প্রতিষ্ঠাদিবস উপলক্ষে আবার উত্তর কোরিয়ার সামরিক শক্তি প্রদর্শন করলেন কিম জং উন। বৃহস্পতিবার ভোররাতে এই প্যারেড হলো।
বিজ্ঞাপন
বৃহস্পতিবার ভোররাতে সরগরম পিয়ংইয়ংয়ের কিম উল সাং স্কোয়ার। উড়ছে যুদ্ধবিমান। রাস্তায় সামরিক বাহিনীর কুচকাওয়াজ চলছে। চলছে যুদ্ধাস্ত্রের প্রদর্শনী। প্রচুর দর্শক দেখছেন। ক্রিম রংয়ের স্যুট পরে কিম জং উন হাত নাড়ছেন দর্শক ও সেনার উদ্দেশে।
এই নিয়ে গত এক বছরে তৃতীয়বার নিজেদের সামরিক শক্তি প্রদর্শন করলেন কিম। তিনি আবার বুঝিয়ে দিলেন, আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও পরমাণু অস্ত্র ও ব্যালেস্টিক মিসাইল কর্মসূচি থেকে তিনি সরে আসবেন না। বরং প্যারেডে তিনি দেশের সর্বশেষ মিসাইল দেখিয়ে বোঝাতে চেয়েছেন, আগের সিদ্ধান্ত থেকে পিছিয়ে আসার কথা তিনি ভাবছেন না। দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা সংবাদসংস্থা এএফপি-কে জানিয়েছেন, ''উত্তর কোরিয়ায় প্যারেড হয়েছে। আমরা পরিস্থিতির উপর নজর রাখছি। পরবর্তী বিশ্লেষণের জন্য আরো তথ্যের অপেক্ষায় আছিআগের প্যারেড।''
গতবছর অক্টোবরে সামরিক প্যারেডে ইন্টারকন্টিনেন্টাল ব্যালেস্টিক মিসাইল দেখিয়েছিলেন কিম। দুই বছরের মধ্যে প্রথমবার দূর পাল্লার ক্ষেপনাস্ত্রের প্রদর্শন করা হয়।
উত্তর কোরিয়াকে কাবু করতে জাতিসংঘের কিছু ‘অস্ত্র’
পারমাণবিক অস্ত্র নিষেধাজ্ঞার কোনো তোয়াক্কাই করছে না উত্তর কোরিয়া৷ দেশটির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান রয়েছে তাই জাতিসংঘেরও৷ দেখা যাক, কত রকমের নিষেধাজ্ঞার বেড়াজালে আটকা পড়েছে উত্তর কোরিয়া৷
ছবি: Reuters/S. Sagolj
কয়লা এবং লোহার ওপর নিষেধাজ্ঞা
২০১৭ সালের আগস্ট মাসে উত্তর কোরিয়ার ওপর সব ধরনের কয়লা, লোহা এবং লোহার আকরিক আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে জাতিসংঘ৷ওপরের ছবিতে উত্তর কোরিয়ার সীমান্ত সংলগ্ন ড্যানডং শহরের লিয়াওনিং গ্রিনল্যান্ড এনার্জি কয়লাখনি৷ খনিটি অবশ্য চীনের৷
ছবি: Reuters/B. Goh
মুদ্রায় নিষেধাজ্ঞা
বিদেশে কোনো ব্যাংক খুলতে পারে না উত্তর কোরিয়া৷ এমনকি জাতিসংঘের কোনো সদস্য দেশ যাতে পিয়ংইয়ংয়ের জন্য লাভজনক কোনো আর্থিক লেনদেন বা চুক্তিতে না যায়, নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে সে বিষয়টিও নিশ্চিত করার চেষ্টা করেছে জাতিসংঘ৷ জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞায় বলা হয়েছে, কোনো দেশের নাগরিক যদি উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে এমন কোনো ব্যবসায়িক যোগাযোগ স্থাপন করে, তাহলে সংশ্লিষ্ট দেশটিকে অবশ্যই ওই নাগরিককে বহিষ্কার করতে হবে৷
ছবি: Mark Ralston/AFP/Getty Images
জাহাজ চলাচল
ছবির এই জাহাজটি উত্তর কোরিয়ার৷ ২০১৬ সালের মার্চে ফিলিপাইন্সে এটিকে থামানো হয়৷ উত্তর কোরিয়ার কোনো জাহাজে পণ্য পরিবহনও নিষিদ্ধ করেছে জাতিসংঘ৷ এমনকি পিয়ংইয়ংযে নিজেদের জাহাজে অন্য দেশের পতাকা লাগিয়ে কাজ চালাবে, সেই পথও বন্ধ৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/J. Dumaguing
আকাশেও নিষেধাজ্ঞা
উত্তর কোরিয়ার জাতীয় এয়ারলাইন্স ‘এয়ার কোরিও’ অবশ্য পুরোপুরি নিষিদ্ধ নয়৷ এখনো তাদের বিমান রাশিয়া আর চীনে যাওয়া-আসা করে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Yonhap
জ্বালানিতেও...
