সোমবার থেকে জার্মানিতে করোনা টিকার উপর নিয়ন্ত্রণ উঠে যাবার পর চাহিদা বেড়ে গেছে৷ কিন্তু টিকার অভাবে বেশিরভাগ মানুষকে অপেক্ষা করতে হচ্ছে৷ এদিকে নিম্ন মানের মাস্ক বিতরণের অভিযোগ অস্বীকার করছে সরকার৷
বিজ্ঞাপন
করোনা ভাইরাস সংক্রমণের হার ধারাবাহিকভাবে কমে চলায় জার্মানিতে আপাতত স্বস্তির নিঃশ্বাস পড়ছে৷ সোমবার থেকে ১২ বছরের বেশি বয়সি সব মানুষ করোনা টিকার আবেদনের সুযোগ খুলে দেওয়ায় বাড়তি উৎসাহ সৃষ্টি হচ্ছে৷ জুলাই মাসের মধ্যেই প্রাপ্তবয়স্কদের সিংহভাগ টিকার অন্তত প্রথম ডোজ পেয়ে যাবেন বলে সরকার আশা করছে৷ তবে করোনা সংক্রমণের চতুর্থ ঢেউয়ের প্রস্তুতির ক্ষেত্রেও ঢিলেমি সম্পর্কে সতর্কতা শোনা যাচ্ছে৷ বিশেষ করে ব্রিটেনে টিকা কর্মসূচির ক্ষেত্রে অগ্রগতি সত্ত্বেও করোনা ভাইরাসের অত্যন্ত ছোঁয়াচে ডেল্টা সংস্করণ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় ইউরোপেও দুশ্চিন্তা দেখা যাচ্ছে৷ ভবিষ্যতে অন্যান্য মিউট্যান্ট আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে, এমন আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না৷
করোনা টিকার জন্য আবেদনের সুযোগ পেলেও সেই বিপুল চাহিদা মেটাতে যথেষ্ট পরিমাণ টিকা এখনো সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না৷ জার্মানির স্বাস্থ্যমন্ত্রী ইয়েন্স স্পান আগেই বলেছিলেন, সব আগ্রহী মানুষ প্রথম দিনেই টিকা নেবার তারিখ স্থির করতে পারবেন না৷ বরং আগামী কয়েক সপ্তাহ ধৈর্য্য ধরে অপেক্ষা করলে তারপর অ্যাপয়েন্টমেন্ট পাওয়া যেতে পারে৷ টিকাদান কেন্দ্র, ডাক্তারের চেম্বারের পাশাপাশি বিভিন্ন কোম্পানির নিজস্ব ডাক্তাররাও এবার টিকা দিতে শুরু করায় চাপ সামান্য হলেও কিছুটা কমার কথা৷ জার্মানির অর্থমন্ত্রী পেটার আল্টমায়ার বলেন, কোম্পানির ডাক্তাররা মাসে প্রায় ৩০ লাখ টিকা দিতে পারবেন৷
জার্মানিতে করোনা পরীক্ষায় ব্যাপক দুর্নীতি, অসহায় সরকার
কিছুদিন আগে মাস্ক নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল৷ এবার উঠেছে করোনা পরীক্ষার নামে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ৷ ফলে করোনা সংক্রান্ত দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার অভিযোগে এখন প্রবল চাপের মুখে সরকার৷ ছবিঘরে বিস্তারিত...
