মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে প্রয়োজনীয় ২৭০টি ইলেক্টোরাল ভোট পাওয়ার দিকে ক্রমশ এগিয়ে যাচ্ছেন ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী জো বাইডেন৷ তবে, ভোট গণনা এখনো শেষ না হওয়ায় আশা দেখছে ট্রাম্প শিবির৷
বিজ্ঞাপন
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে প্রয়োজনীয় ২৭০টি ইলেক্টোরাল ভোট পাওয়ার দিকে ক্রমশ এগিয়ে যাচ্ছেন ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী জো বাইডেন৷ তবে, ভোট গণনা এখনো শেষ না হওয়ায় আশা দেখছে ট্রাম্প শিবির৷
মার্কিন নির্বাচনের পর কয়েকদিন পেরিয়ে গেলেও এখনো নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না কে হচ্ছেন পরবর্তী মার্কিন প্রেসিডেন্ট৷ ইলেক্টোরাল ভোটে এগিয়ে থাকা ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী জো বাইডেন অবশ্য মনে করছেন যে তিনি হতে চলেছেন পরবর্তী মার্কিন প্রেসিডেন্ট৷
উইলমিংটনে নিজের নির্বাচনি প্রচারণা কেন্দ্রে শুক্রবার রাতে ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী কমলা হ্যারিসকে নিয়ে দেয়া এক বক্তব্যে এই মনোভাব জানান তিনি৷
বাইডেন বলেন, ‘‘সংখ্যা (ভোট) আমাদেরকে একটি স্পষ্ট নির্দেশনা দিচ্ছে৷ আমরা জিততে যাচ্ছি, যদিও নির্বাচনের চূড়ান্ত ফলাফল এখনো আমাদের কাছে আসেনি৷’’
যে রাজ্যগুলোতে তিনি এখন পর্যন্ত এগিয়ে আছেন বক্তৃতায় সেগুলোর নামও উল্লেখ করেন বাইডেন৷
ভোটের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘‘অ্যামেরিকান জনগণের একটি বড় অংশ আমাদেরকে কোভিড-১৯, জলবায়ু পরিবর্তন ও সিস্টেমেটিক বর্ণবাদের বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার অধিকার দিয়েছে৷’’ বক্তৃতায় সাবেক এ ভাইস প্রেসিডেন্ট সবাইকে ‘শান্ত থাকার এবং ধৈর্য্য ধরার’ আহ্বান জানান৷
এদিকে, বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প এক টুইট বার্তায় বাইডেনের বক্তব্যের আগেই দাবি করেছেন যে তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রেসিডেন্ট অফিসের ভার পেয়েছেন বলে অন্যায্যভাবে দাবি করছেন৷ ‘‘এই দাবি আমিও করতে পারি,’’ বলেন তিনি৷
বেশ কয়েকটি ভোটকেন্দ্রের বাইরে প্রতিবাদও করতে দেখা গেছে ডনাল্ড ট্রাম্প সমর্থকদের৷ তাদের কারো কারো হাতে রাইফেল ও হ্যান্ডগান দেখা গেছে৷ এরিজোনার ফোনিক্স নির্বাচনি কেন্দ্রের সামনে একদল বিক্ষোভকারীকে অবস্থান নিতে দেখা গেছে৷ কেন্দ্রটিতে সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ভোট গণনা চলছে৷ ডনাল্ড ট্রাম্পকে আবারো মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেখতে চান দাবি জানিয়ে নির্বাচনকর্মীদের গ্রেপ্তারের আহ্বান জানিয়েছেন কিছু বিক্ষোভকারী৷
দেশটির জর্জিয়া, নাভাডা, প্যানসালভেনিয়া ও আরিজোনা রাজ্যে এখনো ভোট গ্রহণ চলছে৷
সংবাদসংস্থা এপির প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী জো বাইডেন এখন পর্যন্ত পেয়েছেন ২৬৪টি ইলেক্টোরাল ভোট৷ অন্যদিকে, রিপাবলিকান প্রার্থী ডনাল্ড ট্রাম্প পেয়েছেন ২১৪টি৷
