1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আবার শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা: কারণ এবং প্রতিকার কী?

সমীর কুমার দে ঢাকা
১৫ জানুয়ারি ২০১৯

শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহননের প্রবণতা নতুন কিছু নয়৷ তবে সাম্প্রতিককালে এ প্রবণতা বেড়েছে বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা৷ আগে প্রেম-ভালোবাসা বা মাদকাসক্তি থেকে আত্মহননের কথা শোনা গেলেও এখন বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কারণটা ভিন্ন৷

Symbolbild Selbstmord
ছবি: vkara - Fotolia.com

প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়া, অপমানবোধ আর মধ্যে হতাশা থেকেই এমন করছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা৷

সোমবার সিলেটে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তাইফুর রহমানের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়৷ তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি (জিইবি) বিভাগে স্নাতক (সম্মান) পরীক্ষায় প্রথম হয়েছিলেন৷ উচ্চশিক্ষার জন্য যুক্তরাজ্যে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন৷ পরিবারের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্যায়ের শিকার হয়ে তাইফুর আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন৷

তাইফুরের মৃত্যুর ঘটনায় তাঁর বোন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শান্তা তাওহিদা ফেসবুকে সোমবার লিখেছেন, ‘‘অনার্সে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হওয়া ছেলেটাকে বিভিন্ন ইস্যু বানিয়ে মাস্টার্সে সুপারভাইজার দেয় নাই৷ বিভিন্ন কোর্সে নম্বর কম দিয়েছে! আমার ভাইটা টিচার হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিল, এটাই তার অপরাধ৷'' তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এই অভিযোগ অস্বীকার করে সংবাদমাধ্যমকে বলেছে, পুলিশ তদন্ত করছে, তদন্ত শেষ হলে আত্মহত্যার কারণ জানা যাবে৷

‘যদি কেউ আত্মহত্যার জন্য প্ররোচনা দেয় তাকেও চার্জশিট দেয় পুলিশ’

This browser does not support the audio element.

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার মাসুদুর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘কোনো ঘটনার পর পুলিশ তদন্ত শুরু করে৷ সেখানে আত্মহত্যা হলেও কেন এই আত্মহত্যার ঘটনা, সেটা খুঁজে বের করার চেষ্টা হয়৷ সেখানে যদি দেখা যায় কেউ তাকে আত্মহত্যার প্ররোচনা দিয়েছেন, তাহলে তার বিরুদ্ধে কিন্তু প্ররোচনার অভিযোগ এনে চার্জশিট দেয় পুলিশ৷'' সাম্প্রতিক সময়ে আরেকটি আত্মহত্যার ঘটনা দেশজুড়ে তোলপাড় তুলেছিল৷  গত ডিসেম্বরে ভিকারুননিসা নূন স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী অরিত্রী অধিকারীর আত্মহত্যা করে৷ পর দেশজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়৷ সেই ঘটনায় তিনজন শিক্ষিকার বিরুদ্ধে মামলা হয়৷ ঘটনার পরদিনই একজন শিক্ষিকাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ৷ অরিত্রীরআত্মহত্যার কারণ জানাতে গিয়ে তার বাবা দিলীপ অধিকারী বলেছিলেন, ‘‘পরীক্ষার হলে মোবাইল নেওয়ায় তার সামনেই আমাকে ডেকে অপমান করেন শিক্ষিকা৷ এই অপমানবোধ থেকেই আত্মহত্যা করে অরিত্রী৷'' তখন শিক্ষকদের ব্যবহার নিয়েও নানা আলোচনা শুরু হয়৷ সব পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের মাঝেই আত্মহত্যার প্রবণতা রয়েছে৷ কিন্তু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে এই প্রবণতা দূর করার কোনো পদক্ষেপ লক্ষ্য করা যায় না৷

‘হতাশা এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির সুযোগ না পেয়ে শিক্ষার্থীরা যাচ্ছে আত্মহননের দিকে’

This browser does not support the audio element.

সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার প্রবণতার বিষয়টিও সবার নজরে এসেছে৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘শিক্ষার্থীদের মধ্যে হতাশা বেড়ে গেছে৷ এ কারণে তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির সুযোগ পাওয়াকেও তুচ্ছ মনে করছে৷ চলে যাচ্ছে আত্মহননের দিকে৷ আগে আমরা দেখেছি, প্রেম ভালোবাসা বা এই ধরনের ফালতু বিষয় নিয়েই শিক্ষার্থীরা আত্মহননের পথে যেতো৷ এখন কিন্তু সে কারণে তারা আত্মহত্যা করছে না৷ আর যে হতাশার কথা বললাম, সেটা পুরো সমাজ-ব্যবস্থার মধ্যেই প্রভাব পড়ছে৷ আমাদের দেশে উন্নতি হচ্ছে৷ বিদেশ থেকে টাকা আসছে বা শ্রমিকদের টাকা দিয়ে দেশের উন্নয়ন হচ্ছে, কিন্তু কর্মসংস্থান বাড়ছে না৷ ফলে বেকারত্বের কারণেও হতাশ হয়ে পড়ছে শিক্ষার্থীরা৷ তাদের তো আসলে কর্মসংস্থান দরকার৷ সেটা আমরা করতে পারছি না৷'' বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কি এ ব্যাপারে কোনো ভূমিকা রাখতে পারে? জবাবে জনাব চৌধুরী বলেন, ‘‘চাকরির ব্যবস্থা তো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন করতে পারবে না৷ তবে হ্যাঁ, গত ২৮ বছর ধরে ডাকসু নেই, যে কারণে এখানে সাংস্কৃতিক চর্চাও বন্ধ হয়ে গেছে৷ এখন শিক্ষার্থী কী করবে? তাকে তো সুস্থভাবে বেড়ে উঠার সুযোগ দিতে হবে৷ আমরা তাদের সেই সুযোগ দিতে পারছি না৷''

এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গত ১৪ বছরে আত্মহত্যা করেছেন ২৩ জন শিক্ষার্থী৷ এর মধ্যে গত তিন বছরেই আত্মহত্যা করেছেন ১১ জন৷  বিষন্নতা, শিক্ষাজীবন নিয়ে হতাশা, সম্পর্কের টানাপোড়েন এবং চাকরি নিয়ে অনিশ্চয়তার কারণে তাঁরা আত্মহননের পথ বেছে নেন৷ অধ্যাপক চৌধুরীও একই কথা বলছিলেন৷ তাঁর মতে, এই শিক্ষার্থীদের চাকরির নিশ্চয়তা দিতে হবে৷ আমাদের সরকার কি সে দিকে মনোযোগী? আর সামাজিক অস্থিরতাও এর সঙ্গে যুক্ত৷ শিক্ষার্থীরা খুবই সেনসিটিভ৷

‘এমন উদাহরণও আছে মাত্র ৬ নম্বরের জন্য ফাষ্টক্লাস না পেয়ে আত্মহত্যা করেছে’

This browser does not support the audio element.

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৫ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৩ জন শিার্থীর আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে৷ গত বছর, অর্থাৎ ২০১৮ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাতজন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেন৷  ২০১৭ সালে আত্মহত্যা করেন তিন শিক্ষার্থী৷ ২০১৬ সালে আত্মহত্যা করেন একজন৷ ২০১৫ সালে আত্মহত্যা করেছিলেন চার শিক্ষার্থী৷ এই সংখ্যা উদ্বেগজনক মনে করছেন অধ্যাপক চৌধুরী৷

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনষ্টিটিউটের অধ্যাপক ডা. তাজুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘মূলত হাতাশা থেকেই শিক্ষার্থীরা আত্মহত্যা করে৷ আমার কাছে এমন উদাহরণও আছে যে মাত্র ৬ নম্বরের জন্য একজন শিক্ষার্থী ফাষ্টক্লাস পায়নি, এ কারণে সে আত্মহত্যা করেছে৷ এমন অনেক উদাহরণ আছে৷ তাদের যেমন চাকরির সুযোগ দিতে হবে, তেমনি অভিবাবকদেরও বোঝাতে হবে, তোমরা পরীক্ষা দিলেই সবাইকে যে প্রথম হতে হবে এমনটি নয়৷ আবার কোনো কারণে একবার না পারলে ভবিষ্যতে চেষ্টা করা যেতে পারে, সেটিও তাদের বোঝাতে হবে৷ আমাদের শিক্ষার্থীরা এমন হয়েছে, কারণ পরিবারের চাপও আছে৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