গত বছর রেকর্ড সংখ্যক ৮০ হাজার শরণার্থীকে তাদের নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠিয়েছিল জার্মানি৷ কেননা তাদের আবেদন প্রত্যাখ্যাত হয়েছিল৷ এ বছর সে সংখ্যাটা আরও বাড়বে বলে জানিয়েছেন জার্মানির এক শীর্ষ কর্মকর্তা৷
বিজ্ঞাপন
ম্যার্কেলের চিফ অফ স্টাফ পেটার আল্টমায়ার স্থানীয় পত্রিকা বিল্ড আম সনটাগ-কে জানান, ‘‘যেহেতু চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলে আসন্ন নির্বাচনে জয়ী হতে চান, তাই রক্ষণশীল ভোটারদের সমর্থন পেতে এর বিকল্প নেই৷'' চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে৷ আল্টমায়ার জানান, ‘‘২০১৬ সালে ৭ লাখ শরণার্থী জার্মানিতে থাকার আবেদন করেছিলেন, এদের মধ্যে প্রায় অর্ধেকের আবেদন প্রত্যাখ্যাত হয়েছে এবং এই বিপুল পরিমাণ শরণার্থীকে দেশে ফেরত পাঠানো হবে৷''
২০১৫ সালে বিপুল পরিমাণ শরণার্থী জার্মানিতে প্রবেশ করে৷ কেননা ম্যার্কেলের নীতি ছিল ‘ওপেন ডোর' নীতি, অর্থাৎ সীমান্ত খুলে দাও৷ ৷ এর ফলে রক্ষণশীলদের সমালোচনা মুখে পড়েছেন চ্যান্সেলর৷ তাঁর দল ক্রিস্টিয়ান ডেমোক্র্যাট পার্ট সিডিইউ এ সব শরণার্থীদের দেশে পাঠানোর পক্ষে৷ যেসব শরণার্থী অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত এবং যাদের আবেদন প্রত্যাখ্যাত হয়েছে, তাদের অবিলম্বে দেশে ফেরত পাঠানো উচিত৷ এমনটাই মনে করছে সিডিইউ৷ আল্টমায়ার বলেন, নির্বাচনে বিপুল জনসমর্থন পেতে হলে প্রত্যাখ্যাত শরণার্থীদের অবিলম্বে দেশে ফেরত পাঠাতে হবে৷
গত ১৮ মাসে ১০ লাখেরও বেশি শরণার্থী গ্রহণ করেছে জার্মানি৷ এদের বেশিরভাগই সিরিয়া, ইরাক এবং আফগানিস্তানের যুদ্ধ বিধ্বস্ত এলাকা থেকে এসেছেন৷ যাদের আবেদন প্রত্যাখ্যাত হয়েছে, খুব শিগগিরই তাদের ফেরত পাঠানো হবে বলে জানালেন আল্টমায়ার৷ তিনি বলেন, তা না করলে আইনের শাসনের ভিত্তিতে পরিচালিত আমাদের রাষ্ট্রের বিশ্বাসযোগ্যতা ক্ষুণ্ণ হবে৷
এপিবি/ডিজি (এপি, এএফপি, ডিপিএ, রয়টার্স)
ইউরোপে শরণার্থী সংকট কীভাবে শুরু হয়েছিল?
