1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আমনের বাম্পার ফলনে কৃষকেরা খুশি

১২ ডিসেম্বর ২০২২

সিলেটে এ বছরের জুন মাসে শতাব্দীর ভয়াবহ বন্যায় ফসলের বড় একটা অংশ গোলাতেই নষ্ট হওয়ায় মাথায় হাত পড়েছিল হাওরের কৃষকের৷এ মৌসুমে সুনামগঞ্জে আমনের বাম্পার ফলনে সেই ক্ষত কাটিয়ে উঠার স্বপ্ন দেখছেন চাষীরা৷

সিলেটে এ বছরের জুন মাসে শতাব্দীর ভয়াবহ বন্যায় ফসলের বড় একটা অংশ গোলাতেই নষ্ট হওয়ায় মাথায় হাত পড়েছিল হাওরের কৃষকের৷এ মৌসুমে সুনামগঞ্জে আমনের বাম্পার ফলনে সেই ক্ষত কাটিয়ে উঠার স্বপ্ন দেখছেন চাষীরা৷
চলতি বছর প্রায় ৮২ হাজার ২১৫ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ হয়েছেছবি: DW/M. Mamun

সিলেট জেলার ৯০ ভাগ ঘরবাড়ি জুনের ভয়াবহ বন্যায় নিমজ্জিত হয়৷পাহাড়ি ঢলের সঙ্গে যুদ্ধ করে কোনোরকমে গোলায় তুলেছিলেন বোরো ফসল; কিন্তু বন্যায় সেই ফসলের বড় অংশই গোলাতেই নষ্ট হয়ে যায়৷ বন্যার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে ধানবীজ আর সারের সহায়তা নিয়ে কৃষকের পাশে দাঁড়িয়েছিল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর৷ ফলে এবার হাওরে আগের বছরের তুলনায় বেশি জমিতে আমনের চাষ হয়েছে৷ 

সংস্থাটি জানাচ্ছে, চলতি মৌসুমে উফশি, হাইব্রিড ও স্থানীয় মিলিয়ে প্রায় ৮২ হাজার ২১৫ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ হয়েছে৷ গত মৌসুমের তুলনায় এবার এক হাজার ১০২ হেক্টর জমিতে বেশি আমন ধান আবাদ হয়েছে৷

সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিমল চন্দ্র সোম ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সুনামগঞ্জ প্রতিনিধিকে বলেন, ‘‘সুনামগঞ্জ জেলা মূলত হাওর অধ্যুষিত৷ সব উপজেলায় আমন আবাদ হয় না এবার বেশি হয়েছে৷ ফলনও বাম্পার হয়েছে৷ প্রায় ৬৫ ভাগ জমির ধান কাটা হয়ে গেছে৷ চলতি সপ্তাহে ৮০ ভাগ জমির ধান গোলায় উঠবে৷আমন ও বোরো মিলিয়ে জেলায় প্রায় চার লাখ চাষি পরিবার রয়েছে৷’’

সোমবার সদর উপজেলার মোল্লাপাড়া, কোরবাননগর ও মোহনপুর ইউনিয়ন এবং তাহিরপুর উপজেলার সীমান্ত এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, হলুদ রঙে সেজেছে আমনের ক্ষেত৷ মাঠে মাঠে আমন ধান কাটার উৎসব চলছে৷

কেউ মাঠে ধান কাটছেন৷ পাশেই খলা করে সেই ধান মেশিন দিয়ে মাড়ানো হচ্ছে৷ পরে বস্তায় করে তা বাজারে বা বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছেন কৃষকেরা৷ ভাল ফসল পাওয়ায় খুশি বলে জানান কৃষকেরা৷ পাশাপাশি শ্রমিকরাও ধান কেটে খোরাকি সংগ্রহ করতে পেরে আনন্দিত৷

কৃষকেরা জানান, গত জুন মাসে সিলেট বিভাগে শতাব্দীর ভয়াবহ বন্যায় ভাড়ারের ধান, বীজধান ও খোরাকির ধান পানির মধ্যে থেকে নষ্ট হয়ে যায়৷ তখন মাঠঘাট ও সড়ক ডুবে থাকায় কৃষকেরা ভেজা ধান শুকাতে না পারায় কালচে হয়ে নষ্ট হয়ে গিয়েছিল সেই ধান৷ যার ফলে কৃষকের ধানের ভাড়ার এখন প্রায় শূন্য৷

