ইউক্রেন জানিয়েছে, তারা রাশিয়ার আক্রমণ ঠেকিয়ে দিয়েছে। রাশিয়ার দাবি, তারা শহরটি দখল করেছে।
বিজ্ঞাপন
পূর্ব দনবাসের শহর আভদিভকার। গত কয়েকদিন ধরে এই শহরটির দখল নিয়ে ইউক্রেনের সেনার সঙ্গে রাশিয়ার সেনার তীব্র সংঘর্ষ চলছিল। ইউক্রেনের দাবি, রাশিয়ার সেনাকে তারা ওই অঞ্চলে ঠেকিয়ে দিতে পেরেছে। শহরটি এখনো তাদের দখলেই আছে। রাশিয়ার সেনা পিছু হটেছে।
কিন্তু রাশিয়ার দাবি ঠিক তার উল্টো। তারা জানিয়েছে, ওই ফ্রন্টে তাদের সেনা কিছুটা হলেও এগোতে পেরেছে। শহরের একাংশ দখল এখন তাদের হাতে। অর্থাৎ,রাশিয়ার দাবি ইউক্রেনের সম্পূর্ণ বিপরীত।
ইউক্রেনে আতঙ্কের নগরীতে সুরের মূর্ছনা
যুদ্ধ চলছে একদিকে, অন্যদিকে রাতের আঁধারে মোমবাতি জ্বালিয়েও ধ্রুপদী সংগীতের সুরে বাঁচার আনন্দ নিচ্ছেন অসংখ্য মানুষ৷ লভিভে প্রায় প্রতিদিনের এমন এক আয়োজনের কথা জানুন ছবিঘরে...
ছবি: Alina Smutko/REUTERS
আকাশে যুদ্ধবিমান, নীচে কনসার্ট
ইউক্রেনের পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর লভিভের আকাশে যখন যুদ্ধবিমান আতঙ্ক ছড়ায়, তখনো অর্গান হলে থাকে সুরপাগল মানুষদের ভিড়৷ মগ্ন হয়ে লুহানস্ক ফিলহার্মোনিক অর্কেস্ট্রার পারফর্ম্যান্স উপভোগ করেন তারা৷ অনেক সময় মোমের আলোয় চলে কনসার্ট৷ শ্রোতারা মোমের আলোয় এতটাই অভ্যস্ত যে মাঝে মাঝে যুদ্ধবিমান ফিরে গেলে, কিংবা বিদ্যুৎ ফিরে এলেও আলো জ্বালাতে চান না তারা৷
ছবি: Alina Smutko/REUTERS
কম আয়, অনেক বেশি আনন্দ
যুদ্ধপরিস্থিতিতে কনসার্ট আয়োজনে প্রতিকূলতা অনেক৷ মৃত্যুঝুঁকি তো থাকেই, কনসার্ট আয়োজনের জন্য পর্যাপ্ত টাকাও জোটে না৷ অথচ ঝুঁকি নিয়ে সংগীত উপভোগ করতে আসা অনেকেই চান দীর্ঘক্ষণ চলুক কনসার্ট, আবার কবে আসা হবে, আদৌ সে সুযোগ আর হবে কিনা তার তো ঠিক নেই!
ছবি: Alina Smutko/REUTERS
আনন্দটাই বড় বিষয়
লুহানস্ক ফিলহার্মোনিক অর্কেস্ট্রার কো-ডিরেক্টর টারাস ডেমকো মনে করেন যুদ্ধের সময় মানুষকে সামান্য আনন্দে রাখাও অনেক বড় ব্যাপার৷ রয়টার্সকে তিনি বলেন, ‘‘রাশিয়া একটানা সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে যাচ্ছে৷ এ অবস্থায় মানুষকে তো আমাদের সহায়তা করতে হবে৷ প্রতিদিন কয়েক মিনিটের জন্যও যদি তাদের মনে একটু শান্তি দেয়া যায় তা-ও তো অনেক!’’
