ফুটবল, বিশেষ করে ক্লাব ফুটবলকে ঘিরে আবেগ কম নেই৷ এফসি বার্সেলোনার ক্ষেত্রে বিষয়টি আত্মপরিচয় এবং কাটালান সংস্কৃতির সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত৷ সদস্যরাই সেই ক্লাবের মালিক৷
বিজ্ঞাপন
১৯৫৭ সালে উদ্বোধনের পর থেকেই ‘কাম নৌ’ বা নতুন মাঠ বার্সেলোনা শহরের অন্যতম আকর্ষণ হয়ে উঠেছে৷ স্পেনের উত্তর পূর্বে ক্যাটালোনিয়া প্রদেশের রাজধানী সংস্কৃতি ও আকর্ষণীয় জীবনযাত্রার পাশাপাশি গোটা বিশ্বে এফসি বার্সেলোনা ফুটবল ক্লাবের কারণেও পরিচিত৷ ক্লাবের সদস্য ও অনুরাগীরা এই স্টেডিয়াম নির্মাণের কাজে আর্থিক সহায়তা করেছিলেন৷
মোট ৯৯ হাজার ৩৪৪টি আসনের কারণে ‘কাম নৌ’ ইউরোপের সবচেয়ে বড় স্টেডিয়াম৷ বিশেষ করে এফসি বার্সেলোনা ও তাদের সবচেয়ে বড় প্রতিপক্ষ রেয়াল মাদ্রিদের মধ্যে ‘এল ক্লাসিকো’ ম্যাচের সময় স্টেডিয়ামের পরিবেশ অনবদ্য হয়ে ওঠে৷ সে এক রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা!
অ্যার্নেস্ট পুখাদা এই স্টেডিয়ামে এফসি বার্সেলোনার প্রায় কোনো ম্যাচই দেখতে ভোলেন না৷ তিনি আজন্ম এই ক্লাবেরই ফ্যান৷ নিজের আবেগ-অনুভূতির ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে অ্যার্নেস্ট বলেন, ‘‘আমার কাছে কাম নৌ-এর মতো কোনো স্টেডিয়াম হয় না৷ শিশু বয়সে বাবা-মার সঙ্গে এখানে আসার স্মৃতি ভোলার নয়৷ আমার কাছে এটা অসাধারণ এক অনুভূতি৷ কাম নৌ আমার কাছে দ্বিতীয় বাসার মতো৷’’
বার্সেলোনা: ভূ-মধ্যসাগরের অপূর্ব শহর
এই নামটা শুনে সবাই সেখানে যেতে চায়, হ্যাঁ জায়গাটা বার্সেলোনা৷ স্পেনের এই শহরটি গত তিন দশক ধরে পর্যটক আকর্ষণের অন্যতম কেন্দ্র৷ বার্সেলোনায় গেলে যে ১০টি স্থানে আপনার অবশ্যই যাওয়া উচিত – সেগুলো দেখে নিন ছবিঘরে৷
ছবি: picture-alliance/DUMONT Bildarchiv/F. Heuer
সমুদ্র বন্দর
১৯৯২ সালে অলিম্পিক গেমস উপলক্ষ্যে এই ভবনটি নির্মাণ করা হয়েছিল৷ এর কারণে বন্দরটি অবশ্য লাভবানই হয়েছে৷ ঐ অলিম্পিকের পর থেকে এখানকার বার, রেস্তোরাঁগুলো পর্যটকের জনপ্রিয় ভ্রমণ স্থান হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে৷ ১৯৯২ সালের অলিম্পিকের জন্য বিশাল আকৃতির এই ‘স্বর্ণ মৎসটির’ নকশা করেছিলেন বিখ্যাত স্থপতি ফ্রাংক গেহরি৷
ছবি: picture-alliance/Arco Images/J. de Cuveland
সমুদ্র সৈকত
