1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘‘আমরা ঘুমিয়ে থাকলে তো ওরা সবই নিয়ে যাবে''

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

ভারতের হাতে বাংলাদেশের টাঙ্গাইল শাড়ির ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) সনদ নিয়ে বিবি রাসেল ডয়চে ভেলের সঙ্গে কথা বলেছেন৷ কথা বলেছেন আরো অনেক পণ্যের জিআই সনদ ও বাংলাদেশের করণীয় নিয়ে৷

বিবি রাসেল
এটা আমি চিন্তাও করতে পারিনি যে ভারত এটা পেতে পারে৷ ভারত কেমন করে পেয়েছে?- প্রশ্ন বিবি রাসেলের ছবি: Harun Ur Rashid Swapan/DW

বিবি রাসেল, বিবি প্রডাকশনস-এর প্রতিষ্ঠাতা৷ বাংলাদেশের নিজস্ব পোশাক, সংস্কৃতি আর ঐতিহ্য তুলে ধরছেন সারা বিশ্বে৷ তার সঙ্গে ডয়চে ভেলের আলাপচারিতা তুলে ধরা হলো এখানে:

ডয়চে ভেলে: ভারত টাঙ্গাইল শাড়ির জিআই সনদ কীভাবে পেল? ভারত কি পেতে পারে? এখানে বাংলাদেশের করণীয় কী?

বিবি রাসেল: আসলে আমি তো আশ্চর্য হয়ে গেছি৷ আমি দুই সপ্তাহেরও কম হবে ভারতের ওই এলাকায় কাজ করে এলাম৷ টাঙ্গাইল শাড়ি একটি জায়গার নামে৷ খুব কম শাড়িই আছে জায়গার নামে৷ জামদানিও কোনো জায়গার নামে নয়৷ যদিও ওটার জিআই আমরা পেয়েছি৷ এটাতো (টাঙ্গাইল শাড়ি) দুইশ বছর আগেকার৷ টাঙ্গাইলে নদী আছে৷ যমুনা নদী, ধলেশ্বরী নদী৷ ওখানকার একটা জীবন ধারা৷ পার্টিশনের আগে কিছু লোকজন চলে গেছে৷ প্রধানত বসাকেরা৷ একাত্তরের পরেও কিছু গেছে৷ আপনি চলে যেতে পারেন, মাইগ্রেট করতে পারেন৷ কিন্তু আপনি তো নদী, আবহাওয়া, বাতাস সব নিয়ে চলে যাবেন না৷ পশ্চিমবঙ্গের ওই এলাকায় কোনো জায়গাই নাই যেটার নাম টাঙ্গাইল৷ এটা আমি চিন্তাও করতে পারিনি যে ভারত এটা পেতে পারে৷ ভারত কেমন করে পেয়েছে? কিন্তু আমরা কেন এটার জন্য আবেদন করলাম না৷আমরা তো মাত্র এখন করলাম৷


ডয়চে ভেলে: আমাদের এখন কী করণীয়?


আমি পজেটিভ চিন্তা করি৷ আমরা যদি সঠিক পদ্ধতিতে এখন আবেদন করি, প্রতিবাদ করি তাহলে কাজ হবে৷ প্রতিবাদ কিন্তু শুরু হয়ে গেছে৷ আমি নিজে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তেমন আসি না৷ এই বিষয়টি নিয়ে আমি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসছি৷ চারিদিকে ছড়িয়ে গেছে যে, ওরা কেন এটা পেল৷ আমরা কিন্তু যুক্তি দেখিয়ে এটা আমরা ফিরিয়ে আনতে পারি৷ আমাদের পক্ষে সবই আছে৷ জিআই, আপনি নিজেই বলেছেন, জিআই হলো ভৌগোলিক নির্দেশক, জিওগ্রাফিক্যাল ইনডিকেশন৷ এটা তো ওদের নই৷ ওখানে কি ধলেশ্বরী নদী, যমুনা নদী আছে? তাঁতীরা সকালে উঠে কেমন করে সুতা শুকায়, মাড় দেয় , ওদের জীবনযাপন৷ এটাতো ওদের(ভারতের) পাওয়ার কোনো সুযোগই নাই৷ কিন্তু কেমন করে পেল? সব দিক দিয়ে প্রতিবাদ আসছে৷ সাধারণ মানুষ প্রতিবাদ করছে৷ সরকারকে তো এটা নিয়ে লড়তে হবেই৷

‘মানুষের মধ্যে জিআই নিয়ে কনফিউশন আছে’

10:23

This browser does not support the video element.


