মেসির বয়স এখন ৩৬ বছর। এই বয়সে এসেও বিশ্বের সেরা ফুটবলারের সম্মান পাওয়া কম কথা নয়। কিন্তু বর্তমানে ফুটবল দুনিয়ার অন্যতম সেরা ফুটবলার মেসির পক্ষে সবই সম্ভব। বার্সেলোনা ছেড়ে দেয়ার পরও তাই মেসি অপ্রতিরোধ্য। তিনি সেরার সেরা।
গত বছর কাতারে যেভাবে তিনি আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপ জেতাতে সাহায্য করেছেন, তরপর তার হাতেই যে আবার ব্যালন ডি অঁরের পুরস্কার উঠতে চলেছে, তা অনুমান করা কঠিন ছিল না। বাস্তবে হয়েছেও তাই। কিলিয়ান এমবাপে, আর্লিং হলান্ডকে পিছনে ফেলে দিয়েছেন মেসি। ফুটবল মাঠে যেমন মাখনের মধ্যে ছুরি চালাবার মতো মসৃনভাবে ড্রিবল করে প্রতিপক্ষের চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করে যান মেসি, সেরা ফুটবলার হওয়ার ক্ষেত্রেও তা-ই হয়েছে।
সাদা শার্ট, কালো কোট, কালো বো টাই পরে মঞ্চে আসেন মেসি। সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী ও তিন ছেলে। এই অনুষ্ঠান পরিচালনা করছিলেন বিখ্যাত ফুটবলার দ্রোগবা ও প্রখ্যাত উপস্থাপক বেরিবার্ট। দর্শকের আসনে বসেছিলেন জোকোভিচ। মেসিই যে ব্যালন ডি অঁর পাচ্ছেন তার ঘোষণা করেন বেকহ্যাম।
যেভাবে মেসির ছয় ব্যালন ডি অঁর
আর্জেন্টিনা ও বার্সেলোনার তারকা লিওনেল মেসি সোমবার রেকর্ড ষষ্ঠবারের মতো ব্যালন ডি অঁর জিতেছেন৷ কী কারণে বিশ্বের জাতীয় দলগুলোর কোচ ও অধিনায়ক এবং ক্রীড়া সাংবাদিকরা তাঁকে সেরা মনে করেছেন সেই তথ্য থাকছে ছবিঘরে৷
ছবি: Reuters/C. Hartmann
২০০৯
২০০৮-২০০৯ মৌসুমে লা লিগা, চ্যাম্পিয়নস লিগ ও কোপা দেল রে জিতেছিল বার্সেলোনা৷ চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালসহ (ছবি) ঐ প্রতিযোগিতায় নয় গোল করেছিলেন মেসি৷ এছাড়া কোপায় ছয়টি ও লিগে ২৩টি গোল করেছিলেন মেসি৷ ফলে আর্জেন্টিনায় জন্ম নেয়া প্রথম ফুটবলার হিসেবে ব্যালন ডি অঁর জেতেন তিনি৷ এর আগে ১৯৬১ সালে ওমর সিভোরি এই অ্যাওয়ার্ড পেয়েছিলেন৷ তবে আর্জেন্টিনায় জন্ম নিলেও অ্যাওয়ার্ড জেতার সময় ইটালির নাগরিক ছিলেন তিনি৷
ছবি: picture alliance/dpa
২০১০
এটি ছিল বিশ্বকাপের বছর৷ স্পেন প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ জিতেছিল৷ ফলে সেই দলের ইনিয়েস্তা ও শাভির নাম সেরা তিনের তালিকায় ছিল৷ তবে তাঁদের হারিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো ব্যালন ডি অঁর জিতে নেন মেসি৷ কারণ, বার্সেলোনার স্প্যানিশ লিগ জেতায় অবদান ছিল তাঁর৷ দল ও দেশের হয়ে মোট ৬০টি গোল করেছিলেন মেসি৷
ছবি: AP
২০১১
টানা তৃতীয়বারের মতো মর্যাদাপূর্ণ এই খেতাব জেতেন এই আর্জেন্টাইন তারকা৷ পেছনে ফেলেন রোনালদো ও স্পেনের শাভি-কে৷ এক মৌসুমে বার্সেলোনা পাঁচটি শিরোপা জিতেছিল৷ লা লিগায় রোনালদোর চেয়ে (৪০) কম গোল (৩১) করলেও গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচগুলোতে গোল পেয়েছিলেন মেসি৷ চ্যাম্পিয়নস লিগ সেমিফাইনালের প্রথম ম্যাচে রেয়াল মাদ্রিদের বিরুদ্ধে দুই গোল করেন তিনি৷ এরপর ফাইনালেও একটি গোল করেছিলেন৷
