জেলায় জেলায় আবাস যোজনা প্রাপকদের তালিকা ফের যাচাইয়ের প্রক্রিয়া চলছে। এনিয়ে ক্ষোভ-বিক্ষোভ তৈরি হয়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছে বিরোধীরা।
বিজ্ঞাপন
আবাসের তালিকা আর একবার যাচাইয়ের নির্দেশ দিয়েছে নবান্ন। এই নির্দেশ বিভিন্ন জেলায় পৌঁছেছে সম্প্রতি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ২০ ডিসেম্বর থেকে এই প্রকল্পের প্রথম দফার টাকা প্রাপকদের দিতে চান। লোকসভা নির্বাচনের আগে এমনটাই প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল। সেই কারণে ১৩ ডিসেম্বরের মধ্যে সমীক্ষা শেষ করে তালিকা চূড়ান্ত করতে বলা হয়েছে। এই পুনর্মূল্যায়নের জেরে তৈরি হয়েছে ক্ষোভ।
নতুন করে সমীক্ষা
গরিব মানুষের মাথার উপর ছাদ নির্মাণের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা প্রকল্প চালু হয়। এই প্রকল্পে সমতল এলাকার বাসিন্দাকে ১ লক্ষ ২০ হাজার ও পাহাড়, আদিবাসী, পিছিয়ে পড়া জেলার বাসিন্দাদের মাথাপিছু ১ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা দেয়া হয়।
এই প্রকল্পের চূড়ান্ত ও সংশোধিত তালিকা প্রস্তুত করার কাজ শুরু হয়েছে রাজ্যে। কোন কোন ক্ষেত্রে প্রাপকদের যাচাইয়ের কাজ করতে হবে, তাও স্পষ্ট করা হয়েছে নবান্নের নির্দেশিকায়।
প্রধানত ২০২২-২৩ সালে আবাসের সংযোজিত তালিকায় যাদের নাম ছিল এবং ঘর-বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাদের এই প্রকল্পের টাকা দেয়া হবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
আংশিক জয়, চাকরি পেলে জয় সম্পূর্ণ হবে, জানালেন বিক্ষোভকারীরা
নিয়োগ-দুর্নীতির বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে কলকাতার রাস্তায় বিক্ষোভ দেখানো মানুষদের কাছে, এই জয় আংশিক।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
নৈতিক জয়ের দাবি
বিক্ষোভকারী সীমা পান্ডে জানিয়েছেন, ''আজকের রায় আমাদের নৈতিক জয় বলেই মনে হচ্ছে। আমাদের মতো চাকরিপ্রার্থীরাও আশার আলো দেখলো, আমাদের মনে হচ্ছে, বিচার বিভাগ আমাদের ঠিক পথে নিয়ে যাবে । সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে ২০১৪ সালে যে খালি পদ ছিল এবং ২০২৪ সালে একই খালি পদ দেখানো হচ্ছে। আমাদের প্রশ্ন, নতুন স্কুলে শিক্ষকদের পদগুলোর কী হলো?''
