1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আবার যেন শুধু ক্যাশ ডোনেশনই চালু না হয়

সুগত হাজরা
২২ মার্চ ২০২৪

নির্বাচনী বন্ড এখন অতীত। ভারত এখন ফিরে যাচ্ছে আগের অবস্থায়। যেখানে ক্যাশের মাধ্যমেই ডোনেশন দেয়া হতো।

ভারতীয় রূপি
লোকসভা নির্বাচনের আগে কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদি সরকারের নির্বাচনী বন্ড প্রকল্পকে 'অসাংবিধানিক' ঘোষণা করে সুপ্রিম কোর্টছবি: Indranil Mukherjee/AFP/Getty Images

রাজনীতি তো কোনো শিল্প বা বাণিজ্য নয়, যেখানে জিনিস উৎপাদন হচ্ছে বা ক্রেতারা কোনো পরিষেবা পাচ্ছেন অথবা তা পেশাগত দক্ষতা বাড়ানোর কাজে লাগছে। রাজনীতি হলো সেই অস্ত্র যা একটা আগে থেকে নির্ধারিত ভৌগলিক এলাকায়, নির্দিষ্ট সময়ের জন্য, কিছু নীতিনির্দেশিকা মেনে প্রতিনিধিদের নির্বাচন কর হয়। এই প্রতিনিধিরাই শাসন করেন। তবে ভারত, যুক্তরাষ্ট্র বা রাশিয়ার মতো যে কোনো আধুনিক রাষ্ট্রে রাজনীতি খুবই জরুরি ও প্রয়োজনীয় একটা কাজ।

এখন বিষয়টা হলো, রাজনৈতিক দলগুলি, যারা দেশের অর্থনীতিতে কোনো মূল্য যোগ করতে পারে না, তারা তাদের কাজকর্ম চালাবার জন্য কোথা থেকে অর্থ জোগাড় করবে। আর এই অর্থের পরিমাণ  তো সামান্য নয়, বিপুল। খুব সাধারণভাবে বলতে গেলে, আধুনিক রাষ্ট্রে প্রডাকটিভ ক্ষেত্রগুলি রাজনীতির মতো একটা আনপ্রোডাকটিভ ক্ষেত্রকে অর্থ দেয় এবং সেই অর্থ দেয়াটাও জরুরি। এটাকে বলা যায় প্রোডাকটিভ ক্ষেত্রের লিকেজ।

গোটা বিশ্ব জুড়েই গণতান্ত্রিক দেশগুলি রাজনৈতিক দলগুলিকে অর্থসাহায্য করার বিষয়টি নিয়ে সযত্নে নিয়ম তৈরি করে, ব্যবস্থা তৈরি করে, পরিকাঠামো তৈরি করে, যাতে এই লিকেজকে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। কিন্তু ঘটনা হলো, ভারতে এরকম কোনো ব্যবস্থা ২০১৭-এর আগে ছিল না। ২০১৭ সালে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী বাজেট পেশ করতে গিয়ে নির্বাচনী বন্ড চালু করার কথা জানালেন।  ২০১৮ সালে সেই ব্যবস্থা তৈরি হলো। তবে তার আগে সংসদে তা নিয়ে খুব বেশি কাঁটাছেড়া হলো না। এমনকী ভারতের রিজার্ভ ব্যাংক পর্যন্ত এই নতুন ব্যবস্থা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছিল। তারা মনে করেছিল, এর ফলে বেআইনি অর্থ বা কালো টাকা ঢুকে পড়বে, যে টাকা সরকার নিজে বন্ধ করতে চাইছে।

শেষপর্যন্ত সুপ্রিম কোর্ট জানিয়ে দিলো, নির্বাচনী বন্ড সংবিধানের অনেকগুলি ধারা ভঙ্গ করছে, তথ্যের অধিকারের পরিপন্থী, তাই তারা এটিকে বাতিল করে দিয়েছে। এখানে একটা কথা মনে রাখা দরকার। সুপ্রিম কোর্ট এখানে আইনের সাংবিধানিক বিষয়টি বিচার করে দেখেছে। সর্বোচ্চ আদালত এখানে এই স্কিমের সঙ্গে যথেচ্ছ ক্যাশ-ডোনেশনের কোনো তুলনা করে দেখেনি। বন্ডের আগে এই ক্যাশ ডোনেশনই ছিল ভারতীয় রাজনীতিতে প্রচলিত রীতি। তাদের কাছে এই তুলনা করার জন্যও কোনো আবেদন করা হয়নি।

বিচারপতিদের প্রধান উদ্বেগের বিষয়টি ছিল, যিনি বা যে সংস্থা রাজনৈতিক দলকে অর্থ দিচ্ছেন, তার নাম গোপন থাকছে। যেহেতু এটি ব্যাংকের ব্যবস্থার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে, তাই যিনি অর্থ দিচ্ছেন, তার একটা ছাপ থেকে যাচ্ছে। তিনি কোন দলকে টাকা দিয়েছেন, সেটা বের করাও অসম্ভব নয়। কিন্তু তারপরেও এই ব্যবস্থা আগের তুলনায় ভালো , এই যুক্তি ধোপে টিকছে না, কারণ, এটা সংবিধানের অনেকগুলি ধারার বিরোধী।