ছবি: Alina Smutko/REUTERS
যুদ্ধের পর যুদ্ধ
১৯১৫ সাল পর্যন্ত লুহানস্কে পারফর্ম করেছে লুহানস্ক ফিলহার্মোনিক৷ রুশ-সমর্থিত ‘বিচ্ছিন্নতাবাদীরা’ লুহানস্ক দখল করে নেয়ার পর ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের ছোট্ট শহর সিভিয়েদনেৎস্কে চলে যায় তারা৷ গত বছর রুশ হামলায় সিভিয়েরদনেৎস্কও বিদ্ধস্ত হয়৷ তখন বাধ্য হয়েই লভিভে চলে আসে লুহান্স্ক ফিলহার্মোনিক৷
ছবি: Alina Smutko/REUTERS
‘সংগীত আত্মবিশ্বাস জোগায়’
লভিভে কনসার্ট করতে পেরে লুহানস্ক ফিলহার্মোনিক অর্কেস্ট্রার পরিচালক ইগর শাপোভালভ খুব খুশি৷তিনি মনে করেন কনসার্ট আয়োজন করে যুদ্ধের কারণে বিপর্যস্ত অনেক মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারছেন, কারণ, ‘‘প্রাচীন কাল থেকে সংগীত মানুষকে নানাভাবে শক্তি জুগিয়ে আসছে৷ সংগীত অনেক মানুষকে আত্মবিশ্বাস জোগায়, অনেকের কাছে আবার সংগীত মানসিক দুরবস্থা কাটিয়ে ওঠার উপায়৷’’
ছবি: Alina Smutko/REUTERS
হামলা হলে কনসার্ট বন্ধ
লভিভে রাশিয়ার বড় ধরনের হামলা খুব কম হয়েছে৷ তাই এখন কনসার্ট হচ্ছে প্রায় নিয়মিত৷ জুলাই মাসে রাশিয়ার এক হামলায় ১০ জন মারা যায়৷ ওই সময় বাধ্য হয়ে কনসার্ট বন্ধ রেখেছিল লুহানস্ক ফিলহার্মোনিক৷
ছবি: Alina Smutko/REUTERS
6 ছবি1 | 6
বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, রাশিয়ার যে ওই অঞ্চলে প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তার প্রমাণ পাওয়া গেছে। যুদ্ধাস্ত্র ছেড়ে রাশিয়ার সেনা পালিয়েছে, এমন উদাহরণও আছে। তবে শহরটি কার দখলে, তা এখনো স্পষ্ট নয়।
চেক রিপাবলিক এবং ডেনমার্ক একত্রে সাহায্য করছে ইউক্রেনকে। চেক বিপুল পরিমাণ অস্ত্র সরবরাহ করছে ইউক্রেনকে। তারা জানিয়েছে, ইউক্রেনকে ৫০টি যুদ্ধের গাড়ি, আড়াই হাজার পিস্তল, সাত হাজার রাইফেল, ৫০০টি লাইট মেশিনগান এবং ৫০০টি স্নাইপার দেওয়া হচ্ছে। ডেনমার্কও এই অস্ত্র কেনার জন্য অর্থ দিয়েছে।
ইউক্রেনকে এই সাহায্য করার কথা আগেই ঘোষণা করেছিল ডেনমার্ক। তবে এর জন্য ঠিক কত অর্থ খরচ হয়েছে, তা জানানো হয়নি। ভবিষ্যতে ইউক্রেনকে তারা অ্যান্টি ট্যাঙ্ক অস্ত্রও দিতে পারে বলে জানানো হয়েছে।
অলিম্পিক কমিটির সিদ্ধান্ত
আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি জানিয়েছে, তারা রাশিয়ার অলিম্পিক কমিটিকে ব্যান বা প্রত্যাখ্যান করছে। অনির্দিষ্টকালের জন্য এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
অলিম্পিক কমিটির বক্তব্য, রাশিয়া ইউক্রেনের চারটি জায়গা দখল করেছে এবং সেই চারটি জায়গাকে সমর্থনের জন্যই তারা এই পদক্ষেপ নিয়েছে। রাশিয়া লুহানস্ক, ঝাপরিজ্ঝিয়া, দনেৎস্ক এবং খেরসনের অলিম্পিক কমিটিকে নিজেদের হাতে আনার চেষ্টা করেছিল। সে কারণেই অলিম্পিক কমিটি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
তবে একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক আলিম্পিক কমিটি জানিয়েছে, এর ফলে রাশিয়ার অ্যাথলিটদের আন্তর্জাতিক আয়োজনে অংশ নিতে অসুবিধা হবে না। তারা নিরপেক্ষ খেলোয়াড় হিসেবে যোগ দিতে পারবেন। কিন্তু দেশের পতাকা নিয়ে মাঠে নামতে পারবেন না তারা। ইউক্রেন অলিম্পিক কমিটির এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে।