বাংলাদেশের সবচেয়ে জনবহুল শহর ঢাকা৷ এ শহরে প্রতিদিন দুই হাজার নতুন মানুষ আশ্রয়ের সন্ধানে আসেন, অধিকাংশই দেশের দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে৷ মূলত নদী ভাঙন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ অথবা লবণ পানির শিকার এই ‘জলবায়ু উদ্বাস্তুরা'৷
বিজ্ঞাপন
বৈশ্বিক উষ্ণতা বাড়ায় জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সমুদ্রের পানির উচ্চতা বাড়ছে৷ ২০৮০ সাল নাগাদ এই অঞ্চলে পানির উচ্চতা ২ ফুট বাড়বে বলে আশঙ্কা৷ আর তাই যদি হয়, তাহলে বাংলাদেশের ৪০ ভাগ এলাকা পানিতে তলিয়ে যাবে৷ অথচ এই ৪০ ভাগ এলাকায় কমপক্ষে ৫ কোটি মানুষ বাস করেন৷ নগর গবেষক অধ্যাপক ড. নজরুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘এর ফলে ফসলি জমি নষ্ট হবে, কৃষক-জেলে নিজেদের পেশা হারাবে৷ হারাবে তাদের আশ্রয় বা আবাসও৷ আর তারপর কাজের খোঁজে আশ্রয়ের খোঁজে মহানগরীতে ভিড় করবে এরা৷ বিশেষ করে ঢাকা শহরই হবে তাদের প্রধান লক্ষ্য৷ এরাই যে জলবায়ু উদ্বাস্তু৷''
বাংলাদেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগ নতুন নয়৷ ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, টর্নেডোর মতো দুর্যোগ মোকাবিলা করেই এগিয়ে চলছে মানুষ৷ তবে দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেক৷ বাংলাদেশে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ নিয়ে ছবিঘর৷
ছবি: Jewel Samad/AFP/Getty Images
সবচেয়ে ভয়ংকর টর্নেডো
বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় টর্নেডোর ঘটনা ঘটে ১৯৮৯ সালে৷ সেবছরের ২৬ এপ্রিল মানিকগঞ্চ জেলার দৌলতপুর এবং সাটুরিয়া এলাকার উপর দিয়ে বয়ে যায় প্রলয়ংকরী টর্নেডো৷ এতে প্রাণ হারায় ১,৩০০ মানুষ৷
ছবি: David L. Nelson/AFP/Getty Images
পুরোপুরি ধ্বংস
২৬ এপ্রিলের টর্নেডোতে কার্যত ছয় বর্গকিলোমিটার এলাকা পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায়৷ সেসময় অবজারভার পত্রিকায় এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ‘‘ধ্বংসযজ্ঞ এতই নিঁখুত যে, সেখানে কিছু গাছের চিহ্ন ছাড়া দাঁড়ানো আর কোনো বস্তু নেই৷’’
ছবি: David L. Nelson/AFP/Getty Images
ব্রাক্ষণবাড়িয়ায় টর্নেডো
আন্তর্জাতিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ক্যানাডার পর অন্যতম টর্নেডোপ্রবণ দেশ হচ্ছে বাংলাদেশ৷ সর্বশেষ গত ২২ এপ্রিল ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় টর্নেডোতে বেশ কয়েকজন প্রাণ হারায়৷
ছবি: picture alliance / AP Photo
পূর্বাভাষের প্রযুক্তি নেই
