আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলে মার্কিন বাহিনী আইএস-এর এক সুড়ঙ্গের নেটওয়ার্কের উপর হামলা চালিয়েছে৷ এর আগে অ্যামেরিকা এত বড় আকারের বোমা প্রয়োগ করেনি৷ আফগানিস্তান সংক্রান্ত নীতি নিয়ে প্রশ্ন উঠছে৷
বিজ্ঞাপন
ক'দিন আগেও ‘জিবিইউ-৪৩' অথবা ‘এমসি-১৩০' শব্দগুলি সাধারণ মানুষের কাছে দুর্বোধ্য ছিল৷ গত কয়েক ঘণ্টায় সবাই জেনে গেছে যে, প্রথমটি একটি বোমা, দ্বিতীয়টি এক সামরিক বিমানের নাম, যেখান থেকে বোমাটি ফেলা হয়৷ ১১ টন বিস্ফোরকসহ ৯,৭৯৭ কিলোগ্রাম ওজনের এই বোমা সবচেয়ে বড় ‘অ-পারমাণবিক' অস্ত্র হিসেবে পরিচিত৷ তার ডাকনাম ‘দ্য মাদার অফ অল বম্বস'৷ ২০০৩ সালে এই অস্ত্র পরীক্ষার পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই প্রথম কোনো সংঘাতের সময়ে এই বোমা প্রয়োগ করল৷ সুড়ঙ্গ ধ্বংসের কাজে এই বোমা অত্যন্ত কার্যকর হিসেবে পরিচিত৷
আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলে নাঙ্গারহার প্রদেশে তথাকথিত ইসলামিক স্টেটের শক্তি বেড়ে চলেছে৷ পাকিস্তান সীমান্তের কাছে আচিন জেলায় পাহাড়ের গুহা ও সুড়ঙ্গের এক নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে তারা যাতায়াত করে আসছিল৷ তাদের গতিবিধি বন্ধ করতে এমন মারাত্মক বোমা প্রয়োগ করলো মার্কিন সামরিক বাহিনী৷ উল্লেখ্য, গত সপ্তাহে নাঙ্গারহার প্রদেশে আইএস-এর বিরুদ্ধে অভিযানে এক মার্কিন সৈন্য নিহত হয়৷
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই অভিযানকে অত্যন্ত সফল হিসেবে বর্ণনা করেছেন৷ তবে এই বোমা হামলার ফলে আইএস-এর কতটা ক্ষতি হয়েছে, তা পুরোপুরি স্পষ্ট নয়৷ ট্রাম্প প্রশাসন এই হামলাকে তাদের দৃঢ় সংকল্পের প্রমাণ হিসেবে তুলে ধরতে চাইছে৷ তবে আফগানিস্তান সংক্রান্ত সার্বিক নীতির কোনো রূপরেখা এখনো তুলে ধরা হয়নি৷
সিরিয়া ও ইরাকে কোণঠাসা আইএস আফগানিস্তানে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে৷ তালেবানের সঙ্গে তাদের সংঘাতের ঘটনাও ঘটেছে৷ তবে মার্কিন সূত্র অনুযায়ী, ২০১৬ সালের শুরুতে তাদের প্রায় ৩,০০০ যোদ্ধা থাকলেও বর্তমানে সেই সংখ্যা কমে ৬০০ থেকে ৮০০-য় দাঁড়িয়েছে৷
আইএস কী, কোথায় এবং কেন?
প্রতিদিনই খবরে আইএস৷ কোনোদিন নৃশংস হত্যাকাণ্ডের জন্য, কোনোদিন হয়তো ইরাক বা সিরিয়ায় কোনো অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার জন্য৷ আইএস বলছে, ইসলামি খেলাফত কায়েম করার জন্য যুদ্ধে নেমেছে তারা৷ ছবিঘরে আইএস সম্পর্কে কিছু তথ্য....
ইসলামিক স্টেট বা আইএস আসলে কী?
