ডয়চে ভেলে-র মহাপরিচালক পেটার লিমবুর্গ একটি বিশেষ বিবৃতিতে লিখেছেন, ‘‘এই আক্রমণ সংবাদপত্রের স্বাধীনতা এবং ইউরোপে ইহুদি জীবনযাত্রাকে লক্ষ্য করে৷ অর্থাৎ এ অপরাধ আমাদের মূল্যবোধের বিরুদ্ধে৷''
বিজ্ঞাপন
আগামীতেও যে সাংবাদিকদের সন্ত্রাস এবং অপরাপর বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সম্মুখীন হতে হবে, তা জেনেও আমাদের ধীর-স্থির থাকতে হবে এবং নিজেদের কাজ করে যেতে হবে – লিখেছেন লিমবুর্গ৷ ‘‘আমরা মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষা করব,'' মহাপরিচালকের ঘোষণা৷ ‘‘ডয়চে ভেলে মতামতের আদানপ্রদান এবং বিভিন্ন সংস্কৃতি ও ধর্মের মধ্যে মধ্যস্থতার একটি ফোরাম'' বলে তিনি গণ্য করেন৷ সেই কারণেই এই সংকটের মুহূর্তে আমাদের কাজের গুরুত্ব আরো বৃদ্ধি পেয়েছে, বলে লিমবুর্গের অভিমত৷
প্যারিস থেকে বাংলাদেশ
গত শুক্রবারই জুম্মার নামাজের পর গোটা ফ্রান্স জুড়ে মসজিদের ইমামরা শার্লি এব্দোর উপর আক্রমণের তীব্র নিন্দা করেছেন এবং বলেছেন, আততায়ীরা ‘‘অপরাধী, মুসলিম নয়''৷ টঙ্গির বিশ্ব ইজতেমাতেও মোহাম্মেদ ফইয়াজ, মোহাম্মেদ জাকারিয়া-র মতো মৌলানা ও ইমাম-রা প্যারিসে ‘‘সন্ত্রাসবাদীদের'' কার্যকলাপের নিন্দা করেছেন৷
নয়তো শার্লি এব্দো হত্যাকাণ্ড নিয়ে বিশ্বব্যাপী মিডিয়া এবং সোশ্যাল মিডিয়া-তে যে বিস্তারিত বিবরণ, প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্য প্রকাশিত হয়েছে, তা বস্তুত মতপ্রকাশের স্বাধীনতার সীমা এবং অপরকে অবমাননা করার অধিকার আছে কি নেই, এই দুইয়ের টানাপড়েনে এক ব্যাপক বিতর্কে পর্যবসিত হয়েছে৷ রাশিয়া, চীন, মালয়েশিয়া এবং অন্যত্র বিভিন্ন প্রকাশনা এই মত প্রকাশ করেছে যে, শার্লি এব্দো ইসলাম-কে ব্যঙ্গ করা কার্টুন ছেপে ভুল করেছে৷ এ জন্য অবশ্যই সমালোচনার ঝড় উঠেছে৷
প্যারিস হত্যাকাণ্ডের পর সংহতি সমাবেশে লাখো মানুষ
ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে গত সপ্তাহে সন্ত্রাসী হামলায় ১৭ ব্যক্তি নিহত হয়৷ সেই নিহতদের স্মরণে, তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সপ্তাহান্তে আয়োজিত সংহতি সমাবেশে যোগ দিয়েছেন প্রায় ত্রিশ লাখ মানুষ৷ এই নিয়ে ছবিঘর৷
ছবি: Reuters/Platiau
লাখ লাখ নির্ভীক মানুষের সমাবেশ
লাখ লাখ মানুষ প্যারিসের বিভিন্ন রাস্তাসহ, ফ্রান্স এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শহরের রাস্তায় স্বাধীনতা এবং সহনশীলতার পক্ষে জড়ো হয়েছিলেন সপ্তাহান্তে৷ গত সপ্তাহে ফ্রান্সের ব্যঙ্গাত্মক পত্রিকা শার্লি এব্দো এবং একটি সুপারমার্কেটে নিহতদের স্মরণে আয়োজন করা হয় সংহতি সমাবেশের৷
ছবি: Reuters/Platiau
ফ্রান্সের ইতিহাসে সবচয়ে বড় সমাবেশ
সংহতি সমাবেশ শুরুর কয়েকঘণ্টা আগেই জনসমুদ্রে পরিণত হয় প্যারিসের ‘প্লাস দ্য লা রিপুবলিক’৷ ফ্রান্সের সকল ইউনিয়ন এবং বড় রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিরা এতে অংশ নেন৷ ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ফ্রান্সের ইতিহাসে এটা সর্ববৃহৎ সমাবেশ৷
ছবি: REUTERS/Youssef Boudlal
সংহতির প্রতীক
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার এবং রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্রঁসোয়া ওলঁদ এবং জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল রবিবারের সংহতি সমাবেশের নেতৃত্ব দেন৷ পঞ্চাশজনের মতো বিশ্বনেতা এতে অংশ নেন৷