একটা বড় সমালোচনা হলো,ক্ষমতাসীন বিজেপি এই স্কিমের সুবিধা সবচেয়ে বেশি পেয়েছে। নির্বাচন কমিশনের তথ্য জানাচ্ছে, বন্ড থেকে পাওয়া অর্থের প্রায় অর্ধেক পেয়েছে বিজেপি। অন্য ১১টি দল ছয় হাজার ৫৫১ কোটি টাকা পেয়েছে। নির্বাচন কমিশনকে লেখা চিঠিতে বিজেপি বলেছে, তারা বন্ড থেকে ছয় হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা পেয়েছে। এককথায় বিজেপি-ই একমাত্র দল নয়, যারা বন্ড থেকে টাকা পেয়েছে। অন্যরা বিজেপি-র থেকে কম পেলেও বন্ড থেকে অর্থ পেয়েছে। তারা কেউ রাজ্যে ক্ষমতায় আছে, কেউ নেই, তাসত্ত্বেও তারা বন্ড থেকে টাকা পেয়েছে।

এখন প্রশ্নটা হলো, রাজনৈতিক দলগুলিকে অর্থ দেয়ার ক্ষেত্রে স্বচ্ছ্ব ব্যবস্থা কী হতে পারে? রাজনৈতিক দলগুলি সদস্য ও সমর্থকদের কাছ থেকে চাঁদা নিতে পারেন। কিন্তু তাদের যে বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ হয়, সেই টাকা চাঁদার মাধ্যমে পাওয়া সম্ভব নয়। নির্বাচনের বিপুল খরচ চাঁদা তুলে করাটা আকাশকুসুম কল্পনা। বাম দলগুলি একসময় চাঁদা তুলে নির্বাচনী খরচ জোগাড়ের দাবি করত। কিন্তু সেই দাবির বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই গেছে। পশ্চিমবঙ্গে বামেরা যে বিশাল মিটিং করছে, তা সদস্য-সমর্থকদের চাঁদায় হয় না। কারণ, তাদের এখন সমর্থকও আর আগের মতো নেই। তারা পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতাতেও নেই। যারা ক্ষমতায় থাকে, তারা তাও ব্যক্তি বা সংস্থার কাছ থেকে বেশি ডোনেশন জোগাড় করতে পারে। আর যে সংস্থা বা ব্যক্তি  টাকা দিচ্ছে, সে তো কিছু পাওয়ার জন্য দিচ্ছে। ফলে একটা লেনদেনের বিষয় থাকেই।

তাহলে রাজনৈতিক অনুদানের ক্ষেত্রে ভালো ব্যবস্থা কি হতে পারে? সরকার কি দলগুলিকে অর্থসাহায্য করবে? স্বাস্থ্য, শিক্ষা, জনসুবিধা, পরিকাঠামোর ক্ষেত্রে সরকারকে বিপুল খরচ করতে হয়।  এর উপর কি কোনো বাড়তি বোঝা সরকারের পক্ষে নেয়া সম্ভব? তার উপর এই ব্যবস্থা নিয়ে ব্যাপক আলোড়ন হতে পারে, বিতর্ক হতে পারে, নিয়মকানুন নিয়ে মামলা-মকদ্দমাও হতে পারে।

এবার মূল প্রশ্নে আসি। কীভাবে রাজনৈতিক দলগুলিকে অর্থ দেয়া হবে? এখানে প্রথম ও প্রধান বিষয় হলো, পুরো ব্যবস্থাকে স্বচ্ছ্ব হতে হবে। রাজনীতিবিদরা বা রাজনৈতিক দলগুলি সংস্থাকে ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করবে সেটা চলবে না। তারা স্বজনপোষণ করবে সেটাও যেন না হয়। এই অর্থ ভালো করে যাচাই করে দেখতে হবে। এই কঠোর ব্যবস্থা চালু করলে রাজনৈতিক দলগুলির কোষাগার কি টাকায় ভরে যাবে? রাজনীতি মানেই হলো ক্ষমতায় আসার বা থাকার চেষ্টা, ফলে তাদের কাছ থেকে লাভ পাওয়ার চেষ্টায় প্রচুর মানুষ বা সংস্থা ঘুরঘুর করবে। এখন এই লাভের বিনিময়ে রাজনৈতিক দলেরও কিছু পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে।

রাজনৈতিক-ব্যবসা তো উৎপাদনমুখি নয়, তারা অর্থ জোগাড় করে এবং তার উৎস কখনোই জানায় না। 

প্রতিটি দেশেরই রাজনৈতিক ফান্ডিংয়ের একটা ব্যবস্থা আছে। কিন্তু ভারতে এটা একেবারেই শৈশব অবস্থায় আছে। ভারতে নির্বাচনী বন্ড নিয়ে একটা পরীক্ষা করা হয়েছিল। তবে তা আদালত অনুমোদন করেনি। এরকম আরো কিছু পরীক্ষা এবার হতেই পারে। তবে নগদে রাজনৈতিক দলগুলিকে অর্থ দেয়ার রীতিকে কোনোভাবেই সমর্থন করা যায় না। বরং রাজনীতি থেকে এই নগদের কারবার দূরে রাখতে হবে। কারণ এর মধ্যেও কোনো স্বচ্ছ্বতা নেই।

সুগত হাজরা রাজনৈতিক বিশ্লেষক
স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