সোমবার রাশিয়া প্রশ্নে ট্রাম্প প্রশাসন একাধিক দিক থেকে বাড়তি চাপের মুখে পড়েছে৷ এফবিআই-এর উপ প্রধানের পদত্যাগের পাশাপাশি সিআইএ প্রধানের মন্তব্য নিয়ে জল্পনাকল্পনা চলছে৷
বিজ্ঞাপন
রাশিয়ার প্রশ্নে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলির সঙ্গে ট্রাম্প প্রশাসনের সংঘাত আরও তীব্র হয়ে উঠছে৷ সিআইএ প্রধান মাইক পম্পেও এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ২০১৮ সালে মার্কিন সংসদ নির্বাচনেও রাশিয়া হস্তক্ষেপ করতে পারে৷ তবে তা সত্ত্বেও অ্যামেরিকায় মুক্ত ও অবাধ নির্বাচন আয়োজন করা সম্ভব হবে বলে তিনি আস্থা প্রকাশ করেন৷
রাশিয়া প্রশ্নে সংঘাতের জের ধরে এফবিআই-এর উপ-প্রধান অ্যান্ড্রু ম্যাককেব পদত্যাগ করেছেন৷ ট্রাম্প সরাসরি তাঁর বিরুদ্ধে ডেমোক্র্যাট দলের প্রতি পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ এনেছিলেন৷
মার্কিন সংসদও রাশিয়া প্রশ্নে আরও সক্রিয় হয়ে উঠছে৷ মার্কিন কংগ্রেস রাশিয়ার উপর বাড়তি নিষেধাজ্ঞা চাপানোর সিদ্ধান্ত নিলেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এখনই সেই পদক্ষেপ নিতে নারাজ৷ এর মাধ্যমে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন-এর ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীদের উপর চাপ বাড়াতে চেয়েছিল কংগ্রেস৷ তাদের একটি তালিকা তৈরি করে ভবিষ্যতে তাদের উপর সম্ভাব্য নিষেধাজ্ঞা চাপানোর জন্য প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছিল৷ কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসনের যুক্তি, রাশিয়ার প্রতিরক্ষা ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলির উপর চাপ বাড়াতে গত বছর যে আইন কার্যকর করা হয়েছে, তার ফল পাওয়া যাচ্ছে৷ রাশিয়ার অস্ত্র বিক্রির পরিমাণ কমে গেছে৷ তাই এখনই আলাদা করে নিষেধাজ্ঞা চাপানোর প্রয়োজন নেই৷
বলা বাহুল্য, ট্রাম্প প্রশাসনের এই মনোভাবের ফলে বেশ কয়েকজন সংসদ সদস্য তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন৷ বিগত মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রাশিয়ার অবৈধ হস্তক্ষেপ নিয়ে তদন্ত শেষ হবার আগেই আগামী নির্বাচনে মার্কিন জনমতের উপর প্রভাব ফেলতে রাশিয়ার সক্রিয় প্রস্তুতি নিয়ে জল্পনাকল্পনা শুরু হয়েছে৷ সেই প্রেক্ষাপটে রাশিয়া প্রশ্নে ট্রাম্প প্রশাসনের নিষ্ক্রিয় থাকার সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন উঠছে৷
এদিকে সেনেট ইনটেলিজেন্স কমিটির রিপাবলিকান সদস্যরা রাশিয়া তদন্তে গোয়েন্দা সংস্থাগুলির ‘অবৈধ' কার্যকলাপ তুলে ধরতে একটি গোপন মেমো প্রকাশ করতে ভোট দিয়েছেন৷ তাঁদের অভিযোগ, এফবিআই ও বিচার মন্ত্রণালয় সেই কাজে নির্বাচনি প্রচারের সময় ট্রাম্প টিমের উপর অবৈধ নজরদারি চালিয়েছিল৷ ডেমোক্র্যাট দলও সেই মেমো প্রকাশের পক্ষে৷ তবে তাদের অভিযোগ, সেই মেমোতে গোয়েন্দা সংস্থাগুলির প্রকৃত ভূমিকা স্পষ্ট হবে না৷ কারণ তাতে অনেক ত্রুটি রয়েছে এবং বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের উল্লেখ নেই৷
ট্রাম্পের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্কের কথা জানা গেল যেভাবে
গতবছর মার্কিন নির্বাচনের প্রচারণার সময় থেকেই ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ক্রেমলিনের মধ্যকার সম্পর্ক নিয়ে কানাঘুষা চলছে৷ সম্প্রতি একাধিক তথ্য প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানও জানিয়েছে যে, মার্কিন নির্বাচনে প্রভাব খাটাতে চেয়েছিল রাশিয়া৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Lei
২০১৩: রাশিয়ায় ট্রাম্প