আরআর/এআই (এপি, এএফপি, রয়টার্স)
জো বাইডেনের জীবনের গল্প
২০২০ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেনের জীবনের গল্প দেখুন এই ছবিঘরে৷
ছবি: Kevin Lamarque/Reuters
জন্ম ও পরিবার
১৯৪২ সালের ২০ নভেম্বর স্ক্র্যানটন পেনসিলভ্যানিয়াতে জন্মগ্রহণ করেন জোসেফ রবিনেট বাইডেন জুনিয়র বা আজকের ‘জো বাইডেন’৷ জীবনের প্রথমভাগ বাইডেন কাটান দাদা-দাদির সাথে৷ পরিবারে আর্থিক অনটন থাকলেও বাইডেন স্কুলজীবনে তুখোড় ফুটবল, বেসবল খেলোয়াড় ছিলেন, যা পরে বিশ্ববিদ্যালয়েও তাঁকে জনপ্রিয় করে তোলে৷ জানা যায়, ছোটবেলায় বাইডেন কথা বলতে গেলে তোতলাতেন, যা কবিতা আবৃত্তি করার মাধ্যমে পরে নিয়ন্ত্রণে আনেন তিনি৷
ছবি: Handout Joseph Biden/AFP
তারুণ্য
প্রথমে ইতিহাস ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক হবার পর আইনে স্নাতকোত্তর স্তরের পড়াশোনা করতে বাইডেন পাড়ি দেন নিউ ইয়র্কের সাইরাক্যুজ বিশ্ববিদ্যালয়ে৷ সেখানেই তাঁর পরিচয় নেলিয়া হান্টারের সাথে৷ ১৯৬৬ সালে নেলিয়া ও বাইডেন বিয়ে করেন৷
ছবি: Keystone/dpa/picture-alliance
রাজনীতিতে পদার্পণ
১৯৭২ সালে মাত্র ২৯ বছর বয়েসে ডেলাওয়ারে দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতাসীন রিপাবলিকান সেনেটর কেলেব বগসের বিরুদ্ধে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিসাবে নির্বাচনে লড়েন বাইডেন৷ অর্থাভাব, রাজনীতির ময়দানে অনভিজ্ঞতা সত্ত্বেও পারিবারিক সহায়তা ও মাঠপর্যায়ে প্রচার চালিয়ে গবসকে পরাজিত করেন বাইডেন৷ সেখান থেকেই ডেমোক্র্যাট হিসাবে তাঁর উত্থানের সূত্রপাত৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Keystone
পারিবারিক বিপর্যয়
সেনেটর নির্বাচিত হবার কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই বাইডেনের জীবনে আসে বিপর্যয়৷ একটি গাড়ি দুর্ঘটনায় তাঁর স্ত্রী নেলিয়া ও কন্যা নাওমির মৃত্যু হয়৷ মারাত্মকভাবে জখম হন তাঁর দুই পুত্রও৷ এই বিপর্যয়ের কারণে রাজনীতি ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন বাইডেন৷ কিন্তু দলের জোরাজুরিতে হাসপাতালেই সেনেটর পদে শপথগ্রহণ করেন বাইডেন৷ পরে ১৯৭৭ সালে জিল জেকবসকে বিয়ে করেন বাইডেন৷ তাঁদের একটি কন্যা রয়েছে, নাম অ্যাশলি৷
ছবি: Kevin Larkin/AFP/Getty Images
রাজনীতির চেয়ে পরিবারকে প্রাধান্য
বাইডেনের পারিবারিক জীবনে আবার বিপর্যয় আসে ২০১৫ সালে৷ ভাইস-প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন ব্রেন টিউমারজনিত জটিলতায় তিনি তাঁর পুত্র জোসেফকে হারান৷ পরের বছর ২০১৬ সালের নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিসাবে লড়ার পরিকল্পনা থাকলেও পরিবারকে সময় দিতে নির্বাচন থেকে সরে আসেন বাইডেন৷
ছবি: Kevin Lamarque/REUTERS
তবুও উত্তরণ
