পেয়াঁজ নিয়ে হাহাকারের পর এবার লবণ৷ যদিও সরকার প্রেসনোট দিয়ে জানাচ্ছে আমাদের যা দরকার তার থেকে কয়েকগুণ লবণ মজুদ রয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
কিন্তু আমার মনে হয় না আমরা সরকারের কথায় বিশ্বাস করছি৷ সরকারের বা অন্য ক্ষমতাশালীদের কথা বাদ দিন৷ আমরা নিজেরা ইদানীং নিজেদেরই বিশ্বাস করতে পারি না৷ লবণের কথাটাই ধরা যাক৷ মনে করুন সত্যি সত্যি একটা লবণের সংকট হয়েছে, আমাদের কি এমন কোনো প্রতিবেশি বা আত্মীয়-স্বজন নেই যে আমাকে এক চিমটি লবণ দেবে?
মনে হয় নেই, আমাদের কাছে লবণ থাকলে আমরাও নিশ্চয়ই দেবো না৷ মনে মনে নিজেকে বাহবা দোবো, বাহ কী বুদ্ধিমান আমি৷ ১০ কেজি কিনেছি লবণের কথা শোনার সঙ্গে সঙ্গে৷ এখন আমি আর আমার পরিবার শুধু লবণ কিনবো বাকি সবাইকে শিখিয়ে দেবো লবণ ছাড়া রান্না৷ কী মজাই না হবে!এ কথা বলছি, কারণ, আবার আমরা আমাদের কথায় ফিরে আসি৷ ধরেন লবণের সংকট, তাই দাম বেড়ে গেছে বা যাচ্ছে৷ কিন্তু আমি কেন ১০ কেজি বা পাঁচ কেজি লবণ কিনছি৷ কোনো কিছুর সংকট হলে তো আমার তা কম কেনা উচিত, যাতে করে অন্যেও তা কিনতে পারে৷ আমরা যে বাজার খালি করে নিজেদের ভাঁড়ার পূর্ণ করতে চাচ্ছি, আমাদের এ মানসিকতার কারণ কী? এর উৎস কোথায়? আমরা কেন এত স্বার্থপর?
ব্যবসায়ীদের কথায় আসি৷ ভাই বা বোন, আপনাদের সমস্যাটা কী? আপনারা কি সাধারণ অবস্থাতে কোনো লাভই করেন না? সারাক্ষণই পানি কোনোভাব ঘোলা হওয়ার অপেক্ষা করতে হয় আপনাদের? রমজানে বেগুনি বেশি খাওয়া হয় বলে বেগুনের দাম বাড়িয়ে দেন, পেয়াঁজের সরবরাহ কমে গেলে কেনা দামের পাঁচ গুণে বেচেন, মোবাইল ফোনের দাম তার কলের দাম কয়েকগুণ রাখেন যতদিন পারেন৷ এগুলো কেমন ব্যবসা? কোনো সৃজনশীলতা নাই, বুদ্ধিমত্তা নাই, পরিশ্রম নাই, খালি ব্ল্যাকমেইলিংই সত্য?
তবে আমরা যদি নিজেদের স্বার্থপরতা থেকে বেরিয়ে আসি, তবে গুজব আমাদের কাবু করতে পারবে না বলেই আমার বিশ্বাস৷
পেঁয়াজ ছাড়া মজাদার রান্না
চড়া দামের কারণে পাতে পেঁয়াজ নেই? তবুও ঘরে থাকা অন্যান্য উপকরণ দিয়ে বানিয়ে দেখতে পারেন দেশি স্বাদের এই রান্নাগুলি৷
ছবি: Rangoli Restaurant
শুক্তো
পেঁয়াজ ছাড়া রান্নার কথা ভাবলেই মাথায় আসে নিরামিষ রান্নার কথা৷ আর শীতের মরসুমে নানা রকমের সবজি দিয়ে শুক্তো রান্নার মজাই আলাদা৷ অল্প মেথি, মৌরি বা পাঁচফোড়ন বাগাড় দিয়ে পছন্দের সবজির সাথে দুধ বা নারকেল বাটা বা সর্ষে দিয়ে খুব কম সময়েই বানানো যায় এই পদটি৷ পশ্চিমবঙ্গে জনপ্রিয় এই রান্নায় পেঁয়াজ, রসুন একদমই দেওয়া হয় না৷
ছবি: DW/S. Surita
পাতুরি
শুধু সর্ষেবাটা, কাঁচা মরিচ ও সর্ষের তেল দিয়ে মেখে কলাপাতায় মুড়ে সেঁকে নিলেই তৈরি মজার ‘পাতুরি’৷ ইলিশ, ভেটকি ছাড়া চিংড়ি বা ছানা দিয়েও বানানো যায় এই পদটি৷ পাতুরি সেঁকার কাজ কয়লার চুলাতেই সবচেয়ে ভালো হয়৷