ছবি: Wolfgang Rattay/REUTERS
এমপির বিরুদ্ধে ঘুসের অভিযোগ
গত ফেব্রুয়ারিতে জার্মানির এমপি গিয়র্গ ন্যুসলাইনের বিরুদ্ধে ছয় লাখ ৬০ হাজার ইউরো ঘুস নেয়ার অভিযোগ ওঠে৷ রক্ষণশীল এই আইনপ্রণেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি মাস্ক সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ওই টাকা নিয়ে চুক্তি সম্পাদনে ভূমিকা রেখেছেন৷ অভিযোগের তদন্ত এখনো চলছে৷
ছবি: Christoph Hardt/Geisler-Fotopres/picture alliance
এবার করোনা পরীক্ষায় দুর্নীতি
করোনার সংক্রমণ কমাতে এবং মানুষকে স্বাভাবিক জীবনে ফেরাতে বিভিন্ন শহরে যত বেশি সম্ভব করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা করেছে সরকার৷ সপ্তাহে কমপক্ষে একবার বিনামূল্যে করোনা টেস্ট করানোর সুযোগ পাচ্ছেন অনেক মানুষ৷ পরীক্ষার ফলাফল নেগেটিভ হলে তা দেখিয়ে অবাধে কেনাকাটা আর রেস্তোরাঁয় প্রবেশের সুযোগ পাওয়া যাচ্ছে৷ এসব পরীক্ষা নিয়েই শুরু হয়েছে দুর্নীতির মহোৎসব৷
ছবি: Ying Tang/NurPhoto/picture alliance
অসহায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী
বিভিন্ন শহরে এই পরীক্ষাকেন্দ্রগুলো চালাচ্ছে মূলত বেসরকারি কিছু প্রতিষ্ঠান৷ পরীক্ষা না করেই টাকা আদায়ের অভিযোগ ওঠার পর ১৬টি রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন জার্মানির স্বাস্থ্যমন্ত্রী ইয়েন্স স্পান৷ সেখানে দুর্নীতি রোধে রাজ্য সরকারগুলোকে তৎপর হওয়ার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করা দরকার৷ বার্লিন থেকে সারা দেশের পরি্স্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়৷’’
ছবি: Kay Nietfeld/dpa/picture alliance
কাগজে ১০০০, বাস্তবে ৭০
নর্থ রাইন ওয়েস্টফালিয়া রাজ্যের কোলন শহরের মাত্র একটি পরীক্ষা কেন্দ্রের দৃষ্টান্ত তুলে ধরলেই সারা দেশে দ্রুত করোনা পরীক্ষার নামে কী হারে দুর্নীতি হচ্ছে তা বোঝা যাবে৷ সেখানে বাস্তবে মাত্র ৭০ জনের করো৷না পরীক্ষা করা হলেও সরকারের কাছ থেকে এক হাজার জনের পরীক্ষার টাকা নেয়া হয়েছে৷
ছবি: Peter Hille/DW
কম টাকায় কম দুর্নীতি?
প্রতি জনের একবারের পরীক্ষার জন্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে ১৮ ইউরো করে দিতো জার্মান সরকার৷ কিন্তু ব্যাপক দুর্নীতির খবরে ক্ষুব্ধ স্বাস্থ্যমন্ত্রী ইয়েন্স স্পান বলেছেন, টাকার পরিমান ১৮ ইউরো থেকে অনেক কমিয়ে দিতে চান তিনি৷ স্পান মনে করেন, প্রতিটি পরীক্ষার জন্য ১০ ইউরোরও কম দেয়া উচিত৷ পরীক্ষার খরচ কমালে দুর্নীতি কি কমবে?
ছবি: Wolfgang Rattay/REUTERS
5 ছবি1 | 5
প্রথম দিনেই ডাক্তারের চেম্বারগুলির উপর প্রবল চাপ দেখা গেছে৷ টিকা নিতে আগ্রহী মানুষের প্রশ্নের জবাব দিতে কর্মীরা হিমসিম খেয়েছেন৷ বিশেষ করে আসন্ন গ্রীষ্মের ছুটিতে বেড়াতে যাবার তাগিদে অনেক মানুষ দ্রুত টিকা নিতে আগ্রহী৷ ফলে নানা পথে চেষ্টা চালিয়ে তারা টিকা পাবার আশা করছেন৷ কিন্তু বেশিরভাগ মানুষই অপেক্ষা করতে বাধ্য হচ্ছেন৷
এর মধ্যে জার্মানির সরকার বিতর্কের মুখে পড়েছে৷ করোনা সংকটের শুরুতে মাস্কের অভাব মেটাতে দ্রুত অর্ডার দিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নিম্ন মানের অনেক মাস্ক হাতে পেয়েছিল, যেগুলি নাকি গৃহহীন ও প্রতিবন্ধী মানুষের মধ্যে বিতরন করা হয়৷ এমন গাফিলতির অভিযোগে স্বাস্থ্যমন্ত্রী স্পানের পদত্যাগের দাবিও উঠছে৷ চ্যান্সেলর ম্যার্কেল অবশ্য স্বাস্থ্যমন্ত্রীর প্রতি পূর্ণ আস্থা ও সমর্থন জানিয়েছেন৷ সরকার এ সংক্রান্ত যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করছে৷ দলের শীর্ষ নেতা আরমিন লাশেটও স্পানের প্রতি আস্থা প্রকাশ করেছেন৷ তিনি সরকারের শরিক দল এসপিডি-র বিরুদ্ধে নেতিবাচক প্রচারের অভিযোগ এনেছেন৷
জার্মানিতে টিকা বাড়ছে, করোনা সংক্রমণ কমছে
বিভিন্ন রাজ্যের দাবির মুখেও লকডাউন পুরোপুরি তুলে নেয়নি ম্যার্কেল সরকার৷ বরং করোনা পরিস্থিতির উন্নতিতে লকডাউন যেমন শিথিল হয়েছে, তেমনি অবনতিতে বাড়ানো হয়েছে কড়াকড়ি৷ পাশাপাশি টিকাও দেয়া হচ্ছে সারা দেশে৷ দেখুন ছবিঘরে....