ডয়চে ভেলে: এখন যে বাংলাদেশ সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ টাঙ্গাইল শাড়ির জিআই সনদ দেয়ার কথা বলছে৷ এটা হলেই কি বাংলাদেশ জিআই সনদ পেয়ে গেল?
 

আমি অনেকবারই বলেছি৷ আমি ঘুমিয়ে থাকলাম আর ওরা করে ফেলেছে৷ এটা নিয়ে মানুষের মধ্যে কিন্তু কনফিউশন আছে৷ এটা সরকার জিআই আইনে চিহ্নিত করেছে৷ কিন্তু তারপর তো ডাব্লিউটিওতে (বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা) যেতে হবে৷ সেখানে আমার মনে হয় আমাদের ঘুমিয়ে থাকলে হবে না৷ আমাদের জিনিস অন্যরা ছিনতাই করে নিয়ে যাবে আর আমরা চুপ৷ আমরা কোনো প্রতিবাদই করলাম না৷ আমাদের অনেক যুক্তি আছে৷ পয়েন্ট আছে৷ জিআই ল এর সবই আমাদের পক্ষে ৷ কিন্তু আমাদের প্রটেস্ট করতে হবে৷ সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগকে প্রটেটেস্ট করতে হবে৷
 

ডয়চে ভেলে: ভারত তো ৬৬টি পণ্যের জিআই সনদ নিয়েছে৷ তারা নকশিকাঁথাসহ আরো কিছু পণ্যের জিআই সনদ নিয়েছে৷ এখন কি শুধু টাঙ্গাইল শাড়ি নিয়ে প্রতিবাদ করলে হবে, না অন্য পণ্য নিয়েও কাজ করতে হবে?


না না, সব বিষয় নিয়ে কাজ করতে হবে৷ দেখেন বাংলাদেশ একটা ছোট দেশ৷ ভারত অনেক বড় দেশ৷ ওদের প্রত্যেকটা প্রদেশে কিছু না কিছু আছে৷ আমাদের তো অল্প কয়টা জিনিস৷ কিন্তু আমরা নিজেরাই যতি সতর্ক না হই তাহলে কীভাবে হবে? আমরা এতদিন পর বলছি টাঙ্গাইল শাড়ির জিআই চিহ্নিত করেছি৷ এটা তো সবার আগে করা উচিত ছিল৷ আমি নিজে ১০ বছর বয়স থেকে শাড়ি পরা শিখেছি, টাঙ্গাইল শাড়ি৷ প্রত্যেকটা ঘরে ঘরে টাঙ্গাইল শাড়ি আছে৷ টঙ্গাইল শাড়ি সবার জন্য৷ জামদানির দাম একটু বেশি, সবাই কিনতে পারে না৷ কিন্তু টাঙ্গাইল শাড়ি সবার ঘরে ঘরে৷ বাঙালির ঐতিহ্যের সঙ্গে মিশে আছে৷


ডয়চে ভেলে: আমরা বাংলাদেশের ইলিশ পেয়েছি৷ ভারত পেয়েছে গঙ্গার ইলিশ৷ ঐতিহাসিক এবং ভৌগোলিক কারণে কিছু পণ্য আবার দুই দেশে মিলে মিশে আছে৷ এখন ভারত যদি এককভাবে সেইসব পণ্যের জিআই সনদ নিয়ে নেয় তাহলে আমাদের কী করতে হবে?

ধরেন আপনি আমাকে ইন্টারভিউ নিচ্ছেন৷ আপনি জানেনই না কী প্রশ্ন করবেন৷ যারা এগুলোর কনসার্ন ডিপার্টমেন্ট তাদের এগুলো টু দ্য পয়েন্টে লিখতে হবে৷ ভারতের কিন্তু দক্ষ মানু্ষরা লিখছে৷ খালি বললেই হবে না টাঙ্গাইল শাড়ি আমাদের৷ কেন আমাদের, ইতিহাস কী, এগুলোর পরম্পরা কী,ঐতিহ্য কী এগুলো বলতে হবে৷ জিআই হলে একটি দেশ হিসেবে আমরা যখন পণ্য রপ্তানি  করব এর রয়্যালিটি আমরা পাব৷ যেমন আমাদের পেঁয়াজ৷ ভারতেরও পেঁয়াজ আছে৷ তাদেরটা আমাদের বলছি না৷ কিন্তু আমাদেরটা আমাদের৷ ভারত পেঁয়াজ না দিতে পারে৷ দাম বাড়াতে পারে৷ কিন্তু তখন আমি আমার পেঁযাজ নিয়ে প্লে করতে পারি৷এটা আমদের পণ্য৷ এখন  এটা যদি আমরা ছেড়ে দেই তাহলে তো হবে না৷ জিআই আমাদের দেশীয় পণ্য ব্র্যান্ডিংএ সহায়তা করে৷ আমাদের পণ্য বিশ্বে আমাদের নামে পরিচিত হবে৷


