মানুষ তার চাহিদা মেটাতে অনেকদূর যেতে পারে৷ এমনকি প্রেম-ভালোবাসা-যৌনতার মতো অনুভূতিও তার ব্যতিক্রম নয়৷ বার্সেলোনা শহরে এমনকি রোবটদের একটি যৌনপল্লিও খোলা হয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
এমন রোবটের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক যে, আবেগ-অনুভূতি দেখাতে পারে৷ স্যার্শি সান্টস সেই স্বপ্ন দেখেন৷ বার্সেলোনা শহরের এই ইঞ্জিনিয়ার এমন ‘সেক্স রোবট' তৈরির কাজ করছেন, যারা মানুষের ভাবাবেগ নকল করতে পারবে৷ তিনি বলেন, ‘‘আমার কাছে আবেগ-অনুভূতির কাঠামো রয়েছে৷ সেটাই আমার মৌলিক ভিত্তি৷ আমার কাছে মস্তিষ্কের স্থাপত্য বা কাঠামো রয়েছে, যা আবেগ প্রকাশ করতে পারে৷ যেমনটা ভেবেছিলাম, বিষয়টা তা থেকে ভিন্ন৷ তারপর হিউম্যানয়েড সিস্টেমের খোঁজ করে সেক্স ডল শিল্পে তার খোঁজ পেলাম৷ এবার আমার সহজলভ্য কম্পিউটার চাই, যা দ্রুত তৈরি করা যেতে পারে৷ সবকিছু জোড়া দেবার জন্য উপযুক্ত প্রযুক্তিও প্রয়োজন৷''
তাঁর তৈরি রোবট কথা শুনে ও সেন্সরের মাধ্যমে স্পর্শ অনুভব করে প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে৷ সেন্সরগুলি কৃত্রিম মস্তিষ্কের মধ্যে কাজ করে৷ তারপর রোবট বিভিন্ন আবেগের পরিস্থিতি ফুটিয়ে তোলে৷ বন্ধুত্বপূর্ণ, রোমান্টিক ও যৌন আবেদন প্রকাশ করে যন্ত্র৷
সান্টোসের তৈরি রোবটের মূল্য প্রায় ৬,০০০ ডলার৷ অনেকেই সেগুলি কিনতে আগ্রহী৷ সেন্ট গ্যালেন বিশ্ববিদ্যালয়ের টোমাস বেশর্নার বলেন, ‘‘ইউরোপে প্রায় ৪০ শতাংশ পুরুষ রোবটের সঙ্গে যৌন সম্পর্কের বিষয়ে খোলামনে ভাবতে পারেন৷ নারীদের সংখ্যা কম হলেও সে ক্ষেত্রে সম্ভাবনা রয়েছে৷''
বার্সোলানায় যৌনতার সঙ্গে সম্পৃক্ত শিল্পক্ষেত্র এই সম্ভাবনার ইঙ্গিত দেখেছে৷ সেখানে ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে প্রথম রোবটদের যৌনপল্লি যাত্রা শুরু করে৷ ঘণ্টায় ১০০ ইউরোর বিনিময়ে গ্রাহকরা পুতুল দিয়ে নিজেদের চাহিদা মেটাতে পারেন৷
যৌনপুতুলের পতিতালয়
জার্মানির ডর্টমুন্ডে সেক্স ডল বা যৌনপুতুলের একটি পতিতালয় আছে৷ ছবিঘরে দেখুন সেই পতিতালয়টি আসলে কেমন, কী কী আছে সেখানে৷
ছবি: DW/C. Winter
নিভৃত পল্লী
দক্ষিণ ডর্টমুন্ডের এক নিভৃত পল্লীতে এই সেক্স ডল ব্রথেল৷ নাম বরডল৷ গত বছর থেকে চালু হয়েছে জার্মানির প্রথম এই পুতুল পতিতালয়৷
এই পতিতালয়ে ১২টি সিলিকন ডল আছে৷ এর মধ্যে একটি পুরুষ৷ আর একটি পুতুলের স্তন ও পুরুষাঙ্গ দু’টিই আছে৷ ঘন্টায় ৮০ ইউরো খরচ করে এমন একটি ঘরে আগ্রহীরা তাঁদের যৌনাকাঙ্খা মেটাতে পারেন৷
ছবি: DW/C. Winter
এভিলিন শোয়ার্ৎসের বোরডল
বোরডলের প্রতিষ্ঠাতা ৩০ বছর বয়সি এভিলিন শোয়ার্ৎস৷ তিনি এখানে যখন একটি পতিতালয় প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন তখন জার্মান ভাষাভাষী পতিতা জোগাড় করতে গিয়ে বেশ বেগ পেতে হচ্ছিল৷ পরে জাপানের একটি পতিতালয়ের মডেল দেখে তিনি অনুপ্রাণিত হন৷
