হোয়াইট হাউস ও সংসদের দুই কক্ষের উপর নিয়ন্ত্রণ সত্ত্বেও ‘ওবামাকেয়ার'-এর বিকল্প চালু করতে পারলেন না ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ এই অবস্থায় বিরোধী ডেমোক্র্যাটিক দলের সঙ্গে সহযোগিতার জন্য চাপ বাড়ছে৷
বিজ্ঞাপন
পারলে পূর্বসূরি বারাক ওবামার প্রায় সব সিদ্ধান্তই বাতিল করতে উৎসাহী মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ কিন্তু ‘ওবামাকেয়ার' বা গণস্বাস্থ্য বিমা বাতিল করে তার জায়গায় নতুন ব্যবস্থা চালু করতে গিয়ে পর পর দু'বার ধাক্কা খেলেন তিনি৷ নতুন আইনের খসড়ার প্রতি নিজের রিপাবলিকান দলের সব সংসদ সদস্যের সমর্থনআদায় করতে ব্যর্থ হলেন তিনি৷ এ অবস্থায় তাঁকে বাধ্য হয়ে পিছু হটতে হলো৷ জনমত সমীক্ষায়ও এই খসড়ার বিরোধিতা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে৷
বলা বাহুল্য, এই ব্যর্থতা ট্রাম্প প্রশাসনের চরম অস্বস্তির কারণ হয়ে উঠেছে৷ কারণ, সংসদের উভয় কক্ষে রিপাবলিকান দলের সংখ্যাগরিষ্ঠতা সত্ত্বেও প্রেসিডেন্টের ইচ্ছা পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না৷ দু-দুটি প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে৷ ২০১০ সালে বারাক ওবামা স্বাস্থ ব্যবস্থায় সংস্কারের পর থেকেই রিপাবলিকান দল সেটি বাতিল করার অঙ্গীকার করে আসছে৷ শুধু তাই নয়, ক্ষমতায় আসার পর প্রথম ৬ মাসে কোনো গুরুত্বপূর্ণ আইনই কার্যকর করাতে পারেনিট্রাম্প প্রশাসন৷
‘ওবামাকেয়ার'-এর বিকল্প হিসেবে ট্রাম্প প্রশাসন যে ব্যবস্থা চালু করতে চেয়েছিল, তার ফলে ১ কোটি ৮০ লক্ষ থেকে ২ কোটি ৩০ লক্ষ মানুষ তাদের স্বাস্থ্য বিমা হারাতে চলেছিলেন বলে কংগ্রেসের বাজেট দফতর পূর্বাভাষ দিয়েছিল৷ এমন প্রেক্ষাপটে রিপাবলিকান দলের কয়েকজন সংসদ সদস্যও জনরোষের ভয়ে তাঁদের সমর্থন জানাতে সাহস পাননি৷ ডেমোক্র্যাটিক দলের নেতা বার্নি সান্ডার্স ট্রাম্প প্রশাসনের এই ব্যর্থতার দিনে সাধারণ মানুষকে অভিনন্দন জানিয়েছেন৷
ব্যর্থতা সত্ত্বেও ট্রাম্প প্রকাশ্যে শান্ত থাকার চেষ্টা করছেন৷ এক টুইট বার্তায় তিনি মার্কিন কংগ্রেসের উদ্দেশ্যে নতুন করে ‘ওবামাকেয়ার'-এর বিকল্প খোঁজার আহ্বান জানিয়েছেন৷ এমনকি বিরোধী ডেমোক্র্যাটিক দলকেও সেই উদ্যোগে শামিল হবার ডাক দিয়েছেন তিনি৷
রিপাবলিকান দলের অভিজ্ঞ সংসদ সদস্য জন ম্যাককেন ‘একলা চলো রে' মনোভাব ছেড়ে বিরোধী ডেমোক্র্যাটিক দলের সঙ্গে মিলে গণস্বাস্থ্য ব্যবস্থার সংস্কারের ডাক দিয়েছেন৷
সেনেটে ডেমোক্র্যাটিক দলের নেতা চাক শুমার-ও সেই সম্ভাবনায় সায় দিয়েছেন৷ তবে তিনি সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যবিমার ক্ষেত্রে কোনো আপোশ মানতে রাজি নন৷
১০০ দিনে ট্রাম্প কথা রেখেছেন কি?
নির্বাচনি প্রচারের সময়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প জনতার সঙ্গে ১০০ দিনের চুক্তির কথা বলেছিলেন৷ প্রেসিডেন্ট হবার পর তিনি সেই চুক্তি মেনে সব প্রতিশ্রুতি পালন করেছেন কি? এতগুলি নির্বাহী আদেশের পর সেই প্রশ্ন আরও জোরালো হচ্ছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/Brendan Smialowski
‘ওবামাকেয়ার’ বাতিল, নতুন স্বাস্থ্য বিমা চালু
তীব্র বিদ্বেষ নিয়ে পূর্বসূরি বারাক ওবামার আমলে চালু করা স্বাস্থ্য বিমা কাঠামো বাতিল করে আরও অনেক কার্যকর এক পালটা ব্যবস্থা চালু করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ট্রাম্প৷ কিন্তু শেষ পর্যন্ত নিজের রিপাবলিকান দলের মধ্যেই বিরোধিতার মুখে আপাতত পিছু হঠতে হয়েছে তাঁকে৷
ছবি: Getty Images/AFP/D. McNew
কর ব্যবস্থার সংস্কার
গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকেই কর ব্যবস্থার সংস্কারের ঘোষিত লক্ষ্যে একের পর এক সময়সীমা স্থির করেও বারবার ব্যর্থ হয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন৷ শেষ পর্যন্ত অবশ্য এক বিশদ প্রস্তাবমালা প্রকাশ করেছেন ট্রাম্প৷ তবে প্রথম ১০০ দিনে তিনি এ ক্ষেত্রে কিছু করে উঠতে পারেননি৷
ছবি: Getty Images/W. McNamee
কর্মসংস্থানে জোয়ার
ট্রাম্প প্রশাসনের মতে, কর ব্যবস্থার সংস্কার ও ‘অপ্রয়োজনীয়’ সরকারি বিধিনিয়ম কমাতে পারলেই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে জোয়ার আসবে৷ এখনো সে কাজে অগ্রগতি ঘটেনি৷ যেটুকু সাফল্য এসেছে, তার দাবিদার হবার নৈতিক অধিকার আছে কিনা, তা স্পষ্ট নয়৷
ছবি: Reuters/A. P. Bernstein
মেক্সিকো সীমান্তে প্রাচীর
অনুপ্রবেশ রুখতে মেক্সিকো সীমান্তে প্রাচীর গড়ার অঙ্গীকার করেছিলেন ট্রাম্প৷ বলেছিলেন, তার ব্যয়ভার মেক্সিকোকেই বহন করতে হবে৷ সেই প্রক্রিয়া শুরু করতে তিনি এক নির্বাহী আদেশও জারি করেছেন৷ এবার তার ব্যয়ভারের জন্য কংগ্রেসের দ্বারস্থ হচ্ছেন ট্রাম্প৷ বিরোধী ডেমোক্র্যাটিক দল প্রবল প্রতিরোধের হুমকি দিয়েছে৷
ছবি: Getty Images/J.Sullivan
আইএস ধ্বংস করার অঙ্গীকার
ক্ষমতায় আসার ৩০ দিনের মধ্যে তথাকথিত ইসলামি জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটকে পুরোপুরি নির্মূল করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ কিন্তু সমালোচকদের মতে, এখনো পর্যন্ত ওবামার আমলের নীতিই চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি৷ সার্বিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়লেও আইএস বহাল তবিয়তেই আছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/Militant Website Turkistan Islamic Party
অভিবাসনের ক্ষেত্রে কড়াকড়ি
প্রচারের সময় ট্রাম্প সংবিধানের তোয়াক্কা না করে সব মুসলিমদের অ্যামেরিকায় প্রবেশের উপর নিষেধাজ্ঞা চাপানোর অঙ্গীকার করেছিলেন৷ তারপর সুর নরম করে কিছু মুসলিম-প্রধান দেশ থেকে অ্যামেরিকায় ভ্রমণ কার্যত বন্ধ করার উদ্যোগ নিলেন৷ কিন্তু আদালতের হস্তক্ষেপে সেই উদ্যোগ থমকে গেছে৷ বেআইনি অভিবাসীদের তাড়ানোর ক্ষেত্রেও কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না৷
ছবি: Getty Images/AFP/S. Huffaker
মুক্ত বাণিজ্যের বিরোধিতা
উত্তর অ্যামেরিকার মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি ‘ন্যাফটা’র বর্তমান শর্তগুলির চরম বিরোধিতা করে নতুন করে সেটি সাজানোর উদ্যোগ নেবেন বলে জানিয়েছিলেন ট্রাম্প৷ মেক্সিকো ও ক্যানাডার সঙ্গে এই নিয়ে কোন্দলও শুরু হয়েছে৷ তবে আপাতত কোনো রদবদল হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন তিনি৷