ডয়চে ভেলে: আমাদের আম, মিষ্টি এগুলো নিয়েওতো ভারত টান দিয়েছে৷
 

আমি জানি, রসগোল্লা করে ফেলেছে৷ কিন্তু ভাই আমার নামটা আমি ব্র্যান্ডিং করব৷ আমার নামটা যদি আরেকজন নিয়ে নেয় আর আমি ঘুমিয়ে থাকি, কোনো প্রটেস্ট না করি তাহলে ওরা তো একটার পর একটা নিতেই থাকবে৷


ডয়চে ভেলে: তাহলে কি আমরা আমাদের কাজের দিক থেকে পিছিয়ে আছি? এই ক্ষেত্রে ভারতকে মোকাবিলায় আমাদের দক্ষতা কি কম, আমরা কি পারছি ?
 

আমাদের না পারার তো কোনো কারণ নাই৷ আমাদের কাছে সব আছে৷ টাঙ্গাইল শাড়ির সব কিছু আমাদের তারপরও ওরা নেয় কীভাবে?


ডয়চে ভেলে: শুধু টাঙ্গাইল শাড়ির কথা বলছি না৷ আরো তো অনেক পণ্য আছে?
 

হ্যাঁ আছে৷ জায়গার নামে আমাদের আরো পণ্য আছে৷ যেমন রাজশাহীর সিল্ক৷ আমি দুইদিন পর সেখানে যাচ্ছি৷ এখন আমি তো এর জিআই সনদ নিতে পারি না৷ আমি যতই প্রতিবাদ করি না কেন কাজটা করতে হবে সরকারকে৷ আমাদের অনেক হস্তশিল্প আছে৷ জিআই সনদ একটি দেশের জন্য দেয়া হয়৷ তাই সব পণ্যের জন্যই কাজটি করতে  হবে সরকারকে৷


ডয়চে ভেলে: বাংলাদেশ এপর্যন্ত ২১টি পণ্যের জিআই-এর জন্য আবেদন করেছে৷ ১৪-১৫টি পেয়েছে৷ এগুলো কি যথেষ্ট? আমাদের পেটেন্ট, ডিজাইন, কপিরাইট ট্রেডমার্ক অধিদপ্তর আছে৷ তার কি ঠিকমত কাজ করছে?


তাদের তো অনেক বড় ডিপার্টমেন্ট৷ আমি যদি ছোট্ট একটা অফিস নিয়ে দেখাতে পারি যে বাংলাদেশের মানুষের হাতে যাদু আছে তাহলে তাদের তো আরো অনেক বেশি করা উচিত৷ করছে না কেন? যদি কোনো প্রয়োজন হয় আমরা তথ্য দিয়ে সহায়তা করতে পারি৷ সেটাও যদি না করে তাহলে তো আমাদের কিছু বলার নাই৷ কিন্তু আমিও ছেড়ে দেয়ার মেয়ে নই৷ সব দিক দিয়ে প্রতিবাদ শুরু হয়ে গেছে৷আমরা ঠিক মতো আবেদন করতে পারলে আমাদের টঙ্গাইল শাড়ির জিআই অবশ্যই ফিরে আসবে৷ আপনারা সবাই প্রতিবাদ জারি রাখুন৷ তা না হলে আমার মনটা একদম ভেঙে যাবে৷


ডয়চে ভেলে: সার্বিকভাবে আমাদের পণ্যের জিআই নিয়ে আাপনার পরামর্শ কী?
 

আমাদের পণ্য সম্পর্কে আমাদের জানতে হবে৷ কারণ জিআই সনদের জন্য সঠিক তথ্য উপাত্ত দিয়ে আবেদন করতে হয় নিয়ম মেনে৷ নিয়ম, আইন জানতে হয়৷ যেমন, আমি অনেক দিন ইটালি ছিলাম৷ আমি এখন ইটালিয়ান পাস্তা ভালো বানাতে পারি৷ এদেশে এসে সেই পাস্তা আমি বানাচ্ছি৷ তাই বলে সেটা আমার হয়ে গেল না? এটা ইটালিয়ান পাস্তা৷ই৷ আমাদের যারা এর দায়িত্বে আছেন তাদের সঠিকভাবে আবেদন করতে হবে৷ আমাদের পণ্যের তালিকা করে টু দ্য পয়েন্ট, রাইট পয়েন্টে লিখতে হবে৷

আমাদের অনেক পণ্য আছে সেগুলোর জিআই সনদ আমাদের পাওয়া উচিত৷ কিন্তু...

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