মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা কার্বন নির্গমন ব্যাপকভাবে কমানোর উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন৷ ওদিকে তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে ২০১৫ সাল ২০১৪-কেও ছাড়িয়ে যেতে চলেছে৷ এ বিষয়ে গ্রেহেম লুকাস-এর সংবাদভাষ্য৷
বিজ্ঞাপন
বহু বছর যাবৎ তথাকথিত গ্রিনহাউস গ্যাসের নির্গমন কমানো সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক চুক্তি সম্পাদনের পথে মূল প্রতিবন্ধক ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র – এবং সেই সঙ্গে চীন ও ভারত৷ যারা জলবায়ু পরিবর্তনের কথা স্বীকার করতে চান না, তাদের সবচেয়ে শক্তিশালী লবি ছিল মার্কিন মুলুকে৷ লবিইস্ট-দের দাবি, জলবায়ু পরিবর্তনের উপর মানুষের গতিবিধির কোনো প্রভাব নেই, কিংবা স্বল্পই প্রভাব আছে৷
এ বছরের ডিসেম্বর মাসে আবার জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলন সংঘটিত হতে চলেছে৷ ওবামা যে জীবাশ্মভিত্তিক জ্বালানির ব্যবহার হ্রাস করার সপক্ষে স্পষ্ট বক্তব্য রেখেছেন, তা প্যারিসে ঐকমত্য অর্জনের পথে মাইল-ফলক হবার ক্ষমতা রাখে৷ ওবামা চান, ২০০৫ সালের মাত্রা অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন ডাইঅক্সাইড নির্গমন ৩২ শতাংশ কমানোর চুক্তি করা হোক৷ যা আমাদের সকলের জীবনকেই প্রভাবিত করবে৷
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কয়লা পুড়িয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের শত শত চুল্লি আছে, যেগুলোকে বন্ধ করতে হবে৷ ফলে কয়লা খনিগুলির নাভিশ্বাস উঠবে৷ অন্যান্য শিল্পোন্নত দেশেও একই প্রক্রিয়া সূচিত হবে৷ পরিবর্তে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ক্ষেত্রে বিপুল ভাবে বিনিয়োগ করা হোক, এই হল ওবামা-র সমাধান৷
এটা একটা সুবিশাল চ্যালেঞ্জ:
– বিভিন্ন শিল্প ইতিমধ্যেই ওবামা প্রশাসনের উপর নারাজ৷
– মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অনেকেই ওবামার নীতির বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা মানতে রাজি নন৷
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রকোপে দ্বীপরাজ্য
প্রশান্ত মহাসাগরে ভানুয়াটুর মতো ছোট দ্বীপরাজ্যগুলি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রকোপে, ঠিক যেমন বাংলাদেশ৷ সাগরের পানির উচ্চতা বাড়া আর আবহাওয়ার দুর্যোগের ফলে এই ধরনের দ্বীপরাজ্যগুলির অস্তিত্ব নিয়ে টান পড়েছে৷
ছবি: John Corcoran
প্যাম ঘূর্ণিঝড়ে ভানুয়াটু বিপর্যস্ত
ঘণ্টায় ৩২০ কিলোমিটার অবধি গতির ঝোড়ো বাতাস রাজধানী পোর্ট ভিলার বাড়িঘরের টিনের ছাদ উড়িয়ে দিয়েছিল এবং উপড়ে ফেলেছিল গাছ৷ প্যাম নামের ক্যাটেগরি ফাইভ সাইক্লোনটি এক সপ্তাহ আগে ভানুয়াটুর উপর আছড়ে পড়ে৷ দ্বীপরাজ্যের প্রেসিডেন্ট বল্ডউইন লন্সডেল-এর মতে, এ ধরনের ঘূর্ণিঝড়ের জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে যোগ আছে: ‘‘আমরা দেখছি, সাগরের পানির উচ্চতা বাড়ছে, আবহাওয়ার ধরন বদলে যাচ্ছে৷’’
ছবি: Reuters/K. Paras
‘উন্নয়ন নিশ্চিহ্ন’
প্যাম ঘূর্ণিঝড় ছিল একটি ‘‘দানব’’, যা তাঁর দেশকে ধ্বংস করেছে – বলেছিলেন প্রেসিডেন্ট লন্সডেল৷ ‘‘এটা ভানুয়াটুর সরকার ও জনসাধারণের জন্য একটি বিপর্যয়৷ এত সব উন্নয়ন ঘটার পর, তার সব কিছু নিশ্চিহ্ন হয়েছে’’, বলেন লন্সডেল৷ রাজধানীর ৯০ শতাংশ বাড়িঘর ধ্বংস হয়েছে৷ নিহতের সংখ্যা এ যাবৎ, সরকারিভাবে – ছয়, আহত ত্রিশের বেশি৷
ছবি: Reuters/K. Paras
প্যামের আঘাত
প্যাম ঘূর্ণিঝড় দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের বহু দেশকে বিধ্বস্ত করেছে৷ জাতিসংঘের বিবৃতি অনুযায়ী, কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলির মধ্যে আছে ভানুয়াটু, সলোমন দ্বীপপুঞ্জ, কিরিবাতি, ফিজি, তুভালু এবং পাপুয়া নিউ গিনি৷
ছবি: John Corcoran
শিশুরাই শিকার
অন্তত ৬০ হাজার শিশু এই ঘূর্ণিঝড়ে নিরাশ্রয় অথবা উদ্বাস্তু হয়েছে বলে ইউনিসেফ-এর ধারণা৷ পোর্ট ভিলায় যখন প্যাম এসে আঘাত হানে, ‘‘তখন যেন প্রলয় এসেছে বলে মনে হচ্ছিল’’, বলেছেন ইউনিসেফ-এর অ্যালিস ক্লিমেন্টস, যিনি সেই সময় অকুস্থলে ছিলেন৷
ছবি: Reuters/K. Paras
অশনি সংকেত?
