1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘আমরা মিয়ানমারে ফিরতে চাই'

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

বাংলাদেশে অবস্থানরত মিয়ানমারের রোহিঙ্গা শরণার্থীরা নিজ দেশে ফিরে যেতে চান৷ নাগরিকত্ব ও নিরপত্তা নিশ্চিত হলে তাঁরা ফিরে যাবেন৷ কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনকালে এ কথা কফি আনান কমিশনকে জানিয়েছেন রোহিঙ্গা শরণার্থীরা৷

Rohingya Flüchtlinge in Bangladesh
ছবি: Reuters/M. P. Hossain

মিয়ানমার থেকে নতুন করে পালিয়ে আসা নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলতে ২৯ এবং ৩০শে জানুয়ারি কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালী, টেকনাফের লেদা, শামলাপুর ও নয়াপাড়া শরণার্থী ক্যাম্প পরিদর্শন করেন কফি আনান কমিশনের প্রতিনিধিরা৷ কমিশন সদস্যরা হলেন মিয়ানমারের নাগরিক উইন ম্রা ও আই লুইন এবং লেবাননের নাগরিক ঘাসান সালামে৷ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে থাকা নতুন-পুরনো সব মিলিয়ে ৫০-৬০ জন রোহিঙ্গা নারী-পুরুষের সঙ্গে কথা বলেন তাঁরা৷ তবে এই প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. বাকি বিল্লাহসহ জেলা প্রশাসনের প্রতিনিধি, ইউএনএইচসিআর ও আইওএম-এর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ আর্ন্তজাতিক বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তারাও ছিলেন৷

আবু সিদ্দিক

This browser does not support the audio element.

কফি আনান কমিশনের সদস্যরা কক্সবাজারের কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পেও বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলেন৷ তাঁদের একজন ক্যাম্পের চেয়ারম্যান আবু সিদ্দিক৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা কমিশন সদস্যদের কাছে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা হত্যা, নির্যাতন ও বাড়ি-ঘরে আগুন দেয়ার কথা তুলে ধরেছি৷ আমরা জানিয়েছি, কীভাবে সেখানে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে৷ মুসলমান হওয়ার কারণেই আমাদের ওপর মিয়ানমার সরকারের এই নির্যাতন৷'' তিনি জানান, ‘‘আমরা মিয়নামারে ফিরে যেতে চাই৷ আমাদের নাগরিকত্ব ও নিরাপত্তা দিলে আর এখানে থাকতে চাই না৷ কারণ আমরা মিয়ানমারের নাগরিক৷''

আবু সিদ্দিক বলেন, ‘‘কমিশন সদস্যরা আমাদের জানিয়েছেন যে তাঁরা মিয়ানমার সরকারের কাছে তাঁদের প্রতিবেদন দেবেন৷ তাঁরা আমাদের নাগরিকত্ব ও নিরপত্তা দিয়ে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য মিয়ানমার সরকারের প্রতি দাবি জানাবেন৷''

তাঁর কথায়, ‘‘প্রতিনিধি দলের সঙ্গে নির্যাতিত রোহিঙ্গা রফিক, নুর জাহান, নুরুল আলম, রোকিয়া বেগম, মো. আয়ুব, সিরাজুল ইসলাম, মোহাম্মদ নূরসহ নির্যাতিত ৪০ জন নারী, ১২ শিশু এবং ১৮ জন পুরুষের কথা হয়েছে৷ মিয়ানমারের সেনাবাহিনী তাঁদের ওপর কী ধরনের নির্যাতন চালিয়েছে, সেই বর্ণনাও দিয়েছেন এঁরা৷''

সুলতানা কামাল

This browser does not support the audio element.

তাঁরা জানিয়েছেন, ‘‘আমাদের সঙ্গে প্রতিদিন ওপারে আমাদের ভাই, মা-বোন, স্বজনদের ফোনে কথা হয়৷  তাঁদের কাছ থেকেই জানতে পারি যে, প্রতিদিন শত শত নারীদের গ্রাম থেকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ করে মেরে ফেলা হচ্ছে৷ যদি কেউ এর প্রতিবাদ করে তাহলে তাঁকেও মেরে ফেলছে মিয়ানমারের সেনারা৷''

এদিকে মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকায় সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন কমিশন সদস্যরা৷ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বৈঠক শেষে সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘‘কমিশন সদস্যরা আমাকে জানিয়েছেন যে, মিয়ানমার থেকে নির্যাতিত হয়ে বাংলাদেশে আসা ৮০ শতাংশ নারীই মিয়ানমারে ধর্ষণের শিকার৷'' এছাড়া মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গার সংখ্যা আনুমানিক ৫ লাখ হতে পারে, বলেও জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী৷

তিনি আরো বলেন, ‘‘কফি আনান কমিশনের সদস্যরা রোহিঙ্গা বিষয়ে বাংলাদেশের অভিযোগের সঙ্গে একমত৷ তাই অচিরেই এ সমস্যার সমাধান হবে বলে কমিশন সদস্যরা আমাকে আশ্বস্ত করেছেন৷''

কফি আনান কমিশনের সদস্য ঘাসাম সালামে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে জানান, ‘‘মিয়ানমারে রোহিঙ্গা নির্যাতনের অনেকগুলো কারণের মধ্যে ধর্মীয় কারণ একটি, তবে এটা একমাত্র কারণ নয়৷ রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ আমরা এ সব বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি৷''

নির্যাতনের শিকার হয়ে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের অবস্থা সরেজমিনে দেখতে গত ২৮ জানুয়ারি বাংলাদেশে আসেন কফি আনান কমিশনের এই তিন সদস্য৷ কমিশন আগামী আগস্টে অং সান সু চির কাছে তাঁদের মূল্যায়ন প্রতিবেদন দেবে৷ কমিশন সূত্রে জানা গেছে, এই কমিশন গত বছরের সেপ্টেম্বরে গঠিত হয় এবং একবছরের মধ্যে তাদের প্রতিবেদন দেয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে৷ এ কারণেই তারা এ বছরের আগস্ট মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দেবে৷

তবে বাংলাদেশের মানবাধিকার নেত্রী অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এত দীর্ঘ সময় ধরে তদন্তের কেন প্রয়োজন পড়ছে? তাঁরা তো সরেজমিনে তদন্ত করছেন৷ তাই দ্রুত তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া উচিত৷ কারণ এই প্রতিবেদন ছাড়া ‘অ্যাকশন' নেওয়া যাবে না৷ তাই আমার মনে হচ্ছে, এটা সময় ক্ষেপণ৷ এক বছর ধরে পরিস্থিতি এরকম নাও থাকতে পারে৷ নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের জন্য যদি ভালো কিছু করার ইচ্ছা থাকে তাহলে দ্রুত তদন্ত প্রতিবেদন দেয়া উচিত বলে আমি মনে করি৷''

গত অক্টোবরের ৯ তারিখের পর মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনী রাখাইন প্রদেশে মুসলিম রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠির ওপর হামলা শুরু করে৷ এর ফলে শতাধিক রোহিঙ্গা নিহত হয়, গৃহহারা হয় হাজার হাজার রোহিঙ্গা৷ এছাড়া প্রায় ৭০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে৷

বন্ধু, রোহিঙ্গাদের বিষয়ে আপনার কিছু বলার থাকলে লিখুন নীচের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