ছবি: Satyajit Shaw/DW
সাময়িক স্বস্তি
চাকরিপ্রার্থী ও বিক্ষোভকারী জয়িতা রায় বোসের মনে হচ্ছে, হাইকোর্টের রায় তাদের সাময়িক স্বস্তি দিলো। জয়িতা বলেছেন, '' আমাদের দীর্ঘ আট বছরের কষ্ট এবং যুদ্ধের পর এই রায়কে সাময়িক স্বস্তি বলা যেতে পারে। এখনো পুরোপুরি স্বস্তি আমরা পাচ্ছি না। যোগ্যরা যতদিন চাকরি না পাচ্ছেন ততদিন পুরো স্বস্তি পাবো না।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
ক্যান্সার আক্রান্ত সোমা যা বলেছেন
ক্যান্সার আক্রান্ত সোমা দাসের চাকরি থাকবে। কলকাতা হাইকোর্ট তাদের রায়ে জানিয়েছে, মানবিক কারণে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এরপর আনন্দবাজারকে সোমা জানিয়েছেন, ''জিতেও হারলাম, নাকি হেরেও জিতলাম তা বুঝতে পারছি না।'' সোমা বলেছেন, ''চাকরি হয়তো করব। কিন্তু আমার মতো অনেকের মনে সারা জীবন এটাই থেকে যাবে, ক্যান্সারের জন্যে চাকরিটা থেকে গেল। আমার থেকে অভাগা কেউ নেই। আমার যোগ্যতা যেন দুর্নীতির তলায় হারিয়ে গেল।'
ছবি: Subrata Goswami/DW
সত্যের জয় হয়েছে, বলছেন রাসমণি
রাসমণি পাত্র দীর্ঘদিন ধরে গান্ধী মূর্তির নিচে বসে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। রায়ের পর তার মনে হয়েছে, ''সত্যের জয় হয়েছে। আমাদের আন্দোলনও কিছুটা সফল হয়েছে। তবে পুরোপুরি সফল এখনো হইনি। যখন সব যোগ্য় প্রার্থী চাকরি পাবে, চাকরির নিয়োগপত্র নিয়ে আমরা গান্ধী মূর্তির বিক্ষোভ শেষ করব, সেদিন সত্যিকারের জয় হবে।''
ছবি: Satyajit Shaw/DW
এক হাজার ১৩৫ দিনের লড়াই
অভিষেক সেন জানিয়েছেন, তারা এক হাজার ১৩৫ দিন ধরে রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। রোদ-জল-ঝড়-বৃষ্টির মধ্যে প্রতিবাদ জারি রেখেছেন। অভিষোক জানিয়েছেন, ''যারা দুর্নীতি করে চাকরি পেয়েছে তাদের চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হলো, সেদিক থেকে দেখতে গেলে দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদের জয় হলো। কিন্তু আমাদের নিয়োগ নিয়ে নির্দেশ এলে বলতে পারতাম, পুরো জয় হয়েছে।''
ছবি: Satyajit Shaw/DW
বিক্ষোভ চলছে
সোমবারও বিক্ষোভে বসেছিলেন শিক্ষক পদপ্রার্থীরা। তাদের হাতে ছিল পোস্টার। তাতে দাবি জানানো হয়েছে, যোগ্য প্রার্থীদের চাকরি দিতে হবে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
বিকাশরঞ্জন যা বলছেন
আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেছেন, ''এটা ঐতিহাসিক রায়। সমানাধিকার রক্ষা পেল। এই রায় দুর্নীতিবাজদের মুখোশ খুলে দিয়েছে। বহু মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তাদের বোঝা উচিত, দুর্নীতিগ্রস্ত দলকে ক্ষমতায় আনার ফল কী হতে পারে।''
ছবি: Satyajit Shaw/DW
আইনজীবীর বক্তব্য