টর্নেডোর পূর্বাভাষের কোনো প্রযুক্তি নেই বাংলাদেশে৷ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. এ কে এম মাকসুদ কামাল এই বিষয়ে বলেন, ‘‘আমাদের দেশে না থাকলেও এখন টর্নেডোর পূর্বাভাষ দেয়া সম্ভব৷ অ্যামেরিকা এবং ইউরোপ এক ধরনের রাডার ব্যবহার করে অন্তত ৪৫ মিনিট আগে টর্নেডোর পূর্বাভাষ দিতে পারে৷ আর এ ধরনের পূর্বাভাষ দিয়ে জীবন ও সম্পদ রক্ষার নজির আছে৷’’
ছবি: picture alliance / AP Photo
ঘূর্ণিঝড়ের নিয়মিত শিকার বাংলাদেশ
টর্নেডো ছাড়াও ঘূর্ণিঝড়েরও নিয়মিত শিকার হয় বাংলাদেশ৷ উইকিপিডিয়ায় প্রকাশিত বাংলাদেশে মৌসুমী ঘূর্ণিঝড়ের তালিকায় ১৫৮২ সালের কথা উল্লেখ রয়েছৈ৷ সেসময় বাকেরগঞ্জের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড়ে প্রাণ হারায় দু’লাখ মানুষ৷
ছবি: Reuters
স্বাধীনতা পরবর্তী বড় দুর্যোগ
মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী বাংলাদেশে সবচেয়ে ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঘটনা ঘটে ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল৷ সেসময় চট্টগ্রামে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে প্রাণ হারায় কমপক্ষে ১৩৮,০০০ মানুষ৷ প্রায় এক কোটি মানুষ ঘরছাড়া হয়৷ ঘূর্ণিঝড়ে বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ২৫০ কিলোমিটারের মতো৷
ছবি: AFP/Getty Images
আইলার আঘাত
সর্বশেষ ২০০৯ সালে সাইক্লোন আইলায় কয়েকশত মানুষ প্রাণ হারায়৷ সাইক্লোনের পরপরই ডায়েরিয়া ছড়িয়ে পড়লে প্রাণ হারায় কমপক্ষে চার ব্যক্তি৷ এভাবে নিয়মিতই প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করছে বাংলাদেশ৷
ছবি: DW
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে এখন বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাবও পড়তে শুরু করেছে৷ বিশেষ করে উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে সমুদ্রের পানি বৃদ্ধির ফলে বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূলীয় বিশাল এলাকা তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে৷
ছবি: Jewel Samad/AFP/Getty Images
8 ছবি1 | 8
ড. নজরুল ইসলামের কথায়, ‘‘ঢাকা ছাড়াও এই জলবায়ু উদ্বাস্তুরা গাজীপুর ও তার আশেপাশের এলাকায় আশ্রয় নিচ্ছেন৷ এরা প্রধানত বস্তিতে থাকছেন, যেখানে ন্যুনতম নাগরিক সুবিধা নেই৷ আর এভাবে ঢাকা শহরে ভিড় করার ফলে এরা ঢাকার নগর জীবনের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করছেন৷''
বলা বাহুল্য, ঢাকার বস্তি এলাকায় বসবাসকারীদের প্রায় ৭০ শতাংশই পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে স্থানান্তরিত বলে জানিয়েছে অভিবাসনবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা আইএমও৷
অন্যদিকে পরিবেশবিদ ইকবাল হাবিব ডয়চে ভেলেক বলেন, ‘‘জলবায়ু পরিবর্তনের প্রথম শিকার হচ্ছে নারী৷ কারণ সংসার বা ঘর-গৃহস্থালি তাঁকেই করতে হয়৷ তারপর ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষক৷ সমুদ্রের পানির উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় লবণাক্ততা বাড়ছে৷ কৃষক চাষাবাদ উপযোগী কৃষি জমি হারিয়ে উদ্বাস্তে পরিণত হচ্ছে৷ আর তখনই তাঁরা আশ্রয় হারিয়ে এই নগরীতে আসছেন৷ এভাবে গ্রাম থেকে শহরে আসা পুরুষরা প্রধাণত রিক্সা চালান আর নারীদের বস্তিতে সন্তান-সংসার সামলিয়ে বাড়ি বাড়ি গৃহকর্মীর কাজ করে উপার্জন করতে হয়৷ জীবন হয়ে ওঠে ঝড়া পতার মতো৷''
গাইবান্ধায় জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের চিত্র
02:46
লবণপানি বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলকে ধীরে ধীরে গ্রাস করায় সেখানকার মানুষ শুধু কাজ হারিয়ে উদ্বাস্তু হচ্ছে না৷ তাঁরা মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতেও পড়ছেন, বিশেষ করে নারীদের এই ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি৷ বাংলাদেশের দক্ষিণের খুলনার কয়রা, দাকোপ ও পাইকগাছা, বাগেরহাটের মংলা ও শরণখোলা, সাতক্ষীরার আশাশুনি ও শ্যামনগর উপজেলাসহ সুন্দরবন সংলগ্ন উপকূলীয় এলাকার প্রায় দুই লাখ নারী ও কিশোরী প্রজনন স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন৷ একই অবস্থা ঢাকার বস্তিগুলোতেও৷
ইকবাল হাবিব বলেন, ‘‘ঢাকা ও আশেপাশের এলাকায় উপকূলীয় এলাকা থেকে বাস্তুচ্যুতরা এসে আশ্রয় নেয়ায় নতুন এক পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে৷ এদের মধ্যে নিম্নাঞ্চল এবং জলাশয় ভরাট করে আবাসন এবং বস্তি তৈরির প্রবণতা লক্ষ্যণীয়৷ ফলে ঢাকার প্রাণপ্রবাহ এবং পানির বাহ্যিক উৎস নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, যা ধীরে ধীরে ঢাকা শহরকে বসবাসের অযোগ্য করে তুলবে৷ এছাড়া ঢাকা অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ হওয়ায় শহরে এখন নানা ধরণের রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা যাচ্ছে৷''
জলবায়ু পরিবর্তনের শক্তিশালী কয়েকটি ছবি
জলবায়ুর যে পরিবর্তন হচ্ছে তা বিভিন্নভাবে উপলব্ধি করা যায়৷ একটি সংস্থা প্রবাল প্রাচীরের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে সেটা আরও ভালোভাবে বোঝার চেষ্টা করছে৷
ছবি: XL Catlin Seaview Survey
দুই মাস আগে, পরে
