1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
দুর্যোগবাংলাদেশ

আমরা যেন তুরস্কের মত এক ভয়াবহ পরিণতির অপেক্ষায়

১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

লাগামহীন দুর্নীতি, অনিয়মকে বৈধতা, ক্ষমতার মোহ আর জবাবদিহি না থাকলে পরিণতি কতটা ভয়াবহ হতে পারে তুরস্কে-সিরিয়ার ভুমিকম্প সেটা আরেকবার জানিয়ে দিলো৷

ঢাকা শহরের ছবি৷
ঢাকায় সাতের বেশি মাত্রার ভূমিকম্প হলে পুরোনো ঝুঁকিপূর্ণ ভবন তো ধ্বংস হবেই, সেই সঙ্গে নিয়ম না মেনে বা জলাশয় ভরাট করে তৈরি নতুন ভবনও ধসে পড়বে৷ ছবি: MUNIR UZ ZAMAN/AFP/Getty Images

আলাপটা শুরু করা যাক তুরস্ক থেকে৷ ১৯৯৯ সালে ইস্তাম্বুলের নিকটে ভূমিকম্পে ১৭ হাজার মানুষ মারা গেলে তখনকার সরকার ভবন নির্মাণে কঠোর নিয়ম মেনে চলা ছাড়াও ‘ভূমিকম্প কর' চালুর ঘোষণা দেয়৷ ভবিষ্যতে ভুমিকম্পের ভয়াবহতা রোধে দেশকে প্রস্তুত করার কাজে করের অর্থ ব্যবহার করা হবে বলে আশ্বাস প্রদান করে৷

ঐ ভূমিকম্পের পর উদ্ধার কাজে সরকারের ধীর তৎপরতা ও প্রতিশ্রুতিপূরণে ব্যর্থতার প্রেক্ষিতে এরদোগানের দল ২০০২ সালে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়৷ ক্ষমতায় বসে সকল ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের আশ্বাসও দেন এরদোগান৷

এরদোগানও কাজের কাজ কিছুই করেনি৷ ২০১১ সালে আরেকটি ভূমিকম্পে কয়েকশ মানুষ মারা গেলে নিম্নমানের নির্মাণ ও দায়িত্বে অবহেলার জন্য অন্যদের দোষারোপ করেন৷ পরবর্তীতে তিনি উল্টো পথে হেঁটেছেন৷ ভবন নির্মাণে নিরাপত্তা-সংক্রান্ত নীতিমালা না মানার জন্য সেগুলো ভেঙ্গে ফেলা বা সংস্কারের পদক্ষেপ না নিয়ে বরং তার সরকার জরিমানা দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ হাজার হাজার ভবনকে বৈধতা প্রদান করেন৷ এমন সিদ্ধান্তের পর এক বিশেষজ্ঞ ২০১৯ সালে সতর্ক করে বলেছিলেন, ‘এর মানে হচ্ছে শহরগুলোকে কবরস্থানে পরিণত করা৷’

তিন বছরের মধ্যে ঐ বিশেষজ্ঞের কথা ফলে গেলো৷ তাসের ঘরের মত ভেঙে পড়ে তুরস্কের শত শত ভবন৷ অনেক শহর পরিণত হয় মৃত্যুর নগরীতে৷ এতো ক্ষয়ক্ষতি এবং প্রাণহানীর জন্য মূলত দায়ী এরদোগান ও তার ক্ষমতাসীন দলের দায়িত্বহীনতা, দুর্নীতি, বিধিবিধান না মানা ও প্রস্তুতির অভাবকে৷

বাংলাদেশের পরিস্থিতি তুরস্কের চেয়ে ভিন্ন নয়, অনেক বাস্তবতা তার চেয়েও ভয়াবহ হতে পারে৷ বড় কোনো ভূমিকম্প না হলেও রানা প্লাজা ও নিমতলির বিস্ফোরণ থেকে পরিস্থিতির ভয়াবহতা টের পেয়েছি আমরা৷ উদ্ধারকাজে আমরা কতটা অপ্রস্তুত ও এক্ষেত্রে কি ধরনের চ্যালেঞ্জের সামনে পড়তে হয় তা আর অজানা নয়৷

ঘনবসতিপূর্ণ রাজধানী ঢাকায় অবৈধ বা ক্রুতিপূর্ণ ভবনের অভাব নাই৷ আছে অনুমোদনহীন ভবনও৷ আবার অনেক ভবন আট বা ১০ তলা কিন্তু বাস্তবে সেগুলোর অনুমোদন রয়েছে চার বা ছয় তলা৷ জলাশয় ভরাট করে বিধিবিধানের তোয়াক্কা না করে নির্মিত হয়েছে অনেক ভবন৷ অধিকাংশ ভবনগুলো একটার সাথে আরেকটা যেন লেগে আছে৷ শুধু ঢাকা না, চট্টগ্রাম, সিলেট ও অন্যান্য শহরের চিত্র অনেকটা একই৷

