অস্ট্রিয়া ও চেক সীমান্তে করোনা ভাইরাসের আরো ছোঁয়াচে সংস্করণ ছড়িয়ে পড়ায় জার্মানি রবিবার থেকে কড়া নিয়ন্ত্রণ চালু করতে চলেছে৷ ইউরোপে করোনা পরিস্থিতি সম্পর্কে আবার সতর্ক করে দিয়েছে ডাব্লিউএইচও৷
বিজ্ঞাপন
করোনা সংকট মোকাবিলা করতে হলে শুধু দেশের মধ্যে কড়া পদক্ষেপ নিলে চলবে না, বড় বিপদ আটকাতে প্রয়োজনে সীমান্ত বন্ধ করার মতো চরম সিদ্ধান্তেরও প্রয়োজন৷ গত বছর সংকটের সূচনার সময় ইউরোপীয় ইউনিয়নের অনেক দেশ মুক্ত সীমান্ত বন্ধ করে সমালোচনার মুখে পড়েছিল৷ এবার কোভিড ১৯-এর ছোঁয়াচে সংস্করণগুলির গতি কমাতে আবার সেই পথেই এগোতে হচ্ছে কিছু দেশকে৷ জার্মানি চেক প্রজাতন্ত্রের সীমান্ত এলাকা ও অস্ট্রিয়ার টিরোল প্রদেশ থেকে মানুষের যাতায়াত আপাতত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ আগামী রবিবার থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হবে৷ চেক প্রজাতন্ত্রে করোনা ভাইরাসের ছোঁয়াচে ব্রিটিশ সংস্করণ ও টিরোল প্রদেশে দক্ষিণ আফ্রিকার সংস্করণ ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়ছে৷ টিরোল থেকে অস্ট্রিয়ার বাকি অংশে যাতায়াতের উপরেও কড়া নিয়ন্ত্রণ চাপানো হয়েছে৷ চেক প্রজাতন্ত্রও তিনটি জেলার ক্ষেত্রে একই রকম নিয়ন্ত্রণ চালু করছে৷
স্যাক্সনি ও বাভেরিয়া রাজ্য জার্মানির ফেডারেল সরকারের উদ্দেশ্যে এই দুই অঞ্চলকে ‘ভাইরাস মিউটেশন এরিয়া' হিসেবে চিহ্নিত করে সীমান্তে কড়া নিয়ন্ত্রণের ডাক দিয়েছিল৷ সেই ডাকে সাড়া দিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই দুই সীমান্তে চেকপয়েন্ট-সহ অন্যান্য কিছু ব্যবস্থা করছে৷ তবে মানুষ চলাচল বন্ধ রাখলেও বাণিজ্যিক সম্পর্কের স্বার্থে পণ্যবাহী ট্রাক বা ট্রেনের যাতায়াত বন্ধ করা হবে না৷ উল্লেখ্য, জানুয়ারি মাসের শেষ থেকেই জার্মানি কিছু দেশকে ‘ভাইরাস মিউটেশন এরিয়া’ হিসেবে চিহ্নিত করে সেখান থেকে মানুষের আগমন কার্যত বন্ধ রেখেছে৷
এমন পরিস্থিতিতে ইউরোপে করোনা সংকটের মোকাবিলার প্রচেষ্টা প্রশ্নের মুখে পড়ছে৷ প্রায় দুই মাস ধরে কড়া লকডাউন কার্যকর করে জার্মানির মতো দেশ দৈনিক সংক্রমণের হার অনেকটা কমাতে পারলেও সেই সাফল্য কতকাল ধরে রাখা সম্ভব, সে বিষয়ে সংশয় দেখা দিচ্ছে৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও বৃহস্পতিবার ইউরোপে লকডাউন শিথিল করার বিষয়ে সতর্ক করে দিয়েছে৷ ডাব্লিউএইচও-র ইউরোপের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হান্স ক্লুগে বলেন, সংক্রমণের হার সার্বিকভাবে কমে গেলেও কিছু এলাকায় করোনা ভাইরাসের নতুন ও আরও ছোঁয়াচে সংস্করণগুলি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে৷ তাঁর মতে, ইউরোপের প্রায় সব দেশই এই মুহূর্তে বিপদের মুখে রয়েছে৷ টিকার আশায় অপেক্ষা ও ভ্রান্ত নিরাপত্তাবোধ পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটাতে পারে বলে হান্স ক্লুগে মনে করছেন৷
জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল বৃহস্পতিবার সংসদের নিম্ন কক্ষে এক ভাষণে দেশবাসীর উদ্দেশ্যে আরো কিছুদিন ধৈর্য্য ধরার আবেদন জানিয়েছেন৷ বুধবার লকডাউনের মেয়াদ ৭ই মার্চ পর্যন্ত বাড়ানোর সিদ্ধান্তের পক্ষে সওয়াল করে তিনি বলেন, প্রয়োজন ছাড়া বাড়তি এক দিনও লকডাউন কার্যকর করা হবে না৷ সংক্রমণের তৃতীয় ঢেউ প্রতিরোধ করতে আপাতত এ ছাড়া কোনো উপায় নেই৷ বিপদ কাটার আগে লকডাউন তুলে নিলে কিছুদিন পর আবার নতুন করে একই পদক্ষেপ নিতে হবে বলে ম্যার্কেল সতর্ক করে দেন৷ তিনি আরো বলেন, অন্য কিছু দেশের তুলনায় জার্মানিতে টিকাদান কর্মসূচির ধীর গতির কারণে মানুষের মনে যে হতাশা সৃষ্টি হচ্ছে, সে বিষয়ে তিনি যথেষ্ট সচেতন৷ তবে এ ক্ষেত্রেও ধৈর্য্যের আবেদন করেন তিনি৷
এসবি/এসিবি (রয়টার্স, এএফপি)
করোনার টিকাদানে কে কতটা এগিয়ে
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শুরু হয়েছে করোনার টিকাদান৷ সেই দৌড়ে এগিয়ে উন্নত দেশগুলোই৷ উন্নয়নশীল কয়েকটি দেশ থাকলেও কোনো ‘অনুন্নত দেশ’ এখনো কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি৷ বিভিন্ন দেশের টিকা কার্যক্রমের পরিসংখ্যান জেনে নিন ছবিঘরে৷
ছবি: Fedja Grulovic/REUTERS
ইসরায়েল
করোনার টিকা কার্যক্রমে সবার চেয়ে দ্রুত গতিতে এগোচ্ছে ইসরায়েল৷ বায়োনটেক-ফাইজারের টিকা দিয়ে এই কার্যক্রম শুরু করেছে তারা ১৯ ডিসেম্বর থেকে৷ পাঁচ জানুয়ারি পর্যন্ত প্রায় ১৫ লাখ ডোজ টিকা দিয়েছে৷ অর্থাৎ, ১৭ ভাগ জনগোষ্ঠীকে এরই মধ্যে টিকার আওতায় এনেছে ইসরায়েল, যা সবার চেয়ে বেশি৷
ছবি: Tsafrir Abayov/AP/picture alliance
সংযুক্ত আরব আমিরাত
পাঁচ জানুয়ারি পর্যন্ত সংযুক্ত আরব আমিরাত তাদের সোয়া আট ভাগের বেশি মানুষকে করোনার টিকা দিতে পেরেছে৷ মোট আট লাখ ২৬ হাজার ডোজ টিকা দিয়েছে তারা এই সময়ের মধ্যে৷
ছবি: Reuters/S. Kumar
বাহরাইন
পারস্য উপসাগরীয় দেশ বাহরাইনের প্রতি ১০০ জনের চারজন এরই মধ্যে টিকা পেয়েছেন৷ এক্ষেত্রে ইসরায়েল ও আরব আমিরাতের পরেই তাদের অবস্থান৷ মোট টিকাপ্রাপ্ত মানুষের সংখ্যা ৬৮ হাজারের বেশি৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/H. Jamali
যুক্তরাষ্ট্র
করোনার টিকা বিতরণের মোট সংখ্যায় সবার উপরে যুক্তরাষ্ট্র৷ ৫৩ লাখের বেশি মানুষ এরই মধ্যে টিকা নিয়েছেন৷ কিন্তু শতকরা হিসেবে ৬ জানুযারি পর্যন্ত করোনার টিকার আওতায় এসেছেন এক দশমিক ছয় শতাংশ৷
ছবি: Alex Edelman/AFP
যুক্তরাজ্য
আট ডিসেম্বর বায়োনটেক ও ফাইজারের ভ্যাকসিন দিয়ে করোনার টিকা কার্যক্রম চালু করে যুক্তরাজ্য৷ তাদের হালনাগাদ তথ্যটি ২৭ ডিসেম্বরের৷ সেই হিসাবে সাড়ে নয় লাখ ডোজ টিকা বিতরণ করেছে তারা, যা মোট জনগোষ্ঠীর সোয়া এক ভাগের বেশি৷
ছবি: Danny Lawson/empics/picture alliance
চীন
গত সপ্তাহে রাষ্ট্রীয় কোম্পানি সিনোফার্মের টিকার আনুষ্ঠানিক অনুমোদন দিয়েছে চীন৷ শেষ ধাপের ট্রায়ালে আছে আরো কয়েকটি৷ তবে অনুমোদনের আগে পরীক্ষা পর্যায়েই সেসব টিকা প্রয়োগ করা হয়েছে ৪৫ লাখ মানুষের দেহে৷ বিশাল জনগোষ্ঠীর দেশটিতে শতকরা হিসাবে সেটি একভাগেরও কম৷ আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যে পাঁচ কোটি মানুষকে টিকার আওতায় আনার পরিকল্পনা দেশটির৷
ছবি: Zhang Yuwei/AP/picture alliance
রাশিয়া
ট্রায়াল শেষের আগেই বিশ্বে সবার আগে নিজেদের উদ্ভাবিত টিকার অনুমোদন দিয়ে আলোচনায় আসে রাশিয়া৷ ৫ জানুয়ারির ঘোষণা অনুযায়ী দেশটি এরই মধ্যে ১০ লাখ মানুষকে স্পুটনিক ফাইভ নামের সেই টিকা দিয়েছে, যা মোট জনগোষ্ঠীর এক ভাগের কম৷
ছবি: Natacha Pisarenko/AP Photo/picture alliance
জার্মানি
২৭ ডিসেম্বর থেকে ইউরোপের দেশগুলো একজোটে বায়োনটেক-ফাইজারের টিকাদান কার্যক্রম শুরু করে৷ তাদের মধ্যে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি মানুষকে টিকার আওতায় আনতে পেরেছে জার্মানি৷ পাঁচ জানুয়ারি পর্যন্ত দেশটিতে তিন লাখ ৬৭ হাজারেরও বেশি মানুষ টিকা পেয়েছেন৷ জনসংখ্যার হিসাবে এটি এক ভাগের প্রায় অর্ধেক৷
ছবি: Fabrizio Bensch/REUTERS
ইটালি
মোট সংখ্যায় পিছিয়ে থাকলেও জনসংখ্যার শতকরা হিসাবে জার্মানির চেয়ে ইটালি কিছুটা এগিয়ে৷ করোনায় ইউরোপে সবচেয়ে বেশি ভোগা দেশটিতে এখন পর্যন্ত তিন লাখ সাত হাজার ডোজ টিকা দেয়া হয়েছে, যা মোট জনগোষ্ঠীর দশমিক পাঁচ-এক ভাগ৷
ছবি: Matteo Bazzi/REUTERS
ক্যানাডা
১৬ ডিসেম্বর থেকে টিকা দেওয়া শুরু করে ক্যানাডা৷ এক লাখ ৬৩ হাজার মানুষ এখন পর্যন্ত সেখানে করোনার প্রতিষেধক পেয়েছেন, যা জনসংখ্যার দশমিক চার-তিন ভাগ৷
ছবি: Adrian Wyld/REUTERS
স্পেন
৫ জানুয়ারি পর্যন্ত স্পেনে এক ৩৯ হাজার ডোজ ভ্যাকসিন বিতরণ করা হয়েছে, যদিও জনসংখ্যার শতকরা হিসেবে তা উল্লেখযোগ্য নয়৷
ছবি: Alvaro Calvo/Government of Aragon/Getty Images
বাকি বিশ্ব
ইউরোপের সব দেশেই করোনার টিকা দেয়া শুরু হয়েছে৷ সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশও তড়িঘড়ি করেই কার্যক্রম শুরু করেছে৷ লাতিন আমেরিকার দেশগুলোর মধ্যে আর্জেন্টিনা এরই মধ্যে ৫২ হাজার ডোজ বিতরণ করেছে৷ তবে এই দৌড়ে এখনও যোগ দিতে পারেনি সিংহভাগ উন্নয়নশীল ও কোনো অনুন্নত দেশ৷ সব মিলিয়ে বিশ্বের জনসংখ্যার তুলনায় মাত্র দশমিক দুই ভাগ টিকা বিতরণ করা হয়েছে৷