জলবায়ু যে পরিবর্তন হচ্ছে তা বোঝার অন্যতম উপায় প্রবালের দিকে খেয়াল করা৷ উপরে যে ছবিটি দেখছেন তার বাম পাশেরটি ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে তোলা, আর ডানেরটি দুই মাস পর, অর্থাৎ ফেব্রুয়ারি মাসের৷ এবার নীচে কোরালগুলোর দিকে তাকান৷ বামেরগুলো এক রংয়ের আর ডানেরগুলো সাদা হয়ে গেছে৷ হ্যাঁ, এটা জলবায়ু পরিবর্তিত হয়ে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণে হয়েছে৷ ছবিটি অ্যামেরিকান সামোয়া এলাকার৷
ছবি: XL Catlin Seaview Survey
সাদা হয়ে যাওয়া
এই ছবিটি হাওয়াই এলাকার৷ এখানেও সাদা হয়ে যাওয়া কোরাল দেখা যাচ্ছে৷ কোরাল তার গায়ে থাকা জলজ উদ্ভিদ, অ্যালজির কারণে বেঁচে থাকে৷ কিন্তু তাপমাত্রা বেড়ে গেলে কোরাল থেকে ঐ উদ্ভিদ ঝরে পড়ে৷ ফলে কোরালেরও আয়ু শেষ হতে থাকে৷
ছবি: XL Catlin Seaview Survey
একেবারে স্পষ্ট
এতক্ষণ দূর থেকে সাদা অংশ দেখেছেন৷ এখন দেখুন একেবারে কাছ থেকে তোলা ও বর্ধিত করা একটি ছবি৷ এটি কোরালের একটি অংশ৷ দেখুন, গায়ে থাকা জলজ উদ্ভিদ আর না থাকায় কীরকম সাদা হয়ে গেছে কোরালটি৷
ছবি: XL Catlin Seaview Survey
চারদিক কেমন যেন খাঁ-খাঁ করছে
মন খারাপ করা একটি ছবি৷ অ্যালজি না থাকায় মরে গেছে কোরাল৷ পড়ে আছে শুধু কঙ্কাল৷
ছবি: XL Catlin Seaview Survey
কয়েক দশক সময় প্রয়োজন
এবার আরেকটি ছবি৷ বিজ্ঞানীরা বলছেন, এমন পরিস্থিতি থেকে কোরাল রিফের বেঁচে উঠতে (আদৌ যদি বেঁচে ওঠে) কয়েক দশক সময় লাগতে পারে৷
ছবি: XL Catlin Seaview Survey
প্রমাণ সংগ্রহ
বিশ্বের কোরাল রিফগুলোর অবস্থা পর্যবেক্ষণে ২০১২ সালে ক্যাটলিন গ্রুপের সহায়তায় ‘এক্সএল ক্যাটলিন সিভিউ সার্ভে’ নামে একটি সমীক্ষা শুরু হয়৷ এর মাধ্যমে উচ্চপ্রযুক্তির ক্যামেরা ও রোবট ব্যবহার করে কোরালের বর্তমান অবস্থা তুলে আনা হচ্ছে৷ অনেক ছবি গুগল স্ট্রিট ভিউ-তে আপলোড করা হয়েছে৷
ছবি: XL Catlin Seaview Survey
হুমকির মুখে জীববৈচিত্র্য
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে যে তাপমাত্রা বাড়ছে তার প্রায় ৯০ শতাংশের বেশি অংশ শুষে নেয় সাগর৷ ফলে জলবায়ু যে পরিবর্তন হচ্ছে তা বোঝার একটি ভালো উপায় হচ্ছে কোরাল৷ সমুদ্রের প্রায় ২৫ শতাংশ প্রজাতির বেঁচে থাকার পেছনে রয়েছে কোরাল রিফ৷ তাই কোরাল না থাকে মানে জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়া৷
ছবি: XL Catlin Seaview Survey
প্রাণিকুলের খাবার
দেখছেন অ্যামেরিকান সামোয়ার ‘এয়ারপোর্ট রিফ’৷ স্বাস্থ্যবান এ সব কোরালের মধ্যে যে গাছপালা থাকে সেখান থেকেই খাবার সংগ্রহ করে পানির নীচে থাকা বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী৷
ছবি: XL Catlin Seaview Survey
খাবার পাবে কোথায়?
লম্বা নাকের সুন্দর এই মাছটি কোরাল থেকে খাবার সংগ্রহ করে থাকে৷ কিন্তু কোরালই যদি না থাকে তাহলে তার কী হবে?