মধ্যপ্রাচ্য এবং আফ্রিকায় সহিংসতা বৃদ্ধি থেকে ইউরোপের অসংলগ্ন শরণার্থী নীতি অবধি ইউরোপে শরণার্থী সংকটে কারণগুলো তুলে ধরা হয়েছে এই ছবিঘরে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
যুদ্ধ এবং দারিদ্র্যতা থেকে পালানো
২০১৪ সালের শেষের দিকে সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ চতুর্থ বছরে পা দেয়ার প্রাক্কালে এবং দেশটির উত্তরাঞ্চলে তথাকথিত ‘ইসলামিট স্টেট’-এর বিস্তার ঘটার পর সিরীয়দের দেশত্যাগের হার আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যায়৷ একইসময়ে সহিংসতা এবং দারিদ্র্যতা থেকে বাঁচতে ইরাক, আফগানিস্তান, ইরিত্রিয়া, সোমালিয়া, নিগার এবং কসভোর অনেক মানুষ ইউরোপমুখী হন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সীমান্তের ওপারে আশ্রয় খোঁজা
সিরীয় শরণার্থীদের অধিকাংশই ২০১১ সাল থেকে সে দেশের সীমান্ত সংলগ্ন তুরস্ক, লেবানন এবং জর্ডানে আশ্রয় নিতে শুরু করেন৷ কিন্তু ২০১৫ সাল নাগাদ সেসব দেশের শরণার্থী শিবিরগুলো পূর্ণ হয়ে যায় এবং সেখানকার বাসিন্দারা সন্তানদের শিক্ষা দিতে না পারায় এবং কাজ না পাওয়ায় এক পর্যায়ে আরো দূরে কোথাও যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
পায়ে হেঁটে লম্বা পথ পাড়ি
২০১৫ সালে ১৫ লাখের মতো শরণার্থী ‘বলকান রুট’ ধরে পায়ে হেঁটে গ্রিস থেকে পশ্চিম ইউরোপে চলে আসেন৷ সেসময় ইউরোপের শেঙেন চুক্তি, যার কারণে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত অধিকাংশ দেশের মধ্যে ভিসা ছাড়াই চলাচাল সম্ভব, নিয়ে প্রশ্ন ওঠে৷ কেননা শরণার্থীরা গ্রিস থেকে ধীরে ধীরে ইউরোপের অপেক্ষাকৃত ধনী রাষ্ট্রগুলোর দিকে আগাতে থাকেন৷
ছবি: Getty Images/M. Cardy
সমুদ্র পাড়ির উন্মত্ত চেষ্টা
সেসময় হাজার হাজার শরণার্থী ‘ওভারক্রাউডেড’ নৌকায় করে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে শুরু করেন৷ লিবিয়া থেকে ইটালি অভিমুখী বিপজ্জনক সেই যাত্রায় অংশ নিতে গিয়ে ২০১৫ সালের এপ্রিল মাসে সাগরে ডুবে যায় অন্তত আটশ’ মানুষ৷ আর বছর শেষে ভূমধ্যসাগরে ডুবে মরা শরণার্থীর সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় চার হাজার৷
ছবি: Reuters/D. Zammit Lupi
সীমান্তে চাপ
ইউরোপের বহির্সীমান্তে শরণার্থীর সংখ্যা বাড়তে থাকায় কয়েকটি রাষ্ট্র চাপে পড়ে যায়৷ হাঙ্গেরি, স্লোভেনিয়া, ম্যাসিডোনিয়া এবং অস্ট্রিয়া এক পর্যায়ে সীমান্তে বেড়া দিয়ে দেয়৷ শুধু তাই নয়, সেসময় শরণার্থী আইন কঠোর করা হয় এবং শেঙেনভুক্ত কয়েকটি দেশ সাময়িকভাবে সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ করা শুরু করে৷
ছবি: picture-alliance/epa/B. Mohai
বন্ধ দরজা খুলে দেয়া
জার্মান চ্যান্সেল আঙ্গেলা ম্যার্কেলের সমালোচকরা মনে করেন, তাঁর ‘ওপেন-ডোর’ শরণার্থী নীতির কারণে বিপজ্জনক পথ পেরিয়ে অনেক শরণার্থীই ইউরোপে আসতে উৎসাহ পেয়েছেন৷ এক পর্যায়ে অবশ্য অস্ট্রিয়ার সঙ্গে সীমান্ত পথ নিয়ন্ত্রণ শুরু করে জার্মানিও৷
ছবি: Reuters/F. Bensch
তুরস্কের সঙ্গে চুক্তি
২০১৬ সালের শুরুতে ইইউ এবং তুরস্কের মধ্যে একটি চুক্তি হয়৷ এই চুক্তির আওতায় গ্রিসে আসা শরণার্থীদের আবারো তুরস্কে ফিরিয়ে নেয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়৷ তবে মানবাধিকার সংগঠনগুলো এই চুক্তির বিরোধিতা করে৷ নভেম্বর মাসে অবশ্য তুরস্কের ইইউ-তে প্রবেশের সম্ভাব্যতা নিয়ে আলোচনা স্থগিত ঘোষণার পর, সেই চুক্তি আবারো নড়বড়ে হয়ে গেছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Altan
পরিস্থিতি বদলের কোনো লক্ষণ নেই
ইউরোপজুড়ে অভিবাসীবিরোধী মানসিকতা বাড়তে থাকলেও সরকারগুলো সম্মিলিতভাবে শরণার্থী সংকট মোকাবিলার কোনো সঠিক পন্থা এখনো খুঁজে পাননি৷ কোটা করে শরণার্থীদের ইইউ-ভুক্ত বিভিন্ন রাষ্ট্রে ছড়িয়ে দেয়ার পরিকল্পনা কার্যত ব্যর্থ হয়েছে৷ মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে চলমান সহিংসতার ইতি ঘটার কোনো লক্ষণও নেই৷ ওদিকে, সমুদ্র পাড়ি দিতে গিয়ে শরণার্থীদের মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়তে শুরু করেছে৷