দুই হাজারের বেশি রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর মাধ্যমে বৃহস্পতিবার প্রত্যাবর্তন প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার কথা ছিল৷ কিন্তু কেউ যেতে রাজি না হওয়ায় এই প্রক্রিয়া স্থগিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের রোহিঙ্গা কমিশনার৷
বিজ্ঞাপন
আবুল কালাম জানান, ‘‘আমরা তাঁদের ফিরে যেতে বাধ্য করতে পারিনা৷’’
এর আগে কক্সবাজারে উনচিপ্রাং শরণার্থী শিবিরে জমায়েত হওয়া কয়েক শত রোহিঙ্গা ‘না, না, আমরা যাব না’ বলে স্লোগান দেন৷ এই সময় রোহিঙ্গা বিষয়ক কমিশনার কালাম তাঁদের ফিরে যাওয়ার ব্যাপারে বোঝানোর চেষ্টা করেন৷ তাঁদের জন্য অন্তত তিন দিনের খাবার ও অন্যান্য জরুরি বিষয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে বলেও জানান তিনি৷
কিন্তু রোহিঙ্গারা যেতে রাজি হননি৷ সেখানে উপস্থিত রোহিঙ্গারা ‘আমরা ন্যায়বিচার চাই’, ‘নাগরিকত্ব ছাড়া আমরা কখনো মিয়ানমারে ফিরে যাব না' এসব লেখা সম্বলিত প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেছেন৷
জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনএইচসিআরও জানিয়েছিল, তালিকায় থাকা রোহিঙ্গাদের অনেকেই যেতে রাজি হচ্ছেন না৷
একটি সূত্রের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, রোহিঙ্গারা যেতে রাজি না হওয়ায় প্রত্যাবর্তন প্রক্রিয়া আপাতত স্থগিত করা হচ্ছে৷
এদিকে, সিঙ্গাপুরে আসিয়ান সম্মেলনে উপস্থিত হওয়া মিয়ানমারের নোবেলজয়ী নেত্রী অং সান সুচি রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে কার্যকর ভূমিকা না রাখায় বিশ্ব নেতৃবৃন্দের তিরস্কারের মুখে পড়েন৷
জেডএইচ/এসিবি (রয়টার্স, এপি)
রোগ সারাতে ‘ফেইথ হিলার’এর কাছে রোহিঙ্গারা
‘ফেইথ হিলার’ হচ্ছেন তাঁরা, যাঁরা দোয়া-কালাম পড়ে রোগ সারিয়ে তুলতে পারেন বলে অনেকে বিশ্বাস করেন৷ অনেক রোহিঙ্গা তাঁদের কাছেই রোগ সারাতে যান৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Qadri
স্বপ্নে পাওয়া শক্তি
তাঁর নাম আবুল কালাম৷ মিয়ানমারের এই রোহিঙ্গা ২০১২ সালে বাংলাদেশে আসেন৷ সেই থেকে তিনি কক্সবাজারে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের অসুখ হলে তাঁদের ‘ফেইথ হিলিং’-এর মাধ্যমে রোগ নিরাময়ের চেষ্টা করে আসছেন৷ এই শক্তি স্বপ্নে পেয়েছেন বলে বার্তা সংস্থা এপি’র কাছে দাবি করেছেন তিনি৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Qadri
পানি পড়া
ছবিতে আবুল কালামের সামনে এক বোতল পানি দেখা যাচ্ছে৷ দোয়া পড়ে ঐ পানিতে তিনি ফুঁ দেবেন৷ সেই পানি পান করলে রোগীর বুক ব্যথা ভালো হয়ে যাবে বলে তাঁর দাবি৷ প্রতিদিন গড়ে পাঁচজন রোগী পান কালাম৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Qadri
বিশ্বাসই ভরসা
রোহিঙ্গাদের মধ্যে আবুল কালামের মতো লেকদের কাছে যাওয়ার প্রবণতা অনেক দিন ধরেই আছে৷ শারীরিক কিংবা মানসিক যে সমস্যাই হোক না কেন, বেশিরভাগ রোহিঙ্গার বিশ্বাস ফেইথ হিলারের কাছে গেলে সমাধান পাওয়া যাবে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Qadri
কারণ দু’টি
কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবিরে কাজ করা মনোচিকিৎসাবিদ অনিতা সাহা (ছবি) বলছেন, দুটি কারণে রোহিঙ্গারা ফেইথ হিলারের কাছে যান৷ এক, মিয়ানমারে তাঁরা আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা থেকে বঞ্চিত ছিলেন৷ দুই, বিজ্ঞানসম্মত চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রতি তাঁদের অবিশ্বাস৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Qadri
খ্রিষ্টান বানিয়ে দেয়া হবে!
অনেক শরণার্থী মনে করেন, কলেরা, ডিপথেরিয়ার মতো রোগের টিকা নিলে তাঁরা তাঁদের ইসলামি বিশ্বাস হারিয়ে ফেলবেন এবং তাঁদের ধর্মান্তরিত করে খ্রিষ্টান ধর্মে নিয়ে যাওয়া হবে৷ এছাড়া মানসিক সমস্যার ক্ষেত্রে তাঁদের ধারণা, এটি শয়তানের কাজ৷ ‘ফেইথ হিলার’রা প্রার্থনার মাধ্যমে সেই শক্তি মোকাবিলা করতে সক্ষম বলে মনে করেন অনেক রোহিঙ্গা৷
ছবি: picture-alliance/W. Maye-E
বিশ্বাসে পরিবর্তন আসছে
কক্সবাজারে শিবিরে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের চিকিৎসা দিতে দেশি-বিদেশি অনেক সংস্থা কাজ করছে৷ তাঁদের মাধ্যমে আধুনিক চিকিৎসা সম্পর্কে জানতে পেরে রোহিঙ্গাদের মনে এই পদ্ধতির প্রতি আস্থা জন্মাচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Qadri
মেয়ের জন্য চিকিৎসা
আলি নেসা তাঁর টিনএজ মেয়ের সমস্যা নিয়ে চিন্তিত৷ বেশ কয়েকজন ফেইথ হিলারের কাছে গিয়েও কাজ হয়নি৷ তাই এখন তিনি একজন চিকিৎসকের কাছে যেতে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন৷