নাগরিক জীবন থেকে ছুটি চান বা কয়েকটা দিন সৈকতে কাটাতে চান? এ দু’টোর দারুণ সংমিশ্রণ হলো বার্সেলোনা৷ শহরে থেকেও এক পা বাড়ালেই সমুদ্র, তাই নাগরিক জীবনের সাথে সামঞ্জস্য করা ভীষণ সুবিধা৷ বার্সেলোনাকে ঘিরে আছে সাতটি সমুদ্র সৈকত, যেখান থেকে আপনি ভূ-মধ্যসাগরে সূর্যস্নানের সুযোগ পাবেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R. Jensen
রাম্বলা
শহরের অদূরে যে সমুদ্র সৈকতটি, তার থেকে খুব কাছেই বার্সেলোনার ঐতিহাসিক এই কেন্দ্রস্থলটি৷ এর আয়তন এক কিলোমিটার৷ ফুটপাতের পাশে ক্যাফেগুলো ফ্রেশ হওয়ার জন্য যেন আপনাকে হাতছানি দিতে থাকে৷ শেরি ওয়াইন, তাপাস, মানে বিভিন্ন ধরনের স্ন্যাক্স’সহ নানারকম সুস্বাদু খাবার পাবেন এখানে৷
ছবি: picture-alliance/DUMONT Bildarchiv/F. Heuer
পুরোনো শহর
লা রাম্বলার উত্তরে বারি গোতিক, পুরোনো শহরের গথিক কোয়ার্টার৷ এখানকার বেশিরভাগ ঐতিহাসিক ভবন ১৪ বা ১৫ শতকে তৈরি৷
ছবি: picture-alliance/DUMONT Bildarchiv/F. Heuer
স্কয়ার
অনেক জায়গায় পুরোনো শহরের রাস্তাগুলো ছোট বা বড় স্কয়ার বা চত্বরে গিয়ে মিলেছে৷ প্লাকা রিয়াল সিটি সেন্টার রাতের পর্যটকদের অন্যতম পছন্দের জায়গা৷
ছবি: picture-alliance/DUMONT Bildarchiv/F. Heuer
সাগ্রাদা ফামেলিয়া
আধুনিক বার্সেলোনার গুরুত্বপূর্ণ নজির সৃষ্টি করেছেন আন্তোনি গাউডি৷ তাঁর নকশায় বানানো সাগ্রাদা ফামেলিয়া চার্চ বার্সেলোনার অন্যতম দ্রষ্টব্য স্থান৷ বিশ্বের বিখ্যাত ভবনগুলোর অন্যতম এটি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Warnecke
গাউডি-র বিশ্ব
আলো আর রঙের এমন অপূর্ব সংমিশ্রণ বিশ্বের আর কোনো চার্চের ভেতরে হয়ত দেখতে পাবেন না৷ গাউডি তাঁর স্থাপত্যে প্রকৃতি থেকে অনুপ্রেরণা পেয়েছেন৷ ছাদটা এমনভাবে নির্মিত যে, মনে হবে এর কলামগুলো গাছের মতো আকাশের দিকে মুখ করে আছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R. Goldmann
ফুন্দাসিও জোয়ান মিরো
বার্সেলোনা এমন একটা শহর, যে শহর আপনাকে অনেক কাজে উৎসাহ দেবে৷ মন্টউইক পাহাড়ের উপর জাদুঘরটি জোয়ান মিরোর স্মরণে তৈরি৷ এই শিল্পীর কাজে কাতালান ফোক আর্টের বিষয় ও রং চোখে পড়ে৷ তাঁর তৈরি বর্নিল ভাস্কর্য এবং সেরামিকের কাজ বার্সেলোনা জুড়ে চোখে পড়বে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Read
ফন্ত মাগিকা
বার্সেলোনার সবচেয়ে রোম্যান্টিক জায়গা ফন্ত মাগিকা৷ ১৯২৯ সালে নির্মিত এই ঝর্ণাটিতে আলোর ৫০ট রকমের বর্ণচ্ছটা আপনাকে অভিভূত করবে৷ শহরের সবচেয়ে বড় ঝর্ণা এটি৷
ছবি: picture-alliance/Eibner
তিবিদাবো