আইনজীবী সহস্রাংশু ভট্টাচার্য বলেছেন, ''তৃণমূল সরকার আসার পর চাকরি নিয়ে ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে। হাইকোর্টের রায়ে তা প্রমাণ হয়ে গেল। ২৬ হাজার শিক্ষকের চাকরি বাতিল করা হলো।''
ছবি: Satyajit Shaw/DW
সর্বোচ্চ আদালতে যাবেন মমতা
চাকরিহারাদের পাশে দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ''এই রায় বেআইনি। আমরা সর্বোচ্চ আদালতে যাব। আশা রাখুন।''
ছবি: Prabhakar Mani Tewari/DW
9 ছবি1 | 9
নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, কোন বিষয়গুলি গুরুত্বের সঙ্গে দেখতে হবে। তালিকায় নাম ছিল অথচ বাদ গিয়েছে, সেক্ষেত্রে আবেদন ফের যাচাই করে দেখতে হবে। কাঁচা বাড়ি অথচ ইট-সিমেন্টের দেয়াল রয়েছে যাদের, তাদের নাম আগে বাদ থাকলে সেই বিষয়টি ফের বিবেচনা করতে হবে। এমন বেশ কয়েকটি নির্দেশের ভিত্তিতে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কাজ চলছে।
সমীক্ষা নিয়ে ক্ষোভ
এই সরকারি প্রক্রিয়ার মধ্যে বিভিন্ন জায়গায় সাধারণ মানুষ তালিকা নিয়ে ক্ষোভ দেখাচ্ছেন। সমীক্ষা শুরু হওয়ার পর থেকেই যোগ্য প্রাপকদের তালিকা থেকে নাম বাদ যাওয়া ও প্রকল্প ঘিরে দুর্নীতির অভিযোগ ক্রমশ বাড়ছে। এর সঙ্গে জড়িয়ে যাচ্ছে তৃণমূলের স্থানীয় নেতৃত্বের নাম।
নদীয়ার তেহট্টে গ্রাম পঞ্চায়েতের সাবেক তৃণমূল প্রধান ও উপপ্রধানের বিরুদ্ধে প্রকল্পে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। ব্লক উন্নয়ন আধিকারিকের কার্যালয়ে কয়েকজন গ্রামবাসীর অভিযোগ জমা পড়ে। এ নিয়ে চলতি সপ্তাহে বিক্ষোভ হয়েছে।
মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুর-২ ব্লকে আবাস যোজনার তালিকা করতে গিয়ে গ্রামবাসীদের ক্ষোভের মুখে পড়েছেন আধিকারিকরা। আবাস যোজনার সমীক্ষক দলকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখা গিয়েছে পূর্ব মেদিনীপুরের এগরার পাঁচরোল এলাকায়।
সমীক্ষকরা কাজ করতে গেলে স্থানীয়রা বাধা দেন। উভয় পক্ষের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়।
সমীক্ষার শুরুতেই উত্তর ২৪ পরগনার দেগঙ্গায় গ্রামবাসীদের বিক্ষোভের মুখে পড়েন সরকারি আধিকারিক ও জনপ্রতিনিধিরা। দক্ষিণ ২৪ পরগনার রায়দিঘিতে বিডিও অফিস ঘেরাও করেন গ্রামবাসী। বীরভূমের রামপুরহাট-২ ব্লকের বিডিও অফিসের সামনেও একই ছবি দেখা গিয়েছে।
আলিপুরদুয়ারের কুমারগ্রামে আবাস যোজনার তালিকায় একটি আদিবাসী পাড়ায় ৪৪টি পরিবারের কারো নাম ওঠেনি বলে অভিযোগ। যোজনার তালিকা নিয়ে অন্ডাল, গোঘাট, পাথরপ্রতিমা, পুরুলিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে ক্ষোভের আঁচ।
এইসব অভিযোগ সামনে আসায় গত বুধবার মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ জেলা প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। প্রকল্পের প্রাপকরা যাতে নিজেদের বঞ্চিত না ভাবেন, সেটা নজর রাখার কথা বলা হয়েছে প্রত্যেক জেলার সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে।