বহু বছর ধরে (যেমন এই ছবিতে) কিরিবাতি-র মতো ছোট দ্বীপরাজ্যগুলি জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে যুঝছে৷ সেশেল-এর প্রেসিডেন্ট জেমস মিশেল প্যাম ঘূর্ণিঝড়কে ‘‘জলবায়ু পরিবর্তনের স্পষ্ট আভাস’’ বলে বর্ণনা করেন এবং আন্তর্জাতিক রাষ্ট্রসমাজকে উষ্ণায়ন সম্পর্কে সচেতন হয়ে উঠতে বলেন৷
ছবি: John Corcoran
জমি বাঁচানোর আকুল প্রচেষ্টা
সবচেয়ে বিপন্ন দ্বীপরাজ্যগুলির বাসিন্দারা উপকূলবর্তী এলাকাগুলিকে রক্ষা করার চেষ্টা করে আসছে, যা-তে জোয়ারে তীরের মাটি ধুয়ে না যায়৷ এই সব স্বল্পমেয়াদি পদক্ষেপে কিছু কাজ হলেও, ক্ষয়ের মূল কারণ – সাগরের পানির উচ্চতা বাড়া – থেকেই যাচ্ছে৷
ছবি: John Corcoran
‘প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের বিধ্বংসিতা বেড়েছে’
‘‘জলবায়ুর পরিবর্তন প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটার মাত্রা ও তীব্রতা বাড়িয়েছে, বিভিন্ন দেশের মানুষদের উপর যার প্রভাব পড়ছে’’, বলেন কিরিবাতি দ্বীপরাজ্যের প্রেসিডেন্ট আনোটে টং৷ বিজ্ঞানীরা অবশ্য বলেন যে, প্যাম ঘূর্ণিঝড়ের মতো একক প্রাকৃতিক ঘটনাকে পুরোপুরি জলবায়ু পরিবর্তনের ফলশ্রুতি বলা চলে না৷
ছবি: John Corcoran
জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে জাতিসংঘের কর্মসূচি
‘‘আমাদের বিশেষ করে সবচেয়ে দরিদ্র, বিপন্ন মানুষদের সাহায্য করতে হবে’’, প্যাম ঘূর্ণিঝড়ের পর এ কথা বলেন জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি-মুন৷ প্রাকৃতিক বিপর্যয় রোধ করাটা গোটা বিশ্বের কর্তব্য – তাই এ বছর একটি নতুন জলবায়ু চুক্তি সম্পাদিত হতে চলেছে৷
ছবি: John Corcoran
8 ছবি1 | 8
– নবায়নযোগ্য জ্বালানি দিয়ে অশ্মীভূত জ্বালানির ঘাটতি মেটানো যাবে না, বলে অনেক মার্কিনির ধারণা৷
– জ্বালানি যে অপরিমিত নয়, তার জন্য যে একটা মূল্য দিতে হবে এবং নিজেদের জীবনধারায় পরিবর্তন আনতে হবে, এটা উপলব্ধি করা সব মার্কিনির পক্ষে সহজ হবে না৷
কিন্তু ভয় পেলে চলবে না৷ অধিকাংশ শিল্পোন্নত দেশে জীবাশ্মভিত্তিক বা পারমাণবিক জ্বালানি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে সরকারি ভরতুকি দেওয়া হয়ে থাকে৷ কাজেই নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে আরো বেশি এবং বড় করে বিনিয়োগ করা প্রয়োজন৷
বিশ্বের উষ্ণায়ন ইতিমধ্যেই আবহাওয়া বদলে দিচ্ছে: দাবানল, খরা, অতিবৃষ্টি, দাবদাহ, ঘূর্ণিঝড় ইত্যাদি ঘটে চলেছে ক্রমবর্ধমান হারে৷ মানবজাতির অস্তিত্বই আজ সংকটে৷ এই অবস্থায় প্যারিস সম্মেলন একটি সুযোগ বৈকি – বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যদি পরিবেশ রক্ষায় নেতৃত্ব দেয়৷ সেক্ষেত্রে আমরা সবাই ওবামার সাথে৷