1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আমলার ক্ষমতা রুলবুকে

১৪ অক্টোবর ২০২২

আমলা এবং নেতার দাবা খেলা চলতে থাকে৷ যার যখন ঘোড়ায় দম, কিস্তিমাতের চাবিকাঠিও তার হাতে৷

বর্তমানে ‘নবান্ন’ ভবনটি ভারতের পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সচিবালয় হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে৷
বর্তমানে ‘নবান্ন’ ভবনটি ভারতের পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সচিবালয় হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে৷ছবি: DW/S. Bandopadhyay

বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় লিখেছিলেন, ‘এই রাজা আসে ওই রাজা যায়/ জামা কাপড়ের রং বদলায়/ দিন বদলায় না৷’ দিল্লির এক সম্ভ্রান্ত ক্লাবে আড্ডার টেবিলে এক সাবেক বাঙালি আইপিএস হাসতে হাসতে কবিতায় সামান্য পরিবর্তন করেন-- ... জামা কাপড়ের রং বদলায়/আমলা বদলায় না৷

ভারতীয় গণতন্ত্রে আমলাতন্ত্রকে দ্বিতীয় পিলার বলে ধরে নেওয়া হয়৷ তবে সময় সময় মনে হয়, হয়তো বা এই আমলাতন্ত্রই প্রশাসনের মেরুদণ্ডটি ধরে রেখেছে৷ যে রাজনৈতিক দলই ক্ষমতায় আসুক না কেন, আমলাতন্ত্র অধিকাংশ সময় চেষ্টা করে রাজনীতি আর প্রশাসনের মধ্যে একটা ভারসাম্য বজায় রাখার৷ সবসময় যে তারা সাফল্য পায়, এমন বলা যায় না৷ রাজনীতির চাপে আমলাতন্ত্র ন্যূব্জ হয়েছে, এমন উদাহরণ ভূরি ভূরি৷ আবার আমলাতন্ত্রের চাপে শাসক মাথা ঝুঁকিয়েছে, এমন উদাহরণও কম নয়৷ ‘‘এই চেক অ্যান্ড ব্যালেন্সটা যতদিন থাকবে, ভারতীয় গণতন্ত্র টলমল করে হলেও টিকে থাকবে৷’’ পানীয়ের গ্লাস নামিয়ে, শেষকথা বলে বেরিয়ে গেলেন ওই সাবেক আইপিএস৷ হাওয়াই শার্টের প্রথম দুইটি বোতাম খোলা রাখা তার বরাবরের ট্রেডমার্ক৷

কলকাতা সংলগ্ন সোনারপুরে যে আমলার বাড়িতে একদা কার্যত ধরনা দিতে হয়েছিল এই সাংবাদিককে, তিনি অবশ্য আমলামাফিক টিপটপ৷ শাড়ির প্রতিটি প্লিট স্কেলে মাপা৷ এক পঞ্চায়েত ভোটে দোর্দণ্ডপ্রতাপ পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে কার্যত সুতোর উপর নাচিয়ে ছিলেন তিনি৷ ভোটের দিন ঘোষণা এবং পদ্ধতি নিয়ে একার লড়াই লড়েছিলেন ওই আমলা আস্ত একটা রাজ্য সরকারের সঙ্গে৷ মিতবাক সেই নারী আদালতে টান টান লড়াই করলেও, সাংবাদিকদের সামনে মুখ খুলতেন না৷ বহু মেহনতের পর শেষপর্যন্ত রাজি হলেন একান্ত সাক্ষাৎকারে৷ শর্ত একটাই, সরাসরি ওই ঘটনা সংক্রান্ত প্রশ্ন করা যাবে না৷ দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ‘‘রুলবুকের ভিতরে থেকে আমলাতন্ত্র নেতা-মন্ত্রীদের সঙ্গে এই সাংবিধানিক লড়াই যেদিন বন্ধ করে দেবে, সেদিন ভারতের প্রশাসনিক কাঠামোই ভেঙে পড়বে৷’’ ওই একই সাক্ষাৎকারে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন, পরিস্থিতি যেদিকে যাচ্ছে, রাজনীতি যেভাবে একনায়কতান্ত্রিক হচ্ছে, তাতে আমলাতন্ত্রের পক্ষে এই ভারসাম্য রক্ষা করা ক্রমশ কঠিন হবে৷

স্যমন্তক ঘোষ, ডয়চে ভেলেছবি: privat

বাস্তবে তার প্রতিফলন দেখা যেতে শুরু করেছে৷ আমলার সপক্ষে কোনো রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যখন রাস্তায় হরতালে নেমে পড়েন, যখন তার সঙ্গে রাজ্য প্রশাসনের একাধিক আমলাকেও হরতালে বসে পড়তে দেখা যায়, তখন বোঝা যায়, ভারসাম্যে বিঘ্ন ঘটেছে৷ পাঠক, উদাহরণটি মনে পড়ছে নিশ্চয়! কলকাতার তৎকালীন পুলিশ কমিশনারকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে গেছিল সিবিআই৷ আর তারই জেরে রাস্তায় নেমে পড়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ বাকি ঘটনা ইতিহাস৷

এ কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়৷ শাসকদলের অনুগত আমলার সংখ্যা ভারতের কেন্দ্র-রাজ্যে কম নয়৷ মোদী-শাহের আমলে কেন যে অধিকাংশ আমলা গুজরাট থেকে নিয়োজিত হন, এ প্রশ্নও কেউ তোলার সাহস পান না৷ দিল্লি দাঙ্গা সংক্রান্ত এক রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে কেন এক বিচারপতিকে রাতারাতি বদলি হয়ে যেতে হয়? কেন সেই বিচারপতির নাম মাদ্রাজ হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি হিসেবে মনোনীত হলেও কেন্দ্রীয় শাসকের কাছ থেকে সবুজসংকেত পাওয়া যায় না, এসবই রহস্য৷ ফলে এককথায় বলা মুশকিল, ভারতে রাজনীতি আমলাতন্ত্রকে প্রভাবিত করে, নাকি আমলাতন্ত্র রাজনীতিকে৷ তবে একথা বলাই যায় যে, সময়-সুযোগ মতো একে অপরকে নিজের ক্ষমতার পেশিটি দেখিয়ে দেয়৷

এই ভারত টি এন সেশনের মতো আমলা দেখেছে৷ গোটা দেশের ভোটচিত্রটি বদলে দিয়েছিলেন সেশন৷ দুইশ বছর পরেও যে কারণে ভারতের ইতিহাস সেশনকে মনে রাখবে৷ মনে রাখবে, ওই সংস্কারের জন্য কোন পর্যায়ের লড়াই করেছিলেন সেশন৷ আবার উল্টোদিকে এ দেশে এমন অসংখ্য আমলাকে মনে রাখবে, রাজনৈতিক ক্ষমতার সামনে যারা কার্যত ক্রীতদাসে পরিণত হয়েছেন৷

আমলা বদলায়৷ বদলায় ক্ষমতার চেহারা৷ কিন্তু ভারতীয় আমলাতন্ত্রের রুল বুকটি বদলায় না৷ চাইলে, ওই রুলবুক ব্যবহার করে টিএন সেশন হওয়া যায়, অথবা মাছি মারা কেরানি৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