জামায়াত শিবির নিষিদ্ধের দাবিতে শাহবাগ গণজাগরণ মঞ্চ থেকে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে৷ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই নিয়ে চলছে বিস্তর আলোচনা৷ এদিকে আমরণ অনশন শুরু করেছে ‘শহীদ রুমী স্কোয়াড’৷
বিজ্ঞাপন
যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে শাহবাগ আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল একটি ফেসবুক ঘোষণার মাধ্যমে৷ ৫ ফেব্রুয়ারি শুরু হওয়া এই আন্দোলন সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আরো সংগঠিত হয়েছে৷ শাহবাগে তৈরি হয়েছে গণজাগরণ মঞ্চ, যেখান থেকে যুদ্ধাপরাধের দায়ে জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধে সরকারকে আল্টিমেটাম দেওয়া হয়৷
২৬ মার্চ আল্টিমেটাম শেষ হয়েছে৷ কিন্তু জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধে দৃশ্যত কোনো নতুন উদ্যোগ এই সময়ের মধ্যে নেয়নি বর্তমান সরকার৷ স্বভাবতই ক্ষুব্ধ আন্দোলনকারীরা, যাদের মধ্যে অধিকাংশই বয়সে তরুণ৷ সামাজিক যোগাযোগ সাইট ফেসবুক এবং বাংলা ব্লগে এই বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন অনেকে৷
জেগে আছে প্রজন্ম চত্বর
মূল দাবি একটাই, ‘যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি চাই’৷ এই দাবি নিয়ে পাঁচই ফেব্রুয়ারি থেকে শাহবাগ চত্বরে অবস্থান করছে তরুণ প্রজন্ম৷ তাদের সমর্থন জানাচ্ছে সবশ্রেণির মানুষ৷ ইতোমধ্যে পেরিয়ে গেছে বেশ কয়েকদিন৷ কিন্তু এক চুল নড়েনি তারা৷
ছবি: Reuters
লাগাতার আন্দোলন
শাহবাগে অবস্থান নেওয়া তরুণ প্রজন্ম গত পাঁচ ফেব্রুয়ারি ধরে লাগাতার তাদের আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে৷ যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে অনড় তারা৷ ডয়চে ভেলের ওয়েবসাইটে নিয়মিত সেখানকার হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করা হচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
জাতীয় দলের আগমন
রবিবার প্রজন্ম চত্বরে এক টুকরো আনন্দের উপলক্ষ্য হয়ে এসেছেন জাতীয় ক্রিকেট দলের খেলোয়াড়রা৷ আগে থেকেই শোনা যাচ্ছিল, শাহবাগে অবস্থান নেওয়া ব্লগার, তরুণ সমাজের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করতে আসছেন তাঁরা৷ রবিবার সেই খবরের সত্যতা প্রকাশ পেলো৷
ছবি: REUTERS
টুইটার লড়াই
হ্যাশট্যাগ #shahbag, কেউ কেউ ব্যবহার করছেন #shahbagh - আসলে শাহবাগের ইংরেজি বানান নিয়ে বিভ্রান্তি রয়েছে৷ উইকিপিডিয়া শেষের এইচটি বাদ দিলেও ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টার সেটি ধরে রেখেছে৷ এই বিভ্রান্তি অবশ্য টুইটার লড়াইকে পেছনে ফেলেনি৷ বরং সমানতালে দু’টি হ্যাশটাগ দিয়েই জানানো হচ্ছে আন্দোলনের অগ্রগতি৷
ছবি: REUTERS
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকে ‘শোধরানোর’ চেষ্টা
শাহবাগের প্রতিবাদ কি যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে না ইসলামপন্থীদের বিরুদ্ধে? বিবিসি ইংরেজি বিভাগে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনের শিরোনামে এই বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছিল৷ টুইটারে আন্দোলনকারীদের অব্যাহত দাবির পর সেই শিরোনামে বদল এসেছে৷ ইসলামপন্থী বাদ দিয়ে যুদ্ধাপরাধ শব্দটি জোড়া হয়েছে সেখানে৷ এই আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে আমারব্লগ৷
ছবি: amarblog.com
‘শাহবাগ সাইবার যুদ্ধ’
প্রজন্ম চত্বরে অবস্থান করছেন ‘শাহবাগ সাইবার যুদ্ধ’ দলের অনেক সদস্য৷ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ সাইট ব্যবহার করে যুদ্ধাপরাধীদের চরম শাস্তির দাবিকে আরো সোচ্চার করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা৷ পাশাপাশি প্রজন্ম চত্বরের সর্বশেষ পরিস্থিতিও ইন্টারনেটে তুলে ধরা হচ্ছে এদের মাধ্যমে৷
ছবি: REUTERS
‘আপনার সহায়তা প্রয়োজন’
ডয়চে ভেলের টুইটার পাতাতে আন্দোলনকারীদের কিছু বার্তা আমরা পেয়েছি৷ জিন্নাত গোনিম নামক ঢাকার এক বাসিন্দা টুইটারে লিখেছেন, ‘‘আমরা কোন রাজনৈতিক দল, ধর্ম বা জাতিগোষ্ঠীর প্রতিনিধি নই৷ আমরা বাংলাদেশি৷ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাচ্ছি, আমার মায়ের হত্যাকারীর, বোনের ধর্ষকের বিচার চাচ্ছি৷ আমাদের আপনার সহায়তা প্রয়োজন৷’’
ছবি: twitter.com
এই প্রজন্মের নারী মুক্তিসেনাদের লড়াই
গত কয়েকদিন ধরেই গণমাধ্যমের শিরোনামে জায়গা করে নিচ্ছেন লাকি আক্তার৷ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষার্থী আন্দোলন শুরুর দিন থেকে রয়েছেন শাহবাগে৷ তাঁর মতো আরো কয়েকজন নারী মুহুর্মুহু শ্লোগানে কাপিয়ে তুলছেন প্রজন্ম চত্বর৷ বিভিন্ন স্কুলকলেজের ছাত্রীরা মাঝেমাঝে হাজির হচ্ছেন আন্দোলনে৷
ছবি: REUTERS
‘ফাঁসির মঞ্চ’ প্রস্তুত
‘রাজাকারের ফাঁসি চাই’ - এই হচ্ছে প্রজন্ম চত্বরে আন্দোলনরতদের মূল দাবি৷ যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে জামায়াত নেতা কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করলে তা প্রত্যাখ্যান করে তরুণ প্রজন্ম৷ তারা চায় ফাঁসির আদেশ৷ শাহবাগে প্রতীকী ‘ফাঁসির মঞ্চ’ তৈরি করে যুদ্ধাপরাধীদের চরম শাস্তির অপেক্ষায় আছে ব্লগাররা৷
ছবি: Reuters
সপরিবারের শাহবাগে
শাহবাগে অনেকেই হাজির হচ্ছেন সপরিবারে৷ ক্রিকেটার থেকে শুরু করে সাহিত্যিক, অধ্যাপক অনেকেই এসেছেন সপরিবারে৷ এই ছবিতে এক শিশুকে দেখা যাচ্ছে শাহবাগ চত্বরে, প্রতিবাদী ব্যানার মাথায় জড়িয়ে৷
ছবি: REUTERS
ব্লগার এন্ড অনলাইন অ্যক্টিভিস্ট নেটওয়ার্ক
‘ট্র্যাইবুনালে কাদের মোল্লার প্রহসনের রায়ের বিরুদ্ধে মহাসমাবেশ’ - এই শিরোনামে পাঁচ ফেব্রুয়ারি ফেসবুকে আন্দোলনের ডাক দিয়েছিল ব্লগার এন্ড অনলাইন অ্যক্টিভিস্ট নেটওয়ার্ক৷ ব্লগারদের আহ্বানে সেদিন শাহবাগে জড়ো হতে শুরু করে সাধারণ মানুষ৷ এখন এই আন্দোলন আমজনতার৷
ছবি: REUTERS
10 ছবি1 | 10
ব্লগার এন্ড অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট নেটওয়ার্কের ফেসবুক পাতা থেকে জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধের দাবিতে ‘আগামী ৪ এপ্রিল কেন্দ্রীয়ভাবে প্রধানমন্ত্রীকে স্মারকলিপি দেয়ার পাশাপাশি জেলায় জেলায় জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে স্মারকলিপি' দেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে৷
শাহবাগ আন্দোলনকারীদের একাংশ আল্টিমেটারের পর স্মারকলিপি প্রদানের কর্মসূচিকে ‘দুর্বল' আখ্যা দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঘেরাওয়ের আহ্বান জানান৷ তবে এই আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত অঞ্জন রায় ফেসবুকে লিখেছেন, ‘‘ভিন্নমত থাকতেই পারে৷ সেই ভিন্নমতকে ধারন করে প্রথম আলোচনার বিষয় আমাদের লক্ষ্যটা কি? যদি লক্ষ্য একই হয়, তাহলে প্রথম কাজ দূরত্ব মোচনের৷ দ্বিতীয় বিষয় হলো অধিকাংশের মতামতের ভিত্তিতে সামনে এগিয়ে যাওয়া৷
‘‘যারা ভাবছি খুব তাড়াতাড়ি যুদ্ধাপরাধী বা তাদের দলটি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে, তাদের হিসাবের সাথে আমি একমত না৷ এটি করতে যেমন সময় লাগবে তেমনই লাগবে সবার আন্তরিকতা৷''
এদিকে, জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধের দাবিতে শহীদ রুমি স্কোয়াডের কয়েক সদস্যের আমরণ অনশন নিয়ে ফেসবুক, টুইটার, ব্লগে ব্যাপক আলোচনা দেখা যাচ্ছে৷ ব্লগার বাবু আহমেদ বুধবার দুপুরে এই বিষয়ে ফেসবুকে লিখেছেন, ‘‘পাবলিক লাইব্রেরির সামনে গিয়ে দেখলাম তীব্র এই রোদ উপেক্ষা করে বসে আছে স্কোয়াডের সদস্যরা যারা আমরণ অনশন করছে৷ নিলয়, শুভ্র, আকাশ, আনন্দ, দীপ, জয় ও সর্বশেষ যোগ দেয়া সাফি সহ সবারই চোখ লাল হয়ে আছে৷''
আমরণ অনশনরত নিলয়ের সঙ্গে কথোপকথন আহমেদ প্রকাশ করেছেন এভাবে, ‘‘ফিরতে হবে দ্রুত অফিসে তাই নিলয়ের কাছ থেকে বিদায় নেয়ার সময় বললাম সন্ধ্যায় দেখা হবে৷ (তখন নিলয়ের উত্তর) ভাই টেনশন নিয়েন না৷ আগামী দুই-তিনদিন বেঁচে থাকবো, কষ্ট হলেও৷ মরবো না৷''
উল্লেখ্য, শহীদ রুমী স্কোয়াডের আমরণ অনশনের সঙ্গে গণজাগরণ মঞ্চের ঘোষিত কর্মসূচির কোনো বিরোধ নেই৷ স্কোয়াডের ফেসবুক পাতা থেকে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে৷ তারা জানিয়েছেন, ‘‘আল্টিমেটাম না মানায় পরবর্তী সময়ের জন্য গণজাগরণ মঞ্চের তরফ থেকে যে সকল কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, তার প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা এবং সমর্থন দলটির আছে৷''