পশ্চিমবঙ্গের দুই মন্ত্রী ও এক কাউন্সিলারের বাড়িতে এবার ইডি তল্লাশি
শুক্রবার সকাল থেকে শুরু হয়েছে এই তল্লাশি। পুরসভার নিয়োগ দুর্নীতি মামলার সূত্র ধরে এই তল্লাশি চলছে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
সুজিত বসুর বাড়িতে
সুজিত বসুর বাড়িতে সকাল সাতটা নাগাদ ইডি কর্মকর্তারা কেন্দ্রীয় বাহিনীর প্রচুর সশস্ত্র জওয়ানকে সঙ্গে নিয়ে যান। কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা মন্ত্রীর বাড়ি কার্যত ঘিরে ফেলেন। তারপর থেকে তার বাড়িতে তল্লাশি চলছে। দুপুরেও তল্লাশি চালাচ্ছেন ইডির কর্মকর্তারা।
ছবি: Subrata Goswami/DW
সন্দেশখালি থেকে শিক্ষা নিয়ে
সন্দেশখালিতে তৃণমূলের নেতা শাহজাহান শেখের বাড়িতে তল্লাশি করতে গিয়ে আক্রান্ত হন ইডি কর্মকর্তারা। শ্রীভূমিতে সুজিতের বাড়ির সামনের রাস্তায় টহল দিচ্ছেন নিরাপত্তাকর্মীরা। জটলা হলেই তারা সরিয়ে দিচ্ছেন। মাঝেমধ্যে রুট মার্চ করছেন। বন্দুক, লাঠি ছাড়াও তাদের কাছে কাঁদানে গ্য়াসের সেল আছে। বোঝা যাচ্ছে, তারা সবদিক চিন্তা করে উপযুক্ত পরিকল্পনা করে এসেছেন।
ছবি: Subrata Goswami/DW
জানানো হয়েছে পুলিশকেও
সন্দেশখালির ক্ষেত্রে অভিযোগ উঠেছিল, পুলিশকে না জানিয়ে কেন সেখানে গিয়েছিল ইডি। এবার তারা পুলিশকে জানিয়েই গিয়েছে। সুজিতের বাড়ির কাছে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পুলিশের একটি গাড়িও দাঁড়িয়ে আছে তার বাড়ির কাছে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
কী অভিযোগ?
সুজিত বসুর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি পুরসভার নিয়োগ দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত। এই নিয়ে তদন্ত করতে গিয়ে কিছু নথি পেয়েছে ইডি। সেই সূত্র ধরেই মন্ত্রীর বাড়িতে তল্লাশি চালাচ্ছে ইডি। ২০১৬ সালে দক্ষিণ দমদম পুরসভার প্রধান ছিলেন সুজিত বসু। তখনই দুর্নীতি হয়েছিল বলে মনে করছে ইডি-র তদন্তকারীরা।
ছবি: Subrata Goswami/DW
প্রভাবশালী সুজিত
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মন্ত্রিসভায় মন্ত্রীদের মধ্যে সুজিত বসুকে যথেষ্ট প্রভাবশালী বলে মনে করা হয়। দমকলমন্ত্রী সুজিত এর আগে অভিযোগ করেছিলেন, তার সাবেক আপ্তসহায়ক নিতাই দত্তকে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করার জন্য চাপ দেয়া হচ্ছে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
হাইকোর্টের নির্দেশে তদন্ত
গত মার্চে অয়ন শীলকে জেরা করতে গিয়ে এই কেলেঙ্কারির কথা জানতেপারে ইডি। বিভিন্ন পুরসভায় নিয়োগের বিনিময়ে দুইশ কোটি টাকা তোলার বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় হয়। তখন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশে এই তদন্ত শুরু হয়। এর বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানানো হয়েছিল। কিন্তু তা খারিজ করে দেয় সর্বোচ্চ আদালত।
