উত্তর কোরিয়া আবার ব্যালিস্টিক মিসাইল পরীক্ষা করলো। এক মাসের মধ্যে চারবার। অ্যামেরিকার নতুন নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও পরীক্ষা হলো।
বিজ্ঞাপন
উত্তর কোরিয়ার শাসক কিম জং উনকে থামানো যাচ্ছে না। নিষেধাজ্ঞা জারি করেও নয়। দুই সপ্তাহ আগে ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার পর তা নিয়ে হইচই হওয়ায় কিম বলেছিলেন, উত্তর কোরিয়া আত্মরক্ষার জন্য নতুন অস্ত্র ও মিসাইল পরীক্ষার কাজ চালিয়ে যাবে। কোনো চাপের কাছে তারা নতি স্বীকার করবে না। বাস্তবে হলোও তাই। সোমবার তারা দেশের ইস্ট কোস্ট থেকে সমুদ্রে দুইটি ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা করেছে বলে দক্ষিণ কোরিয়ার সেনা জানিয়েছে।
নতুন বছরের গোড়া থেকেই উত্তর কোরিয়া ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করছে। এর মধ্যে তারা চারবার ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করলো। পর্যবেক্ষকদের মতে, এত ঘনঘন ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা অস্বাভাবিক। জাপানের কোস্ট গার্ডও জানিয়েছে, অন্তত একটি ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করেছে উত্তর কোরিয়া।
এখনো পর্যন্ত যা জানা গেছে
দক্ষিণ কোরিয়ার জয়েন্ট চিফ অফ স্টাফ জানিয়েছেন, সুনান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছাকাছি কোনো এলাকা থেকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোঁড়া হয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানের মতে, ব্যালিস্টিক মিসাইলের পরীক্ষা করেছে উত্তর কোরিয়া।
উত্তর কোরিয়াকে কাবু করতে জাতিসংঘের কিছু ‘অস্ত্র’
পারমাণবিক অস্ত্র নিষেধাজ্ঞার কোনো তোয়াক্কাই করছে না উত্তর কোরিয়া৷ দেশটির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান রয়েছে তাই জাতিসংঘেরও৷ দেখা যাক, কত রকমের নিষেধাজ্ঞার বেড়াজালে আটকা পড়েছে উত্তর কোরিয়া৷
ছবি: Reuters/S. Sagolj
কয়লা এবং লোহার ওপর নিষেধাজ্ঞা
২০১৭ সালের আগস্ট মাসে উত্তর কোরিয়ার ওপর সব ধরনের কয়লা, লোহা এবং লোহার আকরিক আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে জাতিসংঘ৷ওপরের ছবিতে উত্তর কোরিয়ার সীমান্ত সংলগ্ন ড্যানডং শহরের লিয়াওনিং গ্রিনল্যান্ড এনার্জি কয়লাখনি৷ খনিটি অবশ্য চীনের৷
ছবি: Reuters/B. Goh
মুদ্রায় নিষেধাজ্ঞা
বিদেশে কোনো ব্যাংক খুলতে পারে না উত্তর কোরিয়া৷ এমনকি জাতিসংঘের কোনো সদস্য দেশ যাতে পিয়ংইয়ংয়ের জন্য লাভজনক কোনো আর্থিক লেনদেন বা চুক্তিতে না যায়, নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে সে বিষয়টিও নিশ্চিত করার চেষ্টা করেছে জাতিসংঘ৷ জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞায় বলা হয়েছে, কোনো দেশের নাগরিক যদি উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে এমন কোনো ব্যবসায়িক যোগাযোগ স্থাপন করে, তাহলে সংশ্লিষ্ট দেশটিকে অবশ্যই ওই নাগরিককে বহিষ্কার করতে হবে৷
ছবি: Mark Ralston/AFP/Getty Images
জাহাজ চলাচল
ছবির এই জাহাজটি উত্তর কোরিয়ার৷ ২০১৬ সালের মার্চে ফিলিপাইন্সে এটিকে থামানো হয়৷ উত্তর কোরিয়ার কোনো জাহাজে পণ্য পরিবহনও নিষিদ্ধ করেছে জাতিসংঘ৷ এমনকি পিয়ংইয়ংযে নিজেদের জাহাজে অন্য দেশের পতাকা লাগিয়ে কাজ চালাবে, সেই পথও বন্ধ৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/J. Dumaguing
আকাশেও নিষেধাজ্ঞা
উত্তর কোরিয়ার জাতীয় এয়ারলাইন্স ‘এয়ার কোরিও’ অবশ্য পুরোপুরি নিষিদ্ধ নয়৷ এখনো তাদের বিমান রাশিয়া আর চীনে যাওয়া-আসা করে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Yonhap
জ্বালানিতেও...