ছবি: XL Catlin Seaview Survey
9 ছবি1 | 9
২০১১ সালের এক গবেষণায় জানানো হয়, ২০৭০ সালের মধ্যে বন্যায় উপকূলীয় এলাকা তলিয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে থাকা শীর্ষ ২০ জনবহুল শহরের তালিকায় ঢাকা তৃতীয়৷ প্রথম স্থানে কলকাতা ও দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে মুম্বই৷ ৩২৫ বর্গ কিলোমিটারের এই শহরটিতে বাসিন্দার সংখ্যা প্রায় দেড় কোটি, ফলে ঢাকার পয়ঃনিষ্কাশন, ময়লা ব্যবস্থাপনা আর যোগাযোগ কাঠামো প্রায় ভেঙে পড়ার মুখে৷
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অনুষদের অধ্যাপক ড. মো. আব্দুর রব ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘জলবায়ু পরিবর্তন এবং পরিবেশ বিপর্যয়ে আমাদের ভূমিকা সামান্য হলেও এর বড় শিকারে পরিণত হতে যাচ্ছি আমরা৷ আর এটা নিয়ে বিশ্বে রাজনীতি আছে৷ ফলে কার্বণ নিঃসরণ কমিয়ে আনার ব্যাপারেও কার্যকর উদ্যোগ নেয়া যাচ্ছে না৷''
তিনি বলেন, ‘‘সারা বিশ্বকে মিলেই এই বিপর্যয় রোধে উদ্যোগ নিতে হবে৷ বাংলাদেশকে মনে রাখতে হবে যে, আমাদের হয়ত উপকূলের চার থেকে পাঁচ কোটি মানুষকে সরিয়ে আনতে হবে৷ এদের জন্য বিকল্প পেশা, আবাসস্থল ইত্যাদির লক্ষ্যে এখন থেকেই মহাপরিকল্পনা নিতে হবে৷''
অধ্যাপক ড. মো. আব্দুর রবের কথায়, ‘‘এরইমধ্যে দেখা গেছে যে, ঢাকায় জলবায়ু পবির্তনের শিকার হয়ে যাঁরা আছেন তাঁরা নিয়মিত কাজ পাচ্ছেন না৷ এগে আগে প্রধানত কৃষক ছিলেন৷ কিন্তু এখন এরা বলতে গেলে পেশায় উদ্বাস্তু৷ তাই এদের নির্দিষ্ট কোনো কাজ নেই৷''
ড. নজরুল ইসলাম বলেন, গত জন গণনায় দেখা গেছে যে, গ্রামের লোক বাড়ছে না৷ বাড়ছে শহরের মানুষ৷ এর কারণ, মানুষ এখন পরিস্থিতির চাপে অতিমাত্রায় শহরমুখী৷ ২০৪০ সাল নাগাদ শতকার ৫০ ভাগ মানুষই নাকি শহরে বসবাস করব৷ কিন্তু ঢাকাসহ দেশের শহরগুলো এই জনসংখ্যার চাপ নিতে যে কোনোভাবেই প্রস্তুত নয়৷ তাই তাঁর কথায়, ‘‘বাস্তবতা না পাল্টালে এ শতাব্দীর শেষে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করবে৷''
বন্ধুরা, বাস্তবতা না পাল্টালে পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ হতে পারে? জানান নীচের ঘরে৷
জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কে কতটা জানেন?
সিওটু, গ্রিনহাউস গ্যাস, কার্বন নির্গমন – এই সব শব্দ সংবাদমাধ্যমের আলোচনায় বার বার উঠে আসে৷ কিন্তু এই সব শব্দের প্রেক্ষাপট আপনি কতটা বোঝেন? যাচাই করে নিন এই ছবিঘরে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
প্রশ্ন
পৃথিবী আসলে কতটা উষ্ণ হয়ে উঠেছে?
ছবি: DW
উত্তর
১৮৫০ সালে শিল্প-বিপ্লবের শুরু থেকে বিশ্বের তাপমাত্রা এক ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে গেছে৷ তাই গবেষকদের আশঙ্কা, ২১০০ সালের মধ্যে তাপমাত্রা ২ ডিগ্রি কমানোর লক্ষ্যমাত্রা বিফল হবে৷ জলবায়ু গবেষণার ভিত্তিতে বড়জোর দেড় ডিগ্রির সীমা ধরে রাখার চেষ্টা করা উচিত বলে মনে করেন সমালোচকরা৷
ছবি: DW/G. Rueter
প্রশ্ন
২১০০ সাল পর্যন্ত বৈশ্বিক উষ্ণায়নের পরিণতি কী হতে পারে?
ছবি: DW/K.Hasan
উত্তর
পৃথিবীর তাপমাত্রা আরও বেশি মাত্রায় বাড়লে উপকূলবর্তী এলাকায় প্রায় ৩০ লক্ষ মানুষ বিপদে পড়তে পারেন৷ প্রায় ২০০ কোটি মানুষ জলের অভাবে সমস্যায় পড়বেন৷ পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাওয়াতে না পেরে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ প্রজাতির প্রাণী বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/AP/T. Gutierrez
প্রশ্ন
গ্রিনহাউস গ্যাসের প্রভাবের উৎস কী?
ছবি: IRNA
উত্তর
কয়লা, পেট্রোলিয়াম ও গ্যাস৷ জীবাশ্মভিত্তিক জ্বালানির সাহায্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন, ঘরবাড়ি গরম রাখা, পরিবহণ ব্যবস্থা চালানো এবং শিল্পক্ষেত্রে উৎপাদনের ফলে কার্বন-ডাই-অক্সাইড সৃষ্টি হয় এবং বায়ুমণ্ডলে ছড়িয়ে পড়ে৷ গ্রিনহাউস গ্যাসের প্রায় ৬৫ শতাংশই কার্বন-ডাই-অক্সাইড৷ এছাড়া মিথেন, লাফিং গ্যাস ও ক্লোরোফ্লুরোকার্বন এর জন্য দায়ী৷
ছবি: Imago stock&people
প্রশ্ন
আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনার কারণে কোন দেশগুলি গত বছর সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে?
ছবি: Reuters
উত্তর
সার্বিয়া, আফগানিস্তান এবং বসনিয়া-হ্যারৎসোগোভিনা ২০১৫ সালে আবহাওয়া বিপর্যয়ের ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷ প্যারিস-ভিত্তিক পরিবেশ সংগঠন ‘জার্মানওয়াচ’ প্রকাশিত বিশ্বব্যাপী জলবায়ু সংক্রান্ত ঝুঁকির তালিকায় এই তথ্য উঠে এসেছে৷ তবে ১৯৯৫ সাল থেকে হন্ডুরাস, মিয়ানমার, হাইতি ও ফিলিপাইন্সের মতো দক্ষিণ গোলার্ধের দরিদ্র দেশগুলি বন্যা, বিধ্বংসী ঝড় ও তাপপ্রবাহের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. uz Zaman
প্রশ্ন
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সমুদ্র কেন বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখায়?
ছবি: imago/OceanPhoto
উত্তর
পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের গ্রিনহাউস গ্যাস কার্বন-ডাই-অক্সাইড সমুদ্রের পানির মধ্যে রাসায়নিক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে৷ এই প্রক্রিয়ায় জলের ‘পিএইচ ভ্যালু’ কমে যায়৷ অ্যালজির মতো ক্ষুদ্র প্রাণী ও প্রবাল প্রাচীরের উপর তার প্রভাব পড়ে৷ জলে অম্লের মাত্রা যত বাড়ে, ক্যালশিয়াম বাইকার্বোনেট তত পাতলা হয়ে যায়৷ তখন প্রবালের মৃত্যু হয়৷ ফলে সমুদ্রের গোটা ইকোসিস্টেম ক্ষতিগ্রস্ত হয়৷
ছবি: XL Catlin Seaview Survey
প্রশ্ন
বার্লিন থেকে প্যারিস যেতে হলে গাড়ি, বিমান অথবা ট্রেন – পরিবহণের কোন মাধ্যম পরিবেশের সবচেয়ে ক্ষতি করে?
ছবি: DW/K. Jäger
উত্তর
এই দূরত্ব অতিক্রম করতে এয়ারবাস এথ্রিটুজিরো বিমানে যাত্রীপিছু ২৪৮ কিলোগ্রাম কার্বন-ডাই-অক্সাইড সৃষ্টি হয়৷ ফলক্সভাগেন কোম্পানির গল্ফ মডেলের নতুন গাড়িতে চড়ে গেলে নির্গমনের পরিমাণটা দাঁড়ায় ১৭৯ কিলো৷ অন্যদিকে সবচেয়ে পরিবেশবান্ধব বাহন হলো ট্রেন৷ সে ক্ষেত্রে নির্গমনের পরিমাণ প্রায় ১১ কিলো৷