২০১৭ সালের ডিসেম্বরে জাতিসংঘের আরোপ করা নিষেধাজ্ঞার পর থেকে জ্বালানি আমদানিতেও কঠোর বিধিনিষেধের আওতায় উত্তর কোরিয়া৷ ফলে জনজীবনেও এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে৷ নিষেধাজ্ঞার কারণে বছরে মাত্র ৪০ লক্ষ ব্যারেল অপরিশোধিত তেল আমদানি করতে পারে উত্তর কোরিয়া৷ তাই সে দেশের নাগরিকদের প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম ডিজেল এবং কেরোসিন পেয়েই খুশি থাকতে হয়৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Ralston
বিদেশে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এবং স্থাবর সম্পত্তি
উত্তর কোরিয়ার কূটনীতিকদের ওপরও কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে জাতিসংঘ৷ জার্মানিসহ এখনো হাতে গোনা যে কয়েকটি দেশে উত্তর কোরিয়ার দূতাবাস আছে, সেখানে উত্তর কোরীয় কূটনীতিকরা চাইলেও একটার বেশি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন না৷ দেশের বাইরে দূতাবাস ছাড়া আর কোনো কাজে ঘর ভাড়াও করতে পারে না উত্তর কোরিয়া৷
ছবি: picture alliance/dpa/S.Schaubitzer
সামরিক প্রশিক্ষণ
কোনো দেশ উত্তর কোরিয়ার সামরিক বাহিনী, পুলিশ, বা আধা সামরিক বাহিনীকে প্রশিক্ষণ দিতে পারে না৷ এ বিষয়েও রয়েছে জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা৷
ছবি: Reuters/S. Sagolj
কিম জং উনের মূর্তি
উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের আবক্ষ মূর্তি দেখতে বা পছন্দের কোনো জায়গায় রাখতে চান? তা জাতিসংঘের একেবারেই কাম্য নয়৷ তাই উত্তর কোরিয়ার ওপর যে কোনো ধরনের মূর্তি বিক্রিতেও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে জাতিসংঘ৷
ছবি: picture alliance/dpa/robertharding
8 ছবি1 | 8
গত জানুয়ারিতেও আবার গভীর রাতে সামরিক কুচকাওয়াজ হয়। সেখানে সাবমেরিন লঞ্চড ব্যালেস্টিক মিসাইলের প্রদর্শন করা হয়। সরকারি সংবাদসংস্থার দাবি ছিল, এটা হলো বিশ্বের সব চেয়ে শক্তিশালী অস্ত্র।
এনকে নিউজ জানিয়েছে, পিয়ংইয়ংয়ে প্রথমে রাত বারোটা ও তারপর রাত একটার সময় আতশবাজি ফাটে। তারপর শুরু হয় সামরিক প্যারেড। যুদ্ধবিমানের শব্দ তখনই শোনা যায়।
কঠিন সময়
বিশেষজ্ঞদের মতে, কিম তার দীর্ঘ শাসনকালে সবচেয়ে কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন। করোনার জন্য সব সীমান্ত বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা বহাল আছে।
সিওলের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক লেইফ-এরিক ইসলের মতে, ''এই প্যারেডের মূল লক্ষ্য ছিল দেশের মানুষকে বার্তা দেয়া। কিমের শাসনে যে সব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, তাতে সাধারণ মানুষের উপর চাপ প্রচণ্ড বেড়েছে। তাই এই প্যারেড ছিল নিজেদের শক্তি দেখানো। এটা মানুষকে উজ্জীবীত করতে পারে।''
গতমাসেই জাতিসংঘের পরমাণু সংক্রান্ত সংস্থা আইএইএ জানিয়েছিল, উত্তর কোরিয়া প্লুটোনিয়াম প্রসেসিং রিঅ্যাকটরকে সক্রিয় করেছে। এটা খুবই চিন্তার বিষয়।
সিওলের কোরিয়া ইনস্টিটিউট ফর ন্যাশনাল ইউনিফিকেশনের গবেষক হং মিন বলেছেন, এই প্যারেড এবং এয়ার শোর মাধ্যমে দেশের মানুষের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক দুনিয়াকেও একটা বর্তা দিতে চেয়েছেন কিম।