ছবি: DW/C. Winter
চীন থেকে
চীন থেকে এসব পুতুল আনেন এভলিন শোয়ার্ৎস৷ একেকটিতে খরচ পড়ে এক থেকে দুই হাজার ইউরো৷ একেকটা পুতুল ৬ মাস পর্যন্ত সেবা দিতে পারে৷ এভলিনের একজন সহকারী আছেন, যিনি পুতুলগুলো পরিষ্কার করেন, যাতে কোনো রোগ না ছড়ায়৷
ছবি: DW/C. Winter
সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
প্রতিদিন ৫ থেকে ১২ জন খদ্দের আসেন বরডলে৷ শুধু এসব সিলিকন পুতুলই নয়, বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন রোবটের কথাও ভাবা হচ্ছে যৌনকাজে ব্যবহারের জন্য৷ তবে রোবোটিক্সের সঙ্গে যুক্ত বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখনো এর সময় আসেনি৷
ছবি: imago/Granata Images
6 ছবি1 | 6
কিন্তু রোবটের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক আমাদের প্রেম-ভালোবাসা কতটা বদলে দেবে? লিনৎস প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে রোবট মনস্তত্ববিদ মার্টিনা মারা মনে করেন, এর ফলে প্রকৃত সম্পর্কে সমস্যা হতে পারে৷ তিনি বলেন, ‘‘বর্তমানে বাজারে যে সেক্স রোবট রয়েছে, সেগুলির মধ্যে প্রায় ৯৫ শতাংশ নারীদের সম্পর্কে প্রচলিত ধারণার প্রতিফলন ঘটায়৷ অর্থাৎ, নারী মানেই পরোক্ষ ভূমিকা পালন করবে৷ একদিকে মানুষ, অর্থাৎ নারীর শরীরকে বস্তু হিসেবে আরো তীব্রভাবে তুলে ধরা হচ্ছে৷ অন্যদিকে রোবটের মাধ্যমে নারী ও পুরুষের পার্থক্য সম্পর্কে বদ্ধমূল ধারণাগুলি আসল সম্পর্কের উপরেও প্রভাব রাখছে৷''
সেক্স রোবট কিন্তু কাজেও লাগতে পারে৷ ‘ফাউন্ডেশন ফর রেসপন্সিবল রোবটিক্স' এর মাধ্যমে সেই সব মানুষের থেরাপির সম্ভাবনা দেখছে, যৌনতা নিয়ে যাদের সমস্যা রয়েছে৷ এথিক্সের অধ্যাপক টোমাস বেশরর্মার এমনকি মনে করেন যে, সেক্স রোবটদের প্রতি আমাদের মনে প্রকৃত অনুভূতি জাগতে পারে৷ টোমাস বলেন, ‘‘এইসব যন্ত্রের সঙ্গে দ্রুত ব্যক্তিগত সম্পর্ক গড়ে উঠবে বলে আমার জোরালো অনুমান রয়েছে৷ এমন রোবটের মালিক দ্রুত তার নাম রাখবে৷''
এমন সম্পর্ক শুধু একতরফা হোক, ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে স্যার্শি সান্টস তা চান না৷ তাই তিনি তাঁর পুতুলগুলিকে যতটা সম্ভব মানুষের মতো আবেগময় করে তুলতে চান৷ আমরা মানুষরা ঠিক কী কারণে ভিন্ন, এমন প্রেক্ষাপটে তাঁর মনে সেই প্রশ্ন জাগে৷ স্যার্শি বলেন, ‘‘নিজের সত্ত্বা নিয়ে প্রশ্ন জাগে৷ আমি আসলে কে? নিজের সম্পর্কে কী ভাবি? এটা যে আমি, সেই সিদ্ধান্ত কীভাবে আসে? এইসব বিষয় সম্পর্কে আমার চিরকাল আগ্রহ ছিল৷ তার ফলে আমার মস্তিষ্কের কাঠামো নিয়ে ভেবেছি৷''
ডিজিটাল প্রযুক্তি ও রোবটিক্স আমাদের প্রেম-ভালোবাসার মধ্যেও প্রবেশ করছে৷ স্বপ্ন বা সমস্যা, বিষয়টিকে যেভাবেই দেখা হোক না কেন, এমন পুতুলের সঙ্গ মেনে নেওয়া সহজ নয়৷
যৌন খেলনার ইতিহাস