ছবি: Reuters/Wojazer
শোকে বিহ্বল দেশ
গত বুধবার দুই ভাই প্যারিসে শার্লি এব্দোর সম্পাদকীয় কার্যালয়ে হামলা চালায় এবং ম্যাগাজিনটির প্রধান সম্পাদকসহ আরো নয় কর্মীকে হত্যা করে৷ সেসময় দুই পুলিশ সদস্যকেও হত্যা করে তারা৷ শুক্রবার অপর এক হামলায় এক সুপারমার্কেটে চার ব্যক্তিকে হত্যা করে একজন হামলাকারী৷
ছবি: Mitchell/Getty Images
সংকটকালীন বৈঠক
মার্চ শুরুর আগে ইউরোপীয় ইউনিয়নের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীরা এক বৈঠকে মিলিত হন৷ বৈঠকের পর ফরাসি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বার্না কাসনোভ জানান, ফ্রান্সে সন্ত্রাসী হামলায় সকল গণতন্ত্রের উপর প্রভাব ফেলেছে৷ সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধে ফেব্রুয়ারি মাসে বৈঠকের ঘোষণা দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Guillaume
উচ্চ সতর্কাবস্থা
শার্লি এব্দো কার্যালয়ে হত্যাকাণ্ডের পর ফ্রান্সে উচ্চ সতর্কাবস্থা জারি করা হয়৷ রবিবার সমাবেশের সময়ও নিরাপত্তা কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা দেখা গেছে৷ আল কায়দা এবং ‘ইসলামিক স্টেট’ আরো সন্ত্রাসী হামলার হুমকি দিয়েছে৷
ছবি: Kitwood/Getty Images
ফ্রান্স জুড়ে সমাবেশ
শুধুমাত্র প্যারিসেই নয়, ফ্রান্সের অন্যান্য শহরে সংহতি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে৷ ছবিটি মার্সেই শহরে অনুষ্ঠিত সমাবেশের৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Florian
আন্তর্জাতিক সংহতি
প্যারিসে সন্ত্রাসী হামলায় নিহতদের স্মরণে বন, বার্লিন, মাদ্রিদ, লন্ডন, ব্রাসেলসসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বড় শহরে সংহতি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে৷ বার্লিনে ১৮ হাজারের মতো মানুষ সমাবেশে অংশ নেন৷ সমাবেশ অনেকের হাতে ছিল ‘জ্য সুই শার্লি’ বা ‘আমি শার্লি’ স্লোগান৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Jensen
8 ছবি1 | 8
ঘটনাবলী
তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, প্যারিস হত্যাকাণ্ডের এক মহিলা সহযোগী হায়াৎ বুমেদিয়েন দৃশ্যত গত বৃহস্পতিবার ৮ই জানুয়ারি তারিখে তুরস্ক থেকে সিরিয়ায় প্রবেশ করে৷ অপরদিকে ফ্রান্স সারা দেশে ৭০০ ইহুদি স্কুলের সুরক্ষার জন্য প্রায় পাঁচ হাজার সৈন্য ও পুলিশ নিয়োগ করেছে৷ মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি জানিয়েছেন যে, তিনি আগামী বৃহস্পতিবার ফ্রান্সে যাচ্ছেন সহিংস উগ্রপন্থিদের রোখার পন্থা নিয়ে আলাপ-আলোচনার জন্য – যেখানে মার্কিন প্রশাসন এখন সমালোচনার মুখে কেননা প্যারিসের ঐক্য সমাবেশে যুক্তরাষ্ট্র থেকে কোনো উচ্চপদস্থ প্রতিনিধিকে পাঠানো হয়নি৷
হাঙ্গেরি-র প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর ওর্বান রবিবার প্যারিসের ব়্যালি-তে ছিলেন এবং সেদিন সন্ধ্যাতেই মন্তব্য করেছেন যে, ইউরোপ অভিমুখে অভিবাসন মূলত বন্ধ করে দেওয়া উচিত৷ ওর্বান প্যারিস হত্যাকাণ্ডের প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়নের জোরালো প্রতিক্রিয়া দাবি করেছেন৷ সে তুলনায় সাবেক ফরাসি প্রেসিডেন্ট নিকোলা সারকোজি এই মত প্রকাশ করেছেন যে, অভিবাসন সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে যুক্ত না হলেও, পরিস্থিতি আরো জটিল করে তোলে বৈকি৷