ছবি: dapd
২০১২
সে বছর ৯১টি গোল করেছিলেন মেসি৷ এর মধ্যে ব্রাজিলের বিপক্ষে হ্যাট্রিকসহ জাতীয় দলের হয়ে করা ১২টি গোলও রয়েছে৷ তবে বার্সেলোনা লা লিগা বা চ্যাম্পিয়নস লিগ জিততে পারেনি৷ তারপরও ইনিয়েস্তা ও রোনালদোকে হারিয়ে চতুর্থবার ব্যালন ডি অঁর জেতেন তিনি৷ ফলে প্রথম ফুটবলার হিসেবে টানা চতুর্থবার এই অ্যাওয়ার্ড পান মেসি৷ তবে রোনালদোরও সেরা হওয়ার জোর সম্ভাবনা ছিল৷ কারণ, ২০১২ সালের ইউরোতে পর্তুগাল সেমিফাইনালে উঠেছিল৷
ছবি: Juan Mabromata/AFP/GettyImages)
২০১৫
সেবার বার্সেলোনা পাঁচটি শিরোপা জিতেছিল৷ তাই সেরা তিনের তালিকায় মেসির সঙ্গে নেইমারও ছিলেন৷ তবে পঞ্চমবারের মতো মেসিই ব্যালন ডি অঁর জেতেন৷ রানার আপ হয়েছিলেন রোনালদো৷ ২০১৫ সালে ক্লাবের হয়ে ৪৮টি গোল করেছিলেন মেসি৷
ছবি: K. Kudryavtsev/AFP/Getty Images
২০১৯
টানা চার বছর ব্যালন ডি অঁর হাতছাড়া হওয়ার পর ৩২ বছর বয়সে মেসি আবারও মর্যাদাপূর্ণ এই খেতাব জেতেন৷ ২০১৮-১৯ মৌসুমে লা লিগা জিতেছিল বার্সেলোনা৷ মেসি করেছিলেন ৩৬টি গোল৷ আর ২০১৯ সালে এ পর্যন্ত ৪৬টি গোল করেছেন মেসি৷ তবে আর্জেন্টিনাকে এবারও কোপা অ্যামেরিকা জেতাতে পারেননি৷ অবশ্য গত মৌসুমের চ্যাম্পিয়নস লিগে ১২ গোল করে সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়েছিলেন মেসি৷
ছবি: Reuters/C. Hartmann
6 ছবি1 | 6
মেসি বলেছেন, ''আমার ফুটবল জীবন যে এই পর্যায়ে পৌঁছাবে তা ভাবতে পারিনি। আমার প্রতি ভাগ্য সুপ্রসন্ন। আমি সেরা দলে খেলেছি। তাতে কাপ ও পুরস্কার জেতা সহজ হয়েছে। এখানে উপস্থিত থেকে পুরস্কার নিতে পেরে খুব ভালো লাগছে।''
মেসি এখন যুক্তরাষ্ট্রে মেজর লিগে ইন্টার মিয়ামির হয়ে খেলেন। আগামী বিশ্বকাপে তাকে আর্জেন্টিনার হয়ে খেলতে দেখা যাবে কি না, তা বলা যাচ্ছে না। তবে ২০২৪ সালের কোপা অ্যামেরিকা কাপে তিনি আর্জেন্টিনার হয়ে খেলবেন বলে জানিয়েছেন।
বোনমাতির সাফল্যও গুরুত্বপূর্ণ
মেয়েদের ফুটবলে স্পেনকে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন করার পিছনে বোনমাতির অবদান ছিল অনস্বীকার্য। ব্যালন ডি অঁর পাওয়ার পর তিনি বলেছেন, ''স্পেনে আমরা ফুটবল নিয়ে বাঁচি। আমাদের প্রচুর প্রতিভাবান ফুটবলার আছে।''
মাঠের ভিতরে ও বাইরে সমান বলিষ্ঠ বোনমাতি। মাঠের বাইরে স্পেনের সাবেক ফুটবল কর্তা রুবিয়ালেসের আচরণ. কোচের ব্যবহার, কাজ করার পরিবেশ নিয়ে তিনি সোচ্চার হয়েছেন। আর মেয়েদের বিশ্বকাপে তিনি ছিলেন স্পেনের সেরা ফুটবলার।
আর যারা পুরস্কার পেলেন
লেভ ইয়াসিন ট্রফি পেয়েছেন মার্তিনেজ। সেরা স্ট্রাইকার হিসাবে গার্ড মুলার ট্রফি পেয়েছেন আর্লিং হলান্ড। দাতব্য কাজের সঙ্গে জড়িয়ে থাকার জন্য সক্রেতিস পুরস্কার পেয়েছেন ভিনিসিয়ুস জুনিয়র। ২১ বছরের কম বয়সিদের জন্য কোপা ট্রফি পেয়েছেন জুড বেলিংহাম। পুরুষদের সেরা ক্লাব হয়েছে ম্যানচেস্টার সিটি এবং মেয়েদের সেরা ক্লাবের সম্মান পেয়েছে বার্সেলোনা।