ছবি: DW/S. Surita
ইডলি-দোসা
দক্ষিণ ভারতে প্রচলিত এই পদ বর্তমানে বাংলাদেশের রান্নাঘরেও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে৷ মূলত ডাল ও চালবাটা দিয়ে তৈরি এই দুটি খাবার পরিবেশন করা হয় নানা ধরনের চাটনি ও সাম্বার নামের ডালের স্যুপের সাথে৷ স্বাদ বদল করতে এই পদটি চেখে দেখতে পারেন৷
ছবি: Eesha Kheny
মুগডালের খিচুড়ি
নিরামিষ খিচুড়ি মূলত করা হয় মুগের ডাল দিয়ে৷ রসুন বা পেঁয়াজের জায়গায় বাগাড় দেওয়া হয় পাঁচফোড়ন, শুকনা মরিচ বা গরম মশলা দিয়ে৷ আদাবাটার সাথে নানা রকম সবজিও দেওয়া হয় এই খিচুড়িতে৷
ছবি: Colourbox/FormaA
লাবড়া
পাঁচমিশালি সবজির আরেকটি নাম লাবড়া৷ সাধারণত পুজোবাড়িতে নিরামিষ খিচুড়ির সাথে খাওয়া হয় এই লাবড়া৷ আলু, মিষ্টি কুমড়া, বাঁধাকপি, ফুলকপি, সিম ও বেগুনের এই সবজি রান্না করতে ব্যবহৃত হয় শুকনা মরিচ, পাঁচফোড়ন ও তেজপাতা৷ অনেক সময় ধরে কষিয়ে মাখামাখা এই পদটি শুধু রুটি দিয়েও খেতে পছন্দ করেন অনেকে৷
ছবি: DW/S. Surita
কালীপুজোর পাঁঠার মাংস
মাছ বা মাংষ রান্না পেঁয়াজ ছাড়া কল্পনাই করা যায় না৷ কিন্তু কালীপুজোর সময় যে পাঁঠা বলি দেওয়া হয়, সেই মাংস রান্নায় থাকেনা পেঁয়াজ বা রসুন৷ শুধু আদা, জিরে ও ধনেবাটা সাথে বেশি করে কাঁচা মরিচ দিয়ে ঝাল ঝাল এই পদটি পুজোবাড়িতে খুব জনপ্রিয়৷ এক এক পুরোনো বনেদী হিন্দু পরিবারে রয়েছে এক এক ধরনের মশলা দিয়ে এই মাংস রান্নার প্রচলন৷
ছবি: Lars Bevanger
ইলিশের তেল ঝোল
বাংলাদেশের সাথে সাথে পশ্চিমবঙ্গেও রয়েছে ইলিশের নানা রকমের রান্নার জনপ্রিয়তা৷ তার মধ্যে রয়েছে বিখ্যাত ইলিশের ‘তেল ঝোল’, যা অন্য মাছ দিয়েও করা হয়৷ শুধু কালোজিরের বাগাড় ও কাঁচামরিচের স্বাদের উপর ভিত্তি করেই করা হয় এই রান্নাটি৷ কেউ কেউ মাছের সাথে ডালের বড়ি ভাজা দিয়েও এই রান্নাটি করে থাকেন৷
ছবি: DW/S. Surita
বিদেশি যে যে পেঁয়াজ ছাড়া রেসিপি
শুধু দেশি স্বাদের রান্না কেন, পেঁয়াজ ছাড়া এমন অনেক বিদেশি রান্না করা যায় যা দেশি স্বদ থেকে খুব বেশি দূরে নয়৷ পিৎজা বা পাস্তা রান্নায় সচরাচর পেঁয়াজ ব্যবহার করেন না ইতালিয়ানরা৷ মূলত টমেটো ও নানা রকমের হার্ব, চিজ দিয়েই বানানো যায় অনেক ধরনের পাস্তা বা পিৎজা৷ স্বাস্থ্য সচেতন ব্যক্তিরা পেঁয়াজ ছাড়া মুরগির রোস্ট বা সালাদও বানাতে পারেন৷
পেঁয়াজের পরিবর্তে যা
ভারতের অনেক গোষ্ঠীদের মধ্যেই প্রচলিত নেই পেঁয়াজ বা রসুনের ব্যবহার৷ কিন্তু সমস্বাদ আনতে তারা ব্যবহার করেন হিং, যা দিয়ে বাগাড় দিলে ডাল বা সবজিতে আসে অবিকল রসুনের স্বাদ৷ এই হিং ব্যবহার করা হয় রাজস্থান বা উত্তরপ্রদেশের বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় খাবার রান্নায়৷