আল কায়েদা থেকে তৈরি হওয়া সুন্নি মুসলমানদের জঙ্গি সংগঠন আইএস৷ সাদ্দাম পরবর্তী সময়ে ইরাকে এবং বাশার আল আসাদের আমলে সিরিয়ায় সুন্নিদের হতাশা থেকেই জন্ম সংগঠনটির৷ আইএস-এর পতাকায় লেখা থাকে, ‘মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর নবী’ এবং ‘আল্লাহ ছাড়া আর কোনো সৃষ্টিকর্তা নেই৷’
ছবি: AP
আইএস কোথায় সক্রিয়?
শরিয়া আইন অনুযায়ী পরিচালিত হবে এমন রাষ্ট্র, বা ইসলামি খেলাফত প্রতিষ্ঠা করতে চায় আইএস৷ সিরিয়া এবং ইরাকেই প্রত্যক্ষভাবে সক্রিয় তারা৷ দুটি দেশেই রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার সুযোগে বেশ বড় অঞ্চল দখল করে নিয়েছে আইএস৷
আইএস কেন আলাদা?
মূলত নিষ্ঠুরতার জন্য৷ শত্রুপক্ষ এবং নিরীহ মানুষের মনে আতঙ্ক ছড়াতে তারা এমন বর্বরতা এবং নিষ্ঠুরতা প্রদর্শন করে যা আগে কেউ করেনি৷ জবাই করে ভিডিও প্রচার, পুড়িয়ে মারা, বাবার সামনে মেয়েকে জবাই করা এবং তার তার ভিডিও প্রচার, মেয়েদের যৌনদাসী বানানো আর পণ্যের মতো বিক্রি করা – এসব নিয়মিতভাবেই করছে আইএস৷ কোনো অঞ্চল দখলে নেয়ার পর সেখানে শাসন প্রতিষ্ঠায় মন দেয় আইএস৷
ছবি: gebphotography - Fotolia.com
অন্য জঙ্গি সংগঠনগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক
আইএস যদিও শুধু সিরিয়া এবং ইরাকেই সক্রিয়, তবে বিশ্বের অন্যান্য ইসলামি জঙ্গি সংগঠনগুলো থেকে বিচ্ছিন্ন নয়৷ নাইজেরিয়ার জঙ্গি সংগঠন বোকো হারাম কয়েকদিন আগেই জানিয়েছে, আইএস-কে তারা সমর্থন করে৷ দুটি সংগঠনের মধ্যে একটি জায়গায় মিলও আছে৷ আইএস-এর মতো বোকো হারামও নিষ্ঠুরতা এবং বর্বরতার প্রতিভূ হয়ে উঠেছে৷ অন্য ধর্মের নারীদের প্রতি দুটি সংগঠনের দৃষ্টিভঙ্গি এবং আচরণই মধ্যযুগীয়৷
ছবি: Getty Images/A. Katib
আইএস-এর অনুসারী কারা?
অনুসারী সংগ্রহের সাফল্যেও আইএস অন্য সব জঙ্গি সংগঠনের চেয়ে আলাদা৷ এ পর্যন্ত অন্তত ২০ হাজার বিদেশী যোদ্ধা আইএস-এ যোগ দিয়েছে৷ তাদের মধ্যে ৪ হাজারই পশ্চিম ইউরোপ এবং উত্তর অ্যামেরিকার৷
আইএস-কে রুখতে অন্য দেশগুলো কী করছে?
যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে বেশ কিছু পশ্চিমা এবং আরব দেশ সিরিয়া ও ইরাকে আইএস ঘাঁটির ওপর বিমান থেকে বোমা হামলা চালাচ্ছে৷ বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, এ পর্যন্ত সিরিয়ায় ১৪২২ এবং ইরাকে ২২৪২ বার হামলা হয়েছে৷ কোনো কোনো সরকার দেশের অভ্যন্তরেও কিছু ব্যবস্থা নিচ্ছে৷ সিরিয়া ফেরত অন্তত ৩০ জন সন্দেহভাজন জঙ্গির বিচার শুরু করবে জার্মানি৷ গত মাসে সৌদি পুলিশও ৯৩ জন সন্দেহভাজন আইএস জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করেছে৷