 

কৃষকদের দুর্দশার কথা চিন্তা করে সরকার ১৬ হাজার আমন চাষীকে বীজ ও সার দেয়৷১০ হাজার ১২০ জন চাষীকে সবজি বীজ দিয়েছে৷ বিশেষ প্রণোদনা এবং বন্যার পলিতে জমি উর্বর হওয়ায় আমন চাষের অনুকূল পরিবেশ তৈরি হয়৷ সেই আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে৷ হেক্টরপ্রতি এবার চার টন ধান (চাল ২.৬৭ মেট্রিক টন) উৎপাদন হয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ৷ 

কৃষকরা জানান, এখন আমন ধান দিয়ে আবার শূন্য ভাড়ার পূর্ণ করছেন তারা৷ তবে বিআর-২৮ ও বিআর-২৯ ধানে চিটার কারণে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কথা জানিয়েছেন৷

সদর উপজেলার বুড়িস্থল গ্রামের আলম হোসেন মুন্না বলেন, ‘‘বন্যায় এবার আমাদের অনেক ক্ষতি করেছে৷ এখন আমন ধানে বন্যার ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছি৷ খোরাকির সঙ্গে কিছু বিক্রিও করতে পারব৷ প্রতি বছর এভাবে আমন মৌসুম  পেলে কৃষকরা লাভবান হবেন৷’’

সদর উপজেলার মোল্লাপাড়া ইউনিয়নের বাদে সাদেকপুর গ্রামের কৃষক উকিল মিয়া বলেন,  “এ বছর বিআর- ২৮ আর বিআর-২৯ ধান ভালো হয়নি৷ তবে বিআর-৩২, বিআর-২২, বিআর-২০ ধান ভালো হয়েছে৷ বন্যার পর পর আমরা পলি পেয়ে আমন চাষ করেছিলাম৷ ভালো ফলন পেয়েছি৷” মোহনপুর ইউনিয়নের বর্মাউত্তর গ্রামের নিজাম উদ্দিন বলেন, “এবার আমাদের এলাকায় আমনের ফলন ভালো হয়েছে৷ বিঘাপ্রতি ১৫ থেকে ১৬ মণ ধান হয়েছে৷”

তবে ট্রাক্টরে হাল দেওয়া, সেচ, মেশিনে ধান কাটা ও মাড়াইয়ে ডিজেল ব্যবহার করায় খরচ বেশি হয়েছে বলে জানান এই কৃষক৷ তিনি বলেন,  “ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে ব্যয় অন্য বছরের চেয়ে বেশি হয়েছে৷ তবে বন্যামুক্ত বাম্পার আমন ফলন পেয়ে কৃষকরা অনেক খুশি৷”

তাহিরপুর উপজেলার উত্তর বড়দল ইউনিয়নের কড়ইগড়া গ্রামের মান্দি নারী শ্রমিক সরোজিনি রিছিল বলেন, “আমরা শ্রমিক মানুষ৷ এখন আমন ধান কাটছি৷ প্রতিদিন ৫০০ টাকা পরিমাণের ধান খোরাকি পাচ্ছি৷ ১৫ দিন ধান কাটতে পারলে অন্তত তিন মাসের খোরাকি তুলতে পারবো৷”

সুনামগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, “এবারের বন্যায় আমাদের কৃষকসহ সবশ্রেণির মানুষের বহুমুখী ক্ষতি হয়েছে৷ কিন্তু এখন বাড়ি এসে দেখি, গ্রামের পর গ্রাম জুড়ে পাকা আমন ধানের বিস্তার৷ ধান কাটা, মাড়াই ও শুকানোর কাজ করছেন কৃষকরা৷ আমনের বাম্পার ফলনে বাজারে চালের দাম কমছে৷ শাকসবজিতেও মাঠ ভরে আছে৷

 “আশা করছি, আগামী বছর আমাদের ভালো যাবে৷ তাছাড়া আসছে বোরো মৌসুমে অনাবাদী সব জমি যাতে চাষাবাদের আওতায় আনা হয় সেজন্য সরকার নির্দেশনা দিয়েছে৷” বলেন পরিকল্পনামন্ত্রী৷

 এনএস/কেএম (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)  

ভাসমান সবজি চাষ, লবণ সহিষ্ণু ধানের ব্যবহার

01:26

This browser does not support the video element.

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