তুরস্কের সংবাদপত্র জুমহুরিয়েত জানিয়েছে, এর্দোয়ান সরকার কণ্ঠরুদ্ধ করার যত চেষ্টাই করুক, তারা আত্মসমর্পণ করবে না৷ সোমবার দৈনিক সংবাদপত্রটিতে অভিযান চালিয়ে প্রধান সম্পাদকসহ ১১ জনকে আটক করা হয়৷ তার জবাবেই এ মন্তব্য৷
বিজ্ঞাপন
১৯২৪ সালে প্রতিষ্ঠিত জুমহুরিয়েত তুরস্কে এখনো হাতে গোনা যে কয়টি সংবাদপত্র রেচেপ তাইয়েপ এর্দোয়ানের সরকারের সমালোচনা করছে, তাদের মধ্যে ন্যতম৷ সোমবার সংবাদপত্রটির প্রধান সম্পাদক মুরাত সাবুংকুসহ মোট ১১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়৷ তাঁরা কুর্দি জঙ্গি এবং যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ধর্মীয় নেতা ফেতুল্লাহ গুলেনের হয়ে কাজ করছিলেন – এমন সন্দেহে গ্রেপ্তার করা হয় তাঁদের৷
মানবাধিকার সংস্থাগুলো জুমহুরিয়েতে অভিযান এবং সাংবাদিকদের গ্রেপ্তারের নিন্দা জানিয়ে বলেছে, এটি আসলে গত ১৫ই জুলাইয়ের কথিত অভ্যুত্থান পরবর্তী দমন অভিযানেরই অংশ৷ এর মাধ্যমে সরকারবিরোধী শক্তিকে নির্মূল করার চেষ্টা করছে৷
১৫ জুলাইয়ের কথিত অভ্যুত্থান চেষ্টার পর সারা দেশে ব্যাপক ধরপাকড় শুরু করে এর্দোয়ান সরকার৷ এ পর্যন্ত অন্তত ৩৭ হাজার মানুষকে বন্দি করা হয়েছে৷ প্রায় এক লাখ মানুষকে বরখাস্ত বা চাকরিচ্যূত করা হয়েছে৷ গ্রেপ্তার, বরখাস্ত বা চাকরিচ্যুতরা ধর্মীয় নেতা গুলেনপন্থি – এমন সন্দেহের কথা বলেই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে সরকার৷
তুরস্কের গণমাধ্যম সংশ্লিষ্ট অনেকেই মনে করেন, জুমহুরিয়েতের বিরুদ্ধে এই অভিযান অপ্রত্যাশিত ছিল না৷ সে দেশের সুপরিচিত অনুসন্ধানী সাংবাদিক আহমেত সিক দাবি করেছেন, তিনি অনুমান করছিলেন এমনটি হবে৷ তিনি বলেছেন, ‘‘১৫ জুলাইয়ের অভ্যুত্থান চেষ্টার পরই আমি বলেছিলাম, ‘অভ্যুত্থান ব্যর্থ হয়েছে, তবে (সামরিক) জান্তা ক্ষমতায় আছে৷' তাদের পক্ষে কথা বলছে না, এমন সবাইকেই তারা টার্গেট করছে৷ এভাবেই ফ্যাসিজম মাথা চাড়া দিচ্ছে৷ এটা শুধু জুমহুরিয়েত বা কুর্দিদের বিরুদ্ধেই সীমাবদ্ধ থাকবে না৷ হয় তুমি আমার সঙ্গে আছো, নয়তে বিপক্ষে আছো – তুরস্কে বিভাজনটা এখন এ রকম৷''
‘রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স'-এর তুরস্ক প্রতিনিধি এরল ওন্দেরোগ্লু বলেছেন, ‘‘অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, গত দশ বছরে সরকারের হাতে যেসব প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে সেগুলো ছাড়া যেন গণমাধ্যমের অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের দরকারই নেই, তারা সবাই যেন সন্ত্রাসবাদের সমর্থক৷ শুধু তাদের সমর্থন দিচ্ছে এমন প্রতিষ্ঠানগুলোই যেন ভালো৷ আমরা এসব অভিযানের নিন্দা জানাই৷''
এসিবি/ডিজি (ডিপিএ, এএফপি, রয়টার্স)
নতুন তুরস্ক গড়ার অঙ্গীকার দিলেন এর্দোয়ান
ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানের পর টানা তিন সপ্তাহ ধরে এর্দোয়ানের পক্ষে ব়্যালির পর, তুরস্কের ৮০টি শহরে গত রবিবার চূড়ান্ত বিক্ষোভের আয়োজন করা হয়৷ আঙ্কারা থেকে জানাচ্ছেন ডিয়াগো কুপোলো৷
ছবি: DW/D. Cupolo
রাজপথে নামার আহ্বান