২০১৭ সালের ডিসেম্বরে জাতিসংঘের আরোপ করা নিষেধাজ্ঞার পর থেকে জ্বালানি আমদানিতেও কঠোর বিধিনিষেধের আওতায় উত্তর কোরিয়া৷ ফলে জনজীবনেও এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে৷ নিষেধাজ্ঞার কারণে বছরে মাত্র ৪০ লক্ষ ব্যারেল অপরিশোধিত তেল আমদানি করতে পারে উত্তর কোরিয়া৷ তাই সে দেশের নাগরিকদের প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম ডিজেল এবং কেরোসিন পেয়েই খুশি থাকতে হয়৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Ralston
বিদেশে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এবং স্থাবর সম্পত্তি
উত্তর কোরিয়ার কূটনীতিকদের ওপরও কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে জাতিসংঘ৷ জার্মানিসহ এখনো হাতে গোনা যে কয়েকটি দেশে উত্তর কোরিয়ার দূতাবাস আছে, সেখানে উত্তর কোরীয় কূটনীতিকরা চাইলেও একটার বেশি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন না৷ দেশের বাইরে দূতাবাস ছাড়া আর কোনো কাজে ঘর ভাড়াও করতে পারে না উত্তর কোরিয়া৷
ছবি: picture alliance/dpa/S.Schaubitzer
সামরিক প্রশিক্ষণ
কোনো দেশ উত্তর কোরিয়ার সামরিক বাহিনী, পুলিশ, বা আধা সামরিক বাহিনীকে প্রশিক্ষণ দিতে পারে না৷ এ বিষয়েও রয়েছে জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা৷
ছবি: Reuters/S. Sagolj
কিম জং উনের মূর্তি
উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের আবক্ষ মূর্তি দেখতে বা পছন্দের কোনো জায়গায় রাখতে চান? তা জাতিসংঘের একেবারেই কাম্য নয়৷ তাই উত্তর কোরিয়ার ওপর যে কোনো ধরনের মূর্তি বিক্রিতেও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে জাতিসংঘ৷
ছবি: picture alliance/dpa/robertharding
8 ছবি1 | 8
জাপানের কোস্ট গার্ডের মুখপাত্র সংবাদসংস্থা এএফপি-কে জানিয়েছেন,''দেখে মনে হয়েছে, উত্তর কোরিয়া ব্যালেস্টিক মিসাইলই পরীক্ষা করেছে।’’
আগের পরীক্ষাগুলি
এর আগে চলতি মাসে তিনবার ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা করেছে উত্তর কোরিয়া। তার মধ্যে দুইবার তারা সুপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা করে। প্রথম পরীক্ষা করা হয় ৫ জানুয়ারি, তারপর ১১ জানুয়ারি। গত শুক্রবার একটি ট্রেন থেকে স্বল্প পাল্লার ব্যালেস্টিক মিসাইল পরীক্ষা করা হয়।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
গত সপ্তাহে অ্যামেরিকা নতুন করে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। বাইডেন প্রশাসন এই প্রথমবার নিষেধাজ্ঞা জারি করলো। তারা জাতিসংঘের কাছে আবেদন করেছে, এই ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তি ও সংস্থাকে যেন কালো তালিকাভুক্ত করা হয়।
এই মাসের গোড়ায় অ্যামেরিকা-সহ ছয়টি দেশ যৌথ বিবৃতিতে জানিয়েছিল, উত্তর কোরিয়া যেন ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার কাজ বন্ধ রাখে।
উত্তর কোরিয়ার বক্তব্য
উত্তর কোরিয়ার দাবি, আত্মরক্ষার জন্য এই ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার পূর্ণ অধিকার তাদের আছে।