এর আগে ১৯৮৮ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রাথমিকভাবে অংশগ্রহণ করলেও প্রাইমারি নির্বাচনের আগেই নিজের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেন৷ কিন্তু সেনেটর হিসাবে কাজ করে যান তিনি৷ ২০০৮ সালেও প্রথমে প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার আগ্রহ দেখিয়েছিলেন তিনি৷ জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতার প্রতীক হিসাবে ২০১৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা তাঁকে ‘প্রেসিডেনশিয়াল মেডাল অফ ফ্রিডম’ প্রদান করেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/N. Kamm
গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ
রাজনীতির শুরু থেকেই বাইডেন ক্রেতা সুরক্ষা ও পরিবেশবিষয়ক ইস্যু নিয়ে সোচ্চার থেকেছেন৷ ২০১০ সালের ‘পেশেন্ট প্রোটেকশান অ্যান্ড অ্যাফোর্ডেবল কেয়ার’ আইনের বাস্তবায়নে তাঁর ভূমিকার কথা বারবার আলোচিত হয়েছে৷ শুধু তাই নয়, ১৯৯২ সাল থেকেই আইনি কড়াকড়ি বাড়ানো ও সাজার মেয়াদ বাড়ানোর পক্ষে তাঁর অবস্থান তিনি স্পষ্ট করেছেন, যা অনেক ক্ষেত্রেই তাঁর দলের নীতির সাথে পুরোপুরি খাপ খায়নি৷
ছবি: Jim Watson/AFP/Getty Images
বাইডেনকে ঘিরে বিতর্ক
১৯৮৮ সালের নির্বাচনি প্রচারের সময় বাইডেনের বিরুদ্ধে ব্রিটিশ লেবার পার্টির নিল কিনকের বক্তব্য চুরির অভিযোগ ওঠে৷ এছাড়া অ্যামেরিকার দক্ষিণাঞ্চলের বর্ণভিত্তিক বিভেদপন্থিদের সাথে সুর মিলিয়ে আদালতের রায়ের বিরোধিতা করে সমালোচিত হন বাইডেন৷ ২০১২ সালেও সমকামী জুটিদের বিয়ের অধিকারের পক্ষে কথা বলে বাইডেন শিরোনামে উঠে আসেন৷
ছবি: Carolyn Kaster/AP/picture alliance
যৌন নির্যাতনের অভিযোগ
২০২০ সালের মার্চ মাসে টারা রিড অভিযোগ আনেন যে ১৯৯৩ সালে জো বাইডেন তাঁকে যৌন নির্যাতন করেছিলেন৷ সেনেটর থাকাকালীন বাইডেনের অফিসে সহযোগী হিসাবে কাজ করতেন রিড৷ ১৯৯৩ সালে বিষয়টি আলোচিত হবার পর নতুন করে এবছর আবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রেক্ষিতে সেটি আলোচনায় উঠে আসে৷ এই অভিযোগ বাইডেন উড়িয়ে দিলেও আরো কয়েকজন নারী বাইডেনের বিরুদ্ধে অসঙ্গত আচরণের অভিযোগ এনেছেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/J. Locher
বাইডেনের যত নাম
গণমাধ্যমে বাইডেনের নামের সাথে জুড়েছে নানা ধরনের বিশেষণ৷ জীবনের গোড়ার দিকের অর্থনৈতিক বাস্তবতার কারণে কখনো তাঁর নাম হয়েছে ‘মিডল ক্লাস জো’৷ ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশগ্রহণের সময় বয়সের কারণে ডনাল্ড ট্রাম্প তাঁকে তাচ্ছিল্য করে বলেন ‘স্লো জো’ ও ‘স্লিপি জো’৷
ছবি: Jim Watson/AFP/Getty Images
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশগ্রহণ
২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিসাবে অংশগ্রহণ করেন জো বাইডেন৷ তার পক্ষে ব্যাপকভাবে প্রচারে নামেন সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা৷ টুইটার-ইন্সটাগ্রামে পাশে দাঁড়ান সেলেব্রেটিরাও৷ নির্বাচনে ডনাল্ড ট্রাম্পকে হারিয়ে বিজয়ী হন তিনি৷ বাইডেনের নির্বাচনসঙ্গী কমলা হ্যারিস দেশের প্রথম ভারতীয় বংশোদ্ভূত, প্রথম আফ্রিকান-অ্যামেরিকান ও প্রথম নারী ভাইস প্রেসিডেন্ট হয়ে ইতিহাস গড়েন৷