এক সময়ের খুব আলোচিত এই উক্তিটি সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতা জোসেফ স্টালিনের৷ কোরীয় যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার যুক্তি হিসেবে এ কথাট বলেছিলেন তিনি৷
বিজ্ঞাপন
১৯৫৩ সালের ২৭ জুলাই এক চুক্তির মাধ্যমে কোরীয় যুদ্ধের আপাত অবসান হয়েছিল - যার শুরু প্রায় তিন বছর আগে ,১৯৫০ সালের ২৫ জুন৷ সে সময় উত্তর কোরিয়ার সৈন্যরা অতর্কিত আক্রমণ চালিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সৌল দখল করে নিয়েছিল৷ উত্তর কোরিয়াকে সমর্থন জানিয়েছিল স্টালিনের সোভিয়েত ইউনিয়ন৷
এর প্রায় এক মাস পর জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়৷ সোভিয়েত ইউনিয়ন তখন নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক বয়কট করছিল বলে কোনো ভেটো ছাড়াই ঐ অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয় জাতিসংঘ৷ সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ ‘আন্তর্জাতিক সৈন্য' পাঠানো হয়েছিল কোরিয়ায়৷ সেখানে প্রায় ৮৮ শতাংশ সেনাই ছিল যুক্তরাষ্ট্রের৷ জাতিসংঘ বাহিনীর মুহুর্মুহু হামলায় উত্তর কোরিয়ার সৈন্যরা কিছুটা পেছনে সরতে বাধ্য হয়৷ ঠিক সেই সময় উত্তর কোরিয়ার পক্ষ নেয় চীন৷ তবে জাতিসংঘ বাহিনীর সঙ্গে পেরে উঠছিল না তারা৷ এ অবস্থায় চীনের নেতা মাও সেতুং ও উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম ইল সুঙ যুদ্ধ শেষ করতে চাইলেও স্টালিন চালিয়ে যেতে আগ্রহী ছিলেন৷ তিনি আসলে কোরিয়ার মাটিতে মার্কিনিদের রক্ত ঝরাতে চাচ্ছিলেন৷ তাই মাও আর কিম ইল সুঙকে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে আনতে স্টালিন বলেছিলেন, ‘আমরা তো শুধু মানুষ হারাচ্ছি যা আমাদের অনেক আছে৷' কোরীয় যুদ্ধের গবেষক, জার্মান ইতিহাসবিদ রোল্ফ স্টাইনিঙ্গার এসব তথ্য জানিয়েছেন ডয়চে ভেলেকে৷
উত্তর কোরিয়া: সামরিক শক্তি ও বিনাশের মাঝে
আবারো পারমাণবিক পরীক্ষা চালিয়েছে উত্তর কোরিয়া৷ এই নিয়ে তিনবার৷ জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ আগেই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল সে দেশের উপর৷ তবুও কেন তাদের এত পরীক্ষা?
ছবি: DW/Alexander Prokopenko
রহস্য ঘেরা দেশ
বিচ্ছিন্ন, দরিদ্র এবং অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল - উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সবকটি শব্দই মানানসই৷ একইসঙ্গে দেশটি ব্যাপক অস্ত্রসজ্জিত এবং আন্তর্জাতিক সমাজকে হতাশ করে মঙ্গলবার তারা আবারো পারমাণবিক পরীক্ষা চালিয়েছে৷
ছবি: DW/Alexander Prokopenko
সবকিছু্র আগে সামরিক বাহিনী
পিয়ংইয়ং তাদের তথাকথিত ‘সনগান’ নীতির জন্য পরিচিত৷ এই নীতির অর্থ হচ্ছে সবকিছুর আগে ‘সামরিক বাহিনী’৷ দুই কোটি ত্রিশ লাখ জনসংখ্যার দেশটিতে সেনা সংখ্যা দশ লাখেরও বেশি৷
ছবি: AP
গত আট বছরে তৃতীয় পরীক্ষা
গত মঙ্গলবার, ১২ই ফেব্রুয়ারি তৃতীয় পারমাণবিক পরীক্ষা চালিয়েছে উত্তর কোরিয়া৷ এর আগে ২০০৬ সালে প্রথম এবং ২০০৯ সালে দ্বিতীয় পরীক্ষা চালিয়েছিল সে দেশ৷ ধারণা করা হয়, সর্বশেষ যে ছোট আকৃতির বোমাটি পরীক্ষা করা হয়েছে, সেটির ধ্বংস ক্ষমতা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হিরোশিমার উপরে ফেলা পারমাণবিক বোমার এক-তৃতীয়াংশ৷
ছবি: Reuters
‘বিস্ফোরণ সাদৃশ্য কম্পন’
আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা রিশটার স্কেলে ৪.৯ থেকে ৫.২ মাত্রার ভূকম্পন শনাক্ত করেছেন৷ জাতিসংঘের পারমাণবিক পরীক্ষা নিষিদ্ধকরণ চুক্তি সংস্থার প্রধান টিবর টোট এই বিষয়ে জানিয়েছেন, বিস্ফোরণের কারণে এই ভূমিকম্প সৃষ্টি হওয়ার পরিষ্কার ইঙ্গিত রয়েছে৷