ইমারত নির্মাণ আইন ও বিধিমালা থাকলেও ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে তা যথাযথভাবে মেনে না চলা হয় না৷ এক্ষেত্রে নগর কর্তৃপক্ষের গাফিলতি সুপরিচিত৷ মাঝে মাঝে অভিযান চালালেও ঘুষ, দুর্নীতি, অনিয়ম ও নিয়মিত তদারকির অভাবে পরিস্থিতি দিন দিন খারাপ হচ্ছে৷ বিভিন্ন সুত্রে জানা যায়, দেশের শহরাঞ্চলের নির্মাণ করা ৬০ শতাংশ ভবনই তৈরি হচ্ছে বা হয়েছে নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে৷

সমন্বিত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মসূচির এক রিপোর্ট অনুসারে, শক্তিশালী ভূমিকম্প হলে ঢাকা সিটি করপোরেশনের ৮৩ শতাংশ, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ৯২ শতাংশ এবং সিলেট সিটি করপোরেশনের ৯৯ দশমিক ৫ শতাংশ ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হবে৷ এসব নগরে পুরোপুরি ভেঙে পড়া ভবনের সংখ্যা হবে যথাক্রমে ২ লাখ ৩৮ হাজার, ১ লাখ ৪২ হাজার এবং ৫০ হাজার৷

এমন বাস্তবতায় বাংলাদেশে তুরস্কের মতো শক্তিশালী ভূমিকম্প হলে ঘনবসতিপূর্ণ শহরগুলোর পরিস্থিতি কি হবে তা অকল্পনীয়৷

এম আবুল কালাম আজাদ, ডয়চে ভেলেছবি: Private

এই অঞ্চলে গত ১০০ বছরে বড় কোনো ভূমিকম্প না হওয়ায় ছোট কম্পনগুলো শক্তি সঞ্চয় করে সামনে বড় ভূমিকম্পের আশঙ্কা রয়েছে৷ ভূমিকম্প হলে কি ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে সে বিষয়ে অনেক বছর ধরে বিশেষজ্ঞগণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো সতর্ক করে আসলেও সরকারের টনক নড়ছে না৷ একদিকে, ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ভেঙে ফেলা বা সংস্কার করা হয়নি, অন্যদিকে নিয়ম ভঙ্গ করে ভবন নির্মাণ চলছে ৷ অন্যদিকে, ভূমিকম্পের মতো দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতি কমানো বা উদ্ধার তৎপরতার প্রস্তুতির কোনো অগ্রগতি নেই৷

ঢাকায় সাতের বেশি মাত্রার ভূমিকম্প হলে পুরোনো ঝুঁকিপূর্ণ ভবন তো ধ্বংস হবেই, সেই সঙ্গে নিয়ম না মেনে বা জলাশয় ভরাট করে তৈরি নতুন ভবনও ধসে পড়বে৷ এ অবস্থায় ধ্বংসস্তূপ থেকে মানুষকে উদ্ধার, চিকিৎসার ব্যবস্থা করা, ভূমিকম্প-পরবর্তী পানি-বিদ্যুৎ-গ্যাস সংযোগ সংশ্লিষ্ট দুর্ঘটনা ও অগ্নিকাণ্ড মোকাবিলা নিয়ে কেমন অসহনীয় একটা পরিস্থিতি হবে, তা অনুমান করাও যেন কঠিন৷

ভূমিকম্প এমন একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যেটি প্রতিরোধের কোনো ব্যবস্থা নেই৷ কিন্তু আগে থেকে সতর্কতা ও প্রস্তুতি থাকলে এর ক্ষয়-ক্ষতির পরিমান কমিয়ে আনা সম্ভব৷ আমারা কতটা প্রস্তুত ভবন ধস ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা একাধিকবার মনে করিয়ে দিয়েছে৷ এসব ঘটনায় তদন্ত হয়েছে, অনেক সুপারিশ প্রদান করা হয়েছে কিন্তু সেগুলো বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নেয়া হয়নি৷ একটি ঘটনা ঘটলে এসব আলোচনায় আসে, কিছুদিন পর সকলেই ভুলে যায়৷

আমরা কি তাহলে তুরস্কের মত ভয়াবহ পরিণতির জন্য অপেক্ষা করছি না? এরদোগানের মত আমরাও কি দুর্নীতি, অনিয়মকে প্রশ্রয় দিবো এবং সবকিছুর জন্য ভূমিকম্পের তীব্রতাকে দায়ী করবো?

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