২০১৩ সালের ১৮ জুন ট্রাম্প টুইট করেন, ‘‘নভেম্বরের ৯ তারিখ মিস ইউনিভার্স প্যাজেন্ট রাশিয়ার মস্কো থেকে সরাসরি সম্প্রচার করা হবে৷ একটি বড় চুক্তি যা আমাদের দেশগুলোর মিলন ঘটাবে৷’’ পরবর্তীতে তিনি আরো লেখেন যে, ‘‘আপনাদের কি মনে হয় পুটিন (অনুষ্ঠানে) আসবে, যদি আসেন, তাহলে কি তিনি আমার নতুন বেস্ট ফ্রেন্ড হবেন?’’ সেবছর এক চ্যাট শোতে ট্রাম্প জানান যে, রাশিয়ার সঙ্গে তাঁর অনেক ব্যবসা রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/V. Prokofyev
সেপ্টেম্বর ২০১৫: হ্যাকিংয়ের অভিযোগ
এক এফবিআই এজেন্ট ডেমোক্র্যাটিক ন্যাশনাল কমিটির (ডিএনসি) এক তথ্যপ্রযুক্তি সহায়তা দেয়া কন্ট্রাক্টরকে জানান যে, ডিএনসি সম্ভবত হ্যাকড হয়েছে৷ ২০১৬ সালের ১৪ জুন, ডিএনসি হ্যাকিংয়ের ঘটনার কথা স্বীকার করে জানায় যে, রাশিয়ার হ্যাকাররা কাজটা করেছে৷
ছবি: picture alliance/MAXPPP/R. Brunel
জুলাই ২২, ২০১৬: আসাঞ্জ জানালেন আরো বিস্তারিত
জুলিয়ান আসাঞ্জের উইকিলিক্স ডিএনসি থেকে চুরি যাওয়া ২০,০০০ ইমেল প্রকাশ করে যাতে দেখা যায় যে সিনেটর বার্নি সেন্ডারসের চেয়ে হিলারি ক্লিন্টনকে বেশি প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে৷
ছবি: Reuters/N. Hall
জুলাই ২৫, ২০১৬: তদন্তে এফবিআই
এফবিআই ঘোষণা দেয় যে ডিএনসি হ্যাকিংয়ের ঘটনা তদন্ত করছে সংস্থাটি৷ হ্যাকিংয়ের ঘটনাটি অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে নেয়ার কারণ রয়েছে বলেও জানায় এফবিআই৷
ছবি: Reuters/J. Ernst
নভেম্বর ৮, ২০১৬: জিতলেন ট্রাম্প
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ এই খবর শুনে রাশিয়ার সংসদের আনন্দের বন্যা বয়ে যায়৷
ছবি: Reuters/K. Lamarque
নভেম্বর ১০, ২০১৬: রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক অস্বীকার
রাশিয়ার সরকারের সঙ্গে ট্রাম্পের নির্বাচনি ক্যাম্পেইনের যোগাযোগ ছিল বলে জানান রাশিয়ার উপপরাষ্ট্রমন্ত্রী সার্গেই রিবাকভ৷ তবে ট্রাম্পের ক্যাম্পেইন একথা অস্বীকার করে৷
ছবি: Imago/Itar-Tass
মার্চ ২০, ২০১৭: ট্রাম্প-ক্রিমলিন যোগাযোগ তদন্তে করছে এফবিআই
এফবিআই পরিচালক জেমস কমি ইন্টেলিজেন্স সংক্রান্ত হাউস সিলেক্ট কমিটিকে নিশ্চিত করেন যে রাশিয়া এবং ট্রাম্প ক্যাম্পেইনের মধ্যে সম্ভাব্য সম্পর্কের বিষয়ে তদন্ত করছে গোয়েন্দা সংস্থাটি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/AP/J. S. Applewhite
মে ৯, ২০১৭: কমিকে চাকুরিচ্যুত করলেন ট্রাম্প
কমিকে দেয়া ইস্তফা পত্রে ট্রাম্প লিখেছিলেন: ‘‘যদি আমি এটার প্রশংসা করি যে, আপনি তিনটি ভিন্ন ভিন্ন অনুষ্ঠানে আমাকে জানিয়েছেন যে, আমাকে নিয়ে কোন তদন্ত হচ্ছে না, তাসত্ত্বেও আমি জাস্টিস ডিপার্টমেন্টের সঙ্গে একমত হয়েছি যে, আপনি এফবিআই কার্যকরভাবে পরিচালনায় সক্ষম নন৷’’
ছবি: Reuters/J. Ernst/K. Lamarque
সেপ্টেম্বর ২০১৭: সিনেট কমিটির সঙ্গে আলোচনায় ট্রাম্প জুনিয়র
ডোনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়র সিনেট জুডিশিয়ারি কমিটিকে জানান যে, বিদেশি কোনো সরকারের সঙ্গে কোনো আঁতাত করেননি তিনি৷ কমিটির সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে ২০১৬ সালের জুনে ট্রাম্প জুনিয়র এবং তাঁর ভগ্নিপতি জেরড কুশনার ও ক্যাম্পেইন ম্যানেজার পাউল মানাফোর্টের সঙ্গে রাশিয়ান আইনজীবী নাটালিয়া ভেসেলনিৎসকায়ার সাক্ষাতের বিষয়ে আলোচনা হয়৷
ফেসবুক, টুইটার এবং গুগল মার্কিন গণমাধ্যমকে জানিয়েছে যে ২০১৬ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় রাশিয়া এ সব প্লাটফর্মের অপব্যবহার করে ভুল তথ্য ছড়িয়ে দিয়েছে৷ কোম্পানি তিনটি নভেম্বরে সিনেট ইন্টেলিজেন্স কমিটির মুখোমুখি হতে পারে৷