ছবি: Reuters
পারমাণবিক হুমকি
উত্তর কোরিয়াকে পারমাণবিক কর্মসূচি থেকে ফেরাতে গত কয়েক বছর ধরেই চেষ্টা করছে আন্তর্জাতিক সমাজ৷ এই লক্ষ্যে উত্তর কোরিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ কোরিয়া, রাশিয়া, জাপান এবং চীন মিলে আলোচনা শুরু করেছিল, কিন্তু ২০০৯ সালে সেই আলোচনা থেকে সরে যায় উত্তর কোরিয়া৷
ছবি: AP Graphics
কিমের বংশ
গত ৭০ বছর ধরে উত্তর কোরিয়ার ক্ষমতায় আছে কিম পরিবার৷ ১৯৯৪ সালে কিম জং ইল তাঁর বাবা কিম ইল সুং-এর কাছ থেকে সেদেশে শাসনের দায়িত্ব গ্রহণ করেন৷ কিম ইল সুং-কে উত্তর কোরিয়ার ‘শাশ্বত রাষ্ট্রপতি’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়৷
ছবি: Getty Images
কিম জং উন
২০১১ সালের ডিসেম্বরে কিম জং ইল-এর মৃত্যুর পর থেকে উত্তর কোরিয়ায় ক্ষমতার শীর্ষ পদে রয়েছেন কিম জং উন৷ ত্রিশের কাছাকাছি বয়সের এই কিম সেদেশের ক্ষমতাসীন দল, সামরিক বাহিনী এবং একইসঙ্গে পারমাণবিক কর্মসূচির নিয়ন্ত্রক৷ ছবিতে, কিমকে মহাশূন্যে প্রথমবার উপগ্রহ পাঠানোর পর বিভিন্ন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলতে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Reuters
‘তালগোল পাকানো’ অর্থনীতি
১৯৯০ সাল থেকে উত্তর কোরিয়ার শিল্প উৎপাদন প্রায় দুই তৃতীয়াংশ কমেছে৷ গত শতকের নব্বই দশকের মাঝামাঝি সময়ে সে দেশে দুর্ভিক্ষে প্রাণ হারায় বেশ কয়েক হাজার মানুষ৷ অর্থনীতির দুর্বল ব্যবস্থাপনা এবং দীর্ঘমেয়াদি বন্যার কারণে এই দুর্ভিক্ষের সৃষ্টি হয়েছিল৷ জাতিসংঘের হিসেব অনুযায়ী, সে দেশের কয়েক লাখ মানুষ এখনো অনাহারে রয়েছে৷
ছবি: AP
বন্ধুরা ধৈর্য হারাচ্ছে
উত্তর কোরিয়া এবং চীনকে আলাদা করে রেখেছে ইয়ালু নদী৷ চীন হচ্ছে সেদেশের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্র৷ সেই মিত্রও এখন ক্রমশ ধৈর্য হারাচ্ছে৷ ডিসেম্বরে উত্তর কোরিয়ার রকেট উৎক্ষেপণ এবং সর্বশেষ পারমাণবিক পরীক্ষার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে চীন৷
ছবি: Getty Images
9 ছবি1 | 9
স্টালিনের কারণেই যুদ্ধ শেষ হতে প্রায় তিন বছর লেগে গিয়েছিল৷ তাও সেটা সম্ভব হয়েছিল স্টালিনের মৃত্যুর কারণে৷ ১৯৫৩ সালের ৫ মার্চ মারা যান তিনি আর ২৭ জুলাই চুক্তি স্বাক্ষর করে দুই কোরিয়া৷
যুদ্ধে প্রায় ৩৭ হাজার মার্কিন সেনা নিহত হয়েছিলেন৷
জার্মানির সংযোগ
কোরীয় যুদ্ধের কারণে জার্মানির দুটি সুবিধা হয়েছিল৷ এক, ১৯৫০ সালের ডিসেম্বরে পুনরায় অস্ত্রে সমৃদ্ধ হওয়ার সুযোগ ফিরে পেয়েছিল জার্মানি৷ আসলে কোরীয় যুদ্ধ ছিল মার্কিন সামরিক বাহিনীর জন্য একটা বড় দুর্যোগ, সেটাকে কাজে লাগিয়েছিলেন জার্মানির তখনকার চ্যান্সেলর কনরাড আডেনাউয়ার৷ আর দ্বিতীয় সুবিধাটা ছিল, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে জার্মানির উপর থাকা শেষ অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞাটাও তুলে নেয়া৷ ১৯৯০ সালে সাবেক দুই জার্মানির পুনরেকত্রীকরণের পর দুই কোরিয়ার মধ্যেও একই ধরণের কিছু করা যায় কি না সেই আলোচনা উঠে এসেছিল৷ কিন্তু দক্ষিণ কোরিয়ার অনেকেই এর পক্ষে ছিলেন না৷ তাদের আশঙ্কা ছিল জার্মানির পুনরেকত্রীকরণের পর পশ্চিম জার্মানি পূর্ব জার্মানির আর্থিক অবস্থা যতটা খারাপ পেয়েছিল তার চেয়ে অনেক খারাপ অবস্থা উত্তর কোরিয়ার, ফলে সেটাকে টানতে গেলে বড় সমস্যায় পড়তে হতে পারে দক্ষিণকে৷