বার্সেলোনা দু’টো পাহাড় দিয়ে ঘেরা৷ এর একটি মন্টউইক (১৭৩ মিটার) আর অন্যটি তিবিদাবো (৫২০ মিটার)৷ তিবিদাবো থেকে আপনি শহরের বেশিরভাগ অংশটা দেখতে পাবেন৷ বার্সেলোনার একমাত্র ঐতিহাসিক ট্রামলাইন দ্য ট্রামভিয়া ব্লাও-এর সাহায্যে আপনি পাহাড়ের উপরে উঠতে পারবেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Reboredo
10 ছবি1 | 10
স্টেডিয়াম ভবনে বার্সা মিউজিয়ামে ক্লাবের ১২০ বছরের ইতিহাসের যাবতীয় সাফল্য তুলে ধরা হয়৷ পাঁচবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ আনার কৃতিত্বের পাশাপাশি স্পেনের সবচেয়ে সফল ফুটবল ক্লাব হিসেবে বার্সার ঝুলিতে জয়, সম্মান ও সাফল্যের অভাব নেই৷ মিউজিয়ামের প্রধান জর্ডি পেনাসের মতে, বার্সা আসলে ফুটবল ক্লাব হিসেবে কখনোই সীমাবদ্ধ থাকতে চায় না৷ তিনি বলেন, ‘‘আমার মতে, সব খেলোয়াড় আসলে বোঝেন যে মাসের শেষে বেতন পাওয়াই সবকিছু নয়৷ এই শহরে খেলা ও বাস করার মজাই আলাদা৷ কারণ এখানে সত্যি ফুটবল খেলার সুযোগ আছে, খেলাকে কাজ হিসেবে দেখা হয় না৷’’
অন্যান্য অনেক ফুটবল ক্লাবের মতো এফসি বার্সেলোনার মালিকানা বড় বড় বিনিয়োগকারীর হাতে নেই৷ সদস্যরাই ক্লাবের মালিক৷ কাটালুনিয়ার অনেক মানুষ এই ক্লাব ও স্টেডিয়ামটিকে আত্মপরিচয়ের অভিন্ন অংশ হিসেবে দেখেন৷ অদূর ভবিষ্যতেই স্টেডিয়াম সংস্কারের কাজ শুরু হবে৷ এ প্রসঙ্গে জর্ডি পেনাস বলেন, ‘‘কাম নৌ বাদ দিয়ে এফসি বার্সেলোনা ভাবাই যায় না৷ সেটা চলবে না৷ আমরা যখন স্টেডিয়াম নবায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, তখন কিছু লোক শহরের বাইরে আরও বড় ও উন্নত নতুন স্টেডিয়াম গড়ার পরামর্শ দিয়েছিল৷ কিন্তু সেটা সম্ভব নয়, এটা আমাদের ডিএনএ, আমাদের ব্যক্তিত্বের অংশ৷ এটা আমাদের নিজস্ব জায়গা৷ এখানে এলেই মনে হয় বাসায় ফিরলাম৷ নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে আরাম করা যায়৷’’
এফসি বার্সেলোনার ফ্যান হিসেবে অ্যার্নেস্ট পুখাদাও একই রকম অনুভূতি তুলে ধরেন৷ তিনি বলেন, ‘‘অন্য সদস্যদের সঙ্গে এখানে উপস্থিত হলে মনে হয় আমরা যেন একটি দেশের নাগরিক৷ ক্লাবের সদস্য হিসেবে শুধু ম্যাচের সময় টিমকে সমর্থন করলে চলবে না, সদস্য-পরিচালিত ক্লাবের আইডিয়া বা ধারণাকেও সম্মান করতে হবে৷ আমার কাছে এই স্টেডিয়াম সেই আইডিয়ারই প্রতীক৷’’
ফ্যানদের কাছে এফসি বার্সেলোনা ফুটবল ক্লাবের থেকে অনেক বড়৷ আর কাম নৌ-ও শুধু একটা স্টেডিয়াম নয়৷