বর্তমান যুগে সেক্স টয় বা যৌন খেলনা, যেমন ভাইব্রেটরের মতো টয়গুলো কেবল একটা উদ্দেশ্যেই ব্যবহৃত হয়, আর তা হলো আনন্দ৷ যদিও ভাইব্রেটরের আবিষ্কার হয়েছিল নারীদের যৌনতার ওপর পুরুষদের নিয়ন্ত্রণের জন্য৷
ছবি: picture-alliance/dpa/O. Spata
সবই প্রাকৃতিক: বিশ্বের প্রথম ডিলডো
কাঁচা কলা হোক বা উটের শুকনো গোবর- প্রাচীন কালে গ্রিস ও মিশরের মানুষ এগুলোর ওপর পিচ্ছিল পর্দার্থের প্রলেপ দিয়ে যৌন খেলনা বানিয়ে নিত৷ এছাড়া আরও বিকল্প ছিল বাঁকানো পাথর, চামড়া বা কাঠের বস্তু৷ বিশ্বের প্রথম ‘ডিলডো’ কিন্তু জার্মানিতেই আবিষ্কার হয়েছিল, তাও আবার ২৮,০০০ বছর আগে৷ ২০ সেন্টিমিটার লম্বা এই পাথরটি কেবল যে ‘সেক্স টয়’ হিসেবে ব্যবহৃত হতো তা-ই নয়, আগুন জ্বালানোর কাজেও ব্যবহৃত হতো৷
ছবি: Phallus von der Hohle Fels/J. Lipták/Universität Tübingen
খুলে দাও
ডিলডো শব্দটি প্রথম এসেছে ল্যাটিন শব্দ ‘ডিলাটারে’ থেকে, ১৪০০ শতাব্দিতে৷ এর মানে হচ্ছে খুলে দাও৷ আর ইতালিতে দিলেত্তো মানে খোল৷ ইতালীয় রেনেঁসার একশ বছর পর চামড়া ও অলিভ অয়েল দিয়ে যৌন খেলনা তৈরি হতো৷ তবে ইতিহাস বলে শুনতে যতটা আনন্দদায়ক হওয়ার কথা খেলনাটি ততটা ছিল না৷
ছবি: Vassil
নারীর আকাঙ্ক্ষা?
দীর্ঘদিন ধরে সহবাস মানেই ছিল পুরুষের চরম উত্তেজনাপূর্ণ পর্যায়ে পৌঁছানো৷ পুরুষ শাসিত সেসব সমাজে নারীদের ‘অরগাজম’ বা তাদের তৃপ্তি দেয়াটাকে অবহেলা করা হতো৷ যেসব নারীর যৌন চাহিদা বেশি থাকত, তাদের হিস্টিরিয়া রোগী মনে করত পুরুষরা৷ তাদের জন্য নানা ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি ছিল৷
ছবি: Fleury/Siegfried Giedion
নারীদের যৌন চাহিদার চিকিৎসা
নারীদের এ ধরনের ‘হিস্টিরিয়া’ বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছিল৷ একটা নির্দিষ্ট বয়সে প্রায় সব নারীর মধ্যেই দেখা যাচ্ছিল৷ এর ফলে কখনো কখনো অনেকের জ্বরও হতো৷ এ ধরনের লক্ষণ দেখা দিলে ডাক্তাররা এই টেবিলে যোনী ম্যাসাজের পরামর্শ দিতেন৷ কেননা, সেসময় হস্তমৈথুন ছিল নিষিদ্ধ৷
ছবি: George Henry Taylor
ডিলডো যখন ভাইব্রেটরে পরিণত হলো
ধনী নারীদের যে কোনো রোগের চিকিৎসা ছিল, কেননা, ডাক্তাররা অনেক অর্থ পেতেন৷ আর তাই তারা কাজে লেগে গেলেন কীভাবে তাদের যৌন হিস্টিরিয়ার চিকিৎসা করা যায়৷ ১৮৮০-র দশকে ভিক্টোরিয়ার আমলে ড. জোসেফ মরটিমার প্রথম ইলেকট্রো ম্যাকানিকেল ভাইব্রেটর আবিষ্কার করেন৷ এই যন্ত্রের ফলে ১০ মিনিটেই চরম উত্তেজনায় পৌঁছে যেতেন নারীরা৷
ছবি: Collections of The Bakken Museum, Minneapolis, USA
সুখী গৃহিনীরা
বিংশ শতাব্দিতে বিভিন্ন কোম্পানি ভাইব্রেটর বানানো শুরু করে৷ স্বাস্থ্য সেবা হিসেবে বিজ্ঞাপন ছাপা হতে লাগলো বিভিন্ন ম্যাগাজিনে৷ ডাক্তাররা এতে মোটেও খুশি হননি৷ অনেকের মনে হলো, অরগাজমের জন্য নারীদের বুঝি আর পুরুষ সঙ্গীর প্রয়োজন থাকবে না৷