আমফানের পর কেটে গিয়েছে সাতদিন। এখনও কলকাতার এক লাখ লোকের কাছে বিদ্যুৎ পৌঁছয়নি। যারা কলকাতায় বিদ্যুৎ সংযোগের দায়িত্বে সেই সিইএসসি-র দাবি ৯৭ শতাংশ এলাকায় বিদ্যুৎ পৌঁছে গিয়েছে। তিন শতাংশ মাত্র বাকি। দ্রুত সেখানেও পৌঁছে যাবে। তারাই জানিয়েছে, এক লাখ লোকের কাছে এখনও বিদ্যুৎ পৌঁছনো বাকি।
আর যাঁরা বিদ্যুৎ পাচ্ছেন না, তাঁরা রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। পথ অবরোধ করছেন। বিদ্যুৎ নেই মানে জলও নেই। এমনকী বুধবার মেটিয়াবুরুজে দুই বস্তিতে সংঘর্ষও হয়েছে। এক বস্তিতে বিদ্যুৎ এসে যায়। পাশের বস্তিতে আসেনি। এই নিয়ে ঝামেলার সূত্রপাত। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়।
কলকাতার যখন এই অবস্থা, তখন জেলাগুলির অবস্থা আরও খারাপ। সেখানে বিস্তীর্ণ এলাকায় বিদ্যুৎ নেই। চলছে বিক্ষোভ। বুধবারও শাসন, দেগঙ্গায় রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন লোকেরা। পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মীরা গিয়ে দ্রুত বিদ্যুৎ সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পর অবরোধ ওঠে। এছাড়া বারুইপুরেও দফায় দফায় বিক্ষোভ দেখান স্থানীয় মানুষ।
এই সব বিক্ষোভে রাজনৈতিক নেতাদেরও দেখা যাচ্ছে। রাজ্যের বিধানসভায় বিরোধী নেতা আব্দুল মান্নান মঙ্গলবার হুগলির শেওড়াফুলিতে জি টি রোড অবরোধে ছিলেন। জেলাগুলিতে স্থানীয় নেতাদের বিক্ষোভে দেখা যাচ্ছে।
আমফানের ভয়াবহতা উঠে এসেছে তারকাদের টুইটে। অনেকেই সমবেদনা জানাচ্ছেন দুর্গতদের। দিচ্ছেন পাশে থাকার আশ্বাস।
ছবি: picture-alliance/dpaতিনি পশ্চিমবঙ্গের লোক নন। কিন্তু কলকাতাকে প্রাণ দিয়ে ভালোবাসেন। কলকাতা নাইট রাইডার্সের মালিক এবং রাজ্যের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসডর শাহরুখ জানিয়েছেন, আমফান বিধ্বস্ত পশ্চিমবঙ্গের পাশে দাঁড়াতে তৈরি তিনি। ত্রাণের জন্য নাইট রাইডার্সের তরফ থেকে রাজ্য সরকারকে অর্থ সাহায্য করা হবে।
ছবি: picture-alliance/AP Photo/B. Dasভারতীয় ক্রিকেট টিমের অধিনায়ক লিখেছেন, 'আমফানে বিধ্বস্ত পশ্চিমবঙ্গ এবং ওড়িশার সকলের জন্য প্রার্থনা করছি। আশা করি খুব দ্রুত সব কিছু স্বাভাবিক হয়ে যাবে।'
ছবি: AFP/D. Sarkarপ্রাক্তন ক্রিকেটার এবং ভারতীয় দলের কোচ রবি শাস্ত্রী বলেছেন, 'এ এক ভয়াবহ পরিস্থিতি। সকলে সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন, এটাই প্রার্থনা।'
ছবি: IANSবলিউডের পরিচালক করণ জোহরও পশ্চিমবঙ্গের পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দিয়েছেন। ঝড়ের তাণ্ডব যখন পুরো দমে চলছে, তখন করণ লিখেছেন, 'পশ্চিমবঙ্গের মানুষের জন্য প্রার্থনা করছি'।
ছবি: picture alliance/ZUMA Pressবাংলা চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায় ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন। তাঁর অভিযোগ, জাতীয় স্তরের গণমাধ্যম পশ্চিমবঙ্গের এই পরিস্থিতি নিয়ে সম্পূর্ণ উদাসীন। সৃজিতের শ্লেষ, 'এ দেশের জাতীয় সংগীত কিন্তু বাংলা ভাষায়!'
ছবি: privatপশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশ দুই বাংলাতেই সমান জনপ্রিয় অভিনেত্রী জয়া আহসান। এখন তিনি বাংলাদেশে। জয়ার প্রতিক্রিয়া, 'পশ্চিমবঙ্গ তো মনে হচ্ছে কোনও ভয়ানক দৈত্যের পায়ের তলায় মিশে গিয়েছে!'
ছবি: privatঅভিনতা এবং ঘাটালের সাংসদ দেব লিখেছেন, 'মৃত্যু এবং ধ্বংসলীলা খুব কাছ থেকে দেখলাম। এমন কখনও দেখতে হবে ভাবিনি। যাঁদের পরিবারে মৃত্যু হয়েছে, তাঁদের সমবেদনা জানাচ্ছি্।' দেবকে নিয়ে অবশ্য বিতর্ক শুরু হয়েছে। তিনি ঘাটালের সাংসদ। এত বড় ঘটনা ঘটে যাওয়ার পরেও কেন তিনি নিজের এলাকায় যাননি, তা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন।
ছবি: Creative Commonsঝড়ের দিন সকাল থেকেই বার বার ফেসবুকে আপডেট দিচ্ছিলেন অভিনেতা রুদ্রনীল। ঈশ্বরের প্রতি তাঁর অনুযোগ, 'অসুখ দিলেন। জীবন-জীবিকা-প্রাণ সব কেড়ে নিলেন। শেষে আজ নিরপরাধ গরিবের আশ্রয়টুকুও! এ কেমন পরীক্ষা?'
ছবি: privat তবে করোনা ও আমফানের পর কলকাতা ক্রমশ স্বাভাবিক হচ্ছে। বুধবার থেকে অটো চলতে শুরু করেছে। অবশ্য অটোতে দুই জনের বেশি যাত্রী বসতে পারবেন না। শুরু হয়েছে দূরপাল্লার বাস চলাচল। যাত্রীদের মাস্ক পরতে হচ্ছে। হাতে স্যানিটাইজার দিয়ে বাসে উঠতে হচ্ছে।
বুধবারই মহারাষ্ট্র থেকে ৪১টি ট্রেনে করে পরিযায়ী শ্রমিকদের বাংলায় ফেরার কথা। এই ট্রেন নিয়েও প্রচুর জলঘোলা হয়েছে। তৃণমূলের অভিযোগ, রাজ্য সরকারগুলির সঙ্গে আগে থেকে কথা না বলে রেলমন্ত্রক ট্রেন দিয়ে দিয়েছে। রাজ্য চাইছিলো, দিন কয়েক পরে এই ট্রেন আসুক। এই নিয়ে মহারাষ্ট্র সরকারের সঙ্গেও কথা হয়। কিন্তু রেলমন্ত্রক তারপরে ট্রেন পাঠিয়ে দেওয়ায় সেই সময়টা পাওয়া যায়নি।
জিএইচ/এসজি(এএনআই, আবাপ)