক্তিকও৷
জার্মান টেলিভিশন এআরডিকে দেয়া সাক্ষাৎকারে ম্যার্কেল ব্রেক্সিট পরবর্তী ইউরোপকে শক্তিশালী করার অঙ্গীকার করেন৷
ম্যার্কেল যখন তাঁর দলের নেতাদের চ্যান্সেলর পদে চতুর্থবারের মতো নির্বাচন করার আগ্রহের কথা জানান, তখন সবাই ‘তুমুল হাততালি' দিয়ে সেই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানান৷ সাক্সনি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী শ্টাবিস্লাভ টিলিচ বলেন, ‘‘ম্যার্কেল হলেন পপুলিজমের বিরুদ্ধে আমাদের উত্তর৷''
জরিপ কী বলছে
জার্মান পত্রিকা বিল্ড-এর এক জরিপে দেখা গেছে, ৫৫ শতাংশ জার্মান ম্যার্কেলকে আবারও চ্যান্সেলর হিসেবে চান৷ গত আগস্টে সংখ্যাটি ছিব ৪২ শতাংশ৷ গত বছর প্রায় এক মিলিয়ন শরণার্থীকে জার্মানিতে প্রবেশ করতে দিয়ে কিছুটা সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন ম্যার্কেল৷
তাঁর এই সিদ্ধান্তে ডানপন্থি এএফডি (জার্মানির জন্য বিকল্প) দলের উত্থান ঘটে৷ গবেষণা ইনস্টিটিউট ‘এমনিড' এর জরিপে দেখা গেছে, ১৩ শতাংশ ভোটার এএফডিকে চান৷ আর ম্যার্কেলের সিডিইউ'এর প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন ৩৩ শতাংশ ভোটার (২০১৩ নির্বাচনের চেয়ে সংখ্যাটি ৯ পয়েন্ট কম)৷ এর পরেই আছে এসপিডি দল (২৪ শতাংশ)৷
প্রতিক্রিয়া
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পপুলিজমের যে ঢেউ উঠেছে তার বিরুদ্ধে লড়তে ম্যার্কেলই সঠিক মানুষ হতে পারেন বলে মনে করছেন ডয়চে ভেলের কায়-আলেক্জান্ডার শোলজ৷
ম্যার্কেলের ঘোষণায় আনন্দিত ব্রিটিশ লেখক ও রাজনীতিবিদ জনাথন ফ্রায়ার৷ তিনি মনে করছেন, ‘‘এই পরিস্থিতিতে ম্যার্কেলকে ইউরোপের প্রয়োজন৷’’
মার্কিন গায়ক, গীতিকার বিল ম্যাডেন বলেন, রাশিয়া ও মুক্ত বিশ্বের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকা একমাত্র বিশ্ব নেতা হলেন আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷
জেডএইচ/এসিবি (এএফপি, রয়টার্স)
নানা মুডে আঙ্গেলা ম্যার্কেল
সারা বিশ্বের মিডিয়া জুড়ে জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের ছবি৷ তাঁর সরকারি মুখাবয়ব প্রায়শই গম্ভীর, কথা বলেন সুচিন্তিতভাবে৷ ছবি তোলেন দু’হাতের আঙুলগুলো জুড়ে, তাঁর সুপরিচিত ভঙ্গি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সুবিখ্যাত ম্যার্কেল মুদ্রা
ব্রীড়া থেকেই হোক, বা ঝানু রাজনীতিকের পরিশীলিত ভঙ্গিই হোক, ম্যার্কেল যে হাতের আঙুলগুলো জোড়া দিয়ে কী বলতে চাইছেন, তা তিনি নিজেই জানেন...
ছবি: picture-alliance/dpa/Michael Kappeler
ইউরোপীয় রাজনীতিক
সার্বভৌম, উৎসাহী অথচ নিরুদ্বেগ অভিব্যক্তি নিয়ে ইউরোপীয় রাজনীতির মঞ্চে চলাফেরা করেন জার্মান চ্যান্সেলর৷ ছবিতে তিনি ব্রাতিস্লাভায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাম্প্রতিক শীর্ষবৈঠকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/O. Hoslet
চ্যান্সেলরের সঙ্গে সেলফি
উদ্বাস্তু সংকট ম্যার্কেলের রাজনৈতিক জীবনে একটা বড় প্রসঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ তবুও গতবছর বার্লিনের মারৎসান এলাকার একটি উদ্বাস্তু শিবিরে সিরিয়া থেকে আগত এক রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীকে তাঁর সঙ্গে সেলফি তোলার সুযোগ দেন ম্যার্কেল৷
ছবি: Getty Images/S. Gallup
সরকারপ্রধান
চ্যান্সেলর হিসেবে ম্যার্কেলকে দেখা যায় তাঁর স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিমা ও ভূমিকায়৷ সঙ্গে ভাইস চ্যান্সেলর সিগমার গাব্রিয়েল৷
ছবি: Reuters/F. Bensch
নারীসুলভ
হঠাৎ কিছুটা অন্তরঙ্গতা ও একটি হাসি৷ ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্রঁসোয়া ওলঁদকেও পার্ফেক্ট জেন্টলম্যান বলা চলে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/F. Mori
জোট সরকার
ম্যার্কেলের দুই জোট সহযোগী, এসপিডি প্রধান সিগমার গাব্রিয়েল ও সিএসইউ প্রধান হর্স্ট জেহোফারকে দেখলে বোঝা যায়, ‘অ্যাঞ্জি’ মাথা ঠান্ডা না রাখলে বিপদ ঘটতে কতক্ষণ?
ছবি: picture-alliance/AP Photo/B. von Jutrczenka
বৈজ্ঞানিক মনোবৃত্তি
পদার্থবিদ্যায় ডক্টরেট ডিগ্রির অধিকারিনী ম্যার্কেলের ইন্টারনেট বা ডিজিটাল মিডিয়াগুলোর জন্যে খুব একটা সময় থাকে না৷ তবে টুইট করতে ভালোবাসেন৷ ২০১৫ সালে জাতিসংঘের একটি ফোরামে ফেসবুক প্রতিষ্ঠাতা মার্ক সাকারবার্গের সঙ্গে আগ্রহ নিয়েই আলোচনা করছেন!
ছবি: picture-alliance/dpa
যাজক তনয়া
২০১৬ সালে পোপ ফ্রান্সিসের সঙ্গে ব্যক্তিগত সাক্ষাৎ প্রটেস্টান্ট যাজকের কন্যা ম্যার্কেলের পক্ষে একটি বিশেষ মুহূর্ত৷
ছবি: Reuters/A. Pizzoli
শ্যাম্পেন পান করার মতো উপলক্ষ্য চাই
যেমন জার্মানি ও ফ্রান্সের মধ্যে এলিসি চুক্তির ৫০ বছর পূর্তি৷
ছবি: AP
ক্ষমতার নেশা চেনেন ম্যার্কেল
২০১১ সালে ডয়চে ব্যাংকের প্রধান ইয়োসেফ আকারমান-এর সঙ্গে বৈঠকে সম্ভবত চলতি আর্থিক সংকট নিয়েই কথা হয়েছিল৷
ছবি: AP
ছুটিছাটায়
চ্যান্সেলরও মানুষ, তাঁরও ছুটি লাগে৷ তবে ছুটিতেও পাপারাৎসিদের হাত থেকে মুক্তি নেই আঙ্গেলা ম্যার্কেলের৷ ছবিতে তাঁর স্বামী ইওয়াখিম সাওয়ারকে দেখা যাচ্ছে (বাঁয়ে)৷
ছবি: dapd
সে অনেকদিন আগের কথা
তরুণ সিডিইউ রাজনীতিক আঙ্গেলা ম্যার্কেল দলীয় সতীর্থ আনেট শাভান ও প্রবীণ সিডিইউ রাজনীতিক এর্ভিন টয়ফেল-এর সঙ্গে দক্ষিণ জার্মানিতে সাইকেল টুরে৷ তখনও তাঁর মুখে অভিজ্ঞতা ও ক্ষমতার ছাপ পড়েনি৷