গতমাসে সেনা অভ্যুত্থানের সময় তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিচেপ তাইয়েপ এর্দোয়ান তাঁর সমর্থকদের রাজপথে নেমে ক্ষমতাসীনদের রক্ষায় সেনাবাহিনীকে হটাতে সহায়তার আহ্বান জানান৷ সেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে সত্যিই রাস্তায় নামেন অসংখ্য মানুষ এবং সেনাবাহিনী পিছু হটতে বাধ্য হয়৷ এরপর এর্দোয়ান প্রতিরাতে তাঁর সমর্থকদের রাস্তায় থাকতে আহ্বান জানিয়েছিলেন৷
ছবি: DW/D. Cupolo
লাখো মানুষের উপস্থিতি
রবিবার চূড়ান্ত ব়্যালিতে ইস্তানবুলে হাজির ছিলেন ২০ লাখের মতো মানুষ৷ আঙ্কারায় ছিলেন দশ হাজার৷ তুরস্কের মোট ৮০টি শহরে এ সময় বিক্ষোভের আয়োজন করা হয়৷ এর্দোয়ানের একেপি হচ্ছে প্রথম দল, যেটি ইসলামিক মনোভাব প্রদর্শন সত্ত্বেও একটি সেনা অভ্যুত্থান ঠেকাতে পেরেছে৷ এর্দোয়ানের সমর্থকরা একে দেশটির ইতিহাসরচনাকারী সেনাবাহিনী এবং ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধানের বিপরীতে বড় জয় মনে করছে৷
ছবি: DW/D. Cupolo
এক নতুন তুরস্ক নিয়ে আশাবাদ
ইস্তানবুল থেকে দেয়া বক্তব্যে এর্দোয়ান নতুন এক তুরস্ক গড়ার প্রতিজ্ঞা করেছেন এবং তাঁর সমর্থকরাও এ ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন৷ আঙ্কারার রিয়েল স্টেট ব্যবসায়ী লালে আলিচি সেনা অভ্যুত্থানের পর থেকে আয়োজিত প্রতিটি ব়্যালিতে অংশ নিয়েছেন৷ তিনি জানান, অভ্যুত্থানে জড়িতদের শাস্তি দেয়ার পর তুরস্ক দ্রুত উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাবে, কেননা তখন সরকারকে বাধা দেয়ার আর কেউ থাকবে না৷
ছবি: DW/D. Cupolo
‘‘আমরা বড় শক্তি হবো’’
ইন্টেরিয়র ডিজাইনার আতালে জানান, তিনি এর্দোয়ানকে সমর্থন দিয়েছেন কেননা তিনি তুরস্ককে বিশ্বমঞ্চে নিয়ে গেছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘এর্দোয়ান বিশ্বকে জানিয়েছেন, আমরাও আছি এবং শীঘ্রই বড় শক্তিতে পরিণত হবো৷’’
ছবি: DW/D. Cupolo
এইচডিপিকে নেয়া হয়নি
যদিও রবিবারের ব়্যালিতে অংশ নেয়া অনেকে দাবি করেছেন, গণতন্ত্রকে বাঁচাতে রাস্তায় নেমেছেন তারা, তাসত্ত্বেও বিরোধীরা জানিয়েছেন, সেদেশের তৃতীয়-বৃহত্তম রাজনৈতিক দল কুর্দিপন্থি ডেমোক্রেটিক পার্টি (এইচডিপি)-কে ব়্যালিতে যোগ দিতে দেয়া হয়নি৷ এক কুর্দ এই বিষয়ে বলেন, ‘‘কুর্দ হিসেবে আমি সেখানে যেতে পারি না, কেননা আমি নিরাপদ বোধ করছি না৷’’
ছবি: DW/D. Cupolo
সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমের উত্থান
জাতীয় জরুরি অবস্থায় সাধারণত ব্লক করা থাকলেও ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানের পর তুরস্কে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম বেশ গুরুত্ব পাচ্ছে৷ এর্দোয়ানের ‘ফেসটাইম’ বক্তব্য থেকে বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে সহিংসতা দেখানো ‘পেরিসকোপ’ ভিডিও অবধি সবকিছুই অনেক গুরুত্ব পেয়েছে৷ বিরোধীরা অবশ্য বলছেন, সরকার নিজেদের জন্য লাভজনক মনে করায় সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে বাধা সৃষ্টির কোনো উদ্যোগ নেয়নি৷