ছবি: picture alliance/dpa
বার্লিন
রাজধানী বার্লিনে লকডাউনবিরোধী প্রতিবাদ-বিক্ষোভ প্রায় নিয়মিত ঘটনা৷ তবে তাতে করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সরকার নমনীয় হয়নি৷ সুফলও আসছে তার৷ বার্লিনে এ পর্যন্ত এক লাখ ৭৬ হাজারের চেয়েও বেশি মানুষ সংক্রমিত হলেও বেশিরভাগই এখন পুরোপুরি সুস্থ৷ মারা গেছেন প্রায় সাড়ে তিন হাজার মানুষ৷ ওপরে শহরের এক স্পোর্টস সেন্টারে টিকা দিতে আগ্রহীদের লম্বা লাইন৷
ছবি: AXEL SCHMIDT/REUTERS
কোলন
জার্মানির অন্যতম জনবহুল রাজ্য নর্থ রাইন ওয়েস্টফালিয়া রাজ্যের শহর কোলনের টিকা দেয়া চলছে জোর কদমে৷ ওপরে তারই একটি চিত্র৷
ছবি: Oliver Berg/dpa/picture alliance
হামবুর্গ
হামবুর্গে করোনায় সংক্রমিতের সংখ্যা ৭৫ হাজারের বেশি, মৃতের সংখ্যা ১৫০০ ছাড়িয়েছে৷ তবে গত এক সপ্তাহে সংক্রমিত হয়েছেন মাত্র ৩৫ জন৷ সংক্রমণ কমানোয় বড় ভূমিকা রেখেছে জনগণের স্বাস্থবিধি মেনে চলা এবং টিকা নেয়া৷
ছবি: xim.gs/picture alliance
বন
২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে জার্মানির বন শহরে করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন ১৪ হাজারেরও বেশি মানুষ৷ মারা গেছেন ২৩৯ জন৷ তবে সংক্রমণের হার ধীরে ধীরে কমছে৷ ওপরের ছবিতে বন শহরের একটি টিকাদান কেন্দ্র৷
ছবি: picture alliance/dpa
মিউনিখ
মিউনিখেও চলছে টিকা দেয়া৷ করোনা সংক্রমণও কমছে ধীরে ধীরে৷
ছবি: Matthias Schrader/AP Photo/picture alliance
ড্যুসেলডর্ফ
ড্যুসেলডর্ফে এ পর্যন্ত ২৪ হাজারেরও বেশি মানুষ সংক্রমিত হয়েছেন, মারা গেছেন ৪৫০ জনের বেশি মানুষ৷ ছবিতে শহরের একটি করোনা টিকাদানকেন্ত্র৷
ছবি: Ying Tang/NurPhoto/picture alliance
স্টুটগার্ট
স্টুটগার্ট শহরের একটি করোনা টিকা দেয়ার কেন্দ্র৷
ছবি: picture alliance/dpa
ডর্টমুন্ড
গত ২১ মে ডর্টমুন্ড শহরে ২৪ ঘণ্টায় ৫৪ জনের দেহে করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ে৷ টিকা দেয়া বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সংক্রমণের হার আরো কমবে বলে আশা করা হচ্ছে৷
ছবি: RHR-FOTO/picture alliance
এসেন
জার্মানির এসেন শহরে করোনা এ পর্যন্ত কেড়ে নিয়েছে ৫৭৩ জনের প্রাণ৷ করোনা হানা দিচ্ছে, পাশাপাশি টিকা নেয়া মানুষের সংখ্যাও বাড়ছে সেখানে৷
ছবি: picture alliance/dpa
ড্রেসডেন
ড্রেসডেনে টিকা দেয়ার দৃশ্য৷ সেখানেও করোনার প্রকোপ ধীরে ধীরে কমছে৷