ছবি: Subrata Goswami/DW
শ্রীভূমির পুজো থেকে মার্তিনেজ, রোনাল্ডিনহো
শ্রীভূমি স্পোর্টিং ক্লাবের পুজো হলো সুজিত বসুর পুজো। প্রতিবছর এই পুজো দেখতে লাখ লাখ মানুষ জড়ো হন। কোনোবার সেখানে লেজারের চমকপ্রদ শো থাকে, কোনোবার উঠে আসে ডিজনিল্যান্ড। ভিআইপি রোড ধরে উল্টোডাঙ্গা থেকে বিমানবন্দর যাওয়ার পথে বাঁদিকে শ্রীভূমির সামনে রয়েছে বিগ বেনের অনুকরণে স্তম্ভ। সেটাও সুজিত বসুর উদ্যোগেই হয়েছে। মার্তিনেজ, রোনাল্ডিনহোরা যখন কলকাতায় এনেছিলেন তখনও তাদের পাশে দেখা গিয়েছিল সুজিতকে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
তাপস রায়ের বাড়িতে
সুজিত বসুর পাশাপাশি রাজ্যের আরেক মন্ত্রী তাপস রায়ের বাড়িতেও তল্লাশি করছে ইডি। বৌবাজারে তাপস রায়ের বাড়ি ও নিজের অফিস পাশাপাশি। দীর্ঘদিন ধরে কংগ্রেস ও তৃণমূল করছেন তাপস। ইডি সূত্রে জানা গেছে, তাপস রায়ের নির্বাচনকেন্দ্র বরাহনগরে পুরসভাতেও নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগ আছে। তা নিয়ে তদন্ত করার সূত্রেই তারা তাপস রায়ের বাড়িতে তল্লাশি করছেন।
ছবি: Subrata Goswami/DW
তাপস রায়ের পরিচিতি
তাপস রায় সোজাসাপ্টা কথা বলেন। অনেক সময় তার কথার সূত্রে দলের মধ্যেই বিতর্ক হয়। বৌবাজারের বাসিন্দা তাপস রায়ের নামে এতদিন পর্যন্ত দুর্নীতির কোনো অভিয়োগ ওঠেনি।
ছবি: Subrata Goswami/DW
আরো তল্লাশি
সুজিত বসু, তাপস রায় ছাড়াও উত্তর দমদম পুরসভার কউন্সিলার সুবোধ চক্রবর্তীর বাড়িতেও ইডি-র তল্লাশি চলছে। সুবোধ তৃণমূলের কাউন্সিলার। তার বিরুদ্ধেও পুরসভার নিয়োগ দুর্নীতি কেলেঙ্কারির সূত্রেই তদন্ত হচ্ছে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
10 ছবি1 | 10
মুখ্যমন্ত্রীর মুখ্য উপদেষ্টা আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "এই রি-ভেরিফিকেশন নিয়ে অকারণে কেউ বিচলিত হবেন না। ইতিমধ্যে কেউ পাকাপাকি বাড়ি করে ফেলেছেন কিনা বা অন্যত্র চলে গিয়েছেন কিনা সেটা দেখতে এই সমীক্ষা। তালিকাভুক্ত উপযুক্ত সকলেই সহায়তা পাবেন।"
কেন্দ্রের শর্ত বদল
প্রকল্পের সুবিধা পাওয়ার জন্য কয়েকটি শর্ত রয়েছে যা কেন্দ্রীয় সরকার নির্ধারিত করেছে। পরিবর্তিত নিয়মে মোটর বাইক, মোটরচালিত মাছ ধরার নৌকা, রেফ্রিজারেটর, ল্যান্ড ফোন থাকলে এবং মাসিক আয় ১৫ হাজার টাকা হলেও সংশ্লিষ্ট পরিবার আবাস প্রকল্পের সুবিধা পেতে পারে।
এছাড়া শর্তের মধ্যে রয়েছে, তিন অথবা চার চাকার গাড়ি থাকলে, ৫০ হাজার টাকা বা তার বেশি অঙ্কের কিষান ক্রেডিট কার্ডের সুবিধা পেলে, সরকারি বা অন্য কোনো সংস্থায় কাজ করলে নাম বাদ যাবে।
