বিশ্বের অন্যতম বিপজ্জনক অঞ্চলে আবার উত্তেজনা৷ উত্তর কোরিয়া পঞ্চম ও এ পর্যন্ত সবচেয়ে শক্তিশালী পরমাণু পরীক্ষা করলো৷ সে দেশের ঘনিষ্ঠ সহযোগী চীনও এই পরীক্ষার নিন্দা করেছে৷
বিজ্ঞাপন
দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপান সহ বিভিন্ন দেশের সিজমিক পরিমাপ যন্ত্রে ভূ-কম্পন টের পেয়েই সন্দেহ হয়েছিল৷ তার উৎস আবার উত্তর কোরিয়ার পরমাণু পরীক্ষার এলাকার কাছাকাছি৷
লাওস-এ এশিয়ার শীর্ষ নেতাদের সম্মেলনের শেষে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট পার্ক গুন হে জানান, উত্তর কোরিয়া আবার পরমাণু পরীক্ষা করেছে৷ তিনি বলেন, উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন ‘উন্মাদের মতো বেপরোয়া' হয়ে উঠেছেন৷ গোটা বিশ্ব যখন পরমাণু অস্ত্র বর্জনের ডাক দিচ্ছে, তখন তিনি তা সম্পূর্ণ উপেক্ষা করছেন৷
পরে উত্তর কোরিয়াও এই ‘সফল' পরীক্ষার কথা সগর্বে ঘোষণা করে৷ রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন আরও জানিয়েছে, উত্তর কোরিয়া ব্যালেস্টিক রকেটের উপর পরমাণু অস্ত্র বসানোর ক্ষমতা অর্জন করেছে৷ ১৯৪৮ সালে প্রজাতন্ত্র হিসেবে রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষ্যে এই পরীক্ষা চালানো হলো বলে অনেক পর্যবেক্ষক মনে করছেন৷
উল্লেখ্য, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে সে দেশ চতুর্থবার পরমাণু পরীক্ষা চালিয়েছিল৷ সোমবারই প্রতিবেশী দেশ চীনে জি-টোয়েন্টি শীর্ষ সম্মেলনের সময় তিনটি মাঝারি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করে উত্তর কোরিয়া৷ ২০০৬ সালে প্রথম পরমাণু পরীক্ষার পর উত্তর কোরিয়ার উপর নিরাপত্তা পরিষদ সে দেশের উপর নিষেধাজ্ঞা চাপায়৷ একের পর এক নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও উত্তর কোরিয়া পরমাণু ও ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছে৷
বলা বাহুল্য, এই ঘটনা তীব্র সমালোচনার ঝড় তুলেছে৷ মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এর গুরুতর পরিণামের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন৷ তিনি দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন৷
এমনকি উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক সত্ত্বেও চীন চরম অস্বস্তিতে পড়েছে৷ চিনের সরকার স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছে, সে দেশ উত্তর কোরিয়ার পরমাণু পরীক্ষার ঘোরতর বিরোধী৷ এর আগে সব পক্ষের উদ্দেশ্যে সংযমের ডাক দিয়ে চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা মন্তব্য করেছিল, যে এই কাজ মোটেই ‘বিচক্ষণতা'-র পরিচয় নয়৷ অন্যদিকে শিনহুয়া মনে করে, দক্ষিণ কোরিয়া মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধ ব্যবস্থা বসানোর যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তার ফলেও আঞ্চলিক কৌশলগত ভারসাম্য ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে৷
উত্তর কোরিয়ার কিছু বিরল ছবি
বিশ্বের অন্যতম বিচ্ছিন্ন দেশ উত্তর কোরিয়া৷ সে দেশের কয়েকটি অঞ্চলে বার্তা সংস্থা এপি-র একদল সাংবাদিককে শর্ত সাপেক্ষে ঘুরে বেড়ানোর অনুমতি দিয়েছিল সরকার৷ ছবিঘরে থাকছে তাদের তোলা কিছু বিরল ছবি৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/David Guttenfelder
নির্জন সড়ক
উত্তর কোরিয়ায় প্রায় ২৫ হাজার কিলোমিটার সড়কপথ রয়েছে৷ এর মধ্যে সাংবাদিকরা ২,১৫০ কিলোমিটারেরও বেশি সড়ক পাড়ি দিয়েছেন৷ ছবির এই রাস্তাটি উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্য হোয়ানঘায়-এর৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/David Guttenfelder
আগুন ধরিয়ে রান্না
রায়ানগাং রাজ্যের এই ব্যক্তিটি আলু ও মুরগি রান্নার জন্য আগুন ধরিয়েছেন৷ এপি-র সাংবাদিকদের ঘোরাঘুরির শর্ত ছিল তাঁরা কোনো ব্যক্তির সাক্ষাৎকার নিতে পারবেন না৷ আর ছবি প্রকাশের আগে দেখিয়ে নিতে হবে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/David Guttenfelder
পূজনীয় পাহাড়
ছবিটি ‘মাউন্ট পেকটু’ নামক পাহাড়ি এলাকার৷ উত্তর কোরীয়রা মনে করেন এই এলাকা থেকেই তাঁদের পূর্বপুরুষরা এসেছেন৷ এছাড়া উত্তর কোরীয় বিপ্লবের সঙ্গেও পাহাড়টির নাম জড়িয়ে আছে৷ সবমিলিয়ে সে দেশের নাগরিকদের কাছে মাউন্ট পেকটু নামেই একটি পূজনীয় স্থান৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/David Guttenfelder
সাধারণ কৃষক
রায়ানগাং রাজ্যের এই কৃষক পরিবার গরু নিয়ে কোথাও যাচ্ছেন৷ সাংবাদিকরা রাজধানী পিয়ংইয়ং ছেড়ে বাইরে যাওয়ার পথে ছবিটি তুলেছেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/David Guttenfelder
স্কুলের শিশুরা রাস্তা ঠিক করতে যাচ্ছে
হামগং রাজ্যের এই শিশুরা তাদের এলাকার রাস্তা ঠিক করতে বের হয়েছে৷ পিয়ংইয়ং এবং ওনসান শহরের মধ্যে থাকা ২০০ কিলোমিটার রাস্তা সে দেশের সবচেয়ে ভালো সড়ক৷ এর বাইরে রাস্তাগুলোর অবস্থা ভালো নয়৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/David Guttenfelder
একসময় জমজমাট, এখন ধুলোময়
হামগং রাজ্যের খনিশহর কিলজু ও কিমচাক শহর দুটি একসময় বেশ জমজমাট ছিল৷ কিন্তু আর সে অবস্থা নেই৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/David Guttenfelder
দারিদ্রতা লুকিয়ে রাখা
বার্তা সংস্থা এপি-র সাংবাদিকদের সঙ্গে সবসময় সরকারি কর্মকর্তারা ছিলেন৷ তাই সে দেশের নাগরিকদের আসল অবস্থা পুরোপুরি দেখতে পারেননি তাঁরা৷ তবে যেটুকু দেখেছেন তাতে তাঁদের মনে হয়েছে, বেশিরভাগ মানুষেরই একটা ভালো বাসস্থানের ব্যবস্থা করার সামর্থ্য নেই৷ আর এই ছবির মতো রেস্টুরেন্টে খেতে যাওয়া তো দূরের কথা৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/David Guttenfelder
ফুটবল খেলা
রায়ানগাং রাজ্যের হাইসান শহরের এই ছেলেরা নিজের মনে ফুটবল খেলছে৷ বিদেশি একজন তাদের যে ছবি তুলছে সেদিকে নজর দেয়ার যেন সময় নেই৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/David Guttenfelder
স্থানীয় খাবার, বিয়ার
একদল উত্তর কোরীয় তাদের স্থানীয় খাবার ও স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত বিয়ার দিয়ে পিকনিকে মেতে উঠেছেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/David Guttenfelder
খাদ্য সরবরাহের সংগ্রাম
উত্তর কোরিয়ার চার-পঞ্চমাংশ জমিই চাষের অনুপযোগী৷ তাই দেশের মানুষের জন্য খাদ্যের যোগান দেয়া সরকারের জন্য একটু কষ্টকরই৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/Wong Maye-E
কোনো কথা নয়
সাংবাদিকরা শুধু এই রেললাইনের ছবিই তুলতে পেরেছেন৷ ছবিতে যাদের দেখা যাচ্ছে তাদের সঙ্গে কথা বলার অনুমতি ছিল না৷ সফরের পুরোটা সময় এভাবেই কেটেছে সাংবাদিকদের৷ তারপরও সফর শেষে এক সরকারি কর্মকর্তা তাঁদের জানান, তাঁদের নাকি নজিরবিহীন প্রবেশাধিকার দেয়া হয়েছে!