পরিবারের কোনো সদস্যের আয় আয়করের আওতাধীন হলে, আড়াই একর বা তার বেশি জমির মালিকানা থাকলে প্রকল্পের সুবিধা পাওয়া যাবে না।
রাজ্য সরকার এসব শর্তকে ততটা গুরুত্ব দিতে রাজি নয়। তাদের সিদ্ধান্ত, প্রকল্পের সুবিধা বিতরণের ক্ষেত্রে দৃষ্টিভঙ্গি হবে মানবিক। মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ, প্রকৃত প্রাপকরাই যেন বাড়ি পান, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। কেউ যেন কেন্দ্রের শর্তের আইনি বাধায় প্রকল্প থেকে বঞ্চিত না হয়, সেটা দেখতে বলা হয়েছে জেলা প্রশাসনকে।
দলবাজির অভিযোগ তুলে বিরোধীরা প্রচার চালালেও খুব একটা লাভ হবে বলে মনে হয় না: সুমন ভট্টাচার্য
কেন্দ্র ও রাজ্যের বিরোধ
আবাস যোজনা প্রকল্পের তালিকায় ভুয়ো নাম থাকার অভিযোগ তুলেছে বিরোধীরা। এমন দাবি করে কেন্দ্র প্রায় দু'বছর এই প্রকল্প খাতে পশ্চিমবঙ্গের বরাদ্দ আটকে রেখেছে বলে অভিযোগ। রাজ্যের দাবি, তারা নিজেদের বরাদ্দ থেকে গ্রামীণ এলাকায় গরিব মানুষের বাড়ি তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে।
আলাপনের বক্তব্য, "আবাস যোজনায় কেন্দ্রের ৬০ শতাংশ টাকা দেয়ার কথা থাকলেও তারা দেয়নি। তাই রাজ্য সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাড়ি তৈরির জন্য টাকা দেয়া হবে। এই কারণে উপভোক্তাদের তালিকা তৈরির জন্য সমীক্ষা এতটা সময় ধরে করা হচ্ছে।"
দুর্নীতির অভিযোগ খারিজ করে দিচ্ছে শাসক দল। তারা বলছে, নতুন তালিকায় তৃণমূলের অনেক নেতা, সমর্থকের নাম বাদ পড়তে চলেছে। প্রকল্পের সুবিধা দেয়ার ক্ষেত্রে কোনো দলভেদ করা হচ্ছে না।
তৃণমূলের বিরুদ্ধে অতীতে দুর্নীতির অভিযোগ উঠলেও তার প্রভাব সেভাবে নির্বাচনে দেখা যায়নি। ১৩ নভেম্বর রাজ্যের ছয়টি কেন্দ্রে উপনির্বাচন। তাতে কি দুর্নীতির অভিযোগ তোলা বিরোধীদের কোনো রাজনৈতিক সুবিধা হবে?
সাংবাদিক সুমন ভট্টাচার্য বলেন, "আবাস যোজনা নিয়ে অভিযোগে তৃণমূল কতটা বিপাকে পড়তে পারে, সেটা উপনির্বাচনের ফলে বোঝা যেতে পারে। তবে দুর্নীতির অভিযোগে এর আগে তেমন সমস্যা হয়নি শাসক দলের। এবার রাজ্য সরকার সতর্ক রয়েছে। সঠিক উপভোক্তা যাতে প্রকল্পের সুবিধা পান, বাকিদের নাম বাদ পড়ে, সেটা নিশ্চিত করতে প্রশাসন বেশ তৎপর। তাই এ নিয়ে দলবাজির অভিযোগ তুলে বিরোধীরা প্রচার চালালেও খুব একটা লাভ হবে বলে মনে হয় না।"
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও বিজেপি নেতা অধ্যাপক বিমলশংকর নন্দ ডিডাব্লিউকে বলেন, "দুর্নীতি জনমতের উপর প্রভাব ফেলে না এটা ভুল ধারণা। এখানে প্রভাবটা ফেলতে দেওয়া হয় না বলেই ভোটে জালিয়াতি হয়।"
তার মতে, "পশ্চিমবাংলার ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ মানুষ অত্যন্ত দীন জীবনযাপন করে। তাদের কাছে সরকারি সাহায্য গুরুত্বপূর্ণ। সেই সরকারি সাহায্য দিয়ে তাদের নির্বাচনী আচরণ প্রভাবিত করার চেষ